alt

মুক্ত আলোচনা

অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদেরও উৎসাহ দেয়া প্রয়োজন

সাঈদ চৌধুরী

: বৃহস্পতিবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২২

যারা পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয় কিন্তু পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে আসে ওরা দেখে যে শুধু ভালো ছাত্র-ছাত্রীরাই পুরস্কার গ্রহন করছে তখন তাদের অনুভূতি কেমন হয় ?

এ বিষয়টা নিয়ে তেমন কথা হয়নি কখনও । আমরা শিশুদের মানসিকতা উন্নয়ন নিয়ে কাজ করলেও এখনও যে অনেক কিছুই ভাবিনা বা এড়িয়ে যাই এ বিষয়টি তেমনই ।

বানিয়ারচালা গ্রামের একটি স্কুল চাইল্ড কেয়ার । এই স্কুলের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আমি ছিলাম । বরাবরই এই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ফজর আলী ভাই আমাকে স্কুলে যেতে বলেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে । ফাইনাল পরীক্ষার ফলাফল ঘোষনা হচ্ছে আর প্রথম দিককার ছেলে মেয়েরা আনন্দে হইহুল্লোর করছে ।

তাদের জন্য সাজানো রয়েছে ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট । প্রতিটি বিদ্যালয়, প্রতিটি প্রতিযোগিতার জায়গায় এমনটাই হয় ।

আমি গিয়েই ফজর আলী ভাইকে বললাম; ভাই এবার আমি একেবারে পেছনের বেঞ্চের শিক্ষার্থী যে ভালো ফলাফল করতে পারেনি তাদেরকে পুরস্কার দেবো । তিনি বললেন ভালো হবে ভাই, আমি ব্যবস্থা করে দেবো ।

তার আগে বলে নেই আমার ছোট বেলার কথা । বেশির ভাগ সময় নয় দশের দিকে রোল নম্বর থাকতো আমার । যখন বন্ধুরা পুরস্কার নিত তখন না দেখার ভান করে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকতাম । অনেক সময় বাবাও মঞ্চে থাকতেন, পুরস্কার তুলে দিতেন বন্ধুদের হাতে । অজানা একটা কষ্ট ভেতরে থাকতো কিন্তু যোগ্য না হয়ে উঠলে পুরস্কার পাবোনা এটা মেনে নিতেই হবে -এটাইতো বড় শিক্ষা !

এরকম সময় আমার চেয়ে যারা খারাপ ছাত্র তাদের মধ্যে কারও কারও মন খারাপ হতে দেখেছি আবার কারও দেখেছি পাত্তা না দেয়া । সব সুবিধা না পাওয়া একজন বন্ধু ছিলো আমাদের । যে প্রথম হল সে পুরস্কার হিসেবে এক রীম কাগজ পাওয়ার পর ঐ বন্ধুটি বলল “দেখ সাঈদ অরা ভালো ফলাফল করে দেইখা অরাই খালি কাগজ কলম পায়, আমরা ট্যাহার অভাবে কিনবারও পারিনা, পাইওনা” !

কথাটি আমার এখনও মনে হয় । বৎসর শেষে একটা পুরস্কারের দিনে যে পড়াশোনা চালিয়ে গেছে তারই পুরস্কার পাওয়া দরকার । পড়াশোনা ছাড়া যে যে ধরণের যোগ্য তাকে সে ধরণের একটা করে হলেও পুরস্কারের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন ।

এতে করে খারাপ ফলাফল করা শিক্ষার্থী হঠাৎ ঘুরে দাঁড়াতেও পারে । সে ভবিষ্যতে তাকে মেলে ধরতেও পারে । অপ্রাপ্তির মন খারাপ নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগা শিশুরা দিন দিনই নিজেদের গুটিয়ে নেয়, তারা এক সময় ভাবে আমরা পারবোই না ! পারার শক্তিকে বের করে আনতে না পারলে সে ব্যর্থতাতো আমাদেরও !

যাই হোক, বলছিলাম চাইল্ড কেয়ার স্কুলের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের কথা । কথা অনুযায়ী সব পুরস্কারের শেষে ডাকা হল যারা ভালো ফলাফল করেনি এমন পাঁচজনকে ।

তাদের মধ্যে একজনের শরীরে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে । তার অর্থনৈতিক অবস্থাও ভালো নয় । ও আমার পাশে এসে দাঁড়ালো । বাকী চারজনকেও আনা হল । আমি তাদেও হাতে আমার মেয়ে নিতু চৌধুরীর লেখা বইটি পুরস্কার হিসেবে তুলে দিয়ে বললাম এই বইয়ে তোমাদের প্রতিষ্ঠান প্রধান ফজর আলী স্যারের জীবনের কথা লেখা আছে । তিনি কত কষ্ট করে জীবনটা এগিয়ে নিয়েছেন এবং প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন তা তোমরা জানলে তোমাদেরও বড় হতে ইচ্ছে করবে ।

বইটি পেয়ে এবং স্যারের কথা লেখা আছে জেনে ওরা খুশি হল । বলে আসলাম আমি আবার এসে দেখে যাবো তোমরা আমার কথা শুনে ভালো ছাত্র হওয়ার, ভালো মানুষ হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছো কিনা !

যাই হোক, পুরস্কার মানুষের মনকে আনন্দিত করে । তাই শিশুদের কোনো অনুষ্ঠানে পুরস্কার দিতে হলে ছোট ছোট হলেও সবাইকে পুরস্কার দেয়াই প্রয়োজন ।

সরকার সরকারি স্কুলে এ ধরণের আয়োজন চালু করতে পারে । তাহলে শিশুদের মধ্যে হীনমন্যতা কমবে এবং তারা নিজেদের মেলে ধরতে আরেকটু বেশী সক্ষম হবে বলে মনে করি । সেদিন অনুষ্ঠানে এই অঞ্চলের শ্রেষ্ঠ সমাজ সেবক হিসেবে পরিচিত ফিরোজ ভাইও আমার কথা সাথে একমত হয়েছেন এবং বলেছেন তিনিও কাজটি করতে চেষ্টা করবেন । ভাবনার জায়গা প্রসারিত করলে সুশিক্ষিত, আত্ম নির্ভরশীল দেশ পাওয়া তেমন কঠিন হবার নয় ।

[লেখক: রসায়নবিদ]

মুজিবনগরে স্বাধীনতার সূর্যোদয়

বঙ্গাব্দ প্রচলনের ইতিকথা

পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব

কেউতো অপেক্ষায় নেই

ফরগেট মি নট

ছবি

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বীমা শিল্পের গুরুত্ব

একুশে ফেব্রুয়ারি আত্মপরিচয়ের দিন

দিদি, আপা, “বু” খালা

হিজল-করচ-আড়াংবন

ছবি

শেখ হাসিনা, এক উৎসারিত আলোকধারা

মনমাঝি

সেই ইটনা

ছবি

আংকর ওয়াট : উন্নত সভ্যতার স্মৃতিচিহ্ন যেখানে

নিয়ত ও নিয়তি

হারিয়ে যাওয়া ট্রেন

টম সয়ার না রবিনহুড

ছবি

‘ঝড়-বৃষ্টি আঁধার রাতে, আমরা আছি তোমার সাথে’

বাংলাদেশ-জাপান সহযোগিতা স্মারক: স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অনন্য মাইলফলক

রাষ্ট্রের কূটনৈতিক মিশনের পরিবর্তন আশু প্রয়োজন

কুয়েতের জীবনযাত্রার সাতকাহন: পর্ব-১-বিয়ে

বিবেকের লড়াই

ছবি

ছবি যেন শুধু ছবি নয়

বাত ব্যথার কারণ ও আধুনিক চিকিৎসা

ছবি

স্বাধীন স্বদেশে মুক্ত বঙ্গবন্ধু

ছবি

মহান নেতার স্বভূমিতে ফিরে আসা

ছবি

মেট্রোরেল : প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী চিন্তার ফসল

ছবি

আমার মা

ডিজিটাল বাংলাদেশ: প্রগতিশীল প্রযুক্তি, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নতি

ছবি

৩ নভেম্বর: ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের ধারাবাহিকতা

দেশের ইতিহাসে কলঙ্কজনক দ্বিতীয় অধ্যায়

এইচ এস সি ও সমমান পরীক্ষার্থীদের অনুশীলন

ছবি

ত্রিশ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়

শিল্প কারখানার পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় এনভায়রনমেন্টাল ইন্জিনিয়ারিং

অসুর: এক পরাজিত বিপ্লবী

অসুর জাতির ইতিহাস

tab

মুক্ত আলোচনা

অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদেরও উৎসাহ দেয়া প্রয়োজন

সাঈদ চৌধুরী

বৃহস্পতিবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২২

যারা পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয় কিন্তু পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে আসে ওরা দেখে যে শুধু ভালো ছাত্র-ছাত্রীরাই পুরস্কার গ্রহন করছে তখন তাদের অনুভূতি কেমন হয় ?

এ বিষয়টা নিয়ে তেমন কথা হয়নি কখনও । আমরা শিশুদের মানসিকতা উন্নয়ন নিয়ে কাজ করলেও এখনও যে অনেক কিছুই ভাবিনা বা এড়িয়ে যাই এ বিষয়টি তেমনই ।

বানিয়ারচালা গ্রামের একটি স্কুল চাইল্ড কেয়ার । এই স্কুলের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আমি ছিলাম । বরাবরই এই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ফজর আলী ভাই আমাকে স্কুলে যেতে বলেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে । ফাইনাল পরীক্ষার ফলাফল ঘোষনা হচ্ছে আর প্রথম দিককার ছেলে মেয়েরা আনন্দে হইহুল্লোর করছে ।

তাদের জন্য সাজানো রয়েছে ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট । প্রতিটি বিদ্যালয়, প্রতিটি প্রতিযোগিতার জায়গায় এমনটাই হয় ।

আমি গিয়েই ফজর আলী ভাইকে বললাম; ভাই এবার আমি একেবারে পেছনের বেঞ্চের শিক্ষার্থী যে ভালো ফলাফল করতে পারেনি তাদেরকে পুরস্কার দেবো । তিনি বললেন ভালো হবে ভাই, আমি ব্যবস্থা করে দেবো ।

তার আগে বলে নেই আমার ছোট বেলার কথা । বেশির ভাগ সময় নয় দশের দিকে রোল নম্বর থাকতো আমার । যখন বন্ধুরা পুরস্কার নিত তখন না দেখার ভান করে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকতাম । অনেক সময় বাবাও মঞ্চে থাকতেন, পুরস্কার তুলে দিতেন বন্ধুদের হাতে । অজানা একটা কষ্ট ভেতরে থাকতো কিন্তু যোগ্য না হয়ে উঠলে পুরস্কার পাবোনা এটা মেনে নিতেই হবে -এটাইতো বড় শিক্ষা !

এরকম সময় আমার চেয়ে যারা খারাপ ছাত্র তাদের মধ্যে কারও কারও মন খারাপ হতে দেখেছি আবার কারও দেখেছি পাত্তা না দেয়া । সব সুবিধা না পাওয়া একজন বন্ধু ছিলো আমাদের । যে প্রথম হল সে পুরস্কার হিসেবে এক রীম কাগজ পাওয়ার পর ঐ বন্ধুটি বলল “দেখ সাঈদ অরা ভালো ফলাফল করে দেইখা অরাই খালি কাগজ কলম পায়, আমরা ট্যাহার অভাবে কিনবারও পারিনা, পাইওনা” !

কথাটি আমার এখনও মনে হয় । বৎসর শেষে একটা পুরস্কারের দিনে যে পড়াশোনা চালিয়ে গেছে তারই পুরস্কার পাওয়া দরকার । পড়াশোনা ছাড়া যে যে ধরণের যোগ্য তাকে সে ধরণের একটা করে হলেও পুরস্কারের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন ।

এতে করে খারাপ ফলাফল করা শিক্ষার্থী হঠাৎ ঘুরে দাঁড়াতেও পারে । সে ভবিষ্যতে তাকে মেলে ধরতেও পারে । অপ্রাপ্তির মন খারাপ নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগা শিশুরা দিন দিনই নিজেদের গুটিয়ে নেয়, তারা এক সময় ভাবে আমরা পারবোই না ! পারার শক্তিকে বের করে আনতে না পারলে সে ব্যর্থতাতো আমাদেরও !

যাই হোক, বলছিলাম চাইল্ড কেয়ার স্কুলের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের কথা । কথা অনুযায়ী সব পুরস্কারের শেষে ডাকা হল যারা ভালো ফলাফল করেনি এমন পাঁচজনকে ।

তাদের মধ্যে একজনের শরীরে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে । তার অর্থনৈতিক অবস্থাও ভালো নয় । ও আমার পাশে এসে দাঁড়ালো । বাকী চারজনকেও আনা হল । আমি তাদেও হাতে আমার মেয়ে নিতু চৌধুরীর লেখা বইটি পুরস্কার হিসেবে তুলে দিয়ে বললাম এই বইয়ে তোমাদের প্রতিষ্ঠান প্রধান ফজর আলী স্যারের জীবনের কথা লেখা আছে । তিনি কত কষ্ট করে জীবনটা এগিয়ে নিয়েছেন এবং প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন তা তোমরা জানলে তোমাদেরও বড় হতে ইচ্ছে করবে ।

বইটি পেয়ে এবং স্যারের কথা লেখা আছে জেনে ওরা খুশি হল । বলে আসলাম আমি আবার এসে দেখে যাবো তোমরা আমার কথা শুনে ভালো ছাত্র হওয়ার, ভালো মানুষ হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছো কিনা !

যাই হোক, পুরস্কার মানুষের মনকে আনন্দিত করে । তাই শিশুদের কোনো অনুষ্ঠানে পুরস্কার দিতে হলে ছোট ছোট হলেও সবাইকে পুরস্কার দেয়াই প্রয়োজন ।

সরকার সরকারি স্কুলে এ ধরণের আয়োজন চালু করতে পারে । তাহলে শিশুদের মধ্যে হীনমন্যতা কমবে এবং তারা নিজেদের মেলে ধরতে আরেকটু বেশী সক্ষম হবে বলে মনে করি । সেদিন অনুষ্ঠানে এই অঞ্চলের শ্রেষ্ঠ সমাজ সেবক হিসেবে পরিচিত ফিরোজ ভাইও আমার কথা সাথে একমত হয়েছেন এবং বলেছেন তিনিও কাজটি করতে চেষ্টা করবেন । ভাবনার জায়গা প্রসারিত করলে সুশিক্ষিত, আত্ম নির্ভরশীল দেশ পাওয়া তেমন কঠিন হবার নয় ।

[লেখক: রসায়নবিদ]

back to top