নিতাই চন্দ্র রায়
শীতল বাতাস দিচ্ছে ছায়া/আম, কাঁঠালের বন/বৃক্ষ আমার ভালোবাসা/বৃক্ষ আপন জন। পৃথিবীতে বৃক্ষের চেয়ে প্রকৃত বন্ধু প্রাণিকুলের আর কেউ নেই। বৃক্ষ বাতাস থেকে কার্বনডাই অক্সাইড গ্রহণ করে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় যে অক্সিজেন ত্যাগ করে তা গ্রহণ করেই বেঁচে আছে পৃথিবীর প্রাণিকুলÑ এ কথা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। এজন্য বৃক্ষকে বলা হয় অক্সিজেন তৈরির প্রাকৃতিক কারখানা। এই কারখানা সামান্য সময়ে জন্য বন্ধ হলে অস্তিত্ব বিপন্ন হবে মানবজাতির। পশুপাখি বন্যপ্রাণীদের। জলাশয়ে বসবাসকারী মাছ, কুমির, শুশুকসহ জলজ প্রাণীদের।
বৃক্ষ কি শুধু অক্সিজেন সরবরাহ করে? না, বৃক্ষ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। মাটি ক্ষয় রোধ করে। মাটির উর্বরতা সংরক্ষণে সহায়তা করে। কেঁচোসহ লাখ লাখ অণুজীবের আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে। বায়ুম-লের তাপমাত্রা হ্রাস করে। শীতল ছায়া প্রদান করে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। তালগাছ বজ্রপাতের হাত থেকে মানুষ ও গবাদিপশুদের জীবন রক্ষা করে। গাছ, মানুষ, পশুপাখির খাদ্য জোগায়। বন্যপ্রাণীদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করে। আদিমকালে মানুষ যখন আগুন জ¦ালাতে শেখেনি, তখন মানুষের প্রধান খাদ্য ছিল বন-জঙ্গলের ফলমূল। রোদের রান্নাঘরে তৈরি শতভাগ মসলাবিহীন খাবার হলো ফল।
ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ রয়েছে, যা অন্য কোনো খাদ্যে পাওয়া যায় না। লেবু জাতীয় ফলে থাকে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’। ভিটামিন ‘সি’ দেহের ক্ষত নিরাময়ে সহায়তা করে। রক্ত জমাট বাধার কাজে সাহায্য করে। দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে আমিষ, শর্করা ও ভিটামিন থাকায় তা মানবদেহের জন্য বিশেষ উপকারী। কাঁচা কাঁঠালের তরকারিকে বলা হয় গরিবের মাংস। কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ থাকার কারণে রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে। জাম শরীরের হাড়কে মজবুত করে, ডায়রিয়া ও আলসার নিরাময়ে ভূমিকা রাখে। আমড়া পিত্ত ও কফ নিবারক, রুচি বর্ধক। আমড়া কোলেস্টেরেলের মাত্রা কমায়। সফেদায় প্রচুর ক্যাসিয়াম লৌহ রয়েছে, যা হাড় ও দাঁত সুস্থ রাখে। আমলকি সর্দি-কাশি সারাতে ও হজম ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। আমলকির রস কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলসের সমস্যা দূর করে। আমলকির রসের অ্যামিনো এসিড এবং প্রোটিন চুল পড়া রোধ করে। ফলের রাজা আমের গুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না। আয়রন ও সোডিয়ামের ঘাটতি পূরণে বেশ কার্যকরী আম। আম রক্তের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায়। ডায়বেটিসের সঙ্গে লড়াই করে। আমের ভিটামিন ‘এ’, দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে।
ঘূর্ণিঝড় আইলা, সিডর, মহাসেন ও রেমালের হাত থেকে উপকূলবাসীকে রক্ষা করেছে সুন্দরবনের বৃক্ষরাজি। প্রচ- ঝড়ে বৃক্ষের ডালপালা ভেঙেছে। শিকড়সহ উপড়ে গেছে গাছ। তারপর পরও তারা রক্ষা করেছে উপকূল অঞ্চলে মানুষ এবং সুন্দরবনের প্রাণিকুলকে। আমার মনে হয় সুন্দরবনই মানবঢাল রচনা করে ঝড়ের তা-ব হতে রক্ষা করছে উপকূলের সাড়ে তিন কোটি মানুষ এবং তাদের সহায়সম্পদ ও বাড়িঘর।
প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেককে একটি করে ফলজ, বনজ ও ওষুধি গাছ লাগানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এভাবে আমাদের দেশকে যদি আমরা সবুজ করে রাখতে পারি, তাহলে বাংলাদেশ আর পিছিয়ে থাকবে না। সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। সেজন্য সবাইকে আমাদের একইভাবে পরিবেশ সুরক্ষার চিন্তা করতে হবে। তবে একটা জিনিসের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে, ফসলি জমি কোনো ক্রমেই নষ্ট করা যাবে না। যত্রতত্র শিল্পকারখানা গড়ে কৃষিজমি নষ্ট করা যাবে না। শিল্পকারখানা গড়ার জন্য বর্তমান সরকার সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করেছে। শিল্পপতিদের সেখানেই পরিকল্পিতভাবে পরিবেশবান্ধব শিল্পকারখানা গড়ে তুলতে হবে। গ্রামে আমাদের বহু খালি জায়গা আছে। বিশেষ করে নদীর পাড়, যেসব এলাকায় ভাঙন হতে পারে, সেসব জায়গায় বড় শিকড়সমৃদ্ধ মাটি কামড়ে ধরে রাখার সক্ষমতা সম্পন্ন গাছ লাগাতে হবে। উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতেও গাছ লাগাতে হবে। দুর্যোগ প্রতিরোধে গাছ আমাদের প্রথম সুরক্ষা দেয়। উপকূলে সবুজ বেষ্টনী তৈরি করা, ম্যানগ্রোভ তৈরি করা, জলোচ্ছ্বাস থেকে উপকূলকে বাঁচাতে আমাদের ব্যাপক হারে বৃক্ষরোপণ করতে হবে।
বসতবাড়ির আশপাশের উঁচু জমি এবং বহুতল বিশিষ্ট ভবনের ছাদেও গাছ লাগাতে হবে। যেসব বাসার মালিক ছাদবাগান করবেন তাদের সহযোগিতার জন্য ঢাকাসহ দেশের সব সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলো তাদের পৌরকর অবকাশের মতো প্রণোদনা দিতে পারে। উৎসাহী ছাদবাগানিদের মধ্যে গাছের চারা, জৈব সার ও বাগান নির্মাণের জন্য মাটির টব বিনামূল্যে বিতরণ করতে পারে। ছাদবাগানের ওপর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারে। লিফলেট, পোস্টার লাগাতে পারে। নগরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিলবোর্ড স্থাপন করতে পারে। বছরে একবার নগরের শ্রেষ্ঠ ছাদবাগানিদের পুরস্কৃত করতে পারে।
[লেখক : সাবেক মহাব্যবস্থাপক (কৃষি), বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন]
নিতাই চন্দ্র রায়
মঙ্গলবার, ২৫ জুন ২০২৪
শীতল বাতাস দিচ্ছে ছায়া/আম, কাঁঠালের বন/বৃক্ষ আমার ভালোবাসা/বৃক্ষ আপন জন। পৃথিবীতে বৃক্ষের চেয়ে প্রকৃত বন্ধু প্রাণিকুলের আর কেউ নেই। বৃক্ষ বাতাস থেকে কার্বনডাই অক্সাইড গ্রহণ করে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় যে অক্সিজেন ত্যাগ করে তা গ্রহণ করেই বেঁচে আছে পৃথিবীর প্রাণিকুলÑ এ কথা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। এজন্য বৃক্ষকে বলা হয় অক্সিজেন তৈরির প্রাকৃতিক কারখানা। এই কারখানা সামান্য সময়ে জন্য বন্ধ হলে অস্তিত্ব বিপন্ন হবে মানবজাতির। পশুপাখি বন্যপ্রাণীদের। জলাশয়ে বসবাসকারী মাছ, কুমির, শুশুকসহ জলজ প্রাণীদের।
বৃক্ষ কি শুধু অক্সিজেন সরবরাহ করে? না, বৃক্ষ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। মাটি ক্ষয় রোধ করে। মাটির উর্বরতা সংরক্ষণে সহায়তা করে। কেঁচোসহ লাখ লাখ অণুজীবের আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে। বায়ুম-লের তাপমাত্রা হ্রাস করে। শীতল ছায়া প্রদান করে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। তালগাছ বজ্রপাতের হাত থেকে মানুষ ও গবাদিপশুদের জীবন রক্ষা করে। গাছ, মানুষ, পশুপাখির খাদ্য জোগায়। বন্যপ্রাণীদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করে। আদিমকালে মানুষ যখন আগুন জ¦ালাতে শেখেনি, তখন মানুষের প্রধান খাদ্য ছিল বন-জঙ্গলের ফলমূল। রোদের রান্নাঘরে তৈরি শতভাগ মসলাবিহীন খাবার হলো ফল।
ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ রয়েছে, যা অন্য কোনো খাদ্যে পাওয়া যায় না। লেবু জাতীয় ফলে থাকে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’। ভিটামিন ‘সি’ দেহের ক্ষত নিরাময়ে সহায়তা করে। রক্ত জমাট বাধার কাজে সাহায্য করে। দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে আমিষ, শর্করা ও ভিটামিন থাকায় তা মানবদেহের জন্য বিশেষ উপকারী। কাঁচা কাঁঠালের তরকারিকে বলা হয় গরিবের মাংস। কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ থাকার কারণে রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে। জাম শরীরের হাড়কে মজবুত করে, ডায়রিয়া ও আলসার নিরাময়ে ভূমিকা রাখে। আমড়া পিত্ত ও কফ নিবারক, রুচি বর্ধক। আমড়া কোলেস্টেরেলের মাত্রা কমায়। সফেদায় প্রচুর ক্যাসিয়াম লৌহ রয়েছে, যা হাড় ও দাঁত সুস্থ রাখে। আমলকি সর্দি-কাশি সারাতে ও হজম ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। আমলকির রস কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলসের সমস্যা দূর করে। আমলকির রসের অ্যামিনো এসিড এবং প্রোটিন চুল পড়া রোধ করে। ফলের রাজা আমের গুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না। আয়রন ও সোডিয়ামের ঘাটতি পূরণে বেশ কার্যকরী আম। আম রক্তের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায়। ডায়বেটিসের সঙ্গে লড়াই করে। আমের ভিটামিন ‘এ’, দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে।
ঘূর্ণিঝড় আইলা, সিডর, মহাসেন ও রেমালের হাত থেকে উপকূলবাসীকে রক্ষা করেছে সুন্দরবনের বৃক্ষরাজি। প্রচ- ঝড়ে বৃক্ষের ডালপালা ভেঙেছে। শিকড়সহ উপড়ে গেছে গাছ। তারপর পরও তারা রক্ষা করেছে উপকূল অঞ্চলে মানুষ এবং সুন্দরবনের প্রাণিকুলকে। আমার মনে হয় সুন্দরবনই মানবঢাল রচনা করে ঝড়ের তা-ব হতে রক্ষা করছে উপকূলের সাড়ে তিন কোটি মানুষ এবং তাদের সহায়সম্পদ ও বাড়িঘর।
প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেককে একটি করে ফলজ, বনজ ও ওষুধি গাছ লাগানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এভাবে আমাদের দেশকে যদি আমরা সবুজ করে রাখতে পারি, তাহলে বাংলাদেশ আর পিছিয়ে থাকবে না। সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। সেজন্য সবাইকে আমাদের একইভাবে পরিবেশ সুরক্ষার চিন্তা করতে হবে। তবে একটা জিনিসের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে, ফসলি জমি কোনো ক্রমেই নষ্ট করা যাবে না। যত্রতত্র শিল্পকারখানা গড়ে কৃষিজমি নষ্ট করা যাবে না। শিল্পকারখানা গড়ার জন্য বর্তমান সরকার সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করেছে। শিল্পপতিদের সেখানেই পরিকল্পিতভাবে পরিবেশবান্ধব শিল্পকারখানা গড়ে তুলতে হবে। গ্রামে আমাদের বহু খালি জায়গা আছে। বিশেষ করে নদীর পাড়, যেসব এলাকায় ভাঙন হতে পারে, সেসব জায়গায় বড় শিকড়সমৃদ্ধ মাটি কামড়ে ধরে রাখার সক্ষমতা সম্পন্ন গাছ লাগাতে হবে। উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতেও গাছ লাগাতে হবে। দুর্যোগ প্রতিরোধে গাছ আমাদের প্রথম সুরক্ষা দেয়। উপকূলে সবুজ বেষ্টনী তৈরি করা, ম্যানগ্রোভ তৈরি করা, জলোচ্ছ্বাস থেকে উপকূলকে বাঁচাতে আমাদের ব্যাপক হারে বৃক্ষরোপণ করতে হবে।
বসতবাড়ির আশপাশের উঁচু জমি এবং বহুতল বিশিষ্ট ভবনের ছাদেও গাছ লাগাতে হবে। যেসব বাসার মালিক ছাদবাগান করবেন তাদের সহযোগিতার জন্য ঢাকাসহ দেশের সব সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলো তাদের পৌরকর অবকাশের মতো প্রণোদনা দিতে পারে। উৎসাহী ছাদবাগানিদের মধ্যে গাছের চারা, জৈব সার ও বাগান নির্মাণের জন্য মাটির টব বিনামূল্যে বিতরণ করতে পারে। ছাদবাগানের ওপর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারে। লিফলেট, পোস্টার লাগাতে পারে। নগরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিলবোর্ড স্থাপন করতে পারে। বছরে একবার নগরের শ্রেষ্ঠ ছাদবাগানিদের পুরস্কৃত করতে পারে।
[লেখক : সাবেক মহাব্যবস্থাপক (কৃষি), বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন]