alt

উপ-সম্পাদকীয়

প্রসঙ্গ : আনসার বাহিনী

ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ

: মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী দেশের সর্ববৃহৎ শৃঙ্খলা বাহিনী। তৃণমূল পর্যায়ে এ বাহিনীর বিস্তৃতি। ১৯৪৮ সালে এ বাহিনীর যাত্রা শুরু হয়। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে আনসার বাহিনীকে সুসংগঠিত করে এর নামকরণ করা হয় ‘বাংলাদেশ আনসার’। ১৯৭৬ সালে গ্রামীণ আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে গ্রাম প্রতিরক্ষা দল (ভিডিপি) গঠন করে এবং বাংলাদেশ আনসারের সঙ্গে একই প্রশাসনিক কাঠামোয় সন্নিবেশিত করায় এর আত্মপরিচিতি ঘটে ‘আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা দল’ সংক্ষেপে আনসার-ভিডিপি হিসেবে। ১৯৯৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে এ সংগঠনটি শৃঙ্খলা বাহিনী রূপে আইনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন লাভ করে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ সংগঠনটির বিপুলসংখ্যক সদস্য বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিরলস প্রয়াস চালিয়ে সর্বমহলের প্রশংসা অর্জন করে। এ বাহিনীর কার্যক্রম তৃণমূল পর্যায়ে ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত। সাংগঠনিক কাঠামো ও আইন অনুযায়ী এ বাহিনীর স্বেচ্ছাসেবী জনবল প্রায় ৬০ লাখ। শুধু ভিডিপি ইউনিয়ন দলনেতারা মাসিক সম্মানি ভাতা পান। তালিকাভুক্ত অন্য সদস্য-সদস্যারা নিয়মিত আর্থিক সুবিধার আওতায় না থাকলেও প্রতি বছরই কোন না কোন প্রশিক্ষণ গ্রহণ, সমাবেশে যোগদান এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সদস্য নির্বাচন, দুর্গাপূজা, জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন ইত্যাদি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিরাপত্তার রক্ষার কাজে নিয়োজিত হয়ে থাকেন। অন্যান্য সময়ে নিজ নিজ পেশায় অর্থসংস্থান ও উন্নয়নমূলক কাজে নিয়োজিত থাকেন। বাংলাদেশ পুলিশ, আনসার ভিডিপি বাহিনীকে আমরা সাংবিধানিকভাবে শৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকি। বাংলাদেশ পুলিশ হচ্ছে ২০০ বছরের অধিক পুরনো এক ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের নাম। আর আনসার বাহিনী ১৯৪৮ সালে সৃষ্টি। তাদেরও ৭৫ বছর পূর্তি হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে উভয় বাহিনী এক তাৎপর্যময় ভূমিকা পালন করে স্ব স্ব ক্ষেত্রে ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করেছে। এ যাবত আনসার বাহিনীতে যে সংস্কার ও সদস্যগনের যতটা কল্যাণ হয়েছেÑ তাতে আনসার বাহিনী পুলিশ বা সমাজের অন্য সব বিভাগের নি¤œতম ধাপে তাদের অবস্থান। তারা পুলিশের মতো মুখ উঁচিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিগত সুবিধাদি আদায় করে নিতে জানে না। আর এজন্যই ১৯৯৪ সালের আনসার বিদ্রোহে তারা ধরাশায়ী হয়েছিল এবারের আন্দোলনেও তাদের কুপোকাত করা হয়েছে। সাম্প্রতিক আনসার বাহিনীর আন্দোলন ছিল একটি বিশেষ গ্রুপেরÑ যারা অঙ্গীভূত আনসার হিসাবে আখ্যায়িত হয়ে থাকে। সারাদেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এ অঙ্গীভূত আনসারের সংখ্যা ৫ লক্ষাধিক। প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত এ আনসার সদস্যদের প্যানেল থেকে বিভিন্ন সরকারি/বেসরকারি গার্ডে অঙ্গীভূতির জন্য মেসেজের ভিত্তিতে আনসার ভিডিপি বাহিনী থেকে সিসি অর্ডার হয়ে থাকে। সারা বাংলাদেশে ৭০,০০০ মতো কমবেশি আনসার সদস্য রোটেশনাল প্রদ্ধতিতে বিভিন্ন গার্ডে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে থাকে। বিভিন্ন প্রত্যাশী সংস্থার চাহিদা এবং সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ভাতার ভিত্তিতে প্রায় পনের হাজার টাকা কমবেশি অর্থে প্রত্যাশী সংস্থা সরকারের কাছ থেকে নিরাপত্তা সেবা কিনে থাকে। তার বিনিময়ে অঙ্গীভূত আনসাররা নিরাপত্তা সেবা প্রদান করে থাকে। সারা বাংলাদেশে আনসারদের মাধ্যমে যে সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে তা খুবই তাৎপর্যময় অর্থ বহন করে থাকে। পৃথিবীর কোন উন্নত রাষ্ট্রে এত বিরাট সংখ্যক সংস্থার এত সস্তায় নিরাপত্তা সেবা প্রদান করে থাকে অথবা এ অঙ্গীভূত আনসারদের এ সস্তা শ্রমের কথা দেশের নাগরিক সমাজ অবিহত আছেন বলে আমার মনে হয় না। অঙ্গীভূত আনসার সদস্যগনের দাবীর যৌক্তিকতা সরকার বিবেচনার্থে একটি কমিটিও গঠন করেছিলেন এবং তাদের স্বার্থের বিষয় বিবেচিত হবে মর্মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রেস রিলিজও হয়েছিল। কিন্তু আনসার বাহিনীর সদস্যরা সরকারের কোন কথা না শুনে সচিবালয়কে ঘিরে রাখে এবং সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের জিম্মি করে রাখেÑ যা কোন অবস্থাতে সমীচীন ছিল না। পরবর্তীতে ছাত্র ব্রির্গেড তাদের মুখোমুখি হয়ে পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয়। আনসার-ছাত্রের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুপক্ষের অনেকেই আহত হয়েছে তবে বড় রকমের কোন অপঘাত ঘটেনি। ছাত্র-জনতার চাপে আন্দোলনকারী উল্লেখযোগ্য আনসার সদস্য অনেকেই পালিয়ে যায়। ওই সময়ের ছাত্র-জনতা ও আনসারদের মাঝে সংঘর্ষ যাতে মারত্মক আকার রূপ নিতে না পারে সেজন্য আন্দোলনকারী আনসারদের পুলিশ সেনা সদস্য এবং ছাত্র যৌথভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা গ্রহণ করে থাকে। ঘটনাত্তর প্রায় ৪০০ জন আনসার সদস্যকে আটক করে তাদের বিরুদ্ধে যথারীতি মামলার ও রজু হয়। আনসার সদস্যদের এ অনমনিয়তার পিছনে কোন বিশেষ গ্রুপের ইন্ধন না থাকলে অবস্থা এ পর্যায়ে যেতে পারে না। উস্কানি ও মদদের বহুমুখীতায় আনসার সদস্যরা খুবই বেপরোয়া হয়েছিল বলে মনে হয়। এছাড়া এ সংকটের জন্য বাহিনীর অনেক কর্মকর্তাকে দায়ী করা যেতে পারে। কেননা আন্দোলনের অংশ হিসেবে সচিবালয়ে ঘেরাওয়ের পূর্বে প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণ এবং রাজপথে তাদের বিভিন্নভাবে মহড়া হয়েছিল। এ মহড়া ও সূচনা পর্বের পরিস্থিতি অনুধাবনপূর্বক তাদের নিয়ন্ত্রণে আনা উচিত ছিল। সংকটের সূচনা বুঝেই তাদের আন্দোলনকে থামিয়ে দেয়া প্রচেষ্টার হয়তো বা অনেক ঘাটতি ছিল। এটাকে এক ধরনের নেতৃত্বের সংকট ও ব্যর্থতা বলে অনুমিত হয়। এছাড়া এটা বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার নজরে আসা উচিত ছিল। সর্বোপরি এটাকে দায়িত্বহীন নেতৃত্বের সংকটের এক খারাপ অধ্যায় হিসেবে অনেকেই আখ্যায়িত করে থাকে। অঙ্গীভূত আনসারদের প্রতি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা এবং অবহেলাকে এ ঘটনার দায় থেকে উড়িয়ে দেয়া যায় না। তাদের দাবি, অধিকারের কথা উপর মহলে তুলে ধরার মতো সাহসী মানসিকতা সম্পন্ন কর্মকর্তার কোন ভূমিকা ছিল না বলে ধারণা করা হয়ে থাকে। আনসারের নেতৃত্বের সমস্যার দ্রুত অবসান ঘটিয়ে বাহিনী গঠনে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে মেরামত ও সংস্কারে মনোযোগী হবে সেটাই জনগণের প্রত্যাশা। এ প্রেক্ষিতে ১৯৯৪ সালে সংগঠিত আনসার বিদ্রোহ ও সাম্প্রতিক আনসার আন্দোলনে আনসার বাহিনীর কার্যকারিতা ও মান্নোন্নয়নে নিম্নোক্ত তিনটি প্রস্তাবনা ও সুপারিশনামা উপস্থাপন করা হলোÑ প্রথমত, সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব ও কর্তব্য প্রদান করে স্বকীয় সত্ত্বা ও মর্যাদায় অভিসিক্তকরণ এক্ষেত্রে বিগত দিনে সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব প্রদান বিষয়ে কী ধরনের প্রস্তাবনা ছিল তা খতিয়ে দেখা যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, আনসার ক্যাডারের বিলোপ সাধন করে এই ক্যাডারকে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের সঙ্গে সমন্বয় করে দেয়ার পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। আনসার বাহিনীর কার্যক্রমগুলোকে পুলিশের হাইওয়ে পুলিশিং, পর্যটন পুলিশিং, নৌ পুলিশিং, শিল্প পুলিশিং, নিরাপত্তা ও দাঙ্গা পুলিশিং এবং বিশেষ পুলিশিংয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে দিয়ে আনসারকে বিলুপ্ত করা যেতে পারে। অন্যদিকে গ্রাম প্রতিরক্ষাদল ভিডিপিকে ‘ভিলেজ ডেভেলপমেন্ট পুলিশিং’ নামকরণ করে পুলিশের আলাদা একটি উইং সৃষ্টি করা যেতে পারে। যুক্তি হিসেবে উল্লেখ্য যে পূর্বে যে সচিবালয় ক্যাডার ছিল তাকে ভেঙে প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে একীভূত করা হয়। তৃতীয় বিকল্প প্রস্তাব হচ্ছে এ বাহিনীকে আইনের মাধ্যমে প্যারামিলিটারি ঘোষণা দিয়ে সেনাবাহিনীর অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে যেখানে আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনের মাধ্যমে তার যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা যেতে পারে।

[লেখক : সাবেক উপ-মহাপরিচালক, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি]

অতীত থেকে মুক্তি এবং ইতিবাচক জীবনযাপন

মুক্তি সংগ্রামে তিনটি ধারা

বাসযোগ্যতার সূচকে ঢাকা কেন পিছিয়ে

শুধু নিচেই নামছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর

উপেক্ষিত আটকে পড়া পাকিস্তানিরা

রম্যগদ্য : সিন্দাবাদের বুড়ো ও আমরা

নেই কেনো সেই পাখি

বায়ুদূষণ থেকে মুক্তি কোন পথে

পরিবারতত্ত্ব ও পরিবারতন্ত্র : রাষ্ট্র সংস্কারের দুর্গম পথ

পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র

বিজয়ের প্রেরণা

মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকার পুনর্বীক্ষণ

সিদরাত জেবিনের মৃত্যু অথবা প্রশ্নহীন বায়ুদূষণ

বিজয়ের গৌরব ও সম্ভাবনাময় তরুণ সমাজ

ছবি

মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি বন্ধুদের অবদান

ছবি

বিজয় সংগ্রামের সূচনার সন্ধানে

মানসম্মত কনটেন্ট ও টিআরপির দ্বৈরথ

জিকা ভাইরাস রোধে প্রয়োজন সচেতনতা

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক

স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবার গুরুত্ব

ঢাকার বাতাস বিষাক্ত কেন

চরের কৃষি ও কৃষকের জীবন

নিম্ন আয়ের মানুষ ভালো নাই

সবার আগে নিজেকে পরিবর্তন করা দরকার

পুলিশ কবে পুলিশ হবে

জীবন ফিরে আসুক বাংলার নদীগুলোতে

কান্দন সরেন হত্যা ও ভূমি বিরোধ কি এড়ানো যেত না

পরিবারতত্ত্ব ও পরিবারতন্ত্র: রাষ্ট্র বিনির্মাণে সমস্যা কোথায়?

মানবাধিকার দিবস : মানুষের অধিকার নিয়ে কেন এত কথা?

আমলাতান্ত্রিক স্বচ্ছতা : সংস্কারের পথে নাকি পুনরাবৃত্তি?

খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে কিছু কথা

ছবি

বেগম রোকেয়া : নারী জাগরণের অগ্রদূত

দুর্নীতির সর্বগ্রাসী বিস্তার বন্ধ করতে হবে

মা তোর বদনখানি মলিন হলে

ব্যবসায়ী নেতৃত্বশূন্য ই-ক্যাব

মূল্যস্ফীতির হিসাব নির্ণয়ে নতুন পদ্ধতির প্রাসঙ্গিকতা

tab

উপ-সম্পাদকীয়

প্রসঙ্গ : আনসার বাহিনী

ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ

মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী দেশের সর্ববৃহৎ শৃঙ্খলা বাহিনী। তৃণমূল পর্যায়ে এ বাহিনীর বিস্তৃতি। ১৯৪৮ সালে এ বাহিনীর যাত্রা শুরু হয়। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে আনসার বাহিনীকে সুসংগঠিত করে এর নামকরণ করা হয় ‘বাংলাদেশ আনসার’। ১৯৭৬ সালে গ্রামীণ আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে গ্রাম প্রতিরক্ষা দল (ভিডিপি) গঠন করে এবং বাংলাদেশ আনসারের সঙ্গে একই প্রশাসনিক কাঠামোয় সন্নিবেশিত করায় এর আত্মপরিচিতি ঘটে ‘আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা দল’ সংক্ষেপে আনসার-ভিডিপি হিসেবে। ১৯৯৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে এ সংগঠনটি শৃঙ্খলা বাহিনী রূপে আইনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন লাভ করে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ সংগঠনটির বিপুলসংখ্যক সদস্য বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিরলস প্রয়াস চালিয়ে সর্বমহলের প্রশংসা অর্জন করে। এ বাহিনীর কার্যক্রম তৃণমূল পর্যায়ে ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত। সাংগঠনিক কাঠামো ও আইন অনুযায়ী এ বাহিনীর স্বেচ্ছাসেবী জনবল প্রায় ৬০ লাখ। শুধু ভিডিপি ইউনিয়ন দলনেতারা মাসিক সম্মানি ভাতা পান। তালিকাভুক্ত অন্য সদস্য-সদস্যারা নিয়মিত আর্থিক সুবিধার আওতায় না থাকলেও প্রতি বছরই কোন না কোন প্রশিক্ষণ গ্রহণ, সমাবেশে যোগদান এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সদস্য নির্বাচন, দুর্গাপূজা, জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন ইত্যাদি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিরাপত্তার রক্ষার কাজে নিয়োজিত হয়ে থাকেন। অন্যান্য সময়ে নিজ নিজ পেশায় অর্থসংস্থান ও উন্নয়নমূলক কাজে নিয়োজিত থাকেন। বাংলাদেশ পুলিশ, আনসার ভিডিপি বাহিনীকে আমরা সাংবিধানিকভাবে শৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকি। বাংলাদেশ পুলিশ হচ্ছে ২০০ বছরের অধিক পুরনো এক ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের নাম। আর আনসার বাহিনী ১৯৪৮ সালে সৃষ্টি। তাদেরও ৭৫ বছর পূর্তি হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে উভয় বাহিনী এক তাৎপর্যময় ভূমিকা পালন করে স্ব স্ব ক্ষেত্রে ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করেছে। এ যাবত আনসার বাহিনীতে যে সংস্কার ও সদস্যগনের যতটা কল্যাণ হয়েছেÑ তাতে আনসার বাহিনী পুলিশ বা সমাজের অন্য সব বিভাগের নি¤œতম ধাপে তাদের অবস্থান। তারা পুলিশের মতো মুখ উঁচিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিগত সুবিধাদি আদায় করে নিতে জানে না। আর এজন্যই ১৯৯৪ সালের আনসার বিদ্রোহে তারা ধরাশায়ী হয়েছিল এবারের আন্দোলনেও তাদের কুপোকাত করা হয়েছে। সাম্প্রতিক আনসার বাহিনীর আন্দোলন ছিল একটি বিশেষ গ্রুপেরÑ যারা অঙ্গীভূত আনসার হিসাবে আখ্যায়িত হয়ে থাকে। সারাদেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এ অঙ্গীভূত আনসারের সংখ্যা ৫ লক্ষাধিক। প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত এ আনসার সদস্যদের প্যানেল থেকে বিভিন্ন সরকারি/বেসরকারি গার্ডে অঙ্গীভূতির জন্য মেসেজের ভিত্তিতে আনসার ভিডিপি বাহিনী থেকে সিসি অর্ডার হয়ে থাকে। সারা বাংলাদেশে ৭০,০০০ মতো কমবেশি আনসার সদস্য রোটেশনাল প্রদ্ধতিতে বিভিন্ন গার্ডে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে থাকে। বিভিন্ন প্রত্যাশী সংস্থার চাহিদা এবং সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ভাতার ভিত্তিতে প্রায় পনের হাজার টাকা কমবেশি অর্থে প্রত্যাশী সংস্থা সরকারের কাছ থেকে নিরাপত্তা সেবা কিনে থাকে। তার বিনিময়ে অঙ্গীভূত আনসাররা নিরাপত্তা সেবা প্রদান করে থাকে। সারা বাংলাদেশে আনসারদের মাধ্যমে যে সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে তা খুবই তাৎপর্যময় অর্থ বহন করে থাকে। পৃথিবীর কোন উন্নত রাষ্ট্রে এত বিরাট সংখ্যক সংস্থার এত সস্তায় নিরাপত্তা সেবা প্রদান করে থাকে অথবা এ অঙ্গীভূত আনসারদের এ সস্তা শ্রমের কথা দেশের নাগরিক সমাজ অবিহত আছেন বলে আমার মনে হয় না। অঙ্গীভূত আনসার সদস্যগনের দাবীর যৌক্তিকতা সরকার বিবেচনার্থে একটি কমিটিও গঠন করেছিলেন এবং তাদের স্বার্থের বিষয় বিবেচিত হবে মর্মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রেস রিলিজও হয়েছিল। কিন্তু আনসার বাহিনীর সদস্যরা সরকারের কোন কথা না শুনে সচিবালয়কে ঘিরে রাখে এবং সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের জিম্মি করে রাখেÑ যা কোন অবস্থাতে সমীচীন ছিল না। পরবর্তীতে ছাত্র ব্রির্গেড তাদের মুখোমুখি হয়ে পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয়। আনসার-ছাত্রের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুপক্ষের অনেকেই আহত হয়েছে তবে বড় রকমের কোন অপঘাত ঘটেনি। ছাত্র-জনতার চাপে আন্দোলনকারী উল্লেখযোগ্য আনসার সদস্য অনেকেই পালিয়ে যায়। ওই সময়ের ছাত্র-জনতা ও আনসারদের মাঝে সংঘর্ষ যাতে মারত্মক আকার রূপ নিতে না পারে সেজন্য আন্দোলনকারী আনসারদের পুলিশ সেনা সদস্য এবং ছাত্র যৌথভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা গ্রহণ করে থাকে। ঘটনাত্তর প্রায় ৪০০ জন আনসার সদস্যকে আটক করে তাদের বিরুদ্ধে যথারীতি মামলার ও রজু হয়। আনসার সদস্যদের এ অনমনিয়তার পিছনে কোন বিশেষ গ্রুপের ইন্ধন না থাকলে অবস্থা এ পর্যায়ে যেতে পারে না। উস্কানি ও মদদের বহুমুখীতায় আনসার সদস্যরা খুবই বেপরোয়া হয়েছিল বলে মনে হয়। এছাড়া এ সংকটের জন্য বাহিনীর অনেক কর্মকর্তাকে দায়ী করা যেতে পারে। কেননা আন্দোলনের অংশ হিসেবে সচিবালয়ে ঘেরাওয়ের পূর্বে প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণ এবং রাজপথে তাদের বিভিন্নভাবে মহড়া হয়েছিল। এ মহড়া ও সূচনা পর্বের পরিস্থিতি অনুধাবনপূর্বক তাদের নিয়ন্ত্রণে আনা উচিত ছিল। সংকটের সূচনা বুঝেই তাদের আন্দোলনকে থামিয়ে দেয়া প্রচেষ্টার হয়তো বা অনেক ঘাটতি ছিল। এটাকে এক ধরনের নেতৃত্বের সংকট ও ব্যর্থতা বলে অনুমিত হয়। এছাড়া এটা বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার নজরে আসা উচিত ছিল। সর্বোপরি এটাকে দায়িত্বহীন নেতৃত্বের সংকটের এক খারাপ অধ্যায় হিসেবে অনেকেই আখ্যায়িত করে থাকে। অঙ্গীভূত আনসারদের প্রতি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা এবং অবহেলাকে এ ঘটনার দায় থেকে উড়িয়ে দেয়া যায় না। তাদের দাবি, অধিকারের কথা উপর মহলে তুলে ধরার মতো সাহসী মানসিকতা সম্পন্ন কর্মকর্তার কোন ভূমিকা ছিল না বলে ধারণা করা হয়ে থাকে। আনসারের নেতৃত্বের সমস্যার দ্রুত অবসান ঘটিয়ে বাহিনী গঠনে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে মেরামত ও সংস্কারে মনোযোগী হবে সেটাই জনগণের প্রত্যাশা। এ প্রেক্ষিতে ১৯৯৪ সালে সংগঠিত আনসার বিদ্রোহ ও সাম্প্রতিক আনসার আন্দোলনে আনসার বাহিনীর কার্যকারিতা ও মান্নোন্নয়নে নিম্নোক্ত তিনটি প্রস্তাবনা ও সুপারিশনামা উপস্থাপন করা হলোÑ প্রথমত, সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব ও কর্তব্য প্রদান করে স্বকীয় সত্ত্বা ও মর্যাদায় অভিসিক্তকরণ এক্ষেত্রে বিগত দিনে সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব প্রদান বিষয়ে কী ধরনের প্রস্তাবনা ছিল তা খতিয়ে দেখা যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, আনসার ক্যাডারের বিলোপ সাধন করে এই ক্যাডারকে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের সঙ্গে সমন্বয় করে দেয়ার পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। আনসার বাহিনীর কার্যক্রমগুলোকে পুলিশের হাইওয়ে পুলিশিং, পর্যটন পুলিশিং, নৌ পুলিশিং, শিল্প পুলিশিং, নিরাপত্তা ও দাঙ্গা পুলিশিং এবং বিশেষ পুলিশিংয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে দিয়ে আনসারকে বিলুপ্ত করা যেতে পারে। অন্যদিকে গ্রাম প্রতিরক্ষাদল ভিডিপিকে ‘ভিলেজ ডেভেলপমেন্ট পুলিশিং’ নামকরণ করে পুলিশের আলাদা একটি উইং সৃষ্টি করা যেতে পারে। যুক্তি হিসেবে উল্লেখ্য যে পূর্বে যে সচিবালয় ক্যাডার ছিল তাকে ভেঙে প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে একীভূত করা হয়। তৃতীয় বিকল্প প্রস্তাব হচ্ছে এ বাহিনীকে আইনের মাধ্যমে প্যারামিলিটারি ঘোষণা দিয়ে সেনাবাহিনীর অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে যেখানে আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনের মাধ্যমে তার যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা যেতে পারে।

[লেখক : সাবেক উপ-মহাপরিচালক, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি]

back to top