জিয়াউদ্দীন আহমেদ
পহেলা এপ্রিল, ২০২৫; দ্য নিউইয়র্ক টাইমস-এ ‘নতুন বাংলাদেশ গঠনের সুযোগ নিচ্ছে ইসলামি কট্টরপন্থীরা’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিকে ‘মিসিলিডিং’ বলে মন্তব্য করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় না নিয়ে শুধু বাছাই করা কিছু ঘটনা প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে বলে অন্তর্বর্তী সরকারের তরফ থেকে উল্লেখ করা হয়েছে এবং তাদের মতে এতে বিশ্বে একটা বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে।
২০১৮ সনের কারচুপির নির্বাচন নিয়ে কোন সমালোচনার পাত্তাই দেয়নি আওয়ামী লীগ সরকার। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু ছাড়া আর কোন সরকারপ্রধান তার আমলের দুর্নীতির কথা স্বীকার করেননি। ২০০১ থেকে ২০০৫ সন পর্যন্ত পরপর পাঁচবার বাংলাদেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, তারপরও বিএনপি তাদের আমলের দুর্নীতির কথা স্বীকার করেনি। ক্ষমতায় থাকাকালীন বিএনপি দুর্নীতির রিপোর্টদাতা টিআইবিকে বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকারও তাদের আমলের টিআইবির প্রতিবেদনকে ধোলাই করেছে। ‘নতুন বাংলাদেশের’ অন্তর্বর্তী সরকারও অতীতের সরকারগুলোর মতো ‘নাকচের সংস্কৃতি’ থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না। উগ্রপন্থীদের দ্বারা সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধকে অতীতের সব সরকারের মতো অন্তর্বর্তী সরকারও ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলে হাল্কা করার চেষ্টা করছে।
ম্যাগাজিনের শুরুতে নারীর ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার যে অভিযোগ করা হয়েছে তার সঙ্গে উগ্রপন্থার কোন সম্পর্ক নেই। এটা ধর্মীয় ও সামাজিক সমস্যা; ধর্ম এবং সমাজ তা অনুমোদন করে। টাইম ম্যাগাজিন বলছে, রাজধানী ঢাকায় এক সমাবেশে ইসলামি চরমপন্থীরা সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে ঘোষণা দিয়েছে, ইসলাম ধর্মকে কেউ অবমাননা করলে সরকারকে মৃত্যুদ- কার্যকর করতে হবে, নতুবা তারা নিজেরাই মৃত্যুদ- কার্যকর করবে। এটা আইএস বা আল কায়েদার মতো হুমকি। আরেকটি চরমপন্থী গোষ্ঠী সিরিয়া ও ইরাকে আবির্ভূত ইসলামিক স্টেটের মতো বাংলাদেশে ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠার দাবিতে ঢাকায় বিরাট মিছিল করেছে, জুলাই অভ্যুত্থানের পর অনেক মিছিল আইএসের পতাকাও বহন করেছে। এক ধর্মীয় নেতার হুমকিতে রংপুরের তারাগঞ্জে মেয়েদের ফুটবল ম্যাচ বন্ধ হয়ে যায়, দিনাজপুরের হিলি ও জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে মেয়েদের দুটি ফুটবল ম্যাচ তৌহিদী জনতার হামলায় স্থগিত হয়ে যায়। ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের প্রেসারে মাথায় ঘোমটা না থাকা এক নারীর অপদস্তকারীকে পুলিশ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়, মুক্তির পর তার গলায় তৌহিদী জনতা ফুলের মালা পরিয়ে দেয়। আরও আছে, মাদকের ক্রেতাকে প্রকাশ্যে পাছায় লাঠির আঘাতে শাস্তি প্রদান বা শত শত লোকের সম্মুখে পতিতাদের লাঠিপেটার দৃশ্য ইসলামের হুদুদ আইনকে প্রতিফলিত করে। শত শত মাজার ভাঙা হলো, ভাঙা হলো শত শত ভাস্কর্য, বন্ধ করা হলো গানের আসর- এগুলো প্রেস সচিবের কথিত রাজনৈতিক ঘটনা নয়, ধর্মীয় উগ্রপন্থীর কাজ।’ বাংলাদেশে এখন যা ঘটছে তা মৌলবাদের প্রতিফলিত ঢেউ’- এটা অন্য কারও নয়, টাইম ম্যাগাজিনের কথা।
সরকারের সাবেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামও স্বীকার করেছেন, দেশ চরমপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়ার ভয় আছে। টাইম ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সংবিধান সংস্কার কমিশন বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ পরিচয়টি বাদ দিয়ে দেশকে আরও ধর্মীয় ভিত্তিতে পুনর্গঠন করার কথা ভাবছে। শুধু ভাবনা নয়, উগ্রপন্থীদের ভয়ে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দটি সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান থেকে বাদ দেয়ার প্রস্তাব করেছে। ধর্মীয় উগ্রবাদীদের ‘মব ভায়োলেন্স’ নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকারের উদাসীনতা দৃষ্টিকটুভাবে জনগণের নজরে এসেছে। অবশ্য মবের বিরুদ্ধে, বিশেষ করে তৌহিদী জনতার নামে যারা নানারকম উগ্রবাদী কর্মকা- করেছে, তাদের একাধিকবার সাবধান করেছেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। এছাড়া হিযবুত তাহরীরের ‘মার্চ ফর খেলাফত’ কর্মসূচিও প্রতিহত করা হয়েছে। সরকারের এমন পদক্ষেপে তৌহিদী জনতার আস্ফালন ইদানীং কিছুটা কম মনে হচ্ছে। তবে এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কাউকে গ্রেপ্তার বা আইনের আওতায় আনার বিষয়টি জনগণের কাছে দৃশ্যমান হয়নি।
দ্য নিউইয়র্ক টাইমস ধর্মীয় চরমপন্থার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান না নেয়ার কারণে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অভিযুক্ত করেছে। প্রতিবেদনে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে নরম মনোভাবাপন্ন, গণতান্ত্রিক সংস্কারে অতিরিক্ত মনোযোগী, সংঘাত মোকাবিলায় দ্বিধাগ্রস্ত এবং স্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গির অভাবে ভুগছেন বলে অভিযুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু ড. ইউনূসকে টাইম ম্যাগাজিনের কথিত ‘নরম মনোভাবাপন্ন’ বলে মনে করা ঠিক হবে না। তিনি দারুণ কৌশলী। সরকার পরিচালনায় নানাবিধ ব্যর্থতার পেছনে ড. ইউনূস বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্র পরিচালনায় নিজের অনভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেছেন। কথাটি বিশ্বাসযোগ্য নয়, কারণ প্রয়োগের ক্ষেত্রে কিছুটা হেরফের হলেও রাজনীতি তার নখদর্পনে।তিনি তার পরিকল্পনা মোতাবেক কাজ করে যাচ্ছেন। সময়ের দাবি পূরণে স্বজ্ঞানে সংঘটিত দুর্বলতাকে তিনি তার অনভিজ্ঞতার কথা বলে কিছুটা সুবিধা নিচ্ছেন, সহজ-সরল অভিব্যক্তি দ্বারা জনগণের অনুকম্পা আদায়ে সমর্থ হচ্ছেন।
নিউইয়র্ক টাইমস যতই অভিযোগ করুক না কেন, ড. ইউনূস কিন্তু উগ্রপন্থীদের মতো নারীবিদ্বেষী নন। ধর্মীয় উগ্রপন্থীরা নারীদের ঘরে আবদ্ধ রাখার পক্ষে, কিন্তু ড. ইউনূস নারীদের ঘরের বাইরে আসতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। নারীদের স্বাধীনতা রক্ষায় এবং তাদের ক্ষমতায়নে সহায়ক কর্মের জোগান দিয়েছেন তিনি, স্বাবলম্বী হয়ে পারিবারিক ও সামাজিক শৃঙ্খল ভাঙতে তিনি নারীদের উৎসাহিত করেছেন। স্বাবলম্বী নারী মর্যাদাবান, মর্যাদাবান নারী শৃঙ্খল ও নির্যাতন মুক্ত। অবশ্য শুধু ড. ইউনূস নন, বাংলাদেশে প্রায় সব সরকারই নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করেছে, কাজ করেছে বলেই আজ নারীরা জাতীয় অগ্রগতির ধারক ও বাহক। ড. ইউনূস কখনোই উগ্রপন্থার সমর্থক নন, সমর্থক নন বলেই তার শাসনামলে নারীর জাতীয় ফুটবল দল একুশে পদক পেয়েছে। শুধু তাই নয়, তিনি চারজন নারী ক্রীড়াবিদকে তার কাতার সফরের সঙ্গী করেছেন, যদিও তারা যাচ্ছেন কাতার ফাউন্ডেশনের আমন্ত্রণে। ড. ইউনূস স্পষ্ট করে বলেছেন, নারীবিরোধী যে অপশক্তি বর্তমানে মাথাচাড়া দেয়ার চেষ্টা করছে, তাকে অবশ্যই মোকাবিলা করা হবে। কিন্তু জেল থেকে উগ্রপন্থীদের ছেড়ে দেয়ার কারণে অন্তর্বর্তী সরকারের মনোভাব নিয়ে সন্দেহ জাগা স্বাভাবিক।
ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের সব সরকারই কমবেশি প্রশ্রয় দিয়েছে এবং টাইম ম্যাগাজিন তা বলেছেও। টাইম ম্যাগাজিনের মতে, আওয়ামী লীগ সরকার চরমপন্থী শক্তিগুলোকে একই সঙ্গে দমন ও তুষ্ট করার চেষ্টা করেছে। কথাটি অসত্য নয়; ধর্মীয় রক্ষণশীল অংশের সমর্থন পাওয়ার লক্ষ্য আওয়ামী লীগ সরকার দেশের আনাচে কানাচে কওমি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগ সরকার চরমপন্থীদের হাতে ব্লগার হত্যায় প্রথমে উদাসীন ও নির্লিপ্ত ছিল, পরে যখন আয়ত্তের বাইরে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয় তখন আওয়ামী লীগ সরকার ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়। দুঃখজনক হচ্ছে, উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের এই কঠোর অবস্থানের বিরোধিতা করেছে বিএনপি। বিএনপি হলি আর্টিজানের নৃশংস ঘটনাকেও সরকারের সাজানো নাটক বলে অবহিত করেছে।
২০০৪ সনে বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকারের আমলে আল কায়েদার সহযোগী, ‘জাগ্রত মুসলিম জনতা, বাংলাদেশে’-এর সামরিক কমান্ডার সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইয়ের সরবে আত্মপ্রকাশ জনগণকে স্তম্ভিত করে দিয়েছিল। রাজশাহী এলাকায় বাংলা ভাইয়ের নির্যাতনের স্টাইল ছিল, প্রকাশ্যে ভিকটিমকে হাত-পা বেঁধে উল্টো করে ঝুলিয়ে নিপীড়ন করতে করতে হত্যা করা। সর্বহারা নিধনের নামে যাকে ইচ্ছে তাকে ধরে এনে জবাই করে হত্যা করা হতো। বাংলা ভাই ও তার দলের লোকেরা যাদের হত্যা করেছিল তাদের মধ্যে ৩২টি লাশের পরিচয় পাওয়া যায়, অপহৃত বাকিদের হদিশ পাওয়া যায়নি। এই বাংলা ভাই ও জাগ্রত মুসলিম জনতার হত্যাযজ্ঞে সহায়তা করেছিল স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন এবং বিএনপি-জামায়াতের স্থানীয় নেতারা। তখন লুৎফুজ্জামান বাবর ছিলেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মন্ত্রী এবং জামায়াতে ইসলামের তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামী বলেছিলেন, ‘বাংলা ভাই’ বলে বাংলাদেশে কারো অস্তিত্ব নেই, ‘বাংলা ভাই’ মিডিয়ার সৃষ্টি। ইন্টারেস্টিং বিষয় হচ্ছে, অস্তিত্ববিহীন এই বাংলা ভাইকে পরবর্তীকালে জোট সরকার গ্রেপ্তার করে এবং আদালতের রায় মোতাবেক তার মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়।
শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া, হোসাইন মুহাম্মদ এরশাদ বা মুহাম্মদ ইউনূস- কেউই উগ্রপন্থার সমর্থক নন, কিন্তু রাজনৈতিক বেনিফিট লাভের প্রত্যাশায় সবাই উগ্রপন্থাকে প্রশ্রয় দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আন্দোলনে ধর্মীয় উগ্রপন্থীরা অংশীজন ছিল, তারা বৈমষ্যবিরোধী ছাত্রদের সঙ্গে মিশে পুলিশের বিরুদ্ধে সংঘটিত রণক্ষেত্রে সাহসিকতাপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এই কারণেই সম্ভবত তাদের আইনবহির্ভূত বিভিন্ন কর্মকা-ে প্রশ্রয় না দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপায় ছিল না, ড. ইউনূসকে দেখেও না দেখার ভান করতে হচ্ছে। ড. ইউনূসের কোন রাজনৈতিক দল নেই, সরকার পরিচালনায় নির্ভর করতে হচ্ছে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর মর্জির ওপর। ধর্ম যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বিরাট ফ্যাক্টর তা সম্ভবত প্রথম স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছিলেন ‘যায়যায়দিন’-এর শফিক রেহমান। তিনি তার সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ‘যায়যায়দিন’-এ প্রায় চল্লিশ বছর আগে উল্লেখ করেছিলেন, ধর্মকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশে কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষে বিজয়ী হওয়া আর সহজ হবে না। সম্ভব হবে না বলেই কারো দাবি ছাড়াই হোসাইন মুহাম্মদ এরশাদ ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করলেন এবং একই কারণে তা পরে আর কেউ বাদ দেয়ার সাহস করেননি।
বাংলাদেশকে ‘মডারেট মুসলিম’ অধ্যুষিত দেশ বললে অনেকেই খুশি হয়। হজ ক্যাম্পে গিয়ে ‘মডারেট মুসলিম’ বলে মুসলমান বাঙালিদের খুশি করতে চেয়েছিলেন আমেরিকান রাষ্ট্রদূত। কিন্তু ইসলাম ধর্মে মডারেট থাকার সুবিধা নেই, ধর্ম অক্ষরে অক্ষরে মানলে উগ্র হতেই হয়। আফগানিস্তান, জর্ডান, ইন্দোনেশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত সৌদি আরব, ইরান বা বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সব মুসলমানের জন্য একই ‘ইসলাম’ প্রযোজ্য। তাহলে প্রয়োগে এত পার্থক্য কেন? পার্থক্য হচ্ছে, পরিপূর্ণ ইসলাম পরিপালনে আমরা অধিকাংশ মুসলমান বিজ্ঞানের আবিষ্কারের সঙ্গে সমঝোতা করে বিশ্বের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছি, যা ধর্ম-সমর্থিত নয়। এই সমঝোতা নিউইয়র্ক টাইমসও করে চলছে; একবার বলছে, ইউনূস উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি, আবার একই টাইম ম্যাগাজিন তাদের করা বিশ্বের প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকায় তাকে স্থান দিয়েছে। বিচিত্র এই পৃথিবী, বিচিত্র এই পৃথিবীর মানুষ।
সাপ্তাহিক ‘যায়যায়দিন’-এর শফিক রেহমানের প্রায় ৪০ বছর আগের কথার সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলতে হয়, বাংলাদেশে রাজনীতিতে ইসলাম ধর্ম ও ধর্মীয় গুরুদের প্রশ্রয় না দিয়ে এখন আর কোন বিকল্প নেই, বিকল্প না থাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সম্মুখ সারিতে থাকা আধুনিক মেয়েদের আশা-আকাক্সক্ষার পুরো ব্যাপারটা বোধহয় উল্টে গেল।
[লেখক : সাবেক নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক]
জিয়াউদ্দীন আহমেদ
শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫
পহেলা এপ্রিল, ২০২৫; দ্য নিউইয়র্ক টাইমস-এ ‘নতুন বাংলাদেশ গঠনের সুযোগ নিচ্ছে ইসলামি কট্টরপন্থীরা’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিকে ‘মিসিলিডিং’ বলে মন্তব্য করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় না নিয়ে শুধু বাছাই করা কিছু ঘটনা প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে বলে অন্তর্বর্তী সরকারের তরফ থেকে উল্লেখ করা হয়েছে এবং তাদের মতে এতে বিশ্বে একটা বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে।
২০১৮ সনের কারচুপির নির্বাচন নিয়ে কোন সমালোচনার পাত্তাই দেয়নি আওয়ামী লীগ সরকার। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু ছাড়া আর কোন সরকারপ্রধান তার আমলের দুর্নীতির কথা স্বীকার করেননি। ২০০১ থেকে ২০০৫ সন পর্যন্ত পরপর পাঁচবার বাংলাদেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, তারপরও বিএনপি তাদের আমলের দুর্নীতির কথা স্বীকার করেনি। ক্ষমতায় থাকাকালীন বিএনপি দুর্নীতির রিপোর্টদাতা টিআইবিকে বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকারও তাদের আমলের টিআইবির প্রতিবেদনকে ধোলাই করেছে। ‘নতুন বাংলাদেশের’ অন্তর্বর্তী সরকারও অতীতের সরকারগুলোর মতো ‘নাকচের সংস্কৃতি’ থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না। উগ্রপন্থীদের দ্বারা সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধকে অতীতের সব সরকারের মতো অন্তর্বর্তী সরকারও ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলে হাল্কা করার চেষ্টা করছে।
ম্যাগাজিনের শুরুতে নারীর ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার যে অভিযোগ করা হয়েছে তার সঙ্গে উগ্রপন্থার কোন সম্পর্ক নেই। এটা ধর্মীয় ও সামাজিক সমস্যা; ধর্ম এবং সমাজ তা অনুমোদন করে। টাইম ম্যাগাজিন বলছে, রাজধানী ঢাকায় এক সমাবেশে ইসলামি চরমপন্থীরা সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে ঘোষণা দিয়েছে, ইসলাম ধর্মকে কেউ অবমাননা করলে সরকারকে মৃত্যুদ- কার্যকর করতে হবে, নতুবা তারা নিজেরাই মৃত্যুদ- কার্যকর করবে। এটা আইএস বা আল কায়েদার মতো হুমকি। আরেকটি চরমপন্থী গোষ্ঠী সিরিয়া ও ইরাকে আবির্ভূত ইসলামিক স্টেটের মতো বাংলাদেশে ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠার দাবিতে ঢাকায় বিরাট মিছিল করেছে, জুলাই অভ্যুত্থানের পর অনেক মিছিল আইএসের পতাকাও বহন করেছে। এক ধর্মীয় নেতার হুমকিতে রংপুরের তারাগঞ্জে মেয়েদের ফুটবল ম্যাচ বন্ধ হয়ে যায়, দিনাজপুরের হিলি ও জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে মেয়েদের দুটি ফুটবল ম্যাচ তৌহিদী জনতার হামলায় স্থগিত হয়ে যায়। ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের প্রেসারে মাথায় ঘোমটা না থাকা এক নারীর অপদস্তকারীকে পুলিশ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়, মুক্তির পর তার গলায় তৌহিদী জনতা ফুলের মালা পরিয়ে দেয়। আরও আছে, মাদকের ক্রেতাকে প্রকাশ্যে পাছায় লাঠির আঘাতে শাস্তি প্রদান বা শত শত লোকের সম্মুখে পতিতাদের লাঠিপেটার দৃশ্য ইসলামের হুদুদ আইনকে প্রতিফলিত করে। শত শত মাজার ভাঙা হলো, ভাঙা হলো শত শত ভাস্কর্য, বন্ধ করা হলো গানের আসর- এগুলো প্রেস সচিবের কথিত রাজনৈতিক ঘটনা নয়, ধর্মীয় উগ্রপন্থীর কাজ।’ বাংলাদেশে এখন যা ঘটছে তা মৌলবাদের প্রতিফলিত ঢেউ’- এটা অন্য কারও নয়, টাইম ম্যাগাজিনের কথা।
সরকারের সাবেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামও স্বীকার করেছেন, দেশ চরমপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়ার ভয় আছে। টাইম ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সংবিধান সংস্কার কমিশন বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ পরিচয়টি বাদ দিয়ে দেশকে আরও ধর্মীয় ভিত্তিতে পুনর্গঠন করার কথা ভাবছে। শুধু ভাবনা নয়, উগ্রপন্থীদের ভয়ে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দটি সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান থেকে বাদ দেয়ার প্রস্তাব করেছে। ধর্মীয় উগ্রবাদীদের ‘মব ভায়োলেন্স’ নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকারের উদাসীনতা দৃষ্টিকটুভাবে জনগণের নজরে এসেছে। অবশ্য মবের বিরুদ্ধে, বিশেষ করে তৌহিদী জনতার নামে যারা নানারকম উগ্রবাদী কর্মকা- করেছে, তাদের একাধিকবার সাবধান করেছেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। এছাড়া হিযবুত তাহরীরের ‘মার্চ ফর খেলাফত’ কর্মসূচিও প্রতিহত করা হয়েছে। সরকারের এমন পদক্ষেপে তৌহিদী জনতার আস্ফালন ইদানীং কিছুটা কম মনে হচ্ছে। তবে এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কাউকে গ্রেপ্তার বা আইনের আওতায় আনার বিষয়টি জনগণের কাছে দৃশ্যমান হয়নি।
দ্য নিউইয়র্ক টাইমস ধর্মীয় চরমপন্থার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান না নেয়ার কারণে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অভিযুক্ত করেছে। প্রতিবেদনে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে নরম মনোভাবাপন্ন, গণতান্ত্রিক সংস্কারে অতিরিক্ত মনোযোগী, সংঘাত মোকাবিলায় দ্বিধাগ্রস্ত এবং স্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গির অভাবে ভুগছেন বলে অভিযুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু ড. ইউনূসকে টাইম ম্যাগাজিনের কথিত ‘নরম মনোভাবাপন্ন’ বলে মনে করা ঠিক হবে না। তিনি দারুণ কৌশলী। সরকার পরিচালনায় নানাবিধ ব্যর্থতার পেছনে ড. ইউনূস বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্র পরিচালনায় নিজের অনভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেছেন। কথাটি বিশ্বাসযোগ্য নয়, কারণ প্রয়োগের ক্ষেত্রে কিছুটা হেরফের হলেও রাজনীতি তার নখদর্পনে।তিনি তার পরিকল্পনা মোতাবেক কাজ করে যাচ্ছেন। সময়ের দাবি পূরণে স্বজ্ঞানে সংঘটিত দুর্বলতাকে তিনি তার অনভিজ্ঞতার কথা বলে কিছুটা সুবিধা নিচ্ছেন, সহজ-সরল অভিব্যক্তি দ্বারা জনগণের অনুকম্পা আদায়ে সমর্থ হচ্ছেন।
নিউইয়র্ক টাইমস যতই অভিযোগ করুক না কেন, ড. ইউনূস কিন্তু উগ্রপন্থীদের মতো নারীবিদ্বেষী নন। ধর্মীয় উগ্রপন্থীরা নারীদের ঘরে আবদ্ধ রাখার পক্ষে, কিন্তু ড. ইউনূস নারীদের ঘরের বাইরে আসতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। নারীদের স্বাধীনতা রক্ষায় এবং তাদের ক্ষমতায়নে সহায়ক কর্মের জোগান দিয়েছেন তিনি, স্বাবলম্বী হয়ে পারিবারিক ও সামাজিক শৃঙ্খল ভাঙতে তিনি নারীদের উৎসাহিত করেছেন। স্বাবলম্বী নারী মর্যাদাবান, মর্যাদাবান নারী শৃঙ্খল ও নির্যাতন মুক্ত। অবশ্য শুধু ড. ইউনূস নন, বাংলাদেশে প্রায় সব সরকারই নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করেছে, কাজ করেছে বলেই আজ নারীরা জাতীয় অগ্রগতির ধারক ও বাহক। ড. ইউনূস কখনোই উগ্রপন্থার সমর্থক নন, সমর্থক নন বলেই তার শাসনামলে নারীর জাতীয় ফুটবল দল একুশে পদক পেয়েছে। শুধু তাই নয়, তিনি চারজন নারী ক্রীড়াবিদকে তার কাতার সফরের সঙ্গী করেছেন, যদিও তারা যাচ্ছেন কাতার ফাউন্ডেশনের আমন্ত্রণে। ড. ইউনূস স্পষ্ট করে বলেছেন, নারীবিরোধী যে অপশক্তি বর্তমানে মাথাচাড়া দেয়ার চেষ্টা করছে, তাকে অবশ্যই মোকাবিলা করা হবে। কিন্তু জেল থেকে উগ্রপন্থীদের ছেড়ে দেয়ার কারণে অন্তর্বর্তী সরকারের মনোভাব নিয়ে সন্দেহ জাগা স্বাভাবিক।
ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের সব সরকারই কমবেশি প্রশ্রয় দিয়েছে এবং টাইম ম্যাগাজিন তা বলেছেও। টাইম ম্যাগাজিনের মতে, আওয়ামী লীগ সরকার চরমপন্থী শক্তিগুলোকে একই সঙ্গে দমন ও তুষ্ট করার চেষ্টা করেছে। কথাটি অসত্য নয়; ধর্মীয় রক্ষণশীল অংশের সমর্থন পাওয়ার লক্ষ্য আওয়ামী লীগ সরকার দেশের আনাচে কানাচে কওমি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগ সরকার চরমপন্থীদের হাতে ব্লগার হত্যায় প্রথমে উদাসীন ও নির্লিপ্ত ছিল, পরে যখন আয়ত্তের বাইরে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয় তখন আওয়ামী লীগ সরকার ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়। দুঃখজনক হচ্ছে, উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের এই কঠোর অবস্থানের বিরোধিতা করেছে বিএনপি। বিএনপি হলি আর্টিজানের নৃশংস ঘটনাকেও সরকারের সাজানো নাটক বলে অবহিত করেছে।
২০০৪ সনে বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকারের আমলে আল কায়েদার সহযোগী, ‘জাগ্রত মুসলিম জনতা, বাংলাদেশে’-এর সামরিক কমান্ডার সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইয়ের সরবে আত্মপ্রকাশ জনগণকে স্তম্ভিত করে দিয়েছিল। রাজশাহী এলাকায় বাংলা ভাইয়ের নির্যাতনের স্টাইল ছিল, প্রকাশ্যে ভিকটিমকে হাত-পা বেঁধে উল্টো করে ঝুলিয়ে নিপীড়ন করতে করতে হত্যা করা। সর্বহারা নিধনের নামে যাকে ইচ্ছে তাকে ধরে এনে জবাই করে হত্যা করা হতো। বাংলা ভাই ও তার দলের লোকেরা যাদের হত্যা করেছিল তাদের মধ্যে ৩২টি লাশের পরিচয় পাওয়া যায়, অপহৃত বাকিদের হদিশ পাওয়া যায়নি। এই বাংলা ভাই ও জাগ্রত মুসলিম জনতার হত্যাযজ্ঞে সহায়তা করেছিল স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন এবং বিএনপি-জামায়াতের স্থানীয় নেতারা। তখন লুৎফুজ্জামান বাবর ছিলেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মন্ত্রী এবং জামায়াতে ইসলামের তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামী বলেছিলেন, ‘বাংলা ভাই’ বলে বাংলাদেশে কারো অস্তিত্ব নেই, ‘বাংলা ভাই’ মিডিয়ার সৃষ্টি। ইন্টারেস্টিং বিষয় হচ্ছে, অস্তিত্ববিহীন এই বাংলা ভাইকে পরবর্তীকালে জোট সরকার গ্রেপ্তার করে এবং আদালতের রায় মোতাবেক তার মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়।
শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া, হোসাইন মুহাম্মদ এরশাদ বা মুহাম্মদ ইউনূস- কেউই উগ্রপন্থার সমর্থক নন, কিন্তু রাজনৈতিক বেনিফিট লাভের প্রত্যাশায় সবাই উগ্রপন্থাকে প্রশ্রয় দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আন্দোলনে ধর্মীয় উগ্রপন্থীরা অংশীজন ছিল, তারা বৈমষ্যবিরোধী ছাত্রদের সঙ্গে মিশে পুলিশের বিরুদ্ধে সংঘটিত রণক্ষেত্রে সাহসিকতাপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এই কারণেই সম্ভবত তাদের আইনবহির্ভূত বিভিন্ন কর্মকা-ে প্রশ্রয় না দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপায় ছিল না, ড. ইউনূসকে দেখেও না দেখার ভান করতে হচ্ছে। ড. ইউনূসের কোন রাজনৈতিক দল নেই, সরকার পরিচালনায় নির্ভর করতে হচ্ছে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর মর্জির ওপর। ধর্ম যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বিরাট ফ্যাক্টর তা সম্ভবত প্রথম স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছিলেন ‘যায়যায়দিন’-এর শফিক রেহমান। তিনি তার সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ‘যায়যায়দিন’-এ প্রায় চল্লিশ বছর আগে উল্লেখ করেছিলেন, ধর্মকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশে কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষে বিজয়ী হওয়া আর সহজ হবে না। সম্ভব হবে না বলেই কারো দাবি ছাড়াই হোসাইন মুহাম্মদ এরশাদ ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করলেন এবং একই কারণে তা পরে আর কেউ বাদ দেয়ার সাহস করেননি।
বাংলাদেশকে ‘মডারেট মুসলিম’ অধ্যুষিত দেশ বললে অনেকেই খুশি হয়। হজ ক্যাম্পে গিয়ে ‘মডারেট মুসলিম’ বলে মুসলমান বাঙালিদের খুশি করতে চেয়েছিলেন আমেরিকান রাষ্ট্রদূত। কিন্তু ইসলাম ধর্মে মডারেট থাকার সুবিধা নেই, ধর্ম অক্ষরে অক্ষরে মানলে উগ্র হতেই হয়। আফগানিস্তান, জর্ডান, ইন্দোনেশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত সৌদি আরব, ইরান বা বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সব মুসলমানের জন্য একই ‘ইসলাম’ প্রযোজ্য। তাহলে প্রয়োগে এত পার্থক্য কেন? পার্থক্য হচ্ছে, পরিপূর্ণ ইসলাম পরিপালনে আমরা অধিকাংশ মুসলমান বিজ্ঞানের আবিষ্কারের সঙ্গে সমঝোতা করে বিশ্বের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছি, যা ধর্ম-সমর্থিত নয়। এই সমঝোতা নিউইয়র্ক টাইমসও করে চলছে; একবার বলছে, ইউনূস উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি, আবার একই টাইম ম্যাগাজিন তাদের করা বিশ্বের প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকায় তাকে স্থান দিয়েছে। বিচিত্র এই পৃথিবী, বিচিত্র এই পৃথিবীর মানুষ।
সাপ্তাহিক ‘যায়যায়দিন’-এর শফিক রেহমানের প্রায় ৪০ বছর আগের কথার সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলতে হয়, বাংলাদেশে রাজনীতিতে ইসলাম ধর্ম ও ধর্মীয় গুরুদের প্রশ্রয় না দিয়ে এখন আর কোন বিকল্প নেই, বিকল্প না থাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সম্মুখ সারিতে থাকা আধুনিক মেয়েদের আশা-আকাক্সক্ষার পুরো ব্যাপারটা বোধহয় উল্টে গেল।
[লেখক : সাবেক নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক]