লিভার ক্যানসার ও সিরোসিসের প্রধান কারণ হচ্ছে হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস। দেশে হেপাটাইটিস ভাইরাসের আক্রান্ত প্রায় ১ কোটি। তাদের মধ্যে বি ভাইরাসে আক্রান্ত ৮৫ লাখ; অন্যরা আক্রান্ত সি ভাইরাসে। উদ্বেগের বিষয় হলো তাদের মধ্যে প্রতি ১০ জনের ৯ জনই জানেন না, তারা এ ভাইরাসে আক্রান্ত। দেশে প্রতি বছর হেপাটাইটিস ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ২০ হাজার মানুষ। এমন পটভূমিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও গত ২৮ জুলাই পালিত হয়েছে বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল- হেপাটাইটিস নির্মূলে এখনই সময়।
দেশে প্রায় সব রোগের আধুনিক চিকিৎসা পাশাপাশি ওষুধপত্র পাওয়া যায়। তবে হেপাটাইটিসসের মতো প্রাণঘাতী রোগটি নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য এখনো বিভাগীয় বা বড় শহরে যেতে হয়। এ রোগের চিকিৎসা ব্যয়ও বেশি, যা অনেকেরই সাধ্যের বাইরে। তা ছাড়া এ রোগের চিকিৎসায় সরকারের কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বা রোডম্যাপ নেই। অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) হেপাটাইটিসকে বড় ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। দেশে এ রোগের বর্তমান পরিসংখ্যানেও তেমটাই দেখা যাচ্ছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জন করতে হলে ২০৩০ সালের মধ্যে হেপাটাইটিসে সংক্রমণ ৯০ শতাংশ ও মৃত্যু ৬৫ শতাংশ কমিয়ে আনতে হবে।
দেশে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের কার্যকর টিকা বিদ্যমান রয়েছে। হেপাটাইটিস সি ভাইরাস প্রতিরোধী ওষুধ আবিষ্কার হয়েছে। তাই হেপাটাইটিস রোধে শুধু দরকার কার্যকর এবং কৌশলগত পরিকল্পনা। সংশ্লিষ্টদের এ পরিকল্পনা গ্রহণ করে বাস্তবায়ন করতে হবে।
ডব্লিউএইচও হেপাটাইটিসের চিকিৎসাকে কমিউনিটির কাছাকাছি বা প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। যার যে ধরনের হেপাটাইটিসই থাকুক না কেন, তিনি যেন সঠিক চিকিৎসা সহজেই পেতে পারেন সে কথা বলেছে সংস্থাটি। আমাদের দেশে ১৮ হাজার ৫০০ কমিউনিটি ক্লিনিক আছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, একটু উদ্যোগ নিলে এসব ক্লিনিকের মাধ্যমে গ্রামের বিশাল জনগোষ্ঠীকে হেপাটাইটিস ভাইরাস সম্পর্কে জানানো সম্ভব। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। এর বাইরে হেপাটাইটিস ডাক্তারের সংখ্যা অনেক বাড়াতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল হেলথ সেক্টর স্ট্র্যাটেজি অনুযায়ী, হেপাটাইটিস নির্মূলে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের টিকাদান, হেপাটাইটিসে আক্রান্ত মায়ের সন্তান জন্মদানের সময় নবজাতককে টিকাদান, নিরাপদ ইনজেকশনের ব্যবহার, হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের ডায়াগনসিস ও আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা- এ পাঁচটি বিষয়ের কথা বলা হয়েছে।
দেশে ২০০৩ সাল থেকে ইপিআই শিডিউলে হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিনকে যুক্ত করা হয়েছে। পিছিয়ে রয়েছে আক্রান্তদের ডায়াগনসিস ও চিকিৎসায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, হেপাটাইটিস সির মুখে খাওয়ার ওষুধের মাধ্যমে প্রায় শতভাগ রোগ নির্মূল সম্ভব হলেও দাম অনেক বেশি। তাই বিনা মূল্যে কিংবা স্বল্প মূল্যে এসব ওষুধ সরবরাহ করা হলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। যেমনটা পাওয়া সম্ভব হয়েছে যক্ষ্মা রোগীদের বেলায়। এর বাইরে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের টিকা সবার জন্য বিনা মূল্যে দেয়ার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
অনিরাপদ রক্ত সঞ্চালন, সুই-সিরিঞ্জের ব্যবহার ও অনিরাপদ দৈহিক সম্পর্কের মাধ্যমে হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাস ছড়ায়। কোন পরিবারে একজনের হেপাটাইটিস হলে প্রায় সবার হতে পারে। তাই হেপাটাইটিস ভাইরাস সম্পর্কে সবার মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। হেপাটাইটিস নির্মূলে সংশ্লিষ্ট সবাইকেই অনেক বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
শুক্রবার, ২৯ জুলাই ২০২২
লিভার ক্যানসার ও সিরোসিসের প্রধান কারণ হচ্ছে হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস। দেশে হেপাটাইটিস ভাইরাসের আক্রান্ত প্রায় ১ কোটি। তাদের মধ্যে বি ভাইরাসে আক্রান্ত ৮৫ লাখ; অন্যরা আক্রান্ত সি ভাইরাসে। উদ্বেগের বিষয় হলো তাদের মধ্যে প্রতি ১০ জনের ৯ জনই জানেন না, তারা এ ভাইরাসে আক্রান্ত। দেশে প্রতি বছর হেপাটাইটিস ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ২০ হাজার মানুষ। এমন পটভূমিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও গত ২৮ জুলাই পালিত হয়েছে বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল- হেপাটাইটিস নির্মূলে এখনই সময়।
দেশে প্রায় সব রোগের আধুনিক চিকিৎসা পাশাপাশি ওষুধপত্র পাওয়া যায়। তবে হেপাটাইটিসসের মতো প্রাণঘাতী রোগটি নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য এখনো বিভাগীয় বা বড় শহরে যেতে হয়। এ রোগের চিকিৎসা ব্যয়ও বেশি, যা অনেকেরই সাধ্যের বাইরে। তা ছাড়া এ রোগের চিকিৎসায় সরকারের কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বা রোডম্যাপ নেই। অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) হেপাটাইটিসকে বড় ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। দেশে এ রোগের বর্তমান পরিসংখ্যানেও তেমটাই দেখা যাচ্ছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জন করতে হলে ২০৩০ সালের মধ্যে হেপাটাইটিসে সংক্রমণ ৯০ শতাংশ ও মৃত্যু ৬৫ শতাংশ কমিয়ে আনতে হবে।
দেশে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের কার্যকর টিকা বিদ্যমান রয়েছে। হেপাটাইটিস সি ভাইরাস প্রতিরোধী ওষুধ আবিষ্কার হয়েছে। তাই হেপাটাইটিস রোধে শুধু দরকার কার্যকর এবং কৌশলগত পরিকল্পনা। সংশ্লিষ্টদের এ পরিকল্পনা গ্রহণ করে বাস্তবায়ন করতে হবে।
ডব্লিউএইচও হেপাটাইটিসের চিকিৎসাকে কমিউনিটির কাছাকাছি বা প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। যার যে ধরনের হেপাটাইটিসই থাকুক না কেন, তিনি যেন সঠিক চিকিৎসা সহজেই পেতে পারেন সে কথা বলেছে সংস্থাটি। আমাদের দেশে ১৮ হাজার ৫০০ কমিউনিটি ক্লিনিক আছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, একটু উদ্যোগ নিলে এসব ক্লিনিকের মাধ্যমে গ্রামের বিশাল জনগোষ্ঠীকে হেপাটাইটিস ভাইরাস সম্পর্কে জানানো সম্ভব। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। এর বাইরে হেপাটাইটিস ডাক্তারের সংখ্যা অনেক বাড়াতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল হেলথ সেক্টর স্ট্র্যাটেজি অনুযায়ী, হেপাটাইটিস নির্মূলে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের টিকাদান, হেপাটাইটিসে আক্রান্ত মায়ের সন্তান জন্মদানের সময় নবজাতককে টিকাদান, নিরাপদ ইনজেকশনের ব্যবহার, হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের ডায়াগনসিস ও আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা- এ পাঁচটি বিষয়ের কথা বলা হয়েছে।
দেশে ২০০৩ সাল থেকে ইপিআই শিডিউলে হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিনকে যুক্ত করা হয়েছে। পিছিয়ে রয়েছে আক্রান্তদের ডায়াগনসিস ও চিকিৎসায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, হেপাটাইটিস সির মুখে খাওয়ার ওষুধের মাধ্যমে প্রায় শতভাগ রোগ নির্মূল সম্ভব হলেও দাম অনেক বেশি। তাই বিনা মূল্যে কিংবা স্বল্প মূল্যে এসব ওষুধ সরবরাহ করা হলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। যেমনটা পাওয়া সম্ভব হয়েছে যক্ষ্মা রোগীদের বেলায়। এর বাইরে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের টিকা সবার জন্য বিনা মূল্যে দেয়ার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
অনিরাপদ রক্ত সঞ্চালন, সুই-সিরিঞ্জের ব্যবহার ও অনিরাপদ দৈহিক সম্পর্কের মাধ্যমে হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাস ছড়ায়। কোন পরিবারে একজনের হেপাটাইটিস হলে প্রায় সবার হতে পারে। তাই হেপাটাইটিস ভাইরাস সম্পর্কে সবার মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। হেপাটাইটিস নির্মূলে সংশ্লিষ্ট সবাইকেই অনেক বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।