alt

উপ-সম্পাদকীয়

জ্বালানির বদল, জীবিকার ঝুঁকি

আফজাল হোসেন লাভলু

: সোমবার, ১২ মে ২০২৫

বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র তৈরি পোশাক শিল্প। দেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৪ শতাংশ আসে এ খাত থেকে, যেখানে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক, বিশেষত নারী শ্রমিকরা, জীবিকা নির্বাহ করছেন। তবে বৈশ্বিক জলবায়ু সংকট, পরিবেশবান্ধব উৎপাদনের চাপ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির

প্রয়োজনীয়তার কারণে এ শিল্প এখন এক গভীর রূপান্তরের মুখে দাঁড়িয়ে। এ পরিবর্তন টেকসই ভবিষ্যতের জন্য জরুরি হলেও, শ্রমিকদের জীবন-জীবিকার ওপর তা বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে।

বর্তমান শ্রম আইন ও নীতিমালায় “ন্যায্য জ্বালানি রূপান্তর” বিষয়টি স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত না হওয়ায় সংকট আরও গভীর হচ্ছে। পোশাক শিল্প ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির চ্যালেঞ্জ সিপিডির তথ্যানুসারে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক, যা প্রতিবছর প্রায় ৩২ বিলিয়ন ডলার আয় করে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ১৫-২০ শতাংশ কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ। একইসঙ্গে বিজিএমইএও (বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন) ইউনাইটেড নেশনস ফ্যাশন চার্টারের অধীনে নির্গমন ৩০% হ্রাসের লক্ষ্য নিয়েছে। ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সুইডিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির (সিডা) মহাপরিচালক জ্যাকব গ্রানিটও উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের টিকে থাকতে নবায়নযোগ্য শক্তিতে রূপান্তর অপরিহার্য। অন্যথায় ইউরোপসহ বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।

জাস্ট এনার্জি ট্রানজিশন : রূপান্তরের মানবিক দিক

জাস্ট এনার্জি ট্রানজিশন বা ন্যায়সঙ্গত শক্তি রূপান্তর হলো এমন এক প্রক্রিয়া যেখানে পরিবেশ সংরক্ষণের পাশাপাশি শ্রমিকদের জীবিকা, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সুযোগ সুরক্ষিত রাখা হয়। তবে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, তৈরি পোশাক শিল্পে নবায়নযোগ্য শক্তি ও অটোমেশনের ব্যবহারে কর্মসংস্থান হ্রাসের ঝুঁকি বাড়ছে। অনেক কারখানায় ইতোমধ্যে আধুনিক মেশিন বসানো হয়েছে, যার ফলে শ্রমিক প্রয়োজন কমে গেছে। গাজীপুরের একটি আধুনিক কারখানায় দেখা যায়, আগে যেখানে একটি ইউনিটে ৪০ জন শ্রমিক কাজ করতেন, এখন সেখানে আধুনিক প্রযুক্তির ফলে ২০ জনেই কাজ চলছে। শ্রমিকদের আশঙ্কা, প্রশিক্ষণের সুযোগ না পেলে তারা চাকরি হারাতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, আগামী এক দশকে ১০-১৫ শতাংশ পোশাক শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়তে পারেন। নারী শ্রমিকরা এই পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকবেন, কারণ তারা মূলত কম দক্ষ ও কম মজুরির কাজের সঙ্গে যুক্ত।

নীতির ঘাটতি : কোথায় পিছিয়ে বাংলাদেশ?

বাংলাদেশ সরকারের শ্রম আইন ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৮), নবায়নযোগ্য শক্তি নীতি ২০০৮, জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল ২০০৯ এবং জাতীয় শিল্প নীতি ২০১৬- এসব নীতিমালায় সবুজ উন্নয়ন ও টেকসই শিল্পায়নের কথা বলা হলেও জাস্ট এনার্জি ট্রানজিশন বা রূপান্তর-জনিত শ্রমিক সুরক্ষার বিষয়টি কোথাও স্পষ্টভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। বর্তমান আইন ও নীতিমালায় নবায়নযোগ্য শক্তিতে রূপান্তরের জন্য তৈরি পোশাক শিল্পের নির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নেই। চাকরি হারানো শ্রমিকদের পুনঃপ্রশিক্ষণ, পুনর্বাসন বা বিকল্প কর্মসংস্থানের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। সামাজিক নিরাপত্তা ও ক্ষতিপূরণের জন্যও কোনো সুস্পষ্ট কাঠামো নেই। ফলে শ্রমিক-কেন্দ্রিক রূপান্তরের বিষয়টি এখনো কেবল নীতিগত উচ্চারণেই সীমাবদ্ধ রয়েছে,

বাস্তবায়নের পর্যায়ে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। সম্ভাবনার দিক: কিছু ইতিবাচক অগ্রগতি তবে আশার কথা, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার ও পরিবেশবান্ধব উৎপাদনের দিকে এগোচ্ছে। বিশ্বের শীর্ষ ১০০টি লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রেনমেন্টার ডিজাইন সার্টিফায়েড কারখানার মধ্যে ৬২টি এখন বাংলাদেশে। সরকারের পক্ষ থেকেও “জাস্ট ট্রানজিশন নীতি ২০৩০” এর খসড়া তৈরি হয়েছে এবং ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড ২০২৬ সালের মধ্যে ৩০০ মেগাওয়াট ছাদ সৌর প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ

নিয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীরাও (যেমন, সিডা, এওত) শ্রমিক-কেন্দ্রিক রূপান্তর নিশ্চিত করার ওপর জোর দিচ্ছেন।

করণীয় : কীভাবে এগোতে হবে?

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের টেকসই রূপান্তর নিশ্চিত করতে প্রয়োজন জাস্ট এনার্জি ট্রানজিশন ভিত্তিক পৃথক নীতি প্রণয়ন, শ্রম আইন সংস্কার করে নবায়নযোগ্য শক্তিতে রূপান্তরজনিত কর্মসংস্থান ঝুঁকি অন্তর্ভুক্ত করা, “গ্রীন ট্রানজিশন ফান্ড” গঠন করে চাকরি হারানো শ্রমিকদের পুনঃপ্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ, জাতীয় কর্মসংস্থান নীতিতে “গ্রীন জবস” ও “ক্লাইমেট রিসাইলিয়েন্ট এমপ্লয়মেন্ট” বিষয় যুক্ত করা এবং ত্রিপক্ষীয় ন্যাশনাল ট্রানজিশন কাউন্সিল গঠন করা, যেখানে সরকার, মালিক ও শ্রমিক সংগঠন একসঙ্গে সিদ্ধান্ত নেবে। জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া ও কানাডার অভিজ্ঞতা বলে, কেবল নীতিমালা নয়Ñঅংশগ্রহণমূলক বাস্তবায়নই জাস্ট ট্রানজিশনের মূল চাবিকাঠি।

পরিবেশ সুরক্ষার সঙ্গে শ্রমিকদের জীবিকা রক্ষার ভারসাম্য রক্ষা করেই নবায়নযোগ্য শক্তিতে রূপান্তর নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায়, এই পরিবর্তন লাখো শ্রমিকের জীবনে অনিশ্চয়তা তৈরি করবে এবং দেশের অর্থনীতির ওপর দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

[লেখক : অধিকার কর্মী ]

প্রসঙ্গ : রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও চট্টগ্রামে এস্কর্ট ডিউটি

দেশটা কারো বাপের নয়!

বুদ্ধের বাণীতে বিশ্বশান্তির প্রার্থনা

আর কত ধর্ষণের খবর শুনতে হবে?

সংস্কারের স্বপ্ন বনাম বাস্তবতার রাজনীতি

মধুমাসের স্মৃতি ও দেশীয় ফলের রসাল সমারোহ

মুর্শিদাবাদে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

লিঙ্গের রাজনীতি বা বিবাদ নয়, চাই মানবিকতার নিবিড় বন্ধন

বাজেট : বাস্তবতা, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পারমাণবিক আলোচনার স্থবিরতা

রম্যগদ্য: “বাঙালি আমরা, নহি তো মেষ...”

সর্বজনীন শিক্ষার বলয়ের বাইরে আদিবাসীরা : অন্তর্ভুক্তির লড়াইয়ে বৈষম্যের দেয়াল

শোনার গান, দেখার টান : অনুভূতির ভোঁতা সময়

ছবি

ছিন্নপত্রে বাংলাদেশের প্রকৃতি ও রবীন্দ্র চেতনা

ভেতরের অদৃশ্য অপরাধ : সমাজের বিপন্ন মানসিকতা

দারিদ্র্য ও বৈষম্য নিরসনে খাসজমি ও জলার গুরুত্ব

অবহেলিত কৃষক ও বাজার ব্যবস্থার বৈষম্য

রাক্ষুসে মাছের দাপটে বিপন্ন দেশীয় মাছ : করণীয় কী?

বজ্রপাতের আতঙ্কে জনজীবন

তাহলে কি ঘৃণায় ছেয়ে যাবে দেশ, মানবজমিন রইবে পতিত

কর্পোরেট ও ব্যক্তিগত সামাজিক দায়বদ্ধতা

‘রাখাইন করিডর’ : একটি ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষণ

ভিন্নমতের ভয়, নির্বাচনের দোলাচল ও অন্তর্বর্তী সরকারের কৌশলী অবস্থান

সমুদ্রসম্পদ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা

কৃষি শিক্ষা হোক উদ্যোক্তা গড়ার মাধ্যম

রঙ্গব্যঙ্গ : কোটের কেবল রং বদলায়

মে দিবসের চেতনা বনাম বাস্তবতা

শ্রম আইন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় চাই আন্তরিকতা

বাসযোগ্যতা সূচকে ঢাকা কেন এত পিছিয়ে

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল : নিরাপদ যাত্রার প্রত্যাশা

কর ফাঁকি : অর্থনীতির জন্য এক অশনি সংকেত

১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় : উপকূলীয় সুরক্ষার শিক্ষা

যখন নদীগুলো অস্ত্র হয়ে ওঠে

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুণগত মান উন্নয়নে গবেষণা ও উদ্ভাবন

বজ্রপাত ও তালগাছ : প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা

কুষ্ঠ ও বৈষম্য : মানবাধিকারের প্রশ্নে একটি অবহেলিত অধ্যায়

tab

উপ-সম্পাদকীয়

জ্বালানির বদল, জীবিকার ঝুঁকি

আফজাল হোসেন লাভলু

সোমবার, ১২ মে ২০২৫

বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র তৈরি পোশাক শিল্প। দেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৪ শতাংশ আসে এ খাত থেকে, যেখানে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক, বিশেষত নারী শ্রমিকরা, জীবিকা নির্বাহ করছেন। তবে বৈশ্বিক জলবায়ু সংকট, পরিবেশবান্ধব উৎপাদনের চাপ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির

প্রয়োজনীয়তার কারণে এ শিল্প এখন এক গভীর রূপান্তরের মুখে দাঁড়িয়ে। এ পরিবর্তন টেকসই ভবিষ্যতের জন্য জরুরি হলেও, শ্রমিকদের জীবন-জীবিকার ওপর তা বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে।

বর্তমান শ্রম আইন ও নীতিমালায় “ন্যায্য জ্বালানি রূপান্তর” বিষয়টি স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত না হওয়ায় সংকট আরও গভীর হচ্ছে। পোশাক শিল্প ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির চ্যালেঞ্জ সিপিডির তথ্যানুসারে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক, যা প্রতিবছর প্রায় ৩২ বিলিয়ন ডলার আয় করে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ১৫-২০ শতাংশ কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ। একইসঙ্গে বিজিএমইএও (বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন) ইউনাইটেড নেশনস ফ্যাশন চার্টারের অধীনে নির্গমন ৩০% হ্রাসের লক্ষ্য নিয়েছে। ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সুইডিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির (সিডা) মহাপরিচালক জ্যাকব গ্রানিটও উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের টিকে থাকতে নবায়নযোগ্য শক্তিতে রূপান্তর অপরিহার্য। অন্যথায় ইউরোপসহ বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।

জাস্ট এনার্জি ট্রানজিশন : রূপান্তরের মানবিক দিক

জাস্ট এনার্জি ট্রানজিশন বা ন্যায়সঙ্গত শক্তি রূপান্তর হলো এমন এক প্রক্রিয়া যেখানে পরিবেশ সংরক্ষণের পাশাপাশি শ্রমিকদের জীবিকা, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সুযোগ সুরক্ষিত রাখা হয়। তবে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, তৈরি পোশাক শিল্পে নবায়নযোগ্য শক্তি ও অটোমেশনের ব্যবহারে কর্মসংস্থান হ্রাসের ঝুঁকি বাড়ছে। অনেক কারখানায় ইতোমধ্যে আধুনিক মেশিন বসানো হয়েছে, যার ফলে শ্রমিক প্রয়োজন কমে গেছে। গাজীপুরের একটি আধুনিক কারখানায় দেখা যায়, আগে যেখানে একটি ইউনিটে ৪০ জন শ্রমিক কাজ করতেন, এখন সেখানে আধুনিক প্রযুক্তির ফলে ২০ জনেই কাজ চলছে। শ্রমিকদের আশঙ্কা, প্রশিক্ষণের সুযোগ না পেলে তারা চাকরি হারাতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, আগামী এক দশকে ১০-১৫ শতাংশ পোশাক শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়তে পারেন। নারী শ্রমিকরা এই পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকবেন, কারণ তারা মূলত কম দক্ষ ও কম মজুরির কাজের সঙ্গে যুক্ত।

নীতির ঘাটতি : কোথায় পিছিয়ে বাংলাদেশ?

বাংলাদেশ সরকারের শ্রম আইন ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৮), নবায়নযোগ্য শক্তি নীতি ২০০৮, জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল ২০০৯ এবং জাতীয় শিল্প নীতি ২০১৬- এসব নীতিমালায় সবুজ উন্নয়ন ও টেকসই শিল্পায়নের কথা বলা হলেও জাস্ট এনার্জি ট্রানজিশন বা রূপান্তর-জনিত শ্রমিক সুরক্ষার বিষয়টি কোথাও স্পষ্টভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। বর্তমান আইন ও নীতিমালায় নবায়নযোগ্য শক্তিতে রূপান্তরের জন্য তৈরি পোশাক শিল্পের নির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নেই। চাকরি হারানো শ্রমিকদের পুনঃপ্রশিক্ষণ, পুনর্বাসন বা বিকল্প কর্মসংস্থানের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। সামাজিক নিরাপত্তা ও ক্ষতিপূরণের জন্যও কোনো সুস্পষ্ট কাঠামো নেই। ফলে শ্রমিক-কেন্দ্রিক রূপান্তরের বিষয়টি এখনো কেবল নীতিগত উচ্চারণেই সীমাবদ্ধ রয়েছে,

বাস্তবায়নের পর্যায়ে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। সম্ভাবনার দিক: কিছু ইতিবাচক অগ্রগতি তবে আশার কথা, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার ও পরিবেশবান্ধব উৎপাদনের দিকে এগোচ্ছে। বিশ্বের শীর্ষ ১০০টি লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রেনমেন্টার ডিজাইন সার্টিফায়েড কারখানার মধ্যে ৬২টি এখন বাংলাদেশে। সরকারের পক্ষ থেকেও “জাস্ট ট্রানজিশন নীতি ২০৩০” এর খসড়া তৈরি হয়েছে এবং ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড ২০২৬ সালের মধ্যে ৩০০ মেগাওয়াট ছাদ সৌর প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ

নিয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীরাও (যেমন, সিডা, এওত) শ্রমিক-কেন্দ্রিক রূপান্তর নিশ্চিত করার ওপর জোর দিচ্ছেন।

করণীয় : কীভাবে এগোতে হবে?

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের টেকসই রূপান্তর নিশ্চিত করতে প্রয়োজন জাস্ট এনার্জি ট্রানজিশন ভিত্তিক পৃথক নীতি প্রণয়ন, শ্রম আইন সংস্কার করে নবায়নযোগ্য শক্তিতে রূপান্তরজনিত কর্মসংস্থান ঝুঁকি অন্তর্ভুক্ত করা, “গ্রীন ট্রানজিশন ফান্ড” গঠন করে চাকরি হারানো শ্রমিকদের পুনঃপ্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ, জাতীয় কর্মসংস্থান নীতিতে “গ্রীন জবস” ও “ক্লাইমেট রিসাইলিয়েন্ট এমপ্লয়মেন্ট” বিষয় যুক্ত করা এবং ত্রিপক্ষীয় ন্যাশনাল ট্রানজিশন কাউন্সিল গঠন করা, যেখানে সরকার, মালিক ও শ্রমিক সংগঠন একসঙ্গে সিদ্ধান্ত নেবে। জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া ও কানাডার অভিজ্ঞতা বলে, কেবল নীতিমালা নয়Ñঅংশগ্রহণমূলক বাস্তবায়নই জাস্ট ট্রানজিশনের মূল চাবিকাঠি।

পরিবেশ সুরক্ষার সঙ্গে শ্রমিকদের জীবিকা রক্ষার ভারসাম্য রক্ষা করেই নবায়নযোগ্য শক্তিতে রূপান্তর নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায়, এই পরিবর্তন লাখো শ্রমিকের জীবনে অনিশ্চয়তা তৈরি করবে এবং দেশের অর্থনীতির ওপর দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

[লেখক : অধিকার কর্মী ]

back to top