alt

উপ-সম্পাদকীয়

অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও আইনের শাসন

শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ

: বৃহস্পতিবার, ২০ জুন ২০২৪

একটু কল্পনা করুন, এখন থেকে দুই বা তিন লক্ষ বছর আগে পৃথিবীতে যখন মানুষের প্রথম পদচারণা শুরু হলো তখন কেমন অবস্থা ছিল তাদের? জীবনধারাই বা কেমন ছিল? নিশ্চয়ই এখনকার মতো খাদ্যের সুব্যবস্থা ছিল না। থাকার জন্য ঘর ছিল না। জীবনের নিরাপত্তা ছিল না। লজ্জা নিবারণের জন্য পোশাক ছিল না। পারিবারিক কাঠামো ছিল না। রাষ্ট্র ছিল না। রাস্তা-ঘাট ছিল না। আধুনিক কোনো প্রযুক্তি ছিল না। ইন্টারনেট ছিল না। মানুষের আনুষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা ছিল না। চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল না। উৎপাদনব্যবস্থা ছিল না। বাজারব্যবস্থা ছিল না। কেনাকাটার জন্য কোনো টাকা-পয়সা ছিল না। একে একে বলতে গেলে কোনোকিছুই ছিল না। ছিল শুধু প্রকৃতি, হিংস্র জীবজন্তু আর মানুষজন। তাহলে প্রশ্ন জাগে, কীভাবে তারা জীবিকা নির্বাহ করত? আসলে মানুষজন তখন পুরোপুরি প্রকৃতির ওপরই নির্ভরশীল ছিল। খাদ্যের জন্য গাছের ফল, শাক-সবজি ও অন্যান্য উদ্ভিদ সংগ্রহ করত এবং জীবজন্তু শিকার করে তারা ক্ষুধা নিবারণ করত। প্রয়োজনের তাগিদে গাছের ডাল-পালা, পাথর ইত্যাদি যেমন খাদ্য সংগ্রহে শিকারের কাজে ব্যবহার করত তেমনি হিংস্র জীবজন্তুর আক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে এগুলো অস্ত্র হিসেবেও ব্যবহার করত। লজ্জা নিবারণে গাছের পাতা ব্যবহার করত। প্রাকৃতিক আশ্রয়স্থল, গাছের ডাল বা গুহায় ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে তারা বসবাস করত।

জীবনকে সহজতর করতে নতুন নতুন উদ্ভাবনে তাদের অন্তহীন প্রচেষ্টা ছিল। একসময় তারা আগুন আবিষ্কার করল। এর মাধ্যমে পৃথিবীতে সভ্যতার প্রথম বীজ অঙ্কুরিত হলো। তারপর হাঁটিহাঁটি পা পা করে আজকের অবস্থানে আমরা। আদিম যুগের সঙ্গে আজকের দিনের তুলনা করলে স্পষ্টতই বোঝা যায় পৃথিবীর সর্বত্র আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে! মানুষের জীবনধারা সহজতর হয়েছে। জীবনমান উন্নত হয়েছে। আর এই অগ্রগতি এবং ইতিবাচক পরিবর্তন বা পার্থক্যকে আমরা বলি উন্নয়ন। এই উন্নয়নের হাত ধরে সূচিত হয়েছে সমাজ, রাষ্ট্র, রাজনীতি, অর্থনীতি ইত্যাদি। অর্থাৎ উন্নয়নের ও উন্নয়ন হয়েছে। সে কারণে আমরা সামাজিক উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক উন্নয়ন, মানব উন্নয়ন, রাজনৈতিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, পরিবেশ উন্নয়ন এ বিষয়গুলোকে আলাদা আলাদাভাবে বিবেচনা করি। চর্চা করি।

উন্নয়ন একটি নিরন্তর ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। উন্নয়নের দুটি দিক হলোÑ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বা মানুষের আয় বৃদ্ধি এবং সামাজিক অগ্রগতি যার মধ্যে রয়েছে মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সরকারি পরিষেবার ব্যবস্থা। নোবেলজয়ী প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন উন্নয়নকে এমন একটি হাতিয়ার হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছেন যা মানুষকে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পারিবারিক কর্মের স্বাধীনতা ইত্যাদির মাধ্যমে তাদের ক্ষমতার সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছাতে সক্ষম করে। উন্নয়নকে যে যেভাবে সংজ্ঞায়িত করুক না কেন সব উন্নয়নের মূলে হলো মানুষের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, আরাম-আয়েশ। তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন। তাদের বসবাস উপযোগী সুন্দর একটা পৃথিবী।

যখন অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা বলা হয় তখন অর্থনৈতিক ক্রিয়া কর্মের মাধ্যমে মোট জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় ও সঞ্চয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি, দারিদ্র্যের হার হ্রাসকরণ, আয়ের সুষম বণ্টন, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এগুলোকেই বোঝায়। Sir William Arthur Lewis-এর মতে, “Economic development represents the per capita increase in the production of a country.” Professor Benjamin Higgins এর মতে, “Economic development is the increase in per capita and national income of a country.” Joseph AloisSchumpter এর মতে, “Economic development is fundamental transformation of an economy.”

এক্ষেত্রে একটা বিষয় স্পষ্ট হওয়া দরকারÑ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন এক বিষয় নয়। এ দুটির মধ্যে তাৎপর্যপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে মোট জাতীয় উৎপাদন, মাথাপিছু আয় ইত্যাদি পরিমাপ করা হয়। কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নয়ন ধারণার ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে জীবনযাত্রার মান বিবেচনা করা হয়। অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিমাপে মানব উন্নয়ন সূচক, মানব দারিদ্র্য সূচক, জেন্ডার সংক্রান্ত সূচক, সাক্ষরতার হার, জীবনযাত্রার সুষম মান ইত্যাদি বিবেচনায় নেয়া হয়। অর্থাৎ উন্নয়ন কাঠামোগত, প্রাতিষ্ঠানিক এবং গুণগত পরিবর্তন তুলে ধরে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন মানুষের কল্যাণ ভাবনাতেই নিবেদিত। সে হিসেবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন একটি বহুমুখী ধারণা এবং এর গুণগত মাত্রা রয়েছে। অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ‘অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ার একটি দিক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের অনুঘটক হলো অর্থনৈতিক কর্মকা-। কৃষি, শিল্প, ব্যবসায়-বাণিজ্য ইত্যাদিতে বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধির একটি অন্যতম হাতিয়ার। এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, মানুষের আয় বাড়বে, ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে, চাহিদা বৃদ্ধি পাবে, ভোগ ব্যয় বাড়বে, সঞ্চয় বাড়বে, বিনিয়োগ বাড়বে, ফলে জোগান বাড়বে। এভাবে চক্রাকারে অর্থনৈতিক কর্মকা-ের সচলতায় সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত হবে এবং কাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে। এমআইটির অধ্যাপক নোবেলজয়ী রবার্ট সোলোর গ্রোথ মডেল অনুযায়ী অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল উপাদান হলো টাকা, প্রযুক্তি ও জনবল।

বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা বা পুঁজি বা মূলধন জোগানের উৎস হতে পারে নানাবিধ। উদ্যোক্তা তার নিজস্ব অর্থ বা ব্যক্তিগতভাবে কারো কাছ থেকে ধার করে বিনিয়োগ করতে পারেন। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণ করতে পারেন অথবা মূলধন বাজার বা বন্ড বা যার থেকে শেয়ার বা বন্ডের মাধ্যমে মূলধন বা ঋণ সংগ্রহ করে বিনিয়োগ করতে পারেন। আবার অনেক বিনিয়োগকারী রয়েছেন যারা অবৈধ পন্থায় যেমনÑ ঘুষ, দুর্নীতি, প্রতারণা, অত্যাচার-অবিচার, দালালি, চুরি-ডাকাতি-রাহাজানি, মাদক ব্যবসা, চোরাকারবার, মুনাফাখোরী, ক্ষমতার অপব্যবহার, রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার ইত্যাদির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ বিনিয়োগ করে থাকেন। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মূলধন বা ঋণ সংগ্রহের ক্ষেত্রে জালিয়াতি বা প্রতারণার আশ্রয়ও নিতে পারেন।

বিনিয়োগকৃত টাকার উৎস এবং বিনিয়োগের খাত বৈধ-অবৈধ যা-ই হোক না কেন নিঃসন্দেহে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে এটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তবে টাকার উৎস এবং বিনিয়োগের খাত অবৈধ হলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সাধিত হলেও অর্থনৈতিক উন্নয়নে আবশ্যিকভাবে নেতিবাচক ভূমিকা রাখবে। উন্নয়নের ভিত মজবুত না হলে তা কখনো টেকসই হতে পারে না। সেই ফাঁপা উন্নয়ন অতি অল্প সময়েই মুখথুবড়ে পড়বে। আবার ঋণখেলাপি বা ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি, অর্থ পাচার, শেয়ার বা বন্ড বাজার কেলেঙ্কারি এগুলো একইসঙ্গে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নÑ দুটোকেই আবশ্যিকভাবে ব্যাহত করে। এ অবস্থার সুযোগ খরচও অনেক বেশি। প্রবৃদ্ধির সঙ্গে নীতি-নৈতিকতা এবং ইক্যুইটির বিষয়টি না থাকলে কখনই তা উন্নয়নে রূপ লাভ করতে পারে না। এতে সম্পদের সুষম বণ্টন, মানব উন্নয়ন, মানুষের জীবনযাত্রার মানউন্নয়ন, সমাজে সমতার নিশ্চয়তা বিধান এগুলো ভূলুণ্ঠিত হয়। এককথায় গুণগত পরিবর্তন বা মানুষের কল্যাণ সাধিত হয় না। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বড় প্রয়োজন আইনের শাসন।

আইনের শাসন হলো একটি প্রক্রিয়া, প্রতিষ্ঠান, অনুশীলন বা আদর্শ যা আইনের সামনে সব নাগরিকের সমতাকে সমর্থন করে। এক্ষেত্রে আইনের সৃষ্টি, তাদের প্রয়োগ এবং আইনি বিধিগুলোর মধ্যে সম্পর্কগুলো নিজেরাই আইনগতভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়, যাতে কেউ আইনের ঊর্ধ্বে না হয়। সরকারসহ সব ব্যক্তি আইনের অধীন। ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণী এবং ছোটবড় নির্বিশেষে সবাই আইনের কাছে সমান। যে কেউ আইন ভঙ্গ করলে তাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা হবেÑ এটাই আইনের শাসনের বিধান। Carter, Ranney and Herz এর মতে, “The Government and its agents, as well as individual citizen are subject of laws.”

বাংলাদেশের সংবিধানের প্রস্তাবনার তৃতীয় প্যারাগ্রাফে আইনের শাসনের অঙ্গীকার রয়েছে। প্রথম অনুচ্ছেদ বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করেছে। সপ্তম অনুচ্ছেদ সংবিধানের প্রাধান্য ঘোষণা করেছে। সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগ রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি ঘোষণা করেছে; তৃতীয় ভাগ সব নাগরিকের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের বিধান করেছে। এই ভাগের ২৬ অনুচ্ছেদ মৌলিক অধিকার এর সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ আইন বাতিল বলে ঘোষণা করেছে। ষষ্ঠ ভাগ সুপ্রিম কোর্টসহ একটি বিচার বিভাগ স্থাপন করেছে। আইন ও আইনের শাসন প্রক্রিয়া উপরিউক্ত প্রতিটি ভাগের প্রতিটি অনুচ্ছেদে সুন্দরভাবে বিধৃত রয়েছে। তবে সংবিধান ও আইনের বইতে আইন ও আইনের শাসনের কথা লিপিবদ্ধ থাকলেও ওই সবাই মহান বিধান রাষ্ট্রের বাস্তব প্রক্রিয়ায় প্রতিফলিত হওয়া নিঃসন্দেহে অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে আমরাও ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজির ১৭টি লক্ষ্য বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। অধিকন্তু ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণেও আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। একইসঙ্গে ২১০০ সালের মধ্যে ডেল্টা প্লান বাস্তবায়ন করতে চাই। এই সুখ স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে দেশে আইনের শাসন নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। লক্ষ্য করে দেখুন, এসডিজির লক্ষ্যসমূহের মধ্যে একটিতে শোভনকাজ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির (এসডিজি-৮) কথা উল্লেখ করা হলেও বাকি প্রায় সব লক্ষ্যই অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত, যেমনÑ দারিদ্র্য বিলোপ (এসডিজি-১), ক্ষুধামুক্তি (এসডিজি-২), সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ (এসডিজি-৩), মানসম্মত শিক্ষা (এসডিজি-৪), লিঙ্গসমতা (এসডিজি-৫), অসমতার হ্রাস (এসডিজি-১০) অভীষ্ট অর্জনে অংশীদারিত্ব (এসডিজি-১৭)। এলক্ষ্যগুলোর সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে; যেটি হলোÑ শান্তি, ন্যায়বিচার ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান (এসডিজি-১৬)। কারণ সব লক্ষ্য বাস্তবায়নের সঙ্গে ন্যায়বিচার তথা আইনের শাসনের সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে।

অমিত সম্ভাবনাময় দুর্মদ বাংলাদেশের সর্বত্র উন্নয়ন নামক সোনার হরিণের পদচারণা অবাধ ও পঙ্কিলতামুক্ত করতে অয়োময় প্রত্যয়দীপ্ত হওয়ার পরিবেশ সৃষ্টির আবশ্যকতা রয়েছে। অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের নিশ্চয়তা, শিক্ষা-স্বাস্থ্য সুবিধা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ, উন্নত অবকাঠামো এবং মানবাধিকারসহ সামাজিক নিরাপত্তা বিধানের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে সুসংহত করতে দরকার সবাইর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা এবং আবশ্যিকভাবে দুষ্টের দমন। আর সবকিছুর নিশ্চয়তা বিধানে একমাত্র নিয়ামক হতে পারে আইনের শাসন। তবেই যথার্থ উন্নয়ন সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। সব মানুষ আস্থায় বিশ্বাসে সুখানুভূতির অতল স্পর্শে জীবনকে সার্থক করে তুলতে সক্ষম হবে।

[লেখক : সাবেক সচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়]

পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থকে কি জলাঞ্জলি দিয়েছে মোদি প্রশাসন

বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ : আইন কী বলে

হাজার টাকার বাগান খাইল পাঁচ সিকার ছাগলে

বাংলাদেশের উন্নতিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর লজ্জা

মাদকমুক্ত দেশ গড়তে প্রয়োজন প্রতিরোধ কার্যক্রম

রম্যগদ্য : ‘ন্যায়-অন্যায় জানি নে, জানি নে...’

ছবি

কুরবানির ছাগল তাকে চিনতে পেরেছে

ছবি

সুইডিশ মিডসামার : এক আনন্দময় দিনের সূচনা

ছবি

আধুনিক রূপকথা এবং আমাদের রাজাদের গল্প

গাছে গাছে সবুজ হোক দেশ

কত বিষে আমাদের বসবাস

ছবি

তিস্তার দুই নয়নে দুই অশ্রুধারা

বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ান

আদিবাসীরা বৈষম্যের শিকার

ছবি

নারীর অগ্রযাত্রা

ছবি

সিলেট-সুনামগঞ্জের ‘জলাবদ্ধ বন্যার’ দায় কার?

ছবি

বুড়িতিস্তা রিজার্ভার খনন : কৃষক কি উপকৃত হবে?

সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়ে কী হচ্ছে?

উচ্ছেদকৃত দলিতদের পুনর্বাসন করুন

রম্যগদ্য : অভিযোগ ‘অভিযোগ’ নয়

কেন হেরে গেলেন সেলিম

নীরবে-নিভৃতে কাজ করা এক কৃষিবিজ্ঞানীর কথা

অর্থনীতি কী অবস্থায় আছে?

কোরবানির চামড়ার হকদার

যোগাযোগ অধ্যয়ন কেন গুরুত্বপূর্ণ

এমপি আনারকে নিয়ে যত আইনি জটিলতা

দূর হোক মনের পশুত্ব

মনের পশুত্বের প্রতীকী ত্যাগের আরেক নাম কোরবানি

ঈদে সুস্থ খাদ্যাভ্যাস

এমআইটি : প্রযুক্তির সৃষ্টি রহস্যের খোঁজ

কবিগুরুর বাণী ‘প্রমাণিত মিথ্যা’

কিশোর গ্যাং কালচার বন্ধ হবে কিভাবে

কানিহাটি সিরিজ এবং পঞ্চব্রীহি নিয়ে আরও কিছু কথা

কলকাতায় হিজাব বিতর্ক

বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশ নিয়ে বিতর্ক

হাতের শক্তি ও মহিমা

tab

উপ-সম্পাদকীয়

অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও আইনের শাসন

শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ

বৃহস্পতিবার, ২০ জুন ২০২৪

একটু কল্পনা করুন, এখন থেকে দুই বা তিন লক্ষ বছর আগে পৃথিবীতে যখন মানুষের প্রথম পদচারণা শুরু হলো তখন কেমন অবস্থা ছিল তাদের? জীবনধারাই বা কেমন ছিল? নিশ্চয়ই এখনকার মতো খাদ্যের সুব্যবস্থা ছিল না। থাকার জন্য ঘর ছিল না। জীবনের নিরাপত্তা ছিল না। লজ্জা নিবারণের জন্য পোশাক ছিল না। পারিবারিক কাঠামো ছিল না। রাষ্ট্র ছিল না। রাস্তা-ঘাট ছিল না। আধুনিক কোনো প্রযুক্তি ছিল না। ইন্টারনেট ছিল না। মানুষের আনুষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা ছিল না। চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল না। উৎপাদনব্যবস্থা ছিল না। বাজারব্যবস্থা ছিল না। কেনাকাটার জন্য কোনো টাকা-পয়সা ছিল না। একে একে বলতে গেলে কোনোকিছুই ছিল না। ছিল শুধু প্রকৃতি, হিংস্র জীবজন্তু আর মানুষজন। তাহলে প্রশ্ন জাগে, কীভাবে তারা জীবিকা নির্বাহ করত? আসলে মানুষজন তখন পুরোপুরি প্রকৃতির ওপরই নির্ভরশীল ছিল। খাদ্যের জন্য গাছের ফল, শাক-সবজি ও অন্যান্য উদ্ভিদ সংগ্রহ করত এবং জীবজন্তু শিকার করে তারা ক্ষুধা নিবারণ করত। প্রয়োজনের তাগিদে গাছের ডাল-পালা, পাথর ইত্যাদি যেমন খাদ্য সংগ্রহে শিকারের কাজে ব্যবহার করত তেমনি হিংস্র জীবজন্তুর আক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে এগুলো অস্ত্র হিসেবেও ব্যবহার করত। লজ্জা নিবারণে গাছের পাতা ব্যবহার করত। প্রাকৃতিক আশ্রয়স্থল, গাছের ডাল বা গুহায় ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে তারা বসবাস করত।

জীবনকে সহজতর করতে নতুন নতুন উদ্ভাবনে তাদের অন্তহীন প্রচেষ্টা ছিল। একসময় তারা আগুন আবিষ্কার করল। এর মাধ্যমে পৃথিবীতে সভ্যতার প্রথম বীজ অঙ্কুরিত হলো। তারপর হাঁটিহাঁটি পা পা করে আজকের অবস্থানে আমরা। আদিম যুগের সঙ্গে আজকের দিনের তুলনা করলে স্পষ্টতই বোঝা যায় পৃথিবীর সর্বত্র আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে! মানুষের জীবনধারা সহজতর হয়েছে। জীবনমান উন্নত হয়েছে। আর এই অগ্রগতি এবং ইতিবাচক পরিবর্তন বা পার্থক্যকে আমরা বলি উন্নয়ন। এই উন্নয়নের হাত ধরে সূচিত হয়েছে সমাজ, রাষ্ট্র, রাজনীতি, অর্থনীতি ইত্যাদি। অর্থাৎ উন্নয়নের ও উন্নয়ন হয়েছে। সে কারণে আমরা সামাজিক উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক উন্নয়ন, মানব উন্নয়ন, রাজনৈতিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, পরিবেশ উন্নয়ন এ বিষয়গুলোকে আলাদা আলাদাভাবে বিবেচনা করি। চর্চা করি।

উন্নয়ন একটি নিরন্তর ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। উন্নয়নের দুটি দিক হলোÑ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বা মানুষের আয় বৃদ্ধি এবং সামাজিক অগ্রগতি যার মধ্যে রয়েছে মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সরকারি পরিষেবার ব্যবস্থা। নোবেলজয়ী প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন উন্নয়নকে এমন একটি হাতিয়ার হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছেন যা মানুষকে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পারিবারিক কর্মের স্বাধীনতা ইত্যাদির মাধ্যমে তাদের ক্ষমতার সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছাতে সক্ষম করে। উন্নয়নকে যে যেভাবে সংজ্ঞায়িত করুক না কেন সব উন্নয়নের মূলে হলো মানুষের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, আরাম-আয়েশ। তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন। তাদের বসবাস উপযোগী সুন্দর একটা পৃথিবী।

যখন অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা বলা হয় তখন অর্থনৈতিক ক্রিয়া কর্মের মাধ্যমে মোট জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় ও সঞ্চয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি, দারিদ্র্যের হার হ্রাসকরণ, আয়ের সুষম বণ্টন, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এগুলোকেই বোঝায়। Sir William Arthur Lewis-এর মতে, “Economic development represents the per capita increase in the production of a country.” Professor Benjamin Higgins এর মতে, “Economic development is the increase in per capita and national income of a country.” Joseph AloisSchumpter এর মতে, “Economic development is fundamental transformation of an economy.”

এক্ষেত্রে একটা বিষয় স্পষ্ট হওয়া দরকারÑ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন এক বিষয় নয়। এ দুটির মধ্যে তাৎপর্যপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে মোট জাতীয় উৎপাদন, মাথাপিছু আয় ইত্যাদি পরিমাপ করা হয়। কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নয়ন ধারণার ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে জীবনযাত্রার মান বিবেচনা করা হয়। অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিমাপে মানব উন্নয়ন সূচক, মানব দারিদ্র্য সূচক, জেন্ডার সংক্রান্ত সূচক, সাক্ষরতার হার, জীবনযাত্রার সুষম মান ইত্যাদি বিবেচনায় নেয়া হয়। অর্থাৎ উন্নয়ন কাঠামোগত, প্রাতিষ্ঠানিক এবং গুণগত পরিবর্তন তুলে ধরে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন মানুষের কল্যাণ ভাবনাতেই নিবেদিত। সে হিসেবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন একটি বহুমুখী ধারণা এবং এর গুণগত মাত্রা রয়েছে। অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ‘অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ার একটি দিক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের অনুঘটক হলো অর্থনৈতিক কর্মকা-। কৃষি, শিল্প, ব্যবসায়-বাণিজ্য ইত্যাদিতে বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধির একটি অন্যতম হাতিয়ার। এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, মানুষের আয় বাড়বে, ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে, চাহিদা বৃদ্ধি পাবে, ভোগ ব্যয় বাড়বে, সঞ্চয় বাড়বে, বিনিয়োগ বাড়বে, ফলে জোগান বাড়বে। এভাবে চক্রাকারে অর্থনৈতিক কর্মকা-ের সচলতায় সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত হবে এবং কাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে। এমআইটির অধ্যাপক নোবেলজয়ী রবার্ট সোলোর গ্রোথ মডেল অনুযায়ী অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল উপাদান হলো টাকা, প্রযুক্তি ও জনবল।

বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা বা পুঁজি বা মূলধন জোগানের উৎস হতে পারে নানাবিধ। উদ্যোক্তা তার নিজস্ব অর্থ বা ব্যক্তিগতভাবে কারো কাছ থেকে ধার করে বিনিয়োগ করতে পারেন। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণ করতে পারেন অথবা মূলধন বাজার বা বন্ড বা যার থেকে শেয়ার বা বন্ডের মাধ্যমে মূলধন বা ঋণ সংগ্রহ করে বিনিয়োগ করতে পারেন। আবার অনেক বিনিয়োগকারী রয়েছেন যারা অবৈধ পন্থায় যেমনÑ ঘুষ, দুর্নীতি, প্রতারণা, অত্যাচার-অবিচার, দালালি, চুরি-ডাকাতি-রাহাজানি, মাদক ব্যবসা, চোরাকারবার, মুনাফাখোরী, ক্ষমতার অপব্যবহার, রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার ইত্যাদির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ বিনিয়োগ করে থাকেন। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মূলধন বা ঋণ সংগ্রহের ক্ষেত্রে জালিয়াতি বা প্রতারণার আশ্রয়ও নিতে পারেন।

বিনিয়োগকৃত টাকার উৎস এবং বিনিয়োগের খাত বৈধ-অবৈধ যা-ই হোক না কেন নিঃসন্দেহে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে এটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তবে টাকার উৎস এবং বিনিয়োগের খাত অবৈধ হলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সাধিত হলেও অর্থনৈতিক উন্নয়নে আবশ্যিকভাবে নেতিবাচক ভূমিকা রাখবে। উন্নয়নের ভিত মজবুত না হলে তা কখনো টেকসই হতে পারে না। সেই ফাঁপা উন্নয়ন অতি অল্প সময়েই মুখথুবড়ে পড়বে। আবার ঋণখেলাপি বা ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি, অর্থ পাচার, শেয়ার বা বন্ড বাজার কেলেঙ্কারি এগুলো একইসঙ্গে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নÑ দুটোকেই আবশ্যিকভাবে ব্যাহত করে। এ অবস্থার সুযোগ খরচও অনেক বেশি। প্রবৃদ্ধির সঙ্গে নীতি-নৈতিকতা এবং ইক্যুইটির বিষয়টি না থাকলে কখনই তা উন্নয়নে রূপ লাভ করতে পারে না। এতে সম্পদের সুষম বণ্টন, মানব উন্নয়ন, মানুষের জীবনযাত্রার মানউন্নয়ন, সমাজে সমতার নিশ্চয়তা বিধান এগুলো ভূলুণ্ঠিত হয়। এককথায় গুণগত পরিবর্তন বা মানুষের কল্যাণ সাধিত হয় না। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বড় প্রয়োজন আইনের শাসন।

আইনের শাসন হলো একটি প্রক্রিয়া, প্রতিষ্ঠান, অনুশীলন বা আদর্শ যা আইনের সামনে সব নাগরিকের সমতাকে সমর্থন করে। এক্ষেত্রে আইনের সৃষ্টি, তাদের প্রয়োগ এবং আইনি বিধিগুলোর মধ্যে সম্পর্কগুলো নিজেরাই আইনগতভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়, যাতে কেউ আইনের ঊর্ধ্বে না হয়। সরকারসহ সব ব্যক্তি আইনের অধীন। ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণী এবং ছোটবড় নির্বিশেষে সবাই আইনের কাছে সমান। যে কেউ আইন ভঙ্গ করলে তাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা হবেÑ এটাই আইনের শাসনের বিধান। Carter, Ranney and Herz এর মতে, “The Government and its agents, as well as individual citizen are subject of laws.”

বাংলাদেশের সংবিধানের প্রস্তাবনার তৃতীয় প্যারাগ্রাফে আইনের শাসনের অঙ্গীকার রয়েছে। প্রথম অনুচ্ছেদ বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করেছে। সপ্তম অনুচ্ছেদ সংবিধানের প্রাধান্য ঘোষণা করেছে। সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগ রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি ঘোষণা করেছে; তৃতীয় ভাগ সব নাগরিকের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের বিধান করেছে। এই ভাগের ২৬ অনুচ্ছেদ মৌলিক অধিকার এর সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ আইন বাতিল বলে ঘোষণা করেছে। ষষ্ঠ ভাগ সুপ্রিম কোর্টসহ একটি বিচার বিভাগ স্থাপন করেছে। আইন ও আইনের শাসন প্রক্রিয়া উপরিউক্ত প্রতিটি ভাগের প্রতিটি অনুচ্ছেদে সুন্দরভাবে বিধৃত রয়েছে। তবে সংবিধান ও আইনের বইতে আইন ও আইনের শাসনের কথা লিপিবদ্ধ থাকলেও ওই সবাই মহান বিধান রাষ্ট্রের বাস্তব প্রক্রিয়ায় প্রতিফলিত হওয়া নিঃসন্দেহে অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে আমরাও ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজির ১৭টি লক্ষ্য বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। অধিকন্তু ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণেও আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। একইসঙ্গে ২১০০ সালের মধ্যে ডেল্টা প্লান বাস্তবায়ন করতে চাই। এই সুখ স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে দেশে আইনের শাসন নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। লক্ষ্য করে দেখুন, এসডিজির লক্ষ্যসমূহের মধ্যে একটিতে শোভনকাজ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির (এসডিজি-৮) কথা উল্লেখ করা হলেও বাকি প্রায় সব লক্ষ্যই অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত, যেমনÑ দারিদ্র্য বিলোপ (এসডিজি-১), ক্ষুধামুক্তি (এসডিজি-২), সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ (এসডিজি-৩), মানসম্মত শিক্ষা (এসডিজি-৪), লিঙ্গসমতা (এসডিজি-৫), অসমতার হ্রাস (এসডিজি-১০) অভীষ্ট অর্জনে অংশীদারিত্ব (এসডিজি-১৭)। এলক্ষ্যগুলোর সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে; যেটি হলোÑ শান্তি, ন্যায়বিচার ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান (এসডিজি-১৬)। কারণ সব লক্ষ্য বাস্তবায়নের সঙ্গে ন্যায়বিচার তথা আইনের শাসনের সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে।

অমিত সম্ভাবনাময় দুর্মদ বাংলাদেশের সর্বত্র উন্নয়ন নামক সোনার হরিণের পদচারণা অবাধ ও পঙ্কিলতামুক্ত করতে অয়োময় প্রত্যয়দীপ্ত হওয়ার পরিবেশ সৃষ্টির আবশ্যকতা রয়েছে। অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের নিশ্চয়তা, শিক্ষা-স্বাস্থ্য সুবিধা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ, উন্নত অবকাঠামো এবং মানবাধিকারসহ সামাজিক নিরাপত্তা বিধানের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে সুসংহত করতে দরকার সবাইর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা এবং আবশ্যিকভাবে দুষ্টের দমন। আর সবকিছুর নিশ্চয়তা বিধানে একমাত্র নিয়ামক হতে পারে আইনের শাসন। তবেই যথার্থ উন্নয়ন সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। সব মানুষ আস্থায় বিশ্বাসে সুখানুভূতির অতল স্পর্শে জীবনকে সার্থক করে তুলতে সক্ষম হবে।

[লেখক : সাবেক সচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়]

back to top