সাজেদুল ইসলাম
কুষ্ঠ মূলত একটি বৈশি^ক স্বাস্থ্যসমস্যা। স্বাস্থ্যসমস্যা হলেও এর কারণে অন্যান্য অনেক সমস্যা তৈরি হয়েছে। কুষ্ঠ সম্পর্কে মানুষের ভুল ধারণার কারণে এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা যুগ যুগ ধরে সমাজে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। এই বৈষম্যের কারণে বিশে^র বিভিন্ন প্রান্তে এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা পরিবার, সমাজ ও বন্ধুমহল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছেন এবং শিক্ষা ও কর্মসংস্থান প্রভৃতি হতে বঞ্চিত হয়েছেন।
কুষ্ঠ সম্পর্কে জনগণের প্রকৃত ধারণা না থাকার কারণে এই রোগ সম্পর্কে কুসংস্কার তৈরি হচ্ছে। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তিরা চিকিৎসা নেয়ার পরিবর্তে তাদের রোগ সম্পর্কে কারো কাছে প্রকাশ করে না। বিষয়টা সুরাহা করার জন্য এ বিষয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক আকারে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করা দরকার, প্রয়োজনে গণমাধ্যমকে ব্যবহার করা যেতে পারে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নতুন রোগী শনাক্তকরণের জন্য প্রত্যন্ত এলাকা সফর করা ও চিকিৎসার জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করা দরকার।
কুষ্ঠজনিত প্রতিবন্ধিতা এই রোগকে ঘিরে কুসংস্কারের প্রধান কারণ। কুষ্ঠ চিকিৎসাযোগ্য একটি রোগ। তাই প্রতিবন্ধিতা প্রতিরোধ করার জন্য আক্রান্ত ব্যক্তিদের সময়মতো চিকিৎসার আওতায় আনা দরকার। এ বিষয়ে পর্যাপ্ত সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করা, প্রাথমিক অবস্থায় রোগী শনাক্তকরণ ও আক্রান্ত ব্যক্তিদের সময়মতো চিকিৎসার আওতায় আনার জন্য সরকারের ভূমিকা নেয়া দরকার।
কুষ্ঠ একটি প্রাচীনতম রোগ, যা অপরিমেয় দুর্ভোগের কারণ। বাংলাদেশে ষাটের দশকের পর থেকে এই রোগের প্রাদুর্ভাব ব্যাপকহারে দেখা দেয়। সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ না করলে এ রোগে ভয়ংকর শারীরিক জটিলতা দেখা দেয় এবং বিকলাঙ্গতা প্রকাশ পায়। বর্তমানে দেশে কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের বিপক্ষে কোনো বৈষম্যমূলক আইন বিদ্যমান নেই। তবে সামাজিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষাগত ও কর্মসংস্থানের সুযোগের ক্ষেত্রে তাদের অন্তর্ভুক্তি এখনও একটি চ্যালেঞ্জ।
কুষ্ঠ শুধু শারীরিক রোগ নয়, এটি একটি সামাজিক ব্যাধি এবং বৈষম্যের কারণ। তবে কুষ্ঠ কোনো ভয়াবহ রোগ কিংবা অভিশাপ না। এটি একটি নিরাময়যোগ্য রোগ। এ রোগ সম্পর্কে সমাজে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা ও অন্ধবিশ^াস অপসারিত করে আক্রান্তদের সময়মতো চিকিৎসার আওতায় আনা ও সমাজের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করা জরুরি যাতে কেউ এই রোগের কারণে শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক প্রতিবন্ধিতা ভোগ না করে।
জাতীয় কুষ্ঠ কর্মসূচি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বিশে^ কুষ্ঠরোগের উচ্চহার সম্পন্ন ২৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৬ষ্ঠ এবং কুষ্ঠজনিত বিকলাঙ্গাতায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যার ভিত্তিতে বাংলাদেশের অবস্থান ১০ম। দেশে প্রচুরসংখ্যক কুষ্ঠরোগী শনাক্তকরণের বাইরে রয়ে গেছে। প্রতি বছর ৩০০০-৩৫০০ জন শনাক্ত হলেও প্রকৃত সংখ্যা এর দ্বিগুণেরও বেশি। এসব রোগী পরবর্তীতে বিকলাঙ্গতা নিয়ে শনাক্ত হলেও ততদিনে তারা পরিণত হয় দেশের বোঝা হিসেবে এবং দেশ হারায় তার কর্মক্ষম জনসংখ্যা। সেই সঙ্গে বর্তমান শিশুদের মধ্যে কুষ্ঠের প্রাদুর্ভাব লক্ষ্যণীয়, যা ভবিষ্যতের জন্য একটি বড় দুশ্চিন্তার কারণ।
কুষ্ঠ নিয়ে কর্মরত প্রতিষ্ঠান দ্য লেপ্রসি মিশন ইন্টারন্যাশনাল-বাংলাদেশ (টিএলএমআই-বি) এর তথ্যমতে, কুষ্ঠরোগে শনাক্তকৃত রোগীর মধ্যে প্রায় ৬% থেকে ৮% সময়মতো চিকিৎসার অভাবে পরবর্তীতে পঙ্গু হয়ে যায়। তাছাড়া, আরও ৫% রোগী প্রথমদিকে হাতের অনুভূতি শক্তি হারানোর মতো সমস্যার মুখোমুখি হন, তারা পরবর্তীতে উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে প্রতিবন্ধী হয়ে যায়। কুষ্ঠের কারণে যারা প্রতিবন্ধী হয়ে যায়, প্রাথমিক অবস্থায় তাদের জন্য রিকন্সট্রাকটিভ সার্জারির ব্যবস্থা করা গেলে প্রতিবন্ধিতা প্রতিরোধ করা যায়। এজন্য দেশের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসমূহে রিকন্সট্রাকটিভ সার্জারির ব্যবস্থা করা দরকার।
বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা তার ‘বৈশি^ক কুষ্ঠ কৌশলপত্র ২০২১-২০৩০’ এর ভিশন অনুযায়ী বিশে^র দেশসমূহকে কুষ্ঠ ও এই রোগের কারণে সংক্রমণ, প্রতিবন্ধিতা, কুসংস্কার ও বৈষম্য শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা মনে করে কুষ্ঠ আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষমতায়ন করা দরকার এবং সমস্ত ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় যেমন সেবার নকশা প্রণয়ন ও প্রদান এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকা-ে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা দরকার।
কিন্তু আমাদের দেশে কুষ্ঠ খাতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ আছে যেমনÑ আর্থিক ও জনশক্তির অপ্রতুলতা, জনসচেতনতা বৃদ্ধিকল্পে কর্মসূচির অভাব, সেবাদানকারীদের সক্ষমতার অভাব, জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণমূলক কার্যক্রমের অপ্রতুলতা, প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসনের নিমিত্তে কার্যক্রমের অপ্রতুলতা, এবং সমাজে কুষ্ঠ রোগবিষয়ক কুসংস্কার এবং বৈষম্য। কুষ্ঠ কর্মসূচির প্রতি গুরুত্ব কমে যাওয়া, কুষ্ঠ কর্মসূচির জন্য ফান্ডের স্বল্পতা ও কর্মীর সংখ্যা কমে যাওয়া, ফলে সক্রিয়ভাবে কুষ্ঠরোগী খুঁজে বের করার উদ্যোগে ঘাটতি; জনসচেতনাতা তৈরি ও কর্মী এবং সেবা প্রদানকারীদের সক্ষমতা তৈরির জন্য প্রশিক্ষণ কমে যাওয়া ইত্যাদি।
এছাড়া যদিও অনেক কর্মী রয়েছে যাদের যক্ষ্মা ও কুষ্ঠ এই উভয় কর্মসূচির জন্য কাজ করার কথা, কিন্তু যক্ষ্মা কর্মসূচির কাজের চাপ অত্যন্ত বেশি থাকায় তারা কুষ্ঠ কর্মসূচির জন্য সময় দিতে পারছে না। এখন আর এভাবে চলতে পারে না, কারণ আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ ২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের দেশে কুষ্ঠরোগ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে হবে।
কুষ্ঠমুক্ত দেশ গড়ার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন ২০৩০ সাল পর্যন্ত একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা এবং এর জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশনাসহ জাতীয় বাজেটে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ রাখা। পরিকল্পনার মধ্যে কর্র্মীর সংখ্যা বৃদ্ধি করা এবং তাদের সক্ষমতা ও দক্ষতা তৈরি করা, সেবাদানকারী জনগোষ্ঠী (চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী) এর সক্ষমতা বৃদ্ধি, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কর্মকা-, সক্রিয়ভাবে সম্ভাব্য কুষ্ঠরোগী খুঁজে বের করা এবং রোগ নির্ণয়সহ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা।
সর্বোপরি কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে মাঠ পর্যায় পর্যন্ত সুপরিকল্পিত মনিটরিংয়ের মাধ্যমে পরিকল্পনাটির যথাযথ বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সঙ্গে একই সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে উভয় কর্মসূচির মাঠ পর্যায়ের কর্মকা- পরিচালনা নিশ্চিত করা যাতে পরস্পরের সহযোগিতায় উভয় কর্মসূচিই ভালোভাবে বাস্তবায়িত হয়।
[লেখক : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক]
সাজেদুল ইসলাম
রোববার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
কুষ্ঠ মূলত একটি বৈশি^ক স্বাস্থ্যসমস্যা। স্বাস্থ্যসমস্যা হলেও এর কারণে অন্যান্য অনেক সমস্যা তৈরি হয়েছে। কুষ্ঠ সম্পর্কে মানুষের ভুল ধারণার কারণে এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা যুগ যুগ ধরে সমাজে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। এই বৈষম্যের কারণে বিশে^র বিভিন্ন প্রান্তে এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা পরিবার, সমাজ ও বন্ধুমহল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছেন এবং শিক্ষা ও কর্মসংস্থান প্রভৃতি হতে বঞ্চিত হয়েছেন।
কুষ্ঠ সম্পর্কে জনগণের প্রকৃত ধারণা না থাকার কারণে এই রোগ সম্পর্কে কুসংস্কার তৈরি হচ্ছে। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তিরা চিকিৎসা নেয়ার পরিবর্তে তাদের রোগ সম্পর্কে কারো কাছে প্রকাশ করে না। বিষয়টা সুরাহা করার জন্য এ বিষয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক আকারে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করা দরকার, প্রয়োজনে গণমাধ্যমকে ব্যবহার করা যেতে পারে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নতুন রোগী শনাক্তকরণের জন্য প্রত্যন্ত এলাকা সফর করা ও চিকিৎসার জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করা দরকার।
কুষ্ঠজনিত প্রতিবন্ধিতা এই রোগকে ঘিরে কুসংস্কারের প্রধান কারণ। কুষ্ঠ চিকিৎসাযোগ্য একটি রোগ। তাই প্রতিবন্ধিতা প্রতিরোধ করার জন্য আক্রান্ত ব্যক্তিদের সময়মতো চিকিৎসার আওতায় আনা দরকার। এ বিষয়ে পর্যাপ্ত সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করা, প্রাথমিক অবস্থায় রোগী শনাক্তকরণ ও আক্রান্ত ব্যক্তিদের সময়মতো চিকিৎসার আওতায় আনার জন্য সরকারের ভূমিকা নেয়া দরকার।
কুষ্ঠ একটি প্রাচীনতম রোগ, যা অপরিমেয় দুর্ভোগের কারণ। বাংলাদেশে ষাটের দশকের পর থেকে এই রোগের প্রাদুর্ভাব ব্যাপকহারে দেখা দেয়। সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ না করলে এ রোগে ভয়ংকর শারীরিক জটিলতা দেখা দেয় এবং বিকলাঙ্গতা প্রকাশ পায়। বর্তমানে দেশে কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের বিপক্ষে কোনো বৈষম্যমূলক আইন বিদ্যমান নেই। তবে সামাজিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষাগত ও কর্মসংস্থানের সুযোগের ক্ষেত্রে তাদের অন্তর্ভুক্তি এখনও একটি চ্যালেঞ্জ।
কুষ্ঠ শুধু শারীরিক রোগ নয়, এটি একটি সামাজিক ব্যাধি এবং বৈষম্যের কারণ। তবে কুষ্ঠ কোনো ভয়াবহ রোগ কিংবা অভিশাপ না। এটি একটি নিরাময়যোগ্য রোগ। এ রোগ সম্পর্কে সমাজে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা ও অন্ধবিশ^াস অপসারিত করে আক্রান্তদের সময়মতো চিকিৎসার আওতায় আনা ও সমাজের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করা জরুরি যাতে কেউ এই রোগের কারণে শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক প্রতিবন্ধিতা ভোগ না করে।
জাতীয় কুষ্ঠ কর্মসূচি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বিশে^ কুষ্ঠরোগের উচ্চহার সম্পন্ন ২৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৬ষ্ঠ এবং কুষ্ঠজনিত বিকলাঙ্গাতায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যার ভিত্তিতে বাংলাদেশের অবস্থান ১০ম। দেশে প্রচুরসংখ্যক কুষ্ঠরোগী শনাক্তকরণের বাইরে রয়ে গেছে। প্রতি বছর ৩০০০-৩৫০০ জন শনাক্ত হলেও প্রকৃত সংখ্যা এর দ্বিগুণেরও বেশি। এসব রোগী পরবর্তীতে বিকলাঙ্গতা নিয়ে শনাক্ত হলেও ততদিনে তারা পরিণত হয় দেশের বোঝা হিসেবে এবং দেশ হারায় তার কর্মক্ষম জনসংখ্যা। সেই সঙ্গে বর্তমান শিশুদের মধ্যে কুষ্ঠের প্রাদুর্ভাব লক্ষ্যণীয়, যা ভবিষ্যতের জন্য একটি বড় দুশ্চিন্তার কারণ।
কুষ্ঠ নিয়ে কর্মরত প্রতিষ্ঠান দ্য লেপ্রসি মিশন ইন্টারন্যাশনাল-বাংলাদেশ (টিএলএমআই-বি) এর তথ্যমতে, কুষ্ঠরোগে শনাক্তকৃত রোগীর মধ্যে প্রায় ৬% থেকে ৮% সময়মতো চিকিৎসার অভাবে পরবর্তীতে পঙ্গু হয়ে যায়। তাছাড়া, আরও ৫% রোগী প্রথমদিকে হাতের অনুভূতি শক্তি হারানোর মতো সমস্যার মুখোমুখি হন, তারা পরবর্তীতে উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে প্রতিবন্ধী হয়ে যায়। কুষ্ঠের কারণে যারা প্রতিবন্ধী হয়ে যায়, প্রাথমিক অবস্থায় তাদের জন্য রিকন্সট্রাকটিভ সার্জারির ব্যবস্থা করা গেলে প্রতিবন্ধিতা প্রতিরোধ করা যায়। এজন্য দেশের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসমূহে রিকন্সট্রাকটিভ সার্জারির ব্যবস্থা করা দরকার।
বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা তার ‘বৈশি^ক কুষ্ঠ কৌশলপত্র ২০২১-২০৩০’ এর ভিশন অনুযায়ী বিশে^র দেশসমূহকে কুষ্ঠ ও এই রোগের কারণে সংক্রমণ, প্রতিবন্ধিতা, কুসংস্কার ও বৈষম্য শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা মনে করে কুষ্ঠ আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষমতায়ন করা দরকার এবং সমস্ত ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় যেমন সেবার নকশা প্রণয়ন ও প্রদান এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকা-ে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা দরকার।
কিন্তু আমাদের দেশে কুষ্ঠ খাতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ আছে যেমনÑ আর্থিক ও জনশক্তির অপ্রতুলতা, জনসচেতনতা বৃদ্ধিকল্পে কর্মসূচির অভাব, সেবাদানকারীদের সক্ষমতার অভাব, জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণমূলক কার্যক্রমের অপ্রতুলতা, প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসনের নিমিত্তে কার্যক্রমের অপ্রতুলতা, এবং সমাজে কুষ্ঠ রোগবিষয়ক কুসংস্কার এবং বৈষম্য। কুষ্ঠ কর্মসূচির প্রতি গুরুত্ব কমে যাওয়া, কুষ্ঠ কর্মসূচির জন্য ফান্ডের স্বল্পতা ও কর্মীর সংখ্যা কমে যাওয়া, ফলে সক্রিয়ভাবে কুষ্ঠরোগী খুঁজে বের করার উদ্যোগে ঘাটতি; জনসচেতনাতা তৈরি ও কর্মী এবং সেবা প্রদানকারীদের সক্ষমতা তৈরির জন্য প্রশিক্ষণ কমে যাওয়া ইত্যাদি।
এছাড়া যদিও অনেক কর্মী রয়েছে যাদের যক্ষ্মা ও কুষ্ঠ এই উভয় কর্মসূচির জন্য কাজ করার কথা, কিন্তু যক্ষ্মা কর্মসূচির কাজের চাপ অত্যন্ত বেশি থাকায় তারা কুষ্ঠ কর্মসূচির জন্য সময় দিতে পারছে না। এখন আর এভাবে চলতে পারে না, কারণ আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ ২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের দেশে কুষ্ঠরোগ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে হবে।
কুষ্ঠমুক্ত দেশ গড়ার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন ২০৩০ সাল পর্যন্ত একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা এবং এর জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশনাসহ জাতীয় বাজেটে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ রাখা। পরিকল্পনার মধ্যে কর্র্মীর সংখ্যা বৃদ্ধি করা এবং তাদের সক্ষমতা ও দক্ষতা তৈরি করা, সেবাদানকারী জনগোষ্ঠী (চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী) এর সক্ষমতা বৃদ্ধি, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কর্মকা-, সক্রিয়ভাবে সম্ভাব্য কুষ্ঠরোগী খুঁজে বের করা এবং রোগ নির্ণয়সহ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা।
সর্বোপরি কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে মাঠ পর্যায় পর্যন্ত সুপরিকল্পিত মনিটরিংয়ের মাধ্যমে পরিকল্পনাটির যথাযথ বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সঙ্গে একই সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে উভয় কর্মসূচির মাঠ পর্যায়ের কর্মকা- পরিচালনা নিশ্চিত করা যাতে পরস্পরের সহযোগিতায় উভয় কর্মসূচিই ভালোভাবে বাস্তবায়িত হয়।
[লেখক : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক]