সিরাজগঞ্জের যমুনাসহ অন্যান্য নদী, চলন বিল ও বিভিন্ন জলাশয় নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি জাল দিয়ে অবাধে মাছ শিকার করা হচ্ছে। মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করে জাল জব্দ ও অভিযুক্তদের জেল-জরিমানা করলেও থামছে না এ জালের ব্যবহার। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চায়না দুয়ারি জালের ব্যবহার বন্ধ করা না গেলে মাছসহ জলজ প্রাণ-প্রকৃতি যেমন হুমকির মুুখে পড়বে, তেমনি প্রকৃত মৎস্যজীবীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এ নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সংবাদ-এ বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশে মাছ ধরার জালের ফাঁসের অনুমোদিত পরিমাপ সাড়ে ৫ সেন্টিমিটার (সংশোধিত আইন)। জালের ‘ফাঁস’-এর চেয়ে কম হলে তা আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ। দেশে নিষিদ্ধ জালের তালিকায় চায়না দুয়ারির নাম উল্লেখ না থাকলেও বিদ্যমান আইন অনুযায়ী এটি নিষিদ্ধ। তাই এ ধরনের জাল ব্যবহার করার কোন সুযোগ নেই।
তারপরও দেশে অবাধে চায়না দুয়ারি জাল ব্যবহার করা হচ্ছে, এক শ্রেণীর জেলে এ জাল দিয়ে মাছ শিকার করছে। পদ্মা নদীর তীরবর্তী জেলা-উপজেলায় প্রথম চায়না দুয়ারি জালের ব্যবহার শুরু হয় বলে জানা যায়। এখন দেশের সব অঞ্চলেই ভয়ংকর এ জাল ছড়িয়ে পড়েছে। শুধু সিরাজগঞ্জই নয়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রায়ই এ জাল দিয়ে মাছ শিকারের খবর গণমাধ্যমে পাওয়া যায়।
প্রশ্ন হচ্ছে, নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও জেলেরা কেন এই জাল ব্যবহার করছে। তারা কি জানে না যে, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ব্যবহার করলে জেল-জরিমানা হতে পারে। মাঝে মাঝে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেল-জরিমানার দন্ড দেয়াও হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, তারপরে এ জালের ব্যবহার থামছে না কেন।
মৎস্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চায়না দুয়ারি জাল নয়, এটি মূলত মাছ ধরার এক ধরনের ফাঁদ। এই জালের বুননে একটি গিঁট থেকে আরেকটি গিঁটের দূরত্ব খুব কম, যে কারণে এতে মাছ একবার ঢুকলে আর বের হতে পারে না। এটি নদীর একেবারে তলদেশ পর্যন্ত যায় এবং তলদেশের মাটির সঙ্গে মিশে থাকে। ফলে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মভাবে সব মাছ আটকা পড়ে। আর কম পরিশ্রমে বেশি মাছ ধরতে পারায় কারেন্ট জালের চেয়েও বিপজ্জনক এই জাল জেলেদের কাছে জনপ্রিয়। তাদের ভাষ্য, অল্প পুঁজিতে চায়না দুয়ারিতে অনেক মাছ পাওয়া যায়।
মৎস্য গবেষকদের মতে, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ব্যাপক ক্ষতি ডেকে আনছে চায়না দুয়ারি জাল। এই জালে একবার ধরা পড়লে আর বের হতে পারে না, তাই অনেক বিপন্ন প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী মারা পড়ে। সেগুলো বংশবৃদ্ধিতে কোন ভূমিকা রাখতে পারে না। দেশে গত কয়েক দশকে ১০০-এর বেশি দেশি প্রজাতির মাছ বাজার থেকে ‘প্রায় নেই’ হয়ে গেছে।
এ জাল ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকগুলো জেলেদের বোঝাতে হবে। তারা সামান্য লাভের জন্য জলজ পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি করছে। মৎস্য সম্পদ বিপন্ন হলে তারাই প্রথম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ধরার মতো কোন মাছই আর অবশিষ্ট থাকবে না। জেলেদের এসব ব্যাপারে সতর্ক ও সচেতন করতে হবে। নিয়মিত অভিযান চালিয়ে চায়না দুয়ারি জাল ধ্বংস করতে হবে। এতেও কাজ না হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ব্যাপারে কোন ছাড় দেয়া যাবে না।
চায়না দুয়ারি নামে পরিচিত এই জাল দেশেই উৎপাদিত হয় বলে জানিয়েছেন জেলেরা। প্রশ্ন হচ্ছে, দেশে এই নিষিদ্ধ জাল উৎপাদিত হয় কীভাবে, আর জেলেদের হাতেই বা যায় কীভাবে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। এ জালের উৎপাদন ও বিপণন বন্ধে সংশ্লিষ্টদের কঠোর ও কার্যকরী ভূমিকা রাখতে হবে।
শুক্রবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২
সিরাজগঞ্জের যমুনাসহ অন্যান্য নদী, চলন বিল ও বিভিন্ন জলাশয় নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি জাল দিয়ে অবাধে মাছ শিকার করা হচ্ছে। মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করে জাল জব্দ ও অভিযুক্তদের জেল-জরিমানা করলেও থামছে না এ জালের ব্যবহার। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চায়না দুয়ারি জালের ব্যবহার বন্ধ করা না গেলে মাছসহ জলজ প্রাণ-প্রকৃতি যেমন হুমকির মুুখে পড়বে, তেমনি প্রকৃত মৎস্যজীবীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এ নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সংবাদ-এ বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশে মাছ ধরার জালের ফাঁসের অনুমোদিত পরিমাপ সাড়ে ৫ সেন্টিমিটার (সংশোধিত আইন)। জালের ‘ফাঁস’-এর চেয়ে কম হলে তা আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ। দেশে নিষিদ্ধ জালের তালিকায় চায়না দুয়ারির নাম উল্লেখ না থাকলেও বিদ্যমান আইন অনুযায়ী এটি নিষিদ্ধ। তাই এ ধরনের জাল ব্যবহার করার কোন সুযোগ নেই।
তারপরও দেশে অবাধে চায়না দুয়ারি জাল ব্যবহার করা হচ্ছে, এক শ্রেণীর জেলে এ জাল দিয়ে মাছ শিকার করছে। পদ্মা নদীর তীরবর্তী জেলা-উপজেলায় প্রথম চায়না দুয়ারি জালের ব্যবহার শুরু হয় বলে জানা যায়। এখন দেশের সব অঞ্চলেই ভয়ংকর এ জাল ছড়িয়ে পড়েছে। শুধু সিরাজগঞ্জই নয়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রায়ই এ জাল দিয়ে মাছ শিকারের খবর গণমাধ্যমে পাওয়া যায়।
প্রশ্ন হচ্ছে, নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও জেলেরা কেন এই জাল ব্যবহার করছে। তারা কি জানে না যে, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ব্যবহার করলে জেল-জরিমানা হতে পারে। মাঝে মাঝে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেল-জরিমানার দন্ড দেয়াও হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, তারপরে এ জালের ব্যবহার থামছে না কেন।
মৎস্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চায়না দুয়ারি জাল নয়, এটি মূলত মাছ ধরার এক ধরনের ফাঁদ। এই জালের বুননে একটি গিঁট থেকে আরেকটি গিঁটের দূরত্ব খুব কম, যে কারণে এতে মাছ একবার ঢুকলে আর বের হতে পারে না। এটি নদীর একেবারে তলদেশ পর্যন্ত যায় এবং তলদেশের মাটির সঙ্গে মিশে থাকে। ফলে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মভাবে সব মাছ আটকা পড়ে। আর কম পরিশ্রমে বেশি মাছ ধরতে পারায় কারেন্ট জালের চেয়েও বিপজ্জনক এই জাল জেলেদের কাছে জনপ্রিয়। তাদের ভাষ্য, অল্প পুঁজিতে চায়না দুয়ারিতে অনেক মাছ পাওয়া যায়।
মৎস্য গবেষকদের মতে, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ব্যাপক ক্ষতি ডেকে আনছে চায়না দুয়ারি জাল। এই জালে একবার ধরা পড়লে আর বের হতে পারে না, তাই অনেক বিপন্ন প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী মারা পড়ে। সেগুলো বংশবৃদ্ধিতে কোন ভূমিকা রাখতে পারে না। দেশে গত কয়েক দশকে ১০০-এর বেশি দেশি প্রজাতির মাছ বাজার থেকে ‘প্রায় নেই’ হয়ে গেছে।
এ জাল ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকগুলো জেলেদের বোঝাতে হবে। তারা সামান্য লাভের জন্য জলজ পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি করছে। মৎস্য সম্পদ বিপন্ন হলে তারাই প্রথম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ধরার মতো কোন মাছই আর অবশিষ্ট থাকবে না। জেলেদের এসব ব্যাপারে সতর্ক ও সচেতন করতে হবে। নিয়মিত অভিযান চালিয়ে চায়না দুয়ারি জাল ধ্বংস করতে হবে। এতেও কাজ না হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ব্যাপারে কোন ছাড় দেয়া যাবে না।
চায়না দুয়ারি নামে পরিচিত এই জাল দেশেই উৎপাদিত হয় বলে জানিয়েছেন জেলেরা। প্রশ্ন হচ্ছে, দেশে এই নিষিদ্ধ জাল উৎপাদিত হয় কীভাবে, আর জেলেদের হাতেই বা যায় কীভাবে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। এ জালের উৎপাদন ও বিপণন বন্ধে সংশ্লিষ্টদের কঠোর ও কার্যকরী ভূমিকা রাখতে হবে।