বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের জন্য ২০২৫ সালের জুলাই মাস ইতিহাস হয়ে থাকবে। ১৯৮০ সালের পর এই প্রথমবারের মতো কোনো বাংলাদেশি ফুটবল দল এশিয়ান কাপে খেলতে যাচ্ছে। আর এই গৌরব অর্জন করলেন দেশের নারী ফুটবলাররা। তারা যে অসাধ্য সাধন করল, তা দেশের ফুটবল ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় রচনা করেছে। শুধু অংশগ্রহণ নয়, বরং বাছাইপর্বে জয় দিয়ে চূড়ান্ত পর্বে উত্তরণ প্রমাণ করে, তারা এখন আর কেবল সম্ভাবনার নাম নয়Ñ তারা বাংলাদেশের ফুটবলের এক উজ্জ্বল বাস্তবতা।
এই অর্জন কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। গত এক দশকে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের বয়সভিত্তিক সাফল্য, দক্ষিণ এশিয়ান শ্রেষ্ঠত্ব, ধারাবাহিক প্রস্তুতি ও প্রতিযোগিতামূলক অভিজ্ঞতা তাদের প্রস্তুত করেছে বড় মঞ্চের জন্য। বাফুফের কাঠামোগত উদ্যোগ, সীমিত অথচ নিবেদিত সহায়তা, এবং কোচের পেশাদার নেতৃত্বের সঙ্গেই যুক্ত হয়েছে নারী ফুটবলারদের অদম্য স্পৃহা, আত্মত্যাগ ও প্রতিনিয়ত শিখে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ়তা।
মায়ানমারের মতো দলকে হারিয়ে এশিয়ান কাপে স্থান করে নেওয়া নিঃসন্দেহে একটি বড় অর্জন। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে দুই দলের ব্যবধান ছিল ৭৩ ধাপ; কিন্তু মাঠে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। ঋতুপর্ণা চাকমার নিখুঁত গোল, দলের পরিকল্পিত আক্রমণ ও সংগঠিত রক্ষণভাগ মায়ানমারকে হার মানিয়েছে শুধু স্কোরলাইনে নয়, মানসিকতায়ও। একজন খেলোয়াড়ের ব্যক্তিগত নৈপুণ্য যে কিভাবে পুরো দলকে অনুপ্রাণিত করতে পারে, তা দেখিয়েছে ঋতুপর্ণা।
নারী দলের এ সাফল্য কাঠামোগত দুর্বলতা, অব্যবস্থাপনা এবং বৈষম্যের বাস্তবতাকেও সামনে এনেছে। ফুটবলারদের বেতন বৈষম্য, সাফ জয়ের পুরস্কার না পাওয়া এখনও প্রশ্নবিদ্ধ। তাই এ সাফল্য উদযাপনের পাশাপাশি প্রয়োজন নারী ফুটবলের টেকসই উন্নয়নে একটি বিস্তৃত নীতি-কাঠামো। এ কাঠামোয় থাকবে নিয়মিত আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ, সুরক্ষিত পরিবেশ, পেশাদার ব্যবস্থাপনা ও সুনির্দিষ্ট আর্থিক প্রণোদনা।
এশিয়া কাপ নিশ্চিত হওয়ার মাধ্যমে নারী দলের সামনে খুলে গেছে নতুন দুইটি দরজাÑঅলিম্পিক ও বিশ্বকাপ। এশিয়া কাপের ১২ দল থেকে সেরা আটটি দল যাবে কোয়ার্টার ফাইনালে, সেখান থেকে চারটি দল সরাসরি খেলবে বিশ্বকাপে, আর দুটি দল খেলবে আন্তঃমহাদেশীয় প্লে-অফে। আমরা তাদের সাফল্য কামনা করি।