alt

উপ-সম্পাদকীয়

কেন এত তরুণ দেশ ছাড়তে চাচ্ছে

ফকর উদ্দিন মানিক

: বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

বর্তমান বাংলাদেশে ‘তরুণ সমাজ ও অভিবাসন’ একটি জ্বলন্ত বাস্তবতা। দেশে তরুণ প্রজন্মের একটি বড় অংশ আজ তাদের জীবনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় ‘দেশের বাইরে চলে যাওয়া’ বিষয়টিকে প্রথম বিবেচনায় নিচ্ছে। কেউ উচ্চশিক্ষার নামে, কেউ দক্ষতা উন্নয়ন বা চাকরির খোঁজে, আবার কেউ শুধু নিরাপদ ভবিষ্যতের আশায় দেশ ছাড়ছে। প্রশ্ন হলোÑ কেন এই দেশত্যাগ? কেবল আর্থিক লাভ? নাকি গভীর হতাশা? প্রশ্ন উঠছে, এই প্রস্থান কি শুধুই উচ্চশিক্ষার জন্য, নাকি জীবনের জন্য? অথবা এর পেছনে রয়েছে আরও গভীর কোনও সংকেত?

বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা আজ একটি বিভ্রান্তির নাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়লেও মান ও সুযোগ কাক্সিক্ষত মাত্রায় পৌঁছায়নি। গবেষণা, নতুন প্রযুক্তিনির্ভর পাঠক্রম, একাডেমিক স্বাধীনতা ও বৈশ্বিক র‌্যাংকিংয়ে পিছিয়ে থাকা অনেক শিক্ষার্থীকে হতাশ করেছে। দেশীয় ডিগ্রি নিয়ে চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতা যেমন তীব্র, তেমনি মূল্যায়ন প্রক্রিয়াও প্রশ্নবিদ্ধ। দেশে উচ্চশিক্ষার পর একটি স্থিতিশীল ক্যারিয়ার গড়ার নিশ্চয়তা অনেকের কাছেই অদৃশ্য। সরকারি চাকরিতে ঘুষ-তদবিরের অভিযোগ, বেসরকারি খাতে কাজের অমানবিক পরিবেশ এবং আস্থাহীনতা অনেক তরুণকে দেশের বাইরে চাকরির স্বপ্ন দেখতে বাধ্য করছে। পশ্চিমা বিশ্বে অভিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য থাকা পোস্ট-স্টাডি ওয়ার্ক ভিসা কিংবা পিআরের সুযোগ তাদের জন্য মোহ সৃষ্টি করছে। তাই শিক্ষার্থীদের চোখে শুধু উচ্চশিক্ষা নয়, বরং ‘আন্তর্জাতিক জীবন, দক্ষতা, ক্যারিয়ার ও ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা’ জড়িয়ে থাকে এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে।

আজকের প্রজন্ম দেশকে ভালোবাসে, কিন্তু বিশ্বাস করতে পারছে না। এই দেশের তরুণরা বহুদিন ধরেই রাজনৈতিক অস্থিরতা, স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি ও সুযোগ বঞ্চনার ভুক্তভোগী।শিক্ষা ও নিয়োগ ব্যবস্থায় স্বচ্ছতার অভাব, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নিরাপত্তাহীনতা তাদের মানসিকভাবে দেশছাড়া করছে। এই মুহূর্তে তরুণদের একটা বড় অংশ মনে করে, এই দেশে মেধা দিয়ে নয়, সম্পর্ক দিয়ে এগোতে হয়Ñএমন বিশ্বাস একজন তরুণের স্বপ্নকে গুঁড়িয়ে দিতে যথেষ্ট। তারা দেশ ছাড়ছে ভবিষ্যৎ বাঁচাতে।

শুধু শিক্ষার্থী নয়, পরিবারও আজকাল সন্তানকে বিদেশে পাঠানোর স্বপ্ন বুনে। অনেক বাবা-মা সন্তানকে বিদেশে পাঠানোকে ‘স্ট্যাটাস সিম্বল’ হিসেবে বিবেচনা করেন। আজকাল মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর একটি বড় অংশ এখন বিয়ের আগে মেয়েকে বা ছেলেকে বিদেশ পাঠানোর জন্যই সঞ্চয় করে। এখানে শিক্ষার চেয়ে বড় বিষয় হয়ে দাঁড়ায় ‘ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা’। অনেকে মনে করেনÑ ‘দেশে থেকে যদি ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়, তাহলে বিদেশই ভালো’।

বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যবস্থার আন্তর্জাতিকায়নের পাশাপাশি এক শ্রেণীর এজেন্ট, ইউটিউব ব্লগার ও সোশ্যাল মিডিয়া নতুন প্রজন্মের মনোজগতে এক ধরনের ‘মাইগ্রেশন কালচার’ ও বিদেশ মানেই স্বর্গ তৈরি করছে। ইউরোপের নাগরিকত্ব, কানাডার পিআর কিংবা যুক্তরাজ্যে স্থায়ী বসবাসÑএসব এখন তরুণদের জীবনের প্রধান টার্গেট হয়ে দাঁড়িয়েছে।তারা বাস্তবতা না বুঝেই একটি কল্পনার জগতে দেশ ছাড়ছে। তরুণেরা বাস্তবতা না বুঝেই ‘ড্রিম কানাডা’ কিংবা ‘মাই লাইফ ইউকে’ নামের স্বপ্নে বিভোর হয়ে পড়ছে। তবে আবার অনেকেই সফলতার দৃষ্টান্তও স্থাপন করছে।

বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়। ইউটিউব, টিকটক বা ফেসবুকেই তরুণরা দেখতে পাচ্ছে- যুক্তরাজ্যের লাইফস্টাইল, ইউরোপের সুযোগ-সুবিধা বা কানাডার নাগরিক অধিকার।এরা আর শুধু ‘বিদেশ’ বলতে মধ্যপ্রাচ্যের পরিশ্রম-ক্লান্ত জীবনের কথা বোঝে নাÑএরা চায় মেধা দিয়ে সম্মানিত হতে, ক্যারিয়ার গড়তে, সমাজে মাথা উঁচু করে চলতে। এই প্রবণতাকে খাটো করে দেখলে তরুণ সমাজের মনস্তত্ত্বকে অবজ্ঞা করা হবে। আগে বিদেশ যাওয়া মানে ছিলÑশ্রমিক পেশায় মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়া। এখন যাচ্ছে ইউনিভার্সিটির ছাত্র, মেডিকেলের গ্র্যাজুয়েট, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার বা উদ্যোক্তা। আমরা অনেক সময় অভিযোগ করি, ‘তরুণরা দেশপ্রেম হারিয়ে ফেলেছে।’ বাস্তবে বিষয়টি উল্টোÑতারা চায় একটি নিরাপদ, সমান সুযোগের দেশ। যেখানে মেধা, শ্রম ও সততার মূল্যায়ন হয়। যেখানে স্বপ্ন দেখতে বাধা দেওয়া হয় না, বরং সহায়তা করা হয়। বিদেশে পড়তে যাওয়ার মধ্যে দোষ নেই। তবে সেটি যেন দেশের জন্য ‘ব্রেন ড্রেইন’ না হয়ে, ‘ব্রেন গেইন’ হয়ে ফিরে আসে, সেটাই বড় চ্যালেঞ্জ।

তরুণরা দেশ ছাড়ছেÑএটা শুধু তাদের ব্যর্থতা নয়, বরং রাষ্ট্রীয় ও সমাজব্যবস্থার প্রতিফলন। তারা দেশকে ত্যাগ করে না, বরং ভবিষ্যতের সন্ধানে দেশকে পেছনে ফেলে আসে।আমরা যদি মেধাবীদের দেশেই সম্মান, নিরাপত্তা ও সুযোগ দিতে পারিÑতবে তারা বিদেশে যাবে জ্ঞান অর্জনের জন্য, কিন্তু ফিরবে দেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে। দেশকে যদি সত্যিই ভালোবাসতে হয়, তাহলে আগে দেশকে বাসযোগ্য করে তুলতে হবে। তারুণ্যের মেধা ও স্বপ্ন যেন বিদেশের মাটিতে নয়, নিজের মাটিতেই বিকশিত হয়Ñএটাই হোক আমাদের জাতীয় অঙ্গীকার।

[লেখক : সভাপতি, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়]

অপেক্ষার রাজনীতি ও সময়গত বৈষম্য : ঢাকা শহরের প্রেক্ষাপট

বৃক্ষরোপণ হোক পরিবেশ রক্ষার আন্দোলন

আফ্রিকায় রাশিয়ার ভূরাজনৈতিক কৌশল

বিভীষিকাময় দুর্ঘটনা ও করুণ মৃত্যু

রেলওয়ে পরিচালনায় আমলাতন্ত্রের প্রভাব

রম্যগদ্য : ‘গোপালগঞ্জ, বাংলার গোপালগঞ্জ...’

দেশি মাছ রক্ষায় অভয়াশ্রম

আলুর বাজার বিপর্যয় : কৃষকের ভাগ্যে লোকসান

ছবি

নীল নদের পানি নীল নয়

বিশ্ব বাঘ দিবস

ঢাকার কি রিস্ক এনালাইসিস করা আছে?

ছবি

সোনার হরফে লেখা অনন্য শিক্ষকের নাম

পরীক্ষার পর পরীক্ষা, কিন্তু কোথায় মূল্যায়ন ও মূল্যবোধের ভিত্তি?

বৃত্তি পরীক্ষায় কিন্ডারগার্টেন বাদ কেন?

সময়ের স্বৈরতন্ত্র : প্রতীক্ষা, ক্ষমতা ও জীবনের অসমতা

জলবায়ু পরিবর্তন মডেলে গণিতের ব্যবহার

দুর্ঘটনাজনিত দুর্যোগ-পরবর্তী করণীয় কী?

ডেঙ্গু, জিকা আর চিকুনগুনিয়া : একই উৎস, ত্রিমুখী সংকট

কেন থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ার ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি?

দুর্নীতি নির্মূল করা কি সম্ভব?

দরকার মানসম্মত শিক্ষা

ইসরায়েলের যুদ্ধনীতি ও বিশ্ব নিরাপত্তার সংকট

রম্যগদ্য : ‘বেইমান রাইট ব্রাদার্স’

মানসিক স্বাস্থ্যসেবা : আইনি কাঠামো, সংকট ও সম্ভাবনার দিক

ছবি

বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র

দুর্যোগে অবিবেচকদেরকে কি দায়িত্বশীল ভাবা যায়?

ওয়াসার পদ্মা ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট : এক জীবন্ত বোটানিক্যাল গার্ডেন

রেলপথের দুর্দশা : সমন্বিত পরিকল্পনা না হলে বিপর্যয় অনিবার্য

বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র নাকি ক্ষমতার অভ্যন্তরীণ উপনিবেশ?

পিরোজপুরের স্কুলটির ফলাফল বিপর্যয় এবং আচরণগত অর্থনীতির দৃষ্টিকোণ

কোনো শাসকই অপরাজেয় নয়

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি : বাঙালিকে রুচির দৈন্যে টেনে নামানো হচ্ছে

জনসংখ্যা ও যুবশক্তির চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

রাষ্ট্রের কাছে স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা চাই

পার্বত্য চট্টগ্রাম : প্রাকৃতিক সম্পদ ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা

ইউরেশিয়ায় তৃতীয় বিকল্প গালফ কূটনীতি

tab

উপ-সম্পাদকীয়

কেন এত তরুণ দেশ ছাড়তে চাচ্ছে

ফকর উদ্দিন মানিক

বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

বর্তমান বাংলাদেশে ‘তরুণ সমাজ ও অভিবাসন’ একটি জ্বলন্ত বাস্তবতা। দেশে তরুণ প্রজন্মের একটি বড় অংশ আজ তাদের জীবনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় ‘দেশের বাইরে চলে যাওয়া’ বিষয়টিকে প্রথম বিবেচনায় নিচ্ছে। কেউ উচ্চশিক্ষার নামে, কেউ দক্ষতা উন্নয়ন বা চাকরির খোঁজে, আবার কেউ শুধু নিরাপদ ভবিষ্যতের আশায় দেশ ছাড়ছে। প্রশ্ন হলোÑ কেন এই দেশত্যাগ? কেবল আর্থিক লাভ? নাকি গভীর হতাশা? প্রশ্ন উঠছে, এই প্রস্থান কি শুধুই উচ্চশিক্ষার জন্য, নাকি জীবনের জন্য? অথবা এর পেছনে রয়েছে আরও গভীর কোনও সংকেত?

বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা আজ একটি বিভ্রান্তির নাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়লেও মান ও সুযোগ কাক্সিক্ষত মাত্রায় পৌঁছায়নি। গবেষণা, নতুন প্রযুক্তিনির্ভর পাঠক্রম, একাডেমিক স্বাধীনতা ও বৈশ্বিক র‌্যাংকিংয়ে পিছিয়ে থাকা অনেক শিক্ষার্থীকে হতাশ করেছে। দেশীয় ডিগ্রি নিয়ে চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতা যেমন তীব্র, তেমনি মূল্যায়ন প্রক্রিয়াও প্রশ্নবিদ্ধ। দেশে উচ্চশিক্ষার পর একটি স্থিতিশীল ক্যারিয়ার গড়ার নিশ্চয়তা অনেকের কাছেই অদৃশ্য। সরকারি চাকরিতে ঘুষ-তদবিরের অভিযোগ, বেসরকারি খাতে কাজের অমানবিক পরিবেশ এবং আস্থাহীনতা অনেক তরুণকে দেশের বাইরে চাকরির স্বপ্ন দেখতে বাধ্য করছে। পশ্চিমা বিশ্বে অভিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য থাকা পোস্ট-স্টাডি ওয়ার্ক ভিসা কিংবা পিআরের সুযোগ তাদের জন্য মোহ সৃষ্টি করছে। তাই শিক্ষার্থীদের চোখে শুধু উচ্চশিক্ষা নয়, বরং ‘আন্তর্জাতিক জীবন, দক্ষতা, ক্যারিয়ার ও ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা’ জড়িয়ে থাকে এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে।

আজকের প্রজন্ম দেশকে ভালোবাসে, কিন্তু বিশ্বাস করতে পারছে না। এই দেশের তরুণরা বহুদিন ধরেই রাজনৈতিক অস্থিরতা, স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি ও সুযোগ বঞ্চনার ভুক্তভোগী।শিক্ষা ও নিয়োগ ব্যবস্থায় স্বচ্ছতার অভাব, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নিরাপত্তাহীনতা তাদের মানসিকভাবে দেশছাড়া করছে। এই মুহূর্তে তরুণদের একটা বড় অংশ মনে করে, এই দেশে মেধা দিয়ে নয়, সম্পর্ক দিয়ে এগোতে হয়Ñএমন বিশ্বাস একজন তরুণের স্বপ্নকে গুঁড়িয়ে দিতে যথেষ্ট। তারা দেশ ছাড়ছে ভবিষ্যৎ বাঁচাতে।

শুধু শিক্ষার্থী নয়, পরিবারও আজকাল সন্তানকে বিদেশে পাঠানোর স্বপ্ন বুনে। অনেক বাবা-মা সন্তানকে বিদেশে পাঠানোকে ‘স্ট্যাটাস সিম্বল’ হিসেবে বিবেচনা করেন। আজকাল মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর একটি বড় অংশ এখন বিয়ের আগে মেয়েকে বা ছেলেকে বিদেশ পাঠানোর জন্যই সঞ্চয় করে। এখানে শিক্ষার চেয়ে বড় বিষয় হয়ে দাঁড়ায় ‘ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা’। অনেকে মনে করেনÑ ‘দেশে থেকে যদি ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়, তাহলে বিদেশই ভালো’।

বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যবস্থার আন্তর্জাতিকায়নের পাশাপাশি এক শ্রেণীর এজেন্ট, ইউটিউব ব্লগার ও সোশ্যাল মিডিয়া নতুন প্রজন্মের মনোজগতে এক ধরনের ‘মাইগ্রেশন কালচার’ ও বিদেশ মানেই স্বর্গ তৈরি করছে। ইউরোপের নাগরিকত্ব, কানাডার পিআর কিংবা যুক্তরাজ্যে স্থায়ী বসবাসÑএসব এখন তরুণদের জীবনের প্রধান টার্গেট হয়ে দাঁড়িয়েছে।তারা বাস্তবতা না বুঝেই একটি কল্পনার জগতে দেশ ছাড়ছে। তরুণেরা বাস্তবতা না বুঝেই ‘ড্রিম কানাডা’ কিংবা ‘মাই লাইফ ইউকে’ নামের স্বপ্নে বিভোর হয়ে পড়ছে। তবে আবার অনেকেই সফলতার দৃষ্টান্তও স্থাপন করছে।

বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়। ইউটিউব, টিকটক বা ফেসবুকেই তরুণরা দেখতে পাচ্ছে- যুক্তরাজ্যের লাইফস্টাইল, ইউরোপের সুযোগ-সুবিধা বা কানাডার নাগরিক অধিকার।এরা আর শুধু ‘বিদেশ’ বলতে মধ্যপ্রাচ্যের পরিশ্রম-ক্লান্ত জীবনের কথা বোঝে নাÑএরা চায় মেধা দিয়ে সম্মানিত হতে, ক্যারিয়ার গড়তে, সমাজে মাথা উঁচু করে চলতে। এই প্রবণতাকে খাটো করে দেখলে তরুণ সমাজের মনস্তত্ত্বকে অবজ্ঞা করা হবে। আগে বিদেশ যাওয়া মানে ছিলÑশ্রমিক পেশায় মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়া। এখন যাচ্ছে ইউনিভার্সিটির ছাত্র, মেডিকেলের গ্র্যাজুয়েট, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার বা উদ্যোক্তা। আমরা অনেক সময় অভিযোগ করি, ‘তরুণরা দেশপ্রেম হারিয়ে ফেলেছে।’ বাস্তবে বিষয়টি উল্টোÑতারা চায় একটি নিরাপদ, সমান সুযোগের দেশ। যেখানে মেধা, শ্রম ও সততার মূল্যায়ন হয়। যেখানে স্বপ্ন দেখতে বাধা দেওয়া হয় না, বরং সহায়তা করা হয়। বিদেশে পড়তে যাওয়ার মধ্যে দোষ নেই। তবে সেটি যেন দেশের জন্য ‘ব্রেন ড্রেইন’ না হয়ে, ‘ব্রেন গেইন’ হয়ে ফিরে আসে, সেটাই বড় চ্যালেঞ্জ।

তরুণরা দেশ ছাড়ছেÑএটা শুধু তাদের ব্যর্থতা নয়, বরং রাষ্ট্রীয় ও সমাজব্যবস্থার প্রতিফলন। তারা দেশকে ত্যাগ করে না, বরং ভবিষ্যতের সন্ধানে দেশকে পেছনে ফেলে আসে।আমরা যদি মেধাবীদের দেশেই সম্মান, নিরাপত্তা ও সুযোগ দিতে পারিÑতবে তারা বিদেশে যাবে জ্ঞান অর্জনের জন্য, কিন্তু ফিরবে দেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে। দেশকে যদি সত্যিই ভালোবাসতে হয়, তাহলে আগে দেশকে বাসযোগ্য করে তুলতে হবে। তারুণ্যের মেধা ও স্বপ্ন যেন বিদেশের মাটিতে নয়, নিজের মাটিতেই বিকশিত হয়Ñএটাই হোক আমাদের জাতীয় অঙ্গীকার।

[লেখক : সভাপতি, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়]

back to top