সিরাজ প্রামাণিক
চেকের মামলায় সাফাই সাক্ষী আসামিকে সুরক্ষা দেয় যদি তা সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয়। আসামি কেন নির্দোষ, কিভাবে তাকে মিথ্যাভাবে জড়িত করা হয়েছে, কেন বা কিভাবে সে ঘটনার শিকার হয়েছে, চেকটি কেন বাদীর হস্তগত হয়েছিল সেই মর্মে বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা দিতে পারলে আসামির খালাস পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আপনি চেকের মামলায় এভাবে সাফাই দিতে পারেন যে, বাদী আমার পরিচিত/বন্ধু/সহকর্মী/ব্যবসায়ী পার্টনার/সু-সম্পর্ক। এবার লেনেদেন ও চেক দেয়ার কারণ সম্পর্কে বলতে পারেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমি তার দোকান থেকে কিছু মালামাল বাকিতে ক্রয় করি। বাদী সিকিউরিটি হিসেবে আমার স্বাক্ষরিত একটি ব্ল্যাংক চেক নেয়। পরবর্তীতে আমি দেনার টাকা পরিশোধ করে দিই। বাদীর কাছে আমার স্বাক্ষরিত চেক ফেরত চাইলে সে আমাকে বলে পরে দেবে; কিন্তু সে ওই চেক আর ফেরত দেয়নি। আমি পরবর্তীতে অন্য দোকান থেকে মালামাল ক্রয় করায় বাদী রাগান্বিত ও আমার ওপর মনক্ষুণœ হয়ে ওই চেকে টাকার অংক ও তারিখ বসিয়ে চেক ডিজঅনার করে এ মামলা করেছে। আমার কাছে বাদীর কোন টাকা পাওনা নেই। আমার অ্যাকাউন্টে কোন টাকা নাই।
আসামি পরীক্ষা বিষয়ে ফৌজদারি কার্যবিধি ৩৪২ ধারাতে বলা আছেÑ সাক্ষ্য হতে উদ্ভূত কোন পরিস্থিতির ব্যাখ্যার জন্য আদালত আসামিকে জিজ্ঞাসা করবেন। জিজ্ঞাসাকালে আসামি দাবি করতে পারে যে, সে প্রশ্নগুলোর উত্তর লিখিত আকারে দেবে। তার এ লিখিত বক্তব্য আদালত বিচারে বিবেচনা করবে অর্থাৎ আদালত তার বিবেচনায় ন্যায়সঙ্গত মনে করলে অসামিকে খালাস দিতে পারবে। একটি মামলায় মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ এই মর্মে রায় প্রদান করেন যে, আসামিকে ৩৪২ ধারায় পরীক্ষার কোন কিছু জিজ্ঞাসা করা হয়নি; যা আইনের বরখেলাপ এবং তাতে আসামি প্রিজুডিসড হয়েছে। ওই মামলায় আসামিকে খালাস দেয়া হয়েছে এবং খালাসের অন্যান্য কারণের মধ্যে এ বিষয়টি অন্যতম। (আবুল হোসেন বনাম রাষ্ট্র, ৪৬ ডিএলআর পৃষ্ঠা-৭৭)। ৩৪২ ধারার বিবৃতির ওপর ভিত্তি করে মামলা খালাস কিংবা সাজা কমানোর অনেক নজির আছে সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন মামলার রায়ে। ০
৩৪২ ধারায় আসামির বয়স ৯০ বছর উল্লেখ থাকায় তার সাজা মানবিক দিক বিবেচনা করে জেল কমিয়ে যতদিন হাজতে ছিল তত দিন করে দিয়েছে। হাসান আলী বনাম রাষ্ট্র, ১৫ বিএলডি (এডি) পৃষ্ঠা-৩৭।
অপর এক মামলায় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসামিকে দঃবিঃ ৪২০ ধারায় দ-াদেশ দিলে আসামি সেই দ-াদেশের বিরুদ্ধে দায়রা জজ আদালতে আপিল দায়ের করলে আপীল আদালত তাকে খালাস দেয়। উক্ত খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে বাদী মহামান্য হাইকোর্ট আপিল দায়ের করে। আপিল শুনানি শেষে মহামান্য হইকোর্ট ডিভিশন আপীল নামঞ্জুর করেন এবং নি¤œ আপিল আদালতের রায় বহাল রখেন। মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশন রায়ে উল্লেখ করেন যে, নি¤œ আপিল আদালত ৩৪২ ধারায় দেয় আসামির বিবৃতি যেখানে আসামি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ও সাক্ষের ব্যাখ্যা দিয়েছে তা বিবেচনায় নিয়ে খালাস দিয়ে কোন ভুল করেনি। ওই রায়ে আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, ৩৪২ ধারার পরীক্ষা শুধুমাত্র আসামি এবং আসামির উপকারের জন্য (আব্দুল করিম বনাম শাসসুল ইসলাম ৪৫ ডিএলআর পৃষ্ঠা-৫৭৮)।
কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় আমাদের অধিকাংশের ৩৪২ ধারা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা নেই। অনেক আদালতও সঠিকভাবে ৩৪২ ধারার পরীক্ষা করেন না। এটাকে শুধুমাত্র ফরমালিটি মনে করে। এজন্য ৩৪২ ধারা অনুযায়ী আসামিকে পরীক্ষার সময় শুধুমাত্র জিজ্ঞাসা করে আসামি নির্দোষ দাবি করে কিনা এবং সাফাই সাক্ষী দেবে কিনাÑ এটা আদৌও আইনসম্মত নয়। এ ধারাতে বলা আছেÑ সাক্ষ্য হতে উদ্ভূত কোন পরিস্থিতির ব্যাখ্যার জন্য আদালত আসামিকে জিজ্ঞাসা করবেন। জিজ্ঞাসাকালে আসামি দাবি করতে পারে যে, সে প্রশ্নগুলোর উত্তর লিখিত আকারে দেবে। তার এ লিখিত বক্তব্য আদালত বিচারে বিবেচনা করবে অর্থাৎ আদালত আর বিবেচনায় ন্যায়সঙ্গত মনে করলে অসামিকে খালাস দিতে পারবে। ৩৪২ ধারায় যেভাবে আসামিকে পরীক্ষা করার বিধান আছে তা পালন করা ম্যান্ডাটরি এবং এর ব্যতিক্রম বেআইনী। আর এ কারণেই আমাদের দেশের ভারতের এবং পাকিস্থানের সুপ্রিম কোর্ট সঠিকভাবে ৩৪২ ধারার পরীক্ষা না করার কারণে অনেক মামলায় আসামিকে খালাস দিয়েছে কিংবা সঠিকভাবে পরীক্ষা করার জন্য মামলা বিচারিক আদালতে রিমান্ডে পাঠিয়েছে। একট মামলায় মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ এই মর্মে রায় প্রদান করেন যে, আসামিকে ৩৪২ ধারায় পরীক্ষার কোন কিছু জিজ্ঞাসা করা হয়নি; যা আইনের বরখেলাপ এবং তাতে আসামি প্রিজুডিসড হয়েছে। ওই মামলায় আসামিকে খালাস দেয়া হয়েছে এবং খালাসের অন্যান্য কারণের মধ্যে এ বিষয়টি অন্যতম। (সূত্র আবুল হোসেন বনাম রাষ্ট্র, ৪৬ ডিএলআর পৃষ্ঠা-৭৭)।
[লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট]
সিরাজ প্রামাণিক
শনিবার, ১১ মে ২০২৪
চেকের মামলায় সাফাই সাক্ষী আসামিকে সুরক্ষা দেয় যদি তা সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয়। আসামি কেন নির্দোষ, কিভাবে তাকে মিথ্যাভাবে জড়িত করা হয়েছে, কেন বা কিভাবে সে ঘটনার শিকার হয়েছে, চেকটি কেন বাদীর হস্তগত হয়েছিল সেই মর্মে বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা দিতে পারলে আসামির খালাস পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আপনি চেকের মামলায় এভাবে সাফাই দিতে পারেন যে, বাদী আমার পরিচিত/বন্ধু/সহকর্মী/ব্যবসায়ী পার্টনার/সু-সম্পর্ক। এবার লেনেদেন ও চেক দেয়ার কারণ সম্পর্কে বলতে পারেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমি তার দোকান থেকে কিছু মালামাল বাকিতে ক্রয় করি। বাদী সিকিউরিটি হিসেবে আমার স্বাক্ষরিত একটি ব্ল্যাংক চেক নেয়। পরবর্তীতে আমি দেনার টাকা পরিশোধ করে দিই। বাদীর কাছে আমার স্বাক্ষরিত চেক ফেরত চাইলে সে আমাকে বলে পরে দেবে; কিন্তু সে ওই চেক আর ফেরত দেয়নি। আমি পরবর্তীতে অন্য দোকান থেকে মালামাল ক্রয় করায় বাদী রাগান্বিত ও আমার ওপর মনক্ষুণœ হয়ে ওই চেকে টাকার অংক ও তারিখ বসিয়ে চেক ডিজঅনার করে এ মামলা করেছে। আমার কাছে বাদীর কোন টাকা পাওনা নেই। আমার অ্যাকাউন্টে কোন টাকা নাই।
আসামি পরীক্ষা বিষয়ে ফৌজদারি কার্যবিধি ৩৪২ ধারাতে বলা আছেÑ সাক্ষ্য হতে উদ্ভূত কোন পরিস্থিতির ব্যাখ্যার জন্য আদালত আসামিকে জিজ্ঞাসা করবেন। জিজ্ঞাসাকালে আসামি দাবি করতে পারে যে, সে প্রশ্নগুলোর উত্তর লিখিত আকারে দেবে। তার এ লিখিত বক্তব্য আদালত বিচারে বিবেচনা করবে অর্থাৎ আদালত তার বিবেচনায় ন্যায়সঙ্গত মনে করলে অসামিকে খালাস দিতে পারবে। একটি মামলায় মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ এই মর্মে রায় প্রদান করেন যে, আসামিকে ৩৪২ ধারায় পরীক্ষার কোন কিছু জিজ্ঞাসা করা হয়নি; যা আইনের বরখেলাপ এবং তাতে আসামি প্রিজুডিসড হয়েছে। ওই মামলায় আসামিকে খালাস দেয়া হয়েছে এবং খালাসের অন্যান্য কারণের মধ্যে এ বিষয়টি অন্যতম। (আবুল হোসেন বনাম রাষ্ট্র, ৪৬ ডিএলআর পৃষ্ঠা-৭৭)। ৩৪২ ধারার বিবৃতির ওপর ভিত্তি করে মামলা খালাস কিংবা সাজা কমানোর অনেক নজির আছে সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন মামলার রায়ে। ০
৩৪২ ধারায় আসামির বয়স ৯০ বছর উল্লেখ থাকায় তার সাজা মানবিক দিক বিবেচনা করে জেল কমিয়ে যতদিন হাজতে ছিল তত দিন করে দিয়েছে। হাসান আলী বনাম রাষ্ট্র, ১৫ বিএলডি (এডি) পৃষ্ঠা-৩৭।
অপর এক মামলায় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসামিকে দঃবিঃ ৪২০ ধারায় দ-াদেশ দিলে আসামি সেই দ-াদেশের বিরুদ্ধে দায়রা জজ আদালতে আপিল দায়ের করলে আপীল আদালত তাকে খালাস দেয়। উক্ত খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে বাদী মহামান্য হাইকোর্ট আপিল দায়ের করে। আপিল শুনানি শেষে মহামান্য হইকোর্ট ডিভিশন আপীল নামঞ্জুর করেন এবং নি¤œ আপিল আদালতের রায় বহাল রখেন। মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশন রায়ে উল্লেখ করেন যে, নি¤œ আপিল আদালত ৩৪২ ধারায় দেয় আসামির বিবৃতি যেখানে আসামি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ও সাক্ষের ব্যাখ্যা দিয়েছে তা বিবেচনায় নিয়ে খালাস দিয়ে কোন ভুল করেনি। ওই রায়ে আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, ৩৪২ ধারার পরীক্ষা শুধুমাত্র আসামি এবং আসামির উপকারের জন্য (আব্দুল করিম বনাম শাসসুল ইসলাম ৪৫ ডিএলআর পৃষ্ঠা-৫৭৮)।
কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় আমাদের অধিকাংশের ৩৪২ ধারা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা নেই। অনেক আদালতও সঠিকভাবে ৩৪২ ধারার পরীক্ষা করেন না। এটাকে শুধুমাত্র ফরমালিটি মনে করে। এজন্য ৩৪২ ধারা অনুযায়ী আসামিকে পরীক্ষার সময় শুধুমাত্র জিজ্ঞাসা করে আসামি নির্দোষ দাবি করে কিনা এবং সাফাই সাক্ষী দেবে কিনাÑ এটা আদৌও আইনসম্মত নয়। এ ধারাতে বলা আছেÑ সাক্ষ্য হতে উদ্ভূত কোন পরিস্থিতির ব্যাখ্যার জন্য আদালত আসামিকে জিজ্ঞাসা করবেন। জিজ্ঞাসাকালে আসামি দাবি করতে পারে যে, সে প্রশ্নগুলোর উত্তর লিখিত আকারে দেবে। তার এ লিখিত বক্তব্য আদালত বিচারে বিবেচনা করবে অর্থাৎ আদালত আর বিবেচনায় ন্যায়সঙ্গত মনে করলে অসামিকে খালাস দিতে পারবে। ৩৪২ ধারায় যেভাবে আসামিকে পরীক্ষা করার বিধান আছে তা পালন করা ম্যান্ডাটরি এবং এর ব্যতিক্রম বেআইনী। আর এ কারণেই আমাদের দেশের ভারতের এবং পাকিস্থানের সুপ্রিম কোর্ট সঠিকভাবে ৩৪২ ধারার পরীক্ষা না করার কারণে অনেক মামলায় আসামিকে খালাস দিয়েছে কিংবা সঠিকভাবে পরীক্ষা করার জন্য মামলা বিচারিক আদালতে রিমান্ডে পাঠিয়েছে। একট মামলায় মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ এই মর্মে রায় প্রদান করেন যে, আসামিকে ৩৪২ ধারায় পরীক্ষার কোন কিছু জিজ্ঞাসা করা হয়নি; যা আইনের বরখেলাপ এবং তাতে আসামি প্রিজুডিসড হয়েছে। ওই মামলায় আসামিকে খালাস দেয়া হয়েছে এবং খালাসের অন্যান্য কারণের মধ্যে এ বিষয়টি অন্যতম। (সূত্র আবুল হোসেন বনাম রাষ্ট্র, ৪৬ ডিএলআর পৃষ্ঠা-৭৭)।
[লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট]