alt

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

বাসন্তী পূজা

এস ডি সুব্রত

: সোমবার, ০৭ এপ্রিল ২০২৫

ইতিহাস অনুসারে, চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষে অনুষ্ঠিত বাসন্তী পূজাই প্রকৃত দুর্গাপূজা। যদিও আধুনিক কালে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষে শারদীয় দুর্গাপূজা প্রধান পূজা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। মহাপুরুষরা বিপদের সময়ে অশুভ শক্তির বিনাশের জন্য আদ্যাশক্তি দেবী দুর্গার আরাধনা করেছেন। রামায়ণে শ্রী রামচন্দ্র শরৎকালে অশুভ শক্তি নির্মূল করতে দেবীর পূজা করেন, যা অকালবোধন নামে পরিচিত। অন্যদিকে, পুরাণ অনুযায়ী, চিত্রবংশীয় রাজা সুরথ বসন্তকালে দেবীর আরাধনা করেন। কালের পার্থক্য থাকলেও উভয় পূজার উদ্দেশ্য ও দেবী একইÑ দুর্গা। সময়ের প্রভেদে পূজার রীতিতে সামান্য ভিন্নতা থাকলেও, শারদীয়া ও বাসন্তী দুর্গাপূজার মূল আচার প্রায় অভিন্ন। শরৎকালে শারদীয়া দুর্গাপূজা এবং বসন্তকালে বাসন্তী পূজাÑ দুটিই দেবী দুর্গার প্রতি নিবেদিত।

চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষে অনুষ্ঠিত বাসন্তী পূজাকে দুর্গাপূজার আদি রূপ বলা হয়। যদিও শরৎকালের দুর্গাপূজা আজ বাঙালির প্রধান উৎসব হয়ে উঠেছে, তবুও বাসন্তী পূজার ঐতিহ্য বাঙালি সমাজ কখনো পুরোপুরি ভোলেনি। তাই বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে এখনও বাসন্তী পূজার আয়োজন দেখা যায়। পুরাণে বর্ণিত আছে, রাজা সুরথ রাজ্যহারা হয়ে ঋষি মেধসের আশ্রমে বৈশ্য সমাধির সঙ্গে মিলে মূর্তি গড়ে বসন্তকালে দেবী দুর্গার পূজা করেন। এই পূজাই পরবর্তীকালে বাসন্তী পূজা নামে প্রসিদ্ধ হয়। অন্যদিকে, রামচন্দ্র সীতা উদ্ধারের জন্য শরৎকালে দেবীর আরাধনা করেন, যা অকালবোধন হিসেবে খ্যাতি লাভ করে। বাল্মীকি রামায়ণে এই ঘটনার উল্লেখ থাকলেও, বাঙালি কবি কৃত্তিবাস ওঝা তার বঙ্গ-রামায়ণে এর এমন হৃদয়স্পর্শী বর্ণনা দিয়েছেন যে, শারদীয়া দুর্গাপূজা বাঙালির মনে চিরস্থায়ী আসন পেয়েছে।

তবুও বাসন্তী পূজার আয়োজন আজও অব্যাহত রয়েছে, যদিও এটি কখনো শারদীয়া পূজার মতো বারোয়ারি রূপ নেয়নি। ঐতিহাসিকভাবে বাসন্তী পূজা মূলত জমিদার, নায়েব ও গোমস্তাদের মতো গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এটি কখনো সাধারণ মানুষের পূজায় রূপান্তরিত হয়নি, বরং পরিবারকেন্দ্রিক ঐতিহ্য হিসেবেই টিকে আছে।

কথিত আছে, বাংলায় দুর্গাপূজার প্রচলন রাজা সুরথের হাত ধরে শুরু হয়। মেধা মুনির কাছে দীক্ষা নিয়ে তিনি ও বৈশ্য সমাধি মেধসাশ্রমে দুর্গাপূজার সূচনা করেন। চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষে প্রথম দুর্গাপূজা শুরু করার কারণে এটি বাসন্তী পূজা নামে পরিচিত। চ-ীতে রাজা সুরথকে দেবী দুর্গার প্রথম পূজারি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ক্ষত্রিয় বংশের এই রাজা সুশাসক ও অপরাজিত যোদ্ধা হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিলেন। কিন্তু প্রতিবেশী যবন রাজার আক্রমণে তিনি পরাজিত হন এবং সভাসদদের দ্বারা সম্পত্তি লুণ্ঠিত হয়। কাছের মানুষদের এই আচরণে স্তম্ভিত হয়ে সর্বস্বান্ত রাজা বনে চলে যান এবং মেধসাশ্রমে আশ্রয় নেন।

ঋষি তাকে সেখানে থাকতে বলেন, কিন্তু রাজা সবসময় রাজ্য ও প্রজাদের চিন্তায় অস্থির থাকতেন। একদিন তার সাক্ষাৎ হয় সমাধি নামক বৈশ্যের সঙ্গে, যিনি স্ত্রী ও পুত্রের দ্বারা সম্পত্তি থেকে বিতাড়িত হয়েও তাদের কল্যাণ চিন্তা করতেন। দুজনেই বিস্মিত হন যে, যারা তাদের সর্বস্ব কেড়ে নিয়েছে, তাদের জন্যই তারা এখনো শুভকামনা করেন। ঋষির কাছে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, এসবই মহামায়ার ইচ্ছা। ঋষি মহামায়ার কাহিনী বর্ণনা করেন এবং তার উপদেশে রাজা কঠিন তপস্যায় নিযুক্ত হন। পরবর্তীকালে মহামায়ার উদ্দেশে বসন্তকালের শুক্লপক্ষে তিনি পূজা শুরু করেন, যা বাসন্তী পূজা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

[লেখক : কবি]

ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে এশিয়া

ছবি

নামে ইসলামী, কাজে আবু জাহেল!

জলবায়ু পরিবর্তন: স্বাস্থ্যঝুঁকি

ছবি

অস্থির পেঁয়াজের বাজার: আমদানি কি সত্যিই সমাধান?

মূল্যবৃদ্ধির ঘেরাটোপ: সংকটাক্রান্ত পরিবার ও সামাজিক রূপান্তর

বায়দূষণে অকালমৃত্যু

লাশের বদলে লাশই যদি চুড়ান্ত হয়, তবে রাষ্ট্রের দরকার কী?

ভিক্ষাবৃত্তি যেখানে অন্যতম পেশা

বুদ্ধিজীবী হত্যা ও এর স্বরূপ সন্ধানে

আদিবাসীদের ভূমি অধিকার ও নিরাপত্তা সংকট

“মুনীর চৌধুরীর কবর...”

বুদ্ধিজীবী হত্যা ও এর স্বরূপ সন্ধানে

জলবায়ু সংকট ও খাদ্য নিরাপত্তা

স্বাধীন তদন্ত কমিশন দাবির নেপথ্যে কি দায়মুক্তি?

বুদ্ধিজীবী হত্যা ও এর স্বরূপ সন্ধানে

প্রহর গুনি কোন আশাতে!

বিজয়ের রক্তাক্ত সূর্য ও আমাদের ঋণের হিসাব

বিজয় দিবস: নতুন প্রজন্মের রাষ্ট্রচিন্তার দিকদর্শন

ছবি

আমাদের বিজয়ের অন্তর্নিহিত বার্তা

প্রাণিসম্পদ: দেশীয় জাত, আধুনিক প্রযুক্তি

জমির জরিপ: ন্যায়বিচার প্রসঙ্গ

বুদ্ধিজীবী হত্যা ও এর স্বরূপ সন্ধানে

উন্নয়নের আড়ালে রোগীর ভোগান্তি: আস্থা সংকটে স্বাস্থ্যসেবা

ছবি

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস: অমিত শক্তির উৎস

ছবি

বেগম রোকেয়া এখনো জাগ্রত

পশ্চিমবঙ্গ: বামপন্থীদের ‘বাংলা বাঁচাও’-এর ডাক

সবার বাংলাদেশ কবে প্রতিষ্ঠিত হবে?

বিদেশি বিনিয়োগ : প্রয়োজন আইনের শাসন ও সামাজিক স্থিতি

চিকিৎসা যখন অসহনীয় ব্যয়, তখন প্রতিবাদই ন্যায়

মস্কোর কৌশলগত পুনর্গঠন

“সব শিয়ালের এক রা’ মারা গেল কুমিরের ছা”

ছবি

বিচূর্ণ দর্পণের মুখ

নিজের চেতনায় নিজেরই ঘা দেয়া জরুরি

ঋণ অবলোপনের প্রভাব

ভেজাল গুড়ের মরণফাঁদ: বাঙালির ঐতিহ্য, জনস্বাস্থ্য ও আস্থার নীরব বিপর্যয়

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস

tab

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

বাসন্তী পূজা

এস ডি সুব্রত

সোমবার, ০৭ এপ্রিল ২০২৫

ইতিহাস অনুসারে, চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষে অনুষ্ঠিত বাসন্তী পূজাই প্রকৃত দুর্গাপূজা। যদিও আধুনিক কালে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষে শারদীয় দুর্গাপূজা প্রধান পূজা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। মহাপুরুষরা বিপদের সময়ে অশুভ শক্তির বিনাশের জন্য আদ্যাশক্তি দেবী দুর্গার আরাধনা করেছেন। রামায়ণে শ্রী রামচন্দ্র শরৎকালে অশুভ শক্তি নির্মূল করতে দেবীর পূজা করেন, যা অকালবোধন নামে পরিচিত। অন্যদিকে, পুরাণ অনুযায়ী, চিত্রবংশীয় রাজা সুরথ বসন্তকালে দেবীর আরাধনা করেন। কালের পার্থক্য থাকলেও উভয় পূজার উদ্দেশ্য ও দেবী একইÑ দুর্গা। সময়ের প্রভেদে পূজার রীতিতে সামান্য ভিন্নতা থাকলেও, শারদীয়া ও বাসন্তী দুর্গাপূজার মূল আচার প্রায় অভিন্ন। শরৎকালে শারদীয়া দুর্গাপূজা এবং বসন্তকালে বাসন্তী পূজাÑ দুটিই দেবী দুর্গার প্রতি নিবেদিত।

চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষে অনুষ্ঠিত বাসন্তী পূজাকে দুর্গাপূজার আদি রূপ বলা হয়। যদিও শরৎকালের দুর্গাপূজা আজ বাঙালির প্রধান উৎসব হয়ে উঠেছে, তবুও বাসন্তী পূজার ঐতিহ্য বাঙালি সমাজ কখনো পুরোপুরি ভোলেনি। তাই বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে এখনও বাসন্তী পূজার আয়োজন দেখা যায়। পুরাণে বর্ণিত আছে, রাজা সুরথ রাজ্যহারা হয়ে ঋষি মেধসের আশ্রমে বৈশ্য সমাধির সঙ্গে মিলে মূর্তি গড়ে বসন্তকালে দেবী দুর্গার পূজা করেন। এই পূজাই পরবর্তীকালে বাসন্তী পূজা নামে প্রসিদ্ধ হয়। অন্যদিকে, রামচন্দ্র সীতা উদ্ধারের জন্য শরৎকালে দেবীর আরাধনা করেন, যা অকালবোধন হিসেবে খ্যাতি লাভ করে। বাল্মীকি রামায়ণে এই ঘটনার উল্লেখ থাকলেও, বাঙালি কবি কৃত্তিবাস ওঝা তার বঙ্গ-রামায়ণে এর এমন হৃদয়স্পর্শী বর্ণনা দিয়েছেন যে, শারদীয়া দুর্গাপূজা বাঙালির মনে চিরস্থায়ী আসন পেয়েছে।

তবুও বাসন্তী পূজার আয়োজন আজও অব্যাহত রয়েছে, যদিও এটি কখনো শারদীয়া পূজার মতো বারোয়ারি রূপ নেয়নি। ঐতিহাসিকভাবে বাসন্তী পূজা মূলত জমিদার, নায়েব ও গোমস্তাদের মতো গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এটি কখনো সাধারণ মানুষের পূজায় রূপান্তরিত হয়নি, বরং পরিবারকেন্দ্রিক ঐতিহ্য হিসেবেই টিকে আছে।

কথিত আছে, বাংলায় দুর্গাপূজার প্রচলন রাজা সুরথের হাত ধরে শুরু হয়। মেধা মুনির কাছে দীক্ষা নিয়ে তিনি ও বৈশ্য সমাধি মেধসাশ্রমে দুর্গাপূজার সূচনা করেন। চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষে প্রথম দুর্গাপূজা শুরু করার কারণে এটি বাসন্তী পূজা নামে পরিচিত। চ-ীতে রাজা সুরথকে দেবী দুর্গার প্রথম পূজারি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ক্ষত্রিয় বংশের এই রাজা সুশাসক ও অপরাজিত যোদ্ধা হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিলেন। কিন্তু প্রতিবেশী যবন রাজার আক্রমণে তিনি পরাজিত হন এবং সভাসদদের দ্বারা সম্পত্তি লুণ্ঠিত হয়। কাছের মানুষদের এই আচরণে স্তম্ভিত হয়ে সর্বস্বান্ত রাজা বনে চলে যান এবং মেধসাশ্রমে আশ্রয় নেন।

ঋষি তাকে সেখানে থাকতে বলেন, কিন্তু রাজা সবসময় রাজ্য ও প্রজাদের চিন্তায় অস্থির থাকতেন। একদিন তার সাক্ষাৎ হয় সমাধি নামক বৈশ্যের সঙ্গে, যিনি স্ত্রী ও পুত্রের দ্বারা সম্পত্তি থেকে বিতাড়িত হয়েও তাদের কল্যাণ চিন্তা করতেন। দুজনেই বিস্মিত হন যে, যারা তাদের সর্বস্ব কেড়ে নিয়েছে, তাদের জন্যই তারা এখনো শুভকামনা করেন। ঋষির কাছে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, এসবই মহামায়ার ইচ্ছা। ঋষি মহামায়ার কাহিনী বর্ণনা করেন এবং তার উপদেশে রাজা কঠিন তপস্যায় নিযুক্ত হন। পরবর্তীকালে মহামায়ার উদ্দেশে বসন্তকালের শুক্লপক্ষে তিনি পূজা শুরু করেন, যা বাসন্তী পূজা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

[লেখক : কবি]

back to top