দেশে দখলবাজি দূরারোগ্য এক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি, রাস্তা-ঘাট, ফুটপাত সব দখলদারের পেটে। দুর্বৃত্তরা দখল করতে করতে খাল-বিল-জলাশয় ছাড়িয়ে নদীতে পর্যন্ত নেমেছে। একদিকে দখল বহুমাত্রিক রূপলাভ করেছে, অন্যদিকে এর বিস্তৃতি বেড়েছে। নদী দখল শুধু রাজধানী বা বড় বড় নগরীতেই থেমে নেই। ছোট-বড় অন্যান্য শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম-গঞ্জেও চলছে দখল।
৬০ হাজারেরও বেশি দখলদার দেশের ৭০০ নদী দখল করে আছে বলে সম্প্রতি জানিয়েছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। নদীর দখলদারদের একদিকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে অন্যদিকে নতুন করে আবার দখল চলছে। ছোট দোকান থেকে শুরু করে বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান- সবই আছে দখলদারের তালিকায়।
ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার রাংসা নদীর পানিপ্রবাহ বন্ধ করে ঘের দিয়ে মাছ চাষ করছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। নদীর বিভিন্ন স্থানে বাঁধ দেওয়ার কারণে ফসলি জমি হয়ে পড়ছে অনাবাদি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বালু কাটার অবৈধ ড্রেজার। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
নদী দখল করে মাছের ঘের তৈরি করা, নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে বালু কাটা- এসব ঘটনা দেশের অন্যান্য জায়গায়ও ঘটছে। প্রশাসনের নাকের ডগার ওপর দিয়েই এগুলো চলতে থাকে কীভাবে- সেটা একটা প্রশ্ন। প্রশাসন আছে কেন, তাদের কাজ কী?
স্থানীয়রা বলছেন, দুই দশক আগেও রাংসা নদীতে নৌকা, ট্রলারসহ অন্যান্য নৌযান চলত। এখন নদীজুড়ে শুধুই কচুরিপানা। সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছে, চলতি আমন মৌসুমে সেখানে ছয় হাজার হেক্টর জমিতে কৃষক চাষাবাদ করতে পারেনি। নদীর প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উপজেলায় জলাবদ্ধতা সংকটও প্রকট। পানিতে তলিয়ে কৃষকরা ফসলহানি হচ্ছে, জনজীবনের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। আবার শুকনা মৌসুমে পানির অভাবে ফসল ফলাতে পারছেন না কৃষক। নদীটির বর্তমান অবস্থা জীববৈচিত্র্যের ওপর চরম নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
দেশজুড়ে নদ-নদী দখলের অবসান ঘটাতে হবে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে দেশের সব নদ-নদী-খালের আইনগত অভিভাবক ঘোষণা করেছেন আদালত। সংস্থাটি বিভিন্ন মামলার রায়, আদালতের নির্দেশনা এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়ের পরামর্শ সভার মতামত নিয়ে নদী রক্ষায় ১২২ দফার সুপারিশ তৈরি করেছে। ২০১৮ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে সুপারিশগুলো প্রকাশ করা হয়। সুপারিশের শুরুতেই নদীর সীমানা নির্ধারণ, অবৈধ দখলদার চিহ্নিতকরণ ও উচ্ছেদ, নদী রক্ষায় আইনের প্রয়োগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত, পুলিশ কী ভূমিকা রাখবে ইত্যাদি সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে। তাছাড়া দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও বন্ধ, নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি, গবেষণা, প্রশাসনিক ও ব্যবস্থাপনাসহ আন্তঃসীমান্ত নদী সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় কয়েক দফা সুপারিশ করেছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন।
দেশের সর্বোচ্চ আদালত বলছেন- নদ-নদীর মালিকানা ও স্বত্ব জনগণের। এ মালিকানা ও স্বত্ব রক্ষা করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের এবং রাষ্ট্রের অধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার। তাই নদী রক্ষায় সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর আইনের প্রয়োগ করে যেতে হবে। আমরা নদ-নদীর মুক্ত পানিপ্রবাহ দেখতে চাই। দখল ও দূষণমুক্ত নদ-নদী চাই।
শুক্রবার, ২২ অক্টোবর ২০২১
দেশে দখলবাজি দূরারোগ্য এক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি, রাস্তা-ঘাট, ফুটপাত সব দখলদারের পেটে। দুর্বৃত্তরা দখল করতে করতে খাল-বিল-জলাশয় ছাড়িয়ে নদীতে পর্যন্ত নেমেছে। একদিকে দখল বহুমাত্রিক রূপলাভ করেছে, অন্যদিকে এর বিস্তৃতি বেড়েছে। নদী দখল শুধু রাজধানী বা বড় বড় নগরীতেই থেমে নেই। ছোট-বড় অন্যান্য শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম-গঞ্জেও চলছে দখল।
৬০ হাজারেরও বেশি দখলদার দেশের ৭০০ নদী দখল করে আছে বলে সম্প্রতি জানিয়েছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। নদীর দখলদারদের একদিকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে অন্যদিকে নতুন করে আবার দখল চলছে। ছোট দোকান থেকে শুরু করে বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান- সবই আছে দখলদারের তালিকায়।
ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার রাংসা নদীর পানিপ্রবাহ বন্ধ করে ঘের দিয়ে মাছ চাষ করছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। নদীর বিভিন্ন স্থানে বাঁধ দেওয়ার কারণে ফসলি জমি হয়ে পড়ছে অনাবাদি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বালু কাটার অবৈধ ড্রেজার। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
নদী দখল করে মাছের ঘের তৈরি করা, নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে বালু কাটা- এসব ঘটনা দেশের অন্যান্য জায়গায়ও ঘটছে। প্রশাসনের নাকের ডগার ওপর দিয়েই এগুলো চলতে থাকে কীভাবে- সেটা একটা প্রশ্ন। প্রশাসন আছে কেন, তাদের কাজ কী?
স্থানীয়রা বলছেন, দুই দশক আগেও রাংসা নদীতে নৌকা, ট্রলারসহ অন্যান্য নৌযান চলত। এখন নদীজুড়ে শুধুই কচুরিপানা। সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছে, চলতি আমন মৌসুমে সেখানে ছয় হাজার হেক্টর জমিতে কৃষক চাষাবাদ করতে পারেনি। নদীর প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উপজেলায় জলাবদ্ধতা সংকটও প্রকট। পানিতে তলিয়ে কৃষকরা ফসলহানি হচ্ছে, জনজীবনের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। আবার শুকনা মৌসুমে পানির অভাবে ফসল ফলাতে পারছেন না কৃষক। নদীটির বর্তমান অবস্থা জীববৈচিত্র্যের ওপর চরম নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
দেশজুড়ে নদ-নদী দখলের অবসান ঘটাতে হবে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে দেশের সব নদ-নদী-খালের আইনগত অভিভাবক ঘোষণা করেছেন আদালত। সংস্থাটি বিভিন্ন মামলার রায়, আদালতের নির্দেশনা এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়ের পরামর্শ সভার মতামত নিয়ে নদী রক্ষায় ১২২ দফার সুপারিশ তৈরি করেছে। ২০১৮ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে সুপারিশগুলো প্রকাশ করা হয়। সুপারিশের শুরুতেই নদীর সীমানা নির্ধারণ, অবৈধ দখলদার চিহ্নিতকরণ ও উচ্ছেদ, নদী রক্ষায় আইনের প্রয়োগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত, পুলিশ কী ভূমিকা রাখবে ইত্যাদি সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে। তাছাড়া দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও বন্ধ, নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি, গবেষণা, প্রশাসনিক ও ব্যবস্থাপনাসহ আন্তঃসীমান্ত নদী সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় কয়েক দফা সুপারিশ করেছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন।
দেশের সর্বোচ্চ আদালত বলছেন- নদ-নদীর মালিকানা ও স্বত্ব জনগণের। এ মালিকানা ও স্বত্ব রক্ষা করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের এবং রাষ্ট্রের অধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার। তাই নদী রক্ষায় সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর আইনের প্রয়োগ করে যেতে হবে। আমরা নদ-নদীর মুক্ত পানিপ্রবাহ দেখতে চাই। দখল ও দূষণমুক্ত নদ-নদী চাই।