alt

উপ-সম্পাদকীয়

অপেক্ষার রাজনীতি ও সময়গত বৈষম্য : ঢাকা শহরের প্রেক্ষাপট

মতিউর রহমান

: শনিবার, ০২ আগস্ট ২০২৫

সারাহ শর্মা একজন প্রখ্যাত নারীবাদী মিডিয়া তাত্ত্বিক। সময়, প্রযুক্তি ও ক্ষমতার ওপর তার সমালোচনামূলক গবেষণার জন্য তিনি বিশেষভাবে পরিচিত। তার মতে, ‘অপেক্ষা’ কোনো নিরপেক্ষ বা সার্বজনীন অভিজ্ঞতা নয়। বরং এটি সমাজে বিদ্যমান ক্ষমতা ও শ্রেণীগত বৈষম্যের প্রতিফলন। তার বই ‘ইন দ্য মিনটাইম : টেম্পোরালিটি অ্যান্ড কালচারাল পলিটিক্স’ (২০১৪)-এ তিনি দেখিয়েছেন, সময় ব্যবহারের সুযোগ এবং তা থেকে লাভের সম্ভাবনা শ্রেণী ও পেশার ভিত্তিতে ভিন্ন হয়। এই তত্ত্বের আলোকে যদি আমরা ঢাকা শহরের দিকে তাকাই, তাহলে স্পষ্ট দেখা যায়, কিভাবে সময় একটি শ্রেণীভিত্তিক সম্পদে পরিণত হয়েছে এবং অপেক্ষার রাজনীতি এখানে এক কঠিন বাস্তবতা।

ঢাকা শহরের প্রতিদিনের দৃশ্যপটজুড়ে রয়েছে লাখ লাখ মানুষের অপেক্ষা। এই অপেক্ষা নিছক সময়ের অপচয় নয়, এটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের এক জ্বলন্ত উদাহরণ। গার্মেন্টস শ্রমিকেরা সময়মতো কাজে পৌঁছানোর জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসের জন্য অপেক্ষা করেন, যা তাদের দৈনন্দিন জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। ঘনবসতিপূর্ণ এই শহরে সীমিত গণপরিবহন ব্যবস্থার কারণে তাদের কর্মস্থলে পৌঁছানো এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। ভোরবেলায় বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা কিংবা সন্ধ্যা নেমে আসার পর জ্যামে বসে থাকা, তাদের মূল্যবান কর্মঘণ্টা ও বিশ্রামের সময় কেড়ে নেয়।

একইভাবে রিকশাওয়ালারা দাঁড়িয়ে থাকেন যাত্রীর আশায়, তাদের আয় নির্ভর করে অপেক্ষার পর একজন যাত্রী পাওয়ার ওপর। এই অপেক্ষার সময় তাদের উপার্জনের অংশ হিসেবে বিবেচিত হয় না, বরং এটি একটি অনুৎপাদনশীল বা ‘নন-প্রোডাক্টিভ’ সময়, যা তাদের ব্যক্তিগত খরচ ও ঝুঁকির ওপর চাপ সৃষ্টি করে। মধ্যবিত্ত চাকরিজীবীরাও এই চিত্র থেকে মুক্ত নন; তারা প্রতিদিন যানজটে আটকে থাকেন অফিস পৌঁছাতে, যা তাদের মানসিক চাপ বাড়ায় এবং ব্যক্তিগত জীবন থেকে মূল্যবান সময় কেড়ে নেয়।

কিন্তু এই অপেক্ষা বা সময়ের অপচয়কে রাষ্ট্র বা সমাজ কখনো মূল্য দেয় না। বরং এই সময়গুলো অদৃশ্য, অস্বীকৃত, ও অবমূল্যায়িত। সমাজের বৃহত্তর অংশে, বিশেষত নিম্নবিত্তদের জন্য, সময়কে একটি ‘ফ্রি রিসোর্স’ বা বিনামূল্যে প্রাপ্ত সম্পদ হিসেবে দেখা হয়, যার কোনো মূল্য নেই। গরিব মানুষের সময় যেন রাষ্ট্র বা শহর কর্তৃপক্ষের কাছে মূল্যহীন। তাদের অপেক্ষাকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে মেনে নেওয়া হয় এবং এর পেছনে যে কাঠামোগত কারণগুলো রয়েছে, তা সাধারণত উপেক্ষা করা হয়। এই অদৃশ্য শ্রম পুঁজিবাদের এমন এক চাল, যেখানে শ্রমিকের শরীর ও সময়কে বিনা পারিশ্রমিকে ব্যবহার করা হয়। তাদের অপেক্ষার প্রতিটি মুহূর্ত যেন উৎপাদনশীলতার চেইন থেকে বিচ্ছিন্ন, কিন্তু বাস্তবে তা পুরো ব্যবস্থাকে সচল রাখতে সহায়তা করে।

এর বিপরীতে সমাজের উচ্চবিত্ত বা ক্ষমতাসীন শ্রেণী যেন সময়ের উপরে অধিকার প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছে। তাদের জন্য শহরের নিয়ম ভিন্ন, তারা যেন ভিন্ন এক সময়-সত্তায় বসবাস করে। তারা যানজট এড়িয়ে সাইরেন বাজিয়ে গাড়ি চালাতে পারে, যা এক ধরনের বিশেষাধিকারের প্রতীক এবং ক্ষমতার দৃশ্যমান প্রদর্শন। ব্যক্তিগত গাড়িচালক বা হেলিকপ্টার ব্যবহার করে তারা অতি দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছায়, যেখানে সাধারণ মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকে। এমনকি স্মার্টফোন অ্যাপের মাধ্যমে উবার প্রিমিয়ার বা পাঠাওয়ের বাইক রাইড সার্ভিসে যাতায়াত করে তারা অপেক্ষার প্রয়োজনীয়তা এড়িয়ে যায়, কারণ এই পরিষেবাগুলো তাদের সুবিধামতো সময়ে উপলব্ধ থাকে এবং অর্থের বিনিময়ে তাদের সময় সাশ্রয় করে।

এই প্রযুক্তি, অবকাঠামো ও সামাজিক সম্পর্ক তাদের অপেক্ষাহীন সময়ের অভিজ্ঞতা দেয়, যেন তারা সময়ের বাইরে বসবাস করে। এটি কেবল অর্থের বিনিময়ে সুবিধার প্রাপ্তি নয়, বরং এটি সময় ব্যবহারের একচেটিয়া অধিকার, যা তাদের ক্ষমতা এবং সামাজিক অবস্থানকে আরও সুসংহত করে। যখন একজন সাধারণ মানুষ গণপরিবহনের জন্য রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকে, তখন একজন উচ্চবিত্ত ব্যক্তি হয়তো তার ব্যক্তিগত এসি গাড়ির শীতল পরিবেশে নিজের কাজ সারছেন বা বিনোদন নিচ্ছেন। এই পার্থক্য শুধু যাতায়াত পদ্ধতির নয়, এটি সময় ব্যবস্থাপনার ক্ষমতা এবং জীবনযাত্রার মানকেও স্পষ্ট করে তোলে। এটি সেই শ্রেণীর জন্য একটি অদৃশ্য সুবিধা যা তাদের উৎপাদনশীলতা এবং সামাজিক মূলধনকে আরও বাড়িয়ে তোলে, যখন অন্যরা কেবল দৈনন্দিন জীবনযাপনেই হিমশিম খায়।

সারা শর্মার বিশ্লেষণের মূল বার্তা হলো, এখানে সময় শুধু ক্যালেন্ডার বা ঘড়ির পরিমাপ নয়, বরং এটি একধরনের সামাজিক সম্পদ, যার বণ্টন সমাজে অসম। এই বৈষম্য পুঁজিবাদী ব্যবস্থার একটি অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্য। ধনী শ্রেণী সময় কিনতে পারে, অর্থাৎ তারা অর্থ ব্যয় করে অপেক্ষার সময়কে কমিয়ে আনতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, তারা ফাস্ট ট্র্যাক সার্ভিস, প্রাইভেট ডেলিভারি, বা ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করে সময় বাঁচায়। তারা প্রাইভেট হাসপাতালে গেলে দ্রুত সেবা পায়, যেখানে সাধারণ মানুষকে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করতে হয়।

অন্যদিকে গরিব শ্রেণীর থেকে সময় চুরি হয়। যখন একজন গার্মেন্টস শ্রমিক তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করেন একটি লোকাল বাসের জন্য, তখন সেই একই সময়ে একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এক কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে হেলিকপ্টার ব্যবহার করেনÑএটি কেবল যাতায়াতের পার্থক্য নয়, এটি সময়-অধিকারের বৈষম্য। এই পার্থক্যটি এতাই প্রকট যে মনে হয় যেন সমাজের প্রতিটি স্তরে সময়ের মূল্য ভিন্ন। গরিবের সময়কে কেবল ‘অলস সময়’ হিসেবে দেখা হয়, যা উৎপাদনশীল নয়, এবং যার কোনো আর্থিক মূল্য নেই। তাদের অপেক্ষার সময়টি তাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং সামগ্রিক জীবনযাত্রার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই শোষণের ফলে, গরিবরা আরও গরিব হয় এবং ধনীরা আরও ধনী হয়, কারণ তারা সময়ের সুবিধা ব্যবহার করে তাদের সম্পদ বাড়াতে পারে।

সারা শর্মা বলেন, এই বৈষম্য শুধু অর্থনৈতিক নয়, এটি সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক। সময় ব্যবহারে এই ভেদাভেদ ব্যক্তি ও শ্রেণীর জীবনচক্রকে প্রভাবিত করে। যারা সময়ের মালিক, তারা নিজেদের সময়কে ইচ্ছামতো ব্যবহার করতে পারে, নতুন দক্ষতা অর্জন করতে পারে, বিনোদন করতে পারে বা বিশ্রাম নিতে পারে। তাদের কাছে সময় একটি মূল্যবান সম্পদ যা বিনিয়োগের মাধ্যমে আরও বেশি রিটার্ন নিয়ে আসে।

পক্ষান্তরে যারা সময়ের দাস, তাদের জীবনের অনেকটা সময়ই অপেক্ষায়, যাতায়াতে বা বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রামেই ব্যয় হয়ে যায়, যা তাদের ব্যক্তিগত উন্নয়ন বা বিনোদনের সুযোগ সীমিত করে দেয়। তাদের জীবন যেন এক চলমান অপেক্ষার নামান্তর।

ঢাকার মতো মেগাসিটিতে এই বাস্তবতা আরও তীব্রভাবে দৃশ্যমান। ‘মেগা’ শহরের ‘মেগা’ সময় শুধুই ধনীদের জন্য প্রযোজ্য, যারা দ্রুতগতিতে শহরের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে যাতায়াত করতে পারে, তাদের সময় অনুযায়ী মিটিং বা ইভেন্ট আয়োজন করতে পারে। তাদের কাছে প্রতিটি মুহূর্ত উৎপাদনশীলতা বা সামাজিক নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগ নিয়ে আসে। বাকিরা যেন একটি অনির্দিষ্ট ও অসমাপ্ত ‘মধ্যবর্তী সময়’-এ আটকে থাকেÑযেখানে প্রতিদিন শুধু অপেক্ষা, স্থবিরতা, আর ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি। এই ‘মধ্যবর্তী সময়’ হলো সেই অদৃশ্য ফাঁদ, যেখানে সমাজের প্রান্তিক মানুষরা তাদের জীবনের মূল্যবান মুহূর্তগুলো কেবল ‘অপেক্ষা’ করেই কাটায়, যার কোনো সামাজিক বা অর্থনৈতিক স্বীকৃতি নেই। এই পরিস্থিতি এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি করে, যা তাদের মধ্যে হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা বাড়িয়ে তোলে।

এই বৈষম্যমূলক সময়চর্চা আমাদের সমাজে কতা গভীরভাবে প্রোথিত, তা বোঝা যায় যখন আমরা দেখি, রাষ্ট্রের অবকাঠামো কার জন্য নির্মিত হচ্ছে। সেতু, ফ্লাইওভার, এক্সপ্রেসওয়েÑসবকিছুই যেন দ্রুতগামী গাড়ির জন্য, যা মূলত ধনী এবং মধ্যবিত্তের উপরের অংশের কাজে আসে। এগুলোর মাধ্যমে তারা নিজেদের সময় বাঁচিয়ে উৎপাদনশীলতা বা বিনোদনে নিয়োজিত হতে পারে; কিন্তু এই অবকাঠামোগুলো সমাজের নিম্নবিত্ত মানুষের দৈনন্দিন যাতায়াত সমস্যার কোনো সমাধান করে না। উদাহরণস্বরূপ, যখন একটি নতুন ফ্লাইওভার উদ্বোধন করা হয়, তখন তার নিচে থাকা অসংখ্য রিকশা বা বাস যাত্রী ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকে।

আর বাকি মানুষজন দিনের পর দিন নেমে পড়ে শহরের ফুটপাতে, অপেক্ষার অপেক্ষায়। তারা ফুটপাতে হাঁটে, গণপরিবহনের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকে, এবং তাদের জন্য কোনো ফাস্ট ট্র্যাক নেই। রাষ্ট্রের পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় এই শ্রেণীগত বৈষম্য সুস্পষ্ট। অবকাঠামোগত উন্নয়নগুলো সমাজের একটি নির্দিষ্ট অংশের সুবিধার জন্য তৈরি হয়, যা অন্যদের অপেক্ষাকে আরও দীর্ঘায়িত করে। এটি কেবল একটি ট্র্যাফিক সমস্যার সমাধান নয়, এটি এক ধরনের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত যা সমাজের কোন অংশকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে তা নির্ধারণ করে। এই নীতিগুলো পরোক্ষভাবে সময়গত বৈষম্যকে আরও শক্তিশালী করে এবং ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান বাড়িয়ে তোলে।

অতএব, অপেক্ষা শুধু সময়ের বিলম্ব নয়; এটি শ্রেণীর প্রতিচ্ছবি এবং ঢাকার মতো শহরে, যেখানে ২ কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষ বসবাস করে, সেখানে এই সময়গত বৈষম্য প্রতিদিন ধনী-গরিব ব্যবধানকে আরও তীব্র করে তোলে। সময় যেন এখানে এক নতুন ধরনের শ্রেণী-সংকেত, যা বলে দেয়, আপনি কী ধরনের নাগরিকÑযিনি অপেক্ষা করেন, নাকি যিনি অন্যদের অপেক্ষায় রাখেন।

সারা শর্মার এই বিশ্লেষণ আমাদের শেখায়, সমাজে সময়ের বণ্টন ও ব্যবহার বিশ্লেষণ করাও এক ধরনের ক্ষমতার রাজনীতি বোঝার পথ। যে সমাজে অপেক্ষা একটি শ্রেণীভিত্তিক বাধ্যবাধকতা, সে সমাজ আসলে গন্তব্যে নয়, বরং এক অনন্ত ‘অপেক্ষার রাজনীতিতে’ আবদ্ধ। এই রাজনীতি কেবল অর্থনৈতিক বৈষম্যকে আরও গভীর করে না, বরং এটি সামাজিক বিভাজনকেও ¯ায়ী করে। এই চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে হলে, আমাদের সময়ের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে এবং সবার জন্য সময়ের ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন শুধু নীতিগত পরিবর্তন নয়, বরং সামাজিক সচেতনতা, সমষ্টিগত প্রচেষ্টা এবং সরকারি উদ্যোগ।

[লেখক : গবেষক ও উন্নয়নকর্মী]

অলৌকিকতা, লৌকিকতা ও বিশ্বাসের বিভ্রান্তি

বিচারপতি গ্রেফতার, শুনানিতে পুলিশের অসহযোগিতা ও কিছু আইনি জিজ্ঞাসা

বৃক্ষরোপণ হোক পরিবেশ রক্ষার আন্দোলন

আফ্রিকায় রাশিয়ার ভূরাজনৈতিক কৌশল

বিভীষিকাময় দুর্ঘটনা ও করুণ মৃত্যু

কেন এত তরুণ দেশ ছাড়তে চাচ্ছে

রেলওয়ে পরিচালনায় আমলাতন্ত্রের প্রভাব

রম্যগদ্য : ‘গোপালগঞ্জ, বাংলার গোপালগঞ্জ...’

দেশি মাছ রক্ষায় অভয়াশ্রম

আলুর বাজার বিপর্যয় : কৃষকের ভাগ্যে লোকসান

ছবি

নীল নদের পানি নীল নয়

বিশ্ব বাঘ দিবস

ঢাকার কি রিস্ক এনালাইসিস করা আছে?

ছবি

সোনার হরফে লেখা অনন্য শিক্ষকের নাম

পরীক্ষার পর পরীক্ষা, কিন্তু কোথায় মূল্যায়ন ও মূল্যবোধের ভিত্তি?

বৃত্তি পরীক্ষায় কিন্ডারগার্টেন বাদ কেন?

সময়ের স্বৈরতন্ত্র : প্রতীক্ষা, ক্ষমতা ও জীবনের অসমতা

জলবায়ু পরিবর্তন মডেলে গণিতের ব্যবহার

দুর্ঘটনাজনিত দুর্যোগ-পরবর্তী করণীয় কী?

ডেঙ্গু, জিকা আর চিকুনগুনিয়া : একই উৎস, ত্রিমুখী সংকট

কেন থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ার ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি?

দুর্নীতি নির্মূল করা কি সম্ভব?

দরকার মানসম্মত শিক্ষা

ইসরায়েলের যুদ্ধনীতি ও বিশ্ব নিরাপত্তার সংকট

রম্যগদ্য : ‘বেইমান রাইট ব্রাদার্স’

মানসিক স্বাস্থ্যসেবা : আইনি কাঠামো, সংকট ও সম্ভাবনার দিক

ছবি

বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র

দুর্যোগে অবিবেচকদেরকে কি দায়িত্বশীল ভাবা যায়?

ওয়াসার পদ্মা ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট : এক জীবন্ত বোটানিক্যাল গার্ডেন

রেলপথের দুর্দশা : সমন্বিত পরিকল্পনা না হলে বিপর্যয় অনিবার্য

বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র নাকি ক্ষমতার অভ্যন্তরীণ উপনিবেশ?

পিরোজপুরের স্কুলটির ফলাফল বিপর্যয় এবং আচরণগত অর্থনীতির দৃষ্টিকোণ

কোনো শাসকই অপরাজেয় নয়

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি : বাঙালিকে রুচির দৈন্যে টেনে নামানো হচ্ছে

জনসংখ্যা ও যুবশক্তির চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

রাষ্ট্রের কাছে স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা চাই

tab

উপ-সম্পাদকীয়

অপেক্ষার রাজনীতি ও সময়গত বৈষম্য : ঢাকা শহরের প্রেক্ষাপট

মতিউর রহমান

শনিবার, ০২ আগস্ট ২০২৫

সারাহ শর্মা একজন প্রখ্যাত নারীবাদী মিডিয়া তাত্ত্বিক। সময়, প্রযুক্তি ও ক্ষমতার ওপর তার সমালোচনামূলক গবেষণার জন্য তিনি বিশেষভাবে পরিচিত। তার মতে, ‘অপেক্ষা’ কোনো নিরপেক্ষ বা সার্বজনীন অভিজ্ঞতা নয়। বরং এটি সমাজে বিদ্যমান ক্ষমতা ও শ্রেণীগত বৈষম্যের প্রতিফলন। তার বই ‘ইন দ্য মিনটাইম : টেম্পোরালিটি অ্যান্ড কালচারাল পলিটিক্স’ (২০১৪)-এ তিনি দেখিয়েছেন, সময় ব্যবহারের সুযোগ এবং তা থেকে লাভের সম্ভাবনা শ্রেণী ও পেশার ভিত্তিতে ভিন্ন হয়। এই তত্ত্বের আলোকে যদি আমরা ঢাকা শহরের দিকে তাকাই, তাহলে স্পষ্ট দেখা যায়, কিভাবে সময় একটি শ্রেণীভিত্তিক সম্পদে পরিণত হয়েছে এবং অপেক্ষার রাজনীতি এখানে এক কঠিন বাস্তবতা।

ঢাকা শহরের প্রতিদিনের দৃশ্যপটজুড়ে রয়েছে লাখ লাখ মানুষের অপেক্ষা। এই অপেক্ষা নিছক সময়ের অপচয় নয়, এটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের এক জ্বলন্ত উদাহরণ। গার্মেন্টস শ্রমিকেরা সময়মতো কাজে পৌঁছানোর জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসের জন্য অপেক্ষা করেন, যা তাদের দৈনন্দিন জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। ঘনবসতিপূর্ণ এই শহরে সীমিত গণপরিবহন ব্যবস্থার কারণে তাদের কর্মস্থলে পৌঁছানো এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। ভোরবেলায় বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা কিংবা সন্ধ্যা নেমে আসার পর জ্যামে বসে থাকা, তাদের মূল্যবান কর্মঘণ্টা ও বিশ্রামের সময় কেড়ে নেয়।

একইভাবে রিকশাওয়ালারা দাঁড়িয়ে থাকেন যাত্রীর আশায়, তাদের আয় নির্ভর করে অপেক্ষার পর একজন যাত্রী পাওয়ার ওপর। এই অপেক্ষার সময় তাদের উপার্জনের অংশ হিসেবে বিবেচিত হয় না, বরং এটি একটি অনুৎপাদনশীল বা ‘নন-প্রোডাক্টিভ’ সময়, যা তাদের ব্যক্তিগত খরচ ও ঝুঁকির ওপর চাপ সৃষ্টি করে। মধ্যবিত্ত চাকরিজীবীরাও এই চিত্র থেকে মুক্ত নন; তারা প্রতিদিন যানজটে আটকে থাকেন অফিস পৌঁছাতে, যা তাদের মানসিক চাপ বাড়ায় এবং ব্যক্তিগত জীবন থেকে মূল্যবান সময় কেড়ে নেয়।

কিন্তু এই অপেক্ষা বা সময়ের অপচয়কে রাষ্ট্র বা সমাজ কখনো মূল্য দেয় না। বরং এই সময়গুলো অদৃশ্য, অস্বীকৃত, ও অবমূল্যায়িত। সমাজের বৃহত্তর অংশে, বিশেষত নিম্নবিত্তদের জন্য, সময়কে একটি ‘ফ্রি রিসোর্স’ বা বিনামূল্যে প্রাপ্ত সম্পদ হিসেবে দেখা হয়, যার কোনো মূল্য নেই। গরিব মানুষের সময় যেন রাষ্ট্র বা শহর কর্তৃপক্ষের কাছে মূল্যহীন। তাদের অপেক্ষাকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে মেনে নেওয়া হয় এবং এর পেছনে যে কাঠামোগত কারণগুলো রয়েছে, তা সাধারণত উপেক্ষা করা হয়। এই অদৃশ্য শ্রম পুঁজিবাদের এমন এক চাল, যেখানে শ্রমিকের শরীর ও সময়কে বিনা পারিশ্রমিকে ব্যবহার করা হয়। তাদের অপেক্ষার প্রতিটি মুহূর্ত যেন উৎপাদনশীলতার চেইন থেকে বিচ্ছিন্ন, কিন্তু বাস্তবে তা পুরো ব্যবস্থাকে সচল রাখতে সহায়তা করে।

এর বিপরীতে সমাজের উচ্চবিত্ত বা ক্ষমতাসীন শ্রেণী যেন সময়ের উপরে অধিকার প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছে। তাদের জন্য শহরের নিয়ম ভিন্ন, তারা যেন ভিন্ন এক সময়-সত্তায় বসবাস করে। তারা যানজট এড়িয়ে সাইরেন বাজিয়ে গাড়ি চালাতে পারে, যা এক ধরনের বিশেষাধিকারের প্রতীক এবং ক্ষমতার দৃশ্যমান প্রদর্শন। ব্যক্তিগত গাড়িচালক বা হেলিকপ্টার ব্যবহার করে তারা অতি দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছায়, যেখানে সাধারণ মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকে। এমনকি স্মার্টফোন অ্যাপের মাধ্যমে উবার প্রিমিয়ার বা পাঠাওয়ের বাইক রাইড সার্ভিসে যাতায়াত করে তারা অপেক্ষার প্রয়োজনীয়তা এড়িয়ে যায়, কারণ এই পরিষেবাগুলো তাদের সুবিধামতো সময়ে উপলব্ধ থাকে এবং অর্থের বিনিময়ে তাদের সময় সাশ্রয় করে।

এই প্রযুক্তি, অবকাঠামো ও সামাজিক সম্পর্ক তাদের অপেক্ষাহীন সময়ের অভিজ্ঞতা দেয়, যেন তারা সময়ের বাইরে বসবাস করে। এটি কেবল অর্থের বিনিময়ে সুবিধার প্রাপ্তি নয়, বরং এটি সময় ব্যবহারের একচেটিয়া অধিকার, যা তাদের ক্ষমতা এবং সামাজিক অবস্থানকে আরও সুসংহত করে। যখন একজন সাধারণ মানুষ গণপরিবহনের জন্য রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকে, তখন একজন উচ্চবিত্ত ব্যক্তি হয়তো তার ব্যক্তিগত এসি গাড়ির শীতল পরিবেশে নিজের কাজ সারছেন বা বিনোদন নিচ্ছেন। এই পার্থক্য শুধু যাতায়াত পদ্ধতির নয়, এটি সময় ব্যবস্থাপনার ক্ষমতা এবং জীবনযাত্রার মানকেও স্পষ্ট করে তোলে। এটি সেই শ্রেণীর জন্য একটি অদৃশ্য সুবিধা যা তাদের উৎপাদনশীলতা এবং সামাজিক মূলধনকে আরও বাড়িয়ে তোলে, যখন অন্যরা কেবল দৈনন্দিন জীবনযাপনেই হিমশিম খায়।

সারা শর্মার বিশ্লেষণের মূল বার্তা হলো, এখানে সময় শুধু ক্যালেন্ডার বা ঘড়ির পরিমাপ নয়, বরং এটি একধরনের সামাজিক সম্পদ, যার বণ্টন সমাজে অসম। এই বৈষম্য পুঁজিবাদী ব্যবস্থার একটি অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্য। ধনী শ্রেণী সময় কিনতে পারে, অর্থাৎ তারা অর্থ ব্যয় করে অপেক্ষার সময়কে কমিয়ে আনতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, তারা ফাস্ট ট্র্যাক সার্ভিস, প্রাইভেট ডেলিভারি, বা ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করে সময় বাঁচায়। তারা প্রাইভেট হাসপাতালে গেলে দ্রুত সেবা পায়, যেখানে সাধারণ মানুষকে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করতে হয়।

অন্যদিকে গরিব শ্রেণীর থেকে সময় চুরি হয়। যখন একজন গার্মেন্টস শ্রমিক তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করেন একটি লোকাল বাসের জন্য, তখন সেই একই সময়ে একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এক কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে হেলিকপ্টার ব্যবহার করেনÑএটি কেবল যাতায়াতের পার্থক্য নয়, এটি সময়-অধিকারের বৈষম্য। এই পার্থক্যটি এতাই প্রকট যে মনে হয় যেন সমাজের প্রতিটি স্তরে সময়ের মূল্য ভিন্ন। গরিবের সময়কে কেবল ‘অলস সময়’ হিসেবে দেখা হয়, যা উৎপাদনশীল নয়, এবং যার কোনো আর্থিক মূল্য নেই। তাদের অপেক্ষার সময়টি তাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং সামগ্রিক জীবনযাত্রার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই শোষণের ফলে, গরিবরা আরও গরিব হয় এবং ধনীরা আরও ধনী হয়, কারণ তারা সময়ের সুবিধা ব্যবহার করে তাদের সম্পদ বাড়াতে পারে।

সারা শর্মা বলেন, এই বৈষম্য শুধু অর্থনৈতিক নয়, এটি সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক। সময় ব্যবহারে এই ভেদাভেদ ব্যক্তি ও শ্রেণীর জীবনচক্রকে প্রভাবিত করে। যারা সময়ের মালিক, তারা নিজেদের সময়কে ইচ্ছামতো ব্যবহার করতে পারে, নতুন দক্ষতা অর্জন করতে পারে, বিনোদন করতে পারে বা বিশ্রাম নিতে পারে। তাদের কাছে সময় একটি মূল্যবান সম্পদ যা বিনিয়োগের মাধ্যমে আরও বেশি রিটার্ন নিয়ে আসে।

পক্ষান্তরে যারা সময়ের দাস, তাদের জীবনের অনেকটা সময়ই অপেক্ষায়, যাতায়াতে বা বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রামেই ব্যয় হয়ে যায়, যা তাদের ব্যক্তিগত উন্নয়ন বা বিনোদনের সুযোগ সীমিত করে দেয়। তাদের জীবন যেন এক চলমান অপেক্ষার নামান্তর।

ঢাকার মতো মেগাসিটিতে এই বাস্তবতা আরও তীব্রভাবে দৃশ্যমান। ‘মেগা’ শহরের ‘মেগা’ সময় শুধুই ধনীদের জন্য প্রযোজ্য, যারা দ্রুতগতিতে শহরের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে যাতায়াত করতে পারে, তাদের সময় অনুযায়ী মিটিং বা ইভেন্ট আয়োজন করতে পারে। তাদের কাছে প্রতিটি মুহূর্ত উৎপাদনশীলতা বা সামাজিক নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগ নিয়ে আসে। বাকিরা যেন একটি অনির্দিষ্ট ও অসমাপ্ত ‘মধ্যবর্তী সময়’-এ আটকে থাকেÑযেখানে প্রতিদিন শুধু অপেক্ষা, স্থবিরতা, আর ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি। এই ‘মধ্যবর্তী সময়’ হলো সেই অদৃশ্য ফাঁদ, যেখানে সমাজের প্রান্তিক মানুষরা তাদের জীবনের মূল্যবান মুহূর্তগুলো কেবল ‘অপেক্ষা’ করেই কাটায়, যার কোনো সামাজিক বা অর্থনৈতিক স্বীকৃতি নেই। এই পরিস্থিতি এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি করে, যা তাদের মধ্যে হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা বাড়িয়ে তোলে।

এই বৈষম্যমূলক সময়চর্চা আমাদের সমাজে কতা গভীরভাবে প্রোথিত, তা বোঝা যায় যখন আমরা দেখি, রাষ্ট্রের অবকাঠামো কার জন্য নির্মিত হচ্ছে। সেতু, ফ্লাইওভার, এক্সপ্রেসওয়েÑসবকিছুই যেন দ্রুতগামী গাড়ির জন্য, যা মূলত ধনী এবং মধ্যবিত্তের উপরের অংশের কাজে আসে। এগুলোর মাধ্যমে তারা নিজেদের সময় বাঁচিয়ে উৎপাদনশীলতা বা বিনোদনে নিয়োজিত হতে পারে; কিন্তু এই অবকাঠামোগুলো সমাজের নিম্নবিত্ত মানুষের দৈনন্দিন যাতায়াত সমস্যার কোনো সমাধান করে না। উদাহরণস্বরূপ, যখন একটি নতুন ফ্লাইওভার উদ্বোধন করা হয়, তখন তার নিচে থাকা অসংখ্য রিকশা বা বাস যাত্রী ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকে।

আর বাকি মানুষজন দিনের পর দিন নেমে পড়ে শহরের ফুটপাতে, অপেক্ষার অপেক্ষায়। তারা ফুটপাতে হাঁটে, গণপরিবহনের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকে, এবং তাদের জন্য কোনো ফাস্ট ট্র্যাক নেই। রাষ্ট্রের পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় এই শ্রেণীগত বৈষম্য সুস্পষ্ট। অবকাঠামোগত উন্নয়নগুলো সমাজের একটি নির্দিষ্ট অংশের সুবিধার জন্য তৈরি হয়, যা অন্যদের অপেক্ষাকে আরও দীর্ঘায়িত করে। এটি কেবল একটি ট্র্যাফিক সমস্যার সমাধান নয়, এটি এক ধরনের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত যা সমাজের কোন অংশকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে তা নির্ধারণ করে। এই নীতিগুলো পরোক্ষভাবে সময়গত বৈষম্যকে আরও শক্তিশালী করে এবং ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান বাড়িয়ে তোলে।

অতএব, অপেক্ষা শুধু সময়ের বিলম্ব নয়; এটি শ্রেণীর প্রতিচ্ছবি এবং ঢাকার মতো শহরে, যেখানে ২ কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষ বসবাস করে, সেখানে এই সময়গত বৈষম্য প্রতিদিন ধনী-গরিব ব্যবধানকে আরও তীব্র করে তোলে। সময় যেন এখানে এক নতুন ধরনের শ্রেণী-সংকেত, যা বলে দেয়, আপনি কী ধরনের নাগরিকÑযিনি অপেক্ষা করেন, নাকি যিনি অন্যদের অপেক্ষায় রাখেন।

সারা শর্মার এই বিশ্লেষণ আমাদের শেখায়, সমাজে সময়ের বণ্টন ও ব্যবহার বিশ্লেষণ করাও এক ধরনের ক্ষমতার রাজনীতি বোঝার পথ। যে সমাজে অপেক্ষা একটি শ্রেণীভিত্তিক বাধ্যবাধকতা, সে সমাজ আসলে গন্তব্যে নয়, বরং এক অনন্ত ‘অপেক্ষার রাজনীতিতে’ আবদ্ধ। এই রাজনীতি কেবল অর্থনৈতিক বৈষম্যকে আরও গভীর করে না, বরং এটি সামাজিক বিভাজনকেও ¯ায়ী করে। এই চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে হলে, আমাদের সময়ের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে এবং সবার জন্য সময়ের ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন শুধু নীতিগত পরিবর্তন নয়, বরং সামাজিক সচেতনতা, সমষ্টিগত প্রচেষ্টা এবং সরকারি উদ্যোগ।

[লেখক : গবেষক ও উন্নয়নকর্মী]

back to top