কৃষি শ্রমিক, জমির মালিক এবং নারী-শিশু মিলে তারা ১৪ জন। তাদের সবাই গিয়েছিল ফসলের খেতে। কৃষি শ্রমিকরা রোপা আমনের চারা তুলছিল। সে সময় বৃষ্টি শুরু হলে তারা সবাই টিনের তৈরি একটি সেচ ঘরে আশ্রয় নিয়েছিল। তখন বজ্রপাতে ঘটনাস্থলে আটজনের মৃত্যু হয়। পরে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এতে আহত হয়েছে অপর পাঁচজন। ঘটনাটি ঘটেছে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার মাটিকোড়া গ্রামে। এই ঘটনায় নিহতদের স্বজনদের পাশাপাশি এলাকাবাসীও শোকাভিভূত।
বজ্রপাতে একসঙ্গে অনেক সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর করুণ ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। গত বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে বরযাত্রীদের একটি দলের ওপর বজ্রপাত হলে ১৭ জন মারা যায়। বরযাত্রীর বৃষ্টির সময় নদীতীরে অবস্থিত ইজারাদারের টিনের চালার টং ঘরে আশ্রয় নিয়েছিল।
দেশের বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতে প্রায়ই মানুষ হতাহতের ঘটনা ঘটে। ২০১৬ সালে বজ্রপাতকে দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। বন্যা বা সাইক্লোনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের তুলনায় বজ্রপাতে এখন বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০১১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সারা দেশে বজ্রপাতে মারা গেছেন ২ হাজার ১৬৪ জন। তবে বজ্রপাতে কত মানুষ আহত হয়, গবাদি পশু মারা যায় কতগুলো তা জানা যায়। ঘরবাড়ি বা গাছপালা ধ্বংসের পরিসংখ্যানও জানা যায় না।
কৃষি জমি, খেলার মাঠ বা উন্মুক্ত প্রান্তরে বজ্রপাতের ঘটনা বেশি ঘটে। বৃষ্টির সময়ে এসব স্থানে থাকা মানুষ আশ্রয় খুঁজে পায় না। যে কারণে তারা বজ্রপাতের সহজ শিকার হয়। আবার টিনের ঘরের মতো ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে আশ্রয় নিয়েও অনেকে মারা যান।
বজ্রপাতের বিপদ সম্পর্কে এখনো বহু মানুষ অসচেতন। বিশেষ করে বজ্রপাতের কবল থেকে রক্ষা পেতে হলে কী করতে হবে, আর কী করা উচিত নয়, সেটা অনেকেই জানেন না। বজ্রপাত সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানো জরুরি। কখন বজ্রপাতের আশঙ্কা থাকে, বজ্রপাতের সময় কী সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, কোথায় আশ্রয় নিতে হবে, সেসব বিষয়ে মানুষকে বিশেষ করে বজ্রপাত প্রবণ এলাকার বাসিন্দাদের ব্যাপক হারে জানাতে হবে।
বজ্রপাত প্রতিরোধে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় তালগাছ লাগাচ্ছে। তবে তালগাছ লাগানোর ক্ষেত্রে স্থান নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তালগাছগুলো লাগানো হয়েছে মূলত রাস্তার পাশে। এতে বজ্রপাত রোধের উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, বজ্রপাতে সাধারণত চাষাবাদের কাজে নিয়োজিত কৃষক মাঠে বা জলাধারের পাশে অবস্থানরত মানুষ মারা যায়। এ জন্য বজ্রপাতপ্রবণ স্থানে তালগাছ লাগানো জরুরি।
তালগাছ লাগানো হলেও এর সুফল মিলতে অনেক বছর অপেক্ষা করতে হবে। গাছগুলোকে বজ্রপাত প্রতিরোধের মতো সক্ষম বা বড় হতে কমবেশি ১০ বছর সময় লাগতে পারে। এ জন্য বিশেষজ্ঞরা জরুরি ভিত্তিতে লাইটনিং অ্যারেস্টার বসানোর ওপর জোর দিচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেশের কোন কোন স্থানে লাইটনিং ডিটেকশন সেন্সর বসিয়েছে। এ ধরনের আরও যন্ত্র স্থাপন করা দরকার। হাওরাঞ্চলসহ যেসব এলাকায় বেশি বজ্রপাত হয় সেসব এলাকায় লাইটনিং অ্যারেস্টার যন্ত্র বসানোর ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে বজ্রপাত প্রতিরোধী আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা যায় কি না, সেটা সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করে দেখতে হবে।
রোববার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২
কৃষি শ্রমিক, জমির মালিক এবং নারী-শিশু মিলে তারা ১৪ জন। তাদের সবাই গিয়েছিল ফসলের খেতে। কৃষি শ্রমিকরা রোপা আমনের চারা তুলছিল। সে সময় বৃষ্টি শুরু হলে তারা সবাই টিনের তৈরি একটি সেচ ঘরে আশ্রয় নিয়েছিল। তখন বজ্রপাতে ঘটনাস্থলে আটজনের মৃত্যু হয়। পরে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এতে আহত হয়েছে অপর পাঁচজন। ঘটনাটি ঘটেছে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার মাটিকোড়া গ্রামে। এই ঘটনায় নিহতদের স্বজনদের পাশাপাশি এলাকাবাসীও শোকাভিভূত।
বজ্রপাতে একসঙ্গে অনেক সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর করুণ ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। গত বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে বরযাত্রীদের একটি দলের ওপর বজ্রপাত হলে ১৭ জন মারা যায়। বরযাত্রীর বৃষ্টির সময় নদীতীরে অবস্থিত ইজারাদারের টিনের চালার টং ঘরে আশ্রয় নিয়েছিল।
দেশের বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতে প্রায়ই মানুষ হতাহতের ঘটনা ঘটে। ২০১৬ সালে বজ্রপাতকে দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। বন্যা বা সাইক্লোনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের তুলনায় বজ্রপাতে এখন বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০১১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সারা দেশে বজ্রপাতে মারা গেছেন ২ হাজার ১৬৪ জন। তবে বজ্রপাতে কত মানুষ আহত হয়, গবাদি পশু মারা যায় কতগুলো তা জানা যায়। ঘরবাড়ি বা গাছপালা ধ্বংসের পরিসংখ্যানও জানা যায় না।
কৃষি জমি, খেলার মাঠ বা উন্মুক্ত প্রান্তরে বজ্রপাতের ঘটনা বেশি ঘটে। বৃষ্টির সময়ে এসব স্থানে থাকা মানুষ আশ্রয় খুঁজে পায় না। যে কারণে তারা বজ্রপাতের সহজ শিকার হয়। আবার টিনের ঘরের মতো ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে আশ্রয় নিয়েও অনেকে মারা যান।
বজ্রপাতের বিপদ সম্পর্কে এখনো বহু মানুষ অসচেতন। বিশেষ করে বজ্রপাতের কবল থেকে রক্ষা পেতে হলে কী করতে হবে, আর কী করা উচিত নয়, সেটা অনেকেই জানেন না। বজ্রপাত সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানো জরুরি। কখন বজ্রপাতের আশঙ্কা থাকে, বজ্রপাতের সময় কী সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, কোথায় আশ্রয় নিতে হবে, সেসব বিষয়ে মানুষকে বিশেষ করে বজ্রপাত প্রবণ এলাকার বাসিন্দাদের ব্যাপক হারে জানাতে হবে।
বজ্রপাত প্রতিরোধে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় তালগাছ লাগাচ্ছে। তবে তালগাছ লাগানোর ক্ষেত্রে স্থান নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তালগাছগুলো লাগানো হয়েছে মূলত রাস্তার পাশে। এতে বজ্রপাত রোধের উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, বজ্রপাতে সাধারণত চাষাবাদের কাজে নিয়োজিত কৃষক মাঠে বা জলাধারের পাশে অবস্থানরত মানুষ মারা যায়। এ জন্য বজ্রপাতপ্রবণ স্থানে তালগাছ লাগানো জরুরি।
তালগাছ লাগানো হলেও এর সুফল মিলতে অনেক বছর অপেক্ষা করতে হবে। গাছগুলোকে বজ্রপাত প্রতিরোধের মতো সক্ষম বা বড় হতে কমবেশি ১০ বছর সময় লাগতে পারে। এ জন্য বিশেষজ্ঞরা জরুরি ভিত্তিতে লাইটনিং অ্যারেস্টার বসানোর ওপর জোর দিচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেশের কোন কোন স্থানে লাইটনিং ডিটেকশন সেন্সর বসিয়েছে। এ ধরনের আরও যন্ত্র স্থাপন করা দরকার। হাওরাঞ্চলসহ যেসব এলাকায় বেশি বজ্রপাত হয় সেসব এলাকায় লাইটনিং অ্যারেস্টার যন্ত্র বসানোর ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে বজ্রপাত প্রতিরোধী আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা যায় কি না, সেটা সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করে দেখতে হবে।