দেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ২৯ হাজারের বেশি মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর মৃতের সংখ্যা ছিল ২৮ হাজারেরও বেশি। ডব্লিউএইচও’র তথ্যানুযায়ী, এ সময় পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যু সরকারি এই হিসাবের ৫ গুণ। সে হিসেবে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় দেড় লাখের মতো।
ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদনে দেয়া তথ্য সঠিক নয় দাবি করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, শিগগিরই ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়া এবং নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করবে সরকার।
করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে সরকারের দেয়া তথ্য ও ডব্লিউএইচও’র দেয়া তথ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। ব্যবধানটা এত বেশি যে, কোন তথ্য সঠিক, সেটা নিয়ে জনমনে বিভ্রান্ত দেখা দিয়েছে।
তবে আপাত দৃষ্টিতে ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদন ঠিক আছে বলে মনে করছেন দেশের জনস্বাস্থ্যবিদরা। তাদের মতে, মহামারীতে সারাদেশে বহু মানুষ মারা গেছে, যাদের কোভিড পরীক্ষা হয়নি। হাসপাতালে চিকিৎসা পায়নি। শুধু তাই নয় বিভিন্ন দেশের তুলনায় বাংলাদেশে নমুনা পরীক্ষাও কম হয়েছে।
ডব্লিউএইচও তাদের গবেষণায় ‘অতিরিক্ত মৃত্যু’ পদ্ধতি ব্যবহার করেছে। এই পদ্ধতিতে করোনা মহামারীর আগে কোনো অঞ্চলের প্রত্যাশিত মৃত্যুর চেয়ে মহামারী শুরুর পর কী পরিমাণ বেশি মৃত্যু হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হয়েছে। ডব্লিউএইচও বলেছে, আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত একটি প্যানেল এ বিষয়ে বেশ কয়েক মাস ধরে কাজ করেছে। তারা সরকারিভাবে দেয়া তথ্য ও স্থানীয়ভাবে পাওয়া তথ্য মিলিয়ে দেখেছে। একই সঙ্গে পরিসংখ্যানের বিভিন্ন মডেল ব্যবহার করেছে।
এজন্য দেশের জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কাছে ডব্লিউএইচওর তথ্য গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে। শুধু বাংলাদেশেই নয় অন্যান্য দেশেরও করোনায় মৃত্যু নিয়ে সরকারি তথ্যের সাথে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে সরকারি হিসাবের তুলনায় করোনায় মৃত্যু ১০ গুণ বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সরকার যে হিসাবই দেখাক না কেন, জনমনেও ধারণা জন্মেছে করোনায় আরও বেশি মানুষ মারা গেছে। কারণ করোনার উপসর্গ বা লক্ষণ নিয়ে সারাদেশে বহু সংখ্যক মানুষ মারা গেছে। তারা টেস্ট করাতে পারেনি, হাসপাতালে যেতে পারেনি, ভর্তি হতে পারেনি বা চিকিৎসা পায়নি। এমনকি হাসপাতালেও অনেকে মারা গেছে, যাদের টেস্ট করা যায়নি। তারা করোনায় আক্রান্ত ছিলেন কি না, সেটা জানা যায়নি। এর বাইরে মহামারী ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার পর করোনাভাইরাসে সংক্রমিত না হওয়া রোগীরা স্বাস্থ্যসেবা পাননি। এ কারণে যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মৃত্যুর কারণও মহামারীর পরোক্ষ প্রভাব।
এমন পরিস্থিতিতে প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা নিরূপণে জনস্বাস্থ্যবিদরা একটি ‘স্বাধীন কমিশন’ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় এমন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ প্যানেলের মাধ্যমে এ কমিশন গঠন করার কথা বলেছেন তারা। কমিটি মহামারীতে মৃত্যুর তথ্য খুঁজে বের করবে। জনস্বাস্থ্যবিদদের এ প্রস্তাব সময়োপযোগী বলেই আমরা মনে করি। বিষয়টি সরকারের বিবেচনা করা উচিত।
জনমনে বিভ্রান্তি দূর করার জন্য হলেও মৃত্যুর সঠিক সংখ্যা নিরূপণ করা দরকার। তাছাড়া করোনা মাহামারীর প্রকৃত চিত্র বোঝার জন্য এটা জানা জরুরি। প্রকৃত চিত্র জানা না গেলে এ মহামারী কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা কঠিন হবে। কারণ মহামারী এখনো শেষ হয়ে যায়নি। সম্প্রতি চীনে ব্যাপকহারে করোনো সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা চাই না বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ আবার বাড়–ক। সেজন্য মহামারীতে আক্রান্তের ও মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা জানা জরুরি।
সোমবার, ০৯ মে ২০২২
দেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ২৯ হাজারের বেশি মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর মৃতের সংখ্যা ছিল ২৮ হাজারেরও বেশি। ডব্লিউএইচও’র তথ্যানুযায়ী, এ সময় পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যু সরকারি এই হিসাবের ৫ গুণ। সে হিসেবে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় দেড় লাখের মতো।
ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদনে দেয়া তথ্য সঠিক নয় দাবি করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, শিগগিরই ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়া এবং নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করবে সরকার।
করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে সরকারের দেয়া তথ্য ও ডব্লিউএইচও’র দেয়া তথ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। ব্যবধানটা এত বেশি যে, কোন তথ্য সঠিক, সেটা নিয়ে জনমনে বিভ্রান্ত দেখা দিয়েছে।
তবে আপাত দৃষ্টিতে ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদন ঠিক আছে বলে মনে করছেন দেশের জনস্বাস্থ্যবিদরা। তাদের মতে, মহামারীতে সারাদেশে বহু মানুষ মারা গেছে, যাদের কোভিড পরীক্ষা হয়নি। হাসপাতালে চিকিৎসা পায়নি। শুধু তাই নয় বিভিন্ন দেশের তুলনায় বাংলাদেশে নমুনা পরীক্ষাও কম হয়েছে।
ডব্লিউএইচও তাদের গবেষণায় ‘অতিরিক্ত মৃত্যু’ পদ্ধতি ব্যবহার করেছে। এই পদ্ধতিতে করোনা মহামারীর আগে কোনো অঞ্চলের প্রত্যাশিত মৃত্যুর চেয়ে মহামারী শুরুর পর কী পরিমাণ বেশি মৃত্যু হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হয়েছে। ডব্লিউএইচও বলেছে, আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত একটি প্যানেল এ বিষয়ে বেশ কয়েক মাস ধরে কাজ করেছে। তারা সরকারিভাবে দেয়া তথ্য ও স্থানীয়ভাবে পাওয়া তথ্য মিলিয়ে দেখেছে। একই সঙ্গে পরিসংখ্যানের বিভিন্ন মডেল ব্যবহার করেছে।
এজন্য দেশের জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কাছে ডব্লিউএইচওর তথ্য গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে। শুধু বাংলাদেশেই নয় অন্যান্য দেশেরও করোনায় মৃত্যু নিয়ে সরকারি তথ্যের সাথে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে সরকারি হিসাবের তুলনায় করোনায় মৃত্যু ১০ গুণ বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সরকার যে হিসাবই দেখাক না কেন, জনমনেও ধারণা জন্মেছে করোনায় আরও বেশি মানুষ মারা গেছে। কারণ করোনার উপসর্গ বা লক্ষণ নিয়ে সারাদেশে বহু সংখ্যক মানুষ মারা গেছে। তারা টেস্ট করাতে পারেনি, হাসপাতালে যেতে পারেনি, ভর্তি হতে পারেনি বা চিকিৎসা পায়নি। এমনকি হাসপাতালেও অনেকে মারা গেছে, যাদের টেস্ট করা যায়নি। তারা করোনায় আক্রান্ত ছিলেন কি না, সেটা জানা যায়নি। এর বাইরে মহামারী ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার পর করোনাভাইরাসে সংক্রমিত না হওয়া রোগীরা স্বাস্থ্যসেবা পাননি। এ কারণে যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মৃত্যুর কারণও মহামারীর পরোক্ষ প্রভাব।
এমন পরিস্থিতিতে প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা নিরূপণে জনস্বাস্থ্যবিদরা একটি ‘স্বাধীন কমিশন’ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় এমন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ প্যানেলের মাধ্যমে এ কমিশন গঠন করার কথা বলেছেন তারা। কমিটি মহামারীতে মৃত্যুর তথ্য খুঁজে বের করবে। জনস্বাস্থ্যবিদদের এ প্রস্তাব সময়োপযোগী বলেই আমরা মনে করি। বিষয়টি সরকারের বিবেচনা করা উচিত।
জনমনে বিভ্রান্তি দূর করার জন্য হলেও মৃত্যুর সঠিক সংখ্যা নিরূপণ করা দরকার। তাছাড়া করোনা মাহামারীর প্রকৃত চিত্র বোঝার জন্য এটা জানা জরুরি। প্রকৃত চিত্র জানা না গেলে এ মহামারী কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা কঠিন হবে। কারণ মহামারী এখনো শেষ হয়ে যায়নি। সম্প্রতি চীনে ব্যাপকহারে করোনো সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা চাই না বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ আবার বাড়–ক। সেজন্য মহামারীতে আক্রান্তের ও মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা জানা জরুরি।