alt

উপ-সম্পাদকীয়





























  • download

গ্যাং কালচারের সমাধান কোথায়

কে এম মাসুম বিল্লাহ

: সোমবার, ০২ অক্টোবর ২০২৩

কিশোর গ্যাং কালচার নামক সামাজিক অবক্ষয়ের নতুন এক চিত্র আমাদের গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যমতে, শুধু ঢাকাতেই ৯০টিরও অধিক কিশোর গ্যাং প্রায় সাড়ে তিনশো সদস্য দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। যদিও বিভিন্ন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী সংখ্যাটা আরো বেশি। কিশোর গ্যাং কালচার বর্তমানে শুধু মাত্র শহরের গন্ডিতেই সীমাবদ্ধ নেই, এর ভয়াল চিত্র দেখা যাচ্ছে গ্রামাঞ্চলেও।

কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা বিভিন্ন ধরনের অসামাজিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজে যুক্ত হচ্ছে। চুরি, ছিনতাই কিংবা হত্যার মত ঘটনাও এদের দ্বারা সংঘটিত হচ্ছে। নিজেদের মধ্যে মারামারি, প্রতিপক্ষের সঙ্গে রক্তপাত, মাদক গ্রহন ও পাচার থেকে শুরু করে, সাধারন মানুষের জন্য অস্থিরতা তৈরি, এসব কিছুই সংগঠিত হচ্ছে কিশোর গ্যাং এর মাধ্যমে। চট্রগ্রাম নগরীকে নিয়ে একটি অনুসন্ধানে উঠে আসে সেখানকার সক্রিয় কিশোর গ্যাং এর চিত্র। বিভিন্ন কিশোর গ্যাং এর নেতৃত্ব দিচ্ছে কথিত ‘বড় ভাই’। আর তাদের ছত্র ছায়ায় গড়ে উঠেছে এসব কিশোর গ্যাং গ্রুপ! ঐ অনুসন্ধানে আরো বলা হয় নগরীর অলি-গলিতে এসব গ্যাং এর সদস্যরা চালাচ্ছে অপরাধের রাজত্ব। খুন, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, টেম্পো স্টেশন নিয়ন্ত্রণ, বিল্ডিং তৈরির নির্মাণসামগ্রী নিতে বাধ্য করা, ডাকাতি, দাঙ্গা-হাঙ্গামাসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা। বাদ যাচ্ছে না অস্ত্র, মাদক ব্যবসাও। শহরের অলি গলির পাশাপাশি এই মহামারি এখন গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়েছে কিশোর গ্যাং কালচার। যার ভুক্তভোঁগী হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার ইন্দ্রকুল গ্রামের ইন্দ্রকুল মাধ্যমিক বিদ্যালয়টির পরিবেশ গ্রামের আর দশটি স্কুলের থেকে অনেকটা ভিন্ন! সাজানো গোছানো সুন্দর একটি স্কুল, স্কুলটির পূর্বের সফলতাও চোখে পড়ার মত। শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার জন্য আছে বিশাল বড় মাঠ, বিদ্যালয়ের সামনে ফুলের বাগান আর সারি সারি গাছ লাগানো, মনোমুগ্ধকর এই স্কুলেই কিছুদিন আগে ঘটে গেলো ইতিহাসের অন্যতম হৃদয়বিদারক এক ঘটনা। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নবম শ্রেণীর কয়েকজন বিপথগামী শিক্ষার্থীদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হয় একই স্কুলেরই দশম শ্রেণীর দুজন মেধাবী ছাত্র। অনেকটা পরিকল্পিতভাবেই আগে থেকে ছুড়ি নিয়ে ওত পেতে থেকে পরিবর্তীতে ছুড়ি দিয়ে আঘাত করা হয় ঐ দুই শিক্ষার্থীকে!

এ ঘটনা আমাদের বিবেককে নাড়া দেয়, জন্ম দেয় হাজারো প্রশ্ন! যে বয়সে আমরা বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে পড়াশোনা, খেলাধুলা নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম। বাবা মা কিংবা স্কুলের শিক্ষকদের আমরা শ্রদ্ধা বা সম্মানের যায়গা থেকে ভয় পেতাম। অথচ আজকে আমরা দেখি, অনেক সন্তানেরাই বাবা মায়ের কথার গুরুত্ব দিচ্ছে না, শিক্ষকদের প্রাপ্য সম্মানটুকু দিচ্ছে না। এসব বিপথগামী কিশোরদের বড় অভিভাবক হয়ে যাচ্ছে এলাকার বিপথগামী ‘বড় ভাই’! যেসব ভাইয়েরা এসব কিশোরদের বিপথগামী করছে নিজের উদ্দেশ্য হাসিল করে নেবার জন্য। কোমলমতি শিক্ষার্থী থেকে এরা চলে গেছে অন্ধকার জগতে। এসব বিপথগামী কিশোরদের হাতে শিক্ষকদের লাঞ্চিত হবার ঘটনাও ঘটছে। তাদের বেপরোয়া কাজে বাঁধা দিলে যে কারো পরিণতি হচ্ছে ভয়াবহ।

কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা প্রায়শই নিজেদের শক্তিমত্তা জানান দিতে সামাজিক অস্থিরতা তৈরি করছে। এরা একই রকম চুল কাঁটা থেকে শুরু করে অদ্ভুত চলা ফেরাতে অভ্যস্ত। বিভিন্ন সময়ে এরা দেশীয় অস্ত্র সস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছে, মেয়েদের ইভটিজিং করছে, এরা বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপ ও অনলাইন প্ল্যাটফর্ম টিকটক লাইকির মত অ্যাপস ব্যবহারের নামে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড করছে। বর্তমানে বিভিন্ন উচ্চবিত্ত কিংবা মধ্যবিত্ত পরিবারের কিছু কিছু কিশোর এসব গ্যাং এ যোগ দিচ্ছে। ব্যক্তিগত হতাশা কিংবা নিজেদের প্রভাব বাড়ানো, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে এরা কিশোর গ্যাং এ নাম লেখাচ্ছে যো সব থেকে দুংখজনক। আবার রাজনীতিতে প্রভাব রাখতে অনেকেই কিশোর গ্যাং পুষে রাখেন বলেও অভিযোগ আছে। সচেতন মহল কিংবা অভিভাবকরা বর্তমানে কিশোর গ্যাং নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। নিজেদের কোমলমতি সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে সন্দিহান অনেক অভিভাবক।

আমাদের বর্তমান সমাজ প্রযুক্তিনির্ভর, তবে প্রযুক্তির ভালো দিক আমাদের যেমন উন্নতি সাধন করছে বিপরীতভাবে প্রযুক্তির খারাপ দিক আমাদের ক্ষতি সাধনও করছো। প্রযুক্তির উন্নতির কারনে অপ সংস্কৃতির আগ্রাসন আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় স্পষ্ট। অপসংস্কৃতির আগ্রাসন আমাদের সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধি করছে। আর প্রযুক্তির এই অপব্যবহার সবথেকে বেশি হচ্ছে কিশোরদের মাধ্যমে। যেখানে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও গেমস, টিকটক লাইকী কিংবা ডিপ ফেকের মত অ্যাপস বড় ভূমিকা রাখছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব গেমস কিংবা অ্যাপসের ক্ষতিকারক দিক নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে। তবে কোনো কিছুতেই যেনো সমাধান হচ্ছে না বরং এর ব্যাপকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন।

রাজনীতিতে প্রভাব রাখতে অনেকেই কিশোর গ্যাং পুষে রাখেন বলেও অভিযোগ আছে

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এসব কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে তৎপর থাকলেও, থেমে নেই তাদের কর্মকা-। বিশেষ করে প্রতিনিয়তই আমরা টিভি বা পত্রিকার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে তৈরী হওয়া এসব কিশোর গ্যাংদের অপতৎপরতার খবর দেখতে পাই। শহর অঞ্চলে বিভিন্ন সময়ে কিশোরদের দ্বারা চুরি ছিনতাই এর মত ঘটনা ঘটতো তবে বর্তমান সময়ে এসে এসব কিশোর গ্যাং ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। এদের অসামাজিক কার্যাকলাপে বাধা দিতে গিয়েও লাঞ্চিত হবার ঘটনা আছে। সুতরাং কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করতে না পারলে সেটা মহামারি দুর্যোগের মতো দেখা দেবে অদূর ভবিষ্যতে।

বিপথগামী এসব গ্যাংদের শুধু প্রতিরোধ করলেই হবে না, এদেরকে মূল ধারায় সুস্থ্য জীবন যাপনে ফিরিয়ে আনাও এক বড় চ্যালেঞ্জ।কিশোরদের বিপথগামী হওয়ার ক্ষেত্রে পরিবারের উদাসীনতা সবথেকে বড় কারণ। এছাড়াও ধর্মীয় অনুশাসন ও নৈতিক শিক্ষার অভাবে কিশোররা তাদেরকে অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে। অপ সংস্কৃতির আগ্রাসন কিংবা প্রযুক্তির উন্নতি সাধন হয়তো থেমে থাকবে না, তাই এগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে আমাদের বিকল্প পথও তৈরি করতে হবে, পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরো কঠোর অবস্থান এবং সচেতন মহলের এগিয়ে আসা অত্যন্ত জরুরি।

[লেখক : ব্যাংকার, জনতা ব্যাংক পিএলসি, এরিয়া অফিস, পটুয়াখালী]

প্রসঙ্গ : রাজধানীর যানজট

নবায়নযোগ্য জ্বালানি : চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

ছবি

তাহলে একাত্তরে হয়নিকো কোনো অপরাধ!

ঈদযাত্রা হোক নিরাপদ

আমেরিকার মধ্যপ্রাচ্য কৌশলে বাস্তববাদী বাঁক

রম্যগদ্য : ‘জনগণের ভালোবাসা কি আমার ব্যাংক-ব্যালেন্স বাড়াইবো?’

ভালো থাকার কঠিন কলা : কিছু সরল সত্য

নীরব ঘাতক তামাক

পরিবেশবান্ধব নগর গঠনে রাজনীতিবিদদের ভূমিকা

নিয়ন্ত্রণহীন নেটজগৎ ও ফেইসবুক : সমাজে বিভ্রান্তির ডিজিটাল উৎপত্তি

বস্তিবাসী নারী : অদৃশ্য শক্তির আখ্যান

চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল : বিতর্ক, নিরাপত্তা ও জাতীয় স্বার্থের প্রশ্ন

সংস্কারের ভবিষ্যত কী?

বজ্রপাত, ঘূর্ণিঝড় চায় না তো কেউ, প্রকৃতির নিয়মে আসে কিন্তু তাই!

কেন থমকে আছে কাক্সিক্ষত অগ্রগতি

বদলাচ্ছে সমাজ, বদলাচ্ছে অর্জনের গল্প

বাজেট কি গণমুখী হবে

টেকসই কৃষিতে মৌমাছি পালন

জনগণের বিশ্বাস ভেঙে নির্মিত নিষ্ক্রিয়তার সাম্রাজ্য

সাইবার ঝুঁকির চক্রে বাংলাদেশ

ছবি

কীভাবে পাকিস্তান ভারতের রাফায়েলকে পরাস্ত করল

ছবি

নজরুলের দ্রোহ চেতনার স্বরূপ সন্ধানে

পিতৃতন্ত্রের মনস্তত্ত্ব ও নারীর গ-িবদ্ধতা

চিরতন ও কালীচরণ : শতবর্ষ আগে যারা আইনের মঞ্চে উঠেছিলেন

রম্যগদ্য : প্লিজ স্যার... প্লিজ, ইকটু রেহাই দ্যান...

জমি, সম্মান ও প্রতিহিংসার নির্মম রাজনীতি

জানি তিনি মোড়ল বটে, আমাদের কেন তা হতে হবে

ভূমি মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় যুগোপযোগী আমূল সংস্কার জরুরি

বরেন্দ্রর মাটিতে আমের বিপ্লব : সম্ভাবনা ও সতর্কবার্তা

অবশেষে ‘হাসিনা’ গ্রেফতার

স্ক্যাবিস সংক্রমণের কারণ ও প্রতিরোধে করণীয়

বাস্তবমুখী বাজেটের প্রত্যাশা : বৈষম্যহীন অর্থনীতির পথে কতটা অগ্রগতি?

কৌশল নয়, এবার প্রযুক্তিতে সৌদি-মার্কিন জোট

সিউল : স্বর্গ নেমেছে ধরায়

নাচোল বিদ্রোহ ও ইলা মিত্র সংগ্রহশালা : সাঁওতাল স্মৃতি কেন উপেক্ষিত?

ছবি

অন্ধকার সত্য, শেষ সত্য নয়!

tab

উপ-সম্পাদকীয়

গ্যাং কালচারের সমাধান কোথায়

কে এম মাসুম বিল্লাহ

  • download

সোমবার, ০২ অক্টোবর ২০২৩

কিশোর গ্যাং কালচার নামক সামাজিক অবক্ষয়ের নতুন এক চিত্র আমাদের গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যমতে, শুধু ঢাকাতেই ৯০টিরও অধিক কিশোর গ্যাং প্রায় সাড়ে তিনশো সদস্য দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। যদিও বিভিন্ন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী সংখ্যাটা আরো বেশি। কিশোর গ্যাং কালচার বর্তমানে শুধু মাত্র শহরের গন্ডিতেই সীমাবদ্ধ নেই, এর ভয়াল চিত্র দেখা যাচ্ছে গ্রামাঞ্চলেও।

কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা বিভিন্ন ধরনের অসামাজিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজে যুক্ত হচ্ছে। চুরি, ছিনতাই কিংবা হত্যার মত ঘটনাও এদের দ্বারা সংঘটিত হচ্ছে। নিজেদের মধ্যে মারামারি, প্রতিপক্ষের সঙ্গে রক্তপাত, মাদক গ্রহন ও পাচার থেকে শুরু করে, সাধারন মানুষের জন্য অস্থিরতা তৈরি, এসব কিছুই সংগঠিত হচ্ছে কিশোর গ্যাং এর মাধ্যমে। চট্রগ্রাম নগরীকে নিয়ে একটি অনুসন্ধানে উঠে আসে সেখানকার সক্রিয় কিশোর গ্যাং এর চিত্র। বিভিন্ন কিশোর গ্যাং এর নেতৃত্ব দিচ্ছে কথিত ‘বড় ভাই’। আর তাদের ছত্র ছায়ায় গড়ে উঠেছে এসব কিশোর গ্যাং গ্রুপ! ঐ অনুসন্ধানে আরো বলা হয় নগরীর অলি-গলিতে এসব গ্যাং এর সদস্যরা চালাচ্ছে অপরাধের রাজত্ব। খুন, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, টেম্পো স্টেশন নিয়ন্ত্রণ, বিল্ডিং তৈরির নির্মাণসামগ্রী নিতে বাধ্য করা, ডাকাতি, দাঙ্গা-হাঙ্গামাসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা। বাদ যাচ্ছে না অস্ত্র, মাদক ব্যবসাও। শহরের অলি গলির পাশাপাশি এই মহামারি এখন গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়েছে কিশোর গ্যাং কালচার। যার ভুক্তভোঁগী হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার ইন্দ্রকুল গ্রামের ইন্দ্রকুল মাধ্যমিক বিদ্যালয়টির পরিবেশ গ্রামের আর দশটি স্কুলের থেকে অনেকটা ভিন্ন! সাজানো গোছানো সুন্দর একটি স্কুল, স্কুলটির পূর্বের সফলতাও চোখে পড়ার মত। শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার জন্য আছে বিশাল বড় মাঠ, বিদ্যালয়ের সামনে ফুলের বাগান আর সারি সারি গাছ লাগানো, মনোমুগ্ধকর এই স্কুলেই কিছুদিন আগে ঘটে গেলো ইতিহাসের অন্যতম হৃদয়বিদারক এক ঘটনা। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নবম শ্রেণীর কয়েকজন বিপথগামী শিক্ষার্থীদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হয় একই স্কুলেরই দশম শ্রেণীর দুজন মেধাবী ছাত্র। অনেকটা পরিকল্পিতভাবেই আগে থেকে ছুড়ি নিয়ে ওত পেতে থেকে পরিবর্তীতে ছুড়ি দিয়ে আঘাত করা হয় ঐ দুই শিক্ষার্থীকে!

এ ঘটনা আমাদের বিবেককে নাড়া দেয়, জন্ম দেয় হাজারো প্রশ্ন! যে বয়সে আমরা বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে পড়াশোনা, খেলাধুলা নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম। বাবা মা কিংবা স্কুলের শিক্ষকদের আমরা শ্রদ্ধা বা সম্মানের যায়গা থেকে ভয় পেতাম। অথচ আজকে আমরা দেখি, অনেক সন্তানেরাই বাবা মায়ের কথার গুরুত্ব দিচ্ছে না, শিক্ষকদের প্রাপ্য সম্মানটুকু দিচ্ছে না। এসব বিপথগামী কিশোরদের বড় অভিভাবক হয়ে যাচ্ছে এলাকার বিপথগামী ‘বড় ভাই’! যেসব ভাইয়েরা এসব কিশোরদের বিপথগামী করছে নিজের উদ্দেশ্য হাসিল করে নেবার জন্য। কোমলমতি শিক্ষার্থী থেকে এরা চলে গেছে অন্ধকার জগতে। এসব বিপথগামী কিশোরদের হাতে শিক্ষকদের লাঞ্চিত হবার ঘটনাও ঘটছে। তাদের বেপরোয়া কাজে বাঁধা দিলে যে কারো পরিণতি হচ্ছে ভয়াবহ।

কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা প্রায়শই নিজেদের শক্তিমত্তা জানান দিতে সামাজিক অস্থিরতা তৈরি করছে। এরা একই রকম চুল কাঁটা থেকে শুরু করে অদ্ভুত চলা ফেরাতে অভ্যস্ত। বিভিন্ন সময়ে এরা দেশীয় অস্ত্র সস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছে, মেয়েদের ইভটিজিং করছে, এরা বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপ ও অনলাইন প্ল্যাটফর্ম টিকটক লাইকির মত অ্যাপস ব্যবহারের নামে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড করছে। বর্তমানে বিভিন্ন উচ্চবিত্ত কিংবা মধ্যবিত্ত পরিবারের কিছু কিছু কিশোর এসব গ্যাং এ যোগ দিচ্ছে। ব্যক্তিগত হতাশা কিংবা নিজেদের প্রভাব বাড়ানো, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে এরা কিশোর গ্যাং এ নাম লেখাচ্ছে যো সব থেকে দুংখজনক। আবার রাজনীতিতে প্রভাব রাখতে অনেকেই কিশোর গ্যাং পুষে রাখেন বলেও অভিযোগ আছে। সচেতন মহল কিংবা অভিভাবকরা বর্তমানে কিশোর গ্যাং নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। নিজেদের কোমলমতি সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে সন্দিহান অনেক অভিভাবক।

আমাদের বর্তমান সমাজ প্রযুক্তিনির্ভর, তবে প্রযুক্তির ভালো দিক আমাদের যেমন উন্নতি সাধন করছে বিপরীতভাবে প্রযুক্তির খারাপ দিক আমাদের ক্ষতি সাধনও করছো। প্রযুক্তির উন্নতির কারনে অপ সংস্কৃতির আগ্রাসন আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় স্পষ্ট। অপসংস্কৃতির আগ্রাসন আমাদের সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধি করছে। আর প্রযুক্তির এই অপব্যবহার সবথেকে বেশি হচ্ছে কিশোরদের মাধ্যমে। যেখানে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও গেমস, টিকটক লাইকী কিংবা ডিপ ফেকের মত অ্যাপস বড় ভূমিকা রাখছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব গেমস কিংবা অ্যাপসের ক্ষতিকারক দিক নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে। তবে কোনো কিছুতেই যেনো সমাধান হচ্ছে না বরং এর ব্যাপকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন।

রাজনীতিতে প্রভাব রাখতে অনেকেই কিশোর গ্যাং পুষে রাখেন বলেও অভিযোগ আছে

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এসব কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে তৎপর থাকলেও, থেমে নেই তাদের কর্মকা-। বিশেষ করে প্রতিনিয়তই আমরা টিভি বা পত্রিকার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে তৈরী হওয়া এসব কিশোর গ্যাংদের অপতৎপরতার খবর দেখতে পাই। শহর অঞ্চলে বিভিন্ন সময়ে কিশোরদের দ্বারা চুরি ছিনতাই এর মত ঘটনা ঘটতো তবে বর্তমান সময়ে এসে এসব কিশোর গ্যাং ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। এদের অসামাজিক কার্যাকলাপে বাধা দিতে গিয়েও লাঞ্চিত হবার ঘটনা আছে। সুতরাং কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করতে না পারলে সেটা মহামারি দুর্যোগের মতো দেখা দেবে অদূর ভবিষ্যতে।

বিপথগামী এসব গ্যাংদের শুধু প্রতিরোধ করলেই হবে না, এদেরকে মূল ধারায় সুস্থ্য জীবন যাপনে ফিরিয়ে আনাও এক বড় চ্যালেঞ্জ।কিশোরদের বিপথগামী হওয়ার ক্ষেত্রে পরিবারের উদাসীনতা সবথেকে বড় কারণ। এছাড়াও ধর্মীয় অনুশাসন ও নৈতিক শিক্ষার অভাবে কিশোররা তাদেরকে অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে। অপ সংস্কৃতির আগ্রাসন কিংবা প্রযুক্তির উন্নতি সাধন হয়তো থেমে থাকবে না, তাই এগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে আমাদের বিকল্প পথও তৈরি করতে হবে, পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরো কঠোর অবস্থান এবং সচেতন মহলের এগিয়ে আসা অত্যন্ত জরুরি।

[লেখক : ব্যাংকার, জনতা ব্যাংক পিএলসি, এরিয়া অফিস, পটুয়াখালী]

back to top