alt

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

সে এক রূপকথারই দেশ

জাঁ-নেসার ওসমান

: বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

“সে এক রূপকথারই দেশ/ ফাগুন যেথা হয় না কভু শেষ/ আনারকলি পাপড়ি ঝরায়/ সেথায় পথের ধারে... দেখে এলাম তারে...”

“কী মিয়া ভাই, বেইন্না ফজরত “উত্তম-সুচিত্রার” সাগরিকা সিনেমার গান গাইতাছেন, গায়ক শ্যামল মিত্রের ভূত চাপছেনি?”

“র্ধূ বুরবক, ঘাড়ে ভূত চাপবে কেন, সত্যিকারের এক রূপকথার দেশ দেখে এলাম। ফাগুন যেথা হয় না কভু শেষ...”

“থামেন ভাই থামেন, আবার স্বপ্নে দেখা রাজকন্যার গল্প ফাঁইন্দেন না!”

“আরে বিশ্বাস কর, এটা স্বপ্নেদেখা না, এক দম জলজ্যান্ত বাস্তব, সে এক রূপকথারই দেশ...”

“হেঃ হেঃ দুই হাজার পঁচিশ সালে রূপকথারই দেশ...মিয়া ভাং, গাঁজা, আফিম, ফেন্সিডাইল, এল.এস.ডি, মারিজুয়ানা, ভদকা, হুইস্কি সব মিলায়া ককটেল বানায়া খইলেও কুনো হালায় রূপকথারই দেশের কথা বিশ্বাস করবো না।”

“আরে তোর বিশ্বাসের অবিশ্বাসের কোনো বেইল নেইরে, বিশ্বাস কর সত্যিই সে এক রূপকথারই দেশ...”

“হ্যাৎ মিয়া পৃথিবীতে এখন রূপকথার দেশ আছেনি?”

“আরে ভাই রাখ তোর পৃথিবী, এই রূপকথার দেশ তোর বাংলাদেশের মাঝেই অবস্থিত।”

“কন কী, আমাগো বাংলাদেশের মাঝে রূপকথারই দেশ! অবশ্য সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশ, হোইতেও পারে বাংলাদেশের মাঝেই রইছে রূপকথার এক দেশ!”

“ হোইতেও পারে না, এটাই বাস্তব, বাংলাদেশেই রয়েছে এক রূপকথারই দেশ...”

“ভাইরে ভাই, ভাই না ভালা, তয় আপনের এই রূপকথারই দেশ বাংলাদেশের কোন গ্রামে বাস করের...”

“ আরে ব্যাটা, বহুবছর পূর্বে আরব ব্যবসায়িরা বলতেন, শাটগাম মানে সপ্তনদীর গ্রাম, আর চট্টেশ্বরী দেবীর নামানুসারে পর্তুগীজরা বলতো চাটগুন আর বর্তমানে সেটা হচ্ছে আমাদের চট্টগ্রাম।”

“বলেন কী মিয়া ভাই, আমরার চট্টগ্রামেনি আপনের রূপকথার দেশ?”

“অয় অয়, কেনো নয়। জানিস আমার এই রূপকথার দেশে শুধুমাত্র এক রাত স্বপ্ন দেখতে খরচ হয় বাংলাদেশের টাকায় ৯০,০০০/-(নব্বই হাজার টাকা) টাকা।”

“আন্নে কিয়াকন, এক রাইতের এক স্বপ্ন দেখার খরচ টা. ৯০,০০০/-(নব্বই হাজার) ট্যাকা! আর আমাগো পিরাইমারি এমপিওভুক্ত মাস্টারেরা মাসিক পাঁচ’শ টাকা ঘরভাড়াদি দিন কাটার! ঈশ্বরের লীলাখেলা বুজা ভার।”

“আরে ব্যাটা এখানে তোর ঈশ্বরের কুনোই হাত নেই, আছে শুধু অফুরন্ত ফাল্গুন, এই রূপকথার দেশে প্রবেশের সাথে সাথে তুই পাবি বঙ্গোপসাগরের নীল জলরাশির নিলীমা মিশ্রিত নীল রঙের ফ্রি মকটেল, যা পান করেই প্রশান্ত মহাসাগরের প্রশান্তিতে ডুবে যাবি।”

“ তারপর...”

“ তারপর, তার আর পর নেই, নেই কোনো ঠিকানা, এবার সন্মুখে তোর দাঁড়িয়ে আছে উদ্ভিন্ন যৌবনা এক আদিবাসী ললনা...”

“উহ্ রে, মরে যাই সখী তোর অমরা ফুলের গন্ধে! কন কন রূপকথার দেশের কিচ্ছা কন...”

“এবার, এবার এলো সেই মহেন্দ্রক্ষণ, ব্রেকফাস্ট বা নাস্তা, ওরে বাব্বারে বাব্বা, কিসের কেশের,পঞ্চ-ব্যাঞ্জন, তুই পাবি দেড়’শ পদের খাবার, কী নেই সেখানে, ড্রাগন ফ্রুট জুস, গোয়াভা জুস, পিওর হানি ফ্রম দি কুইন বী, লটস অব ব্যানানা, ফাইভ টাইপস অব এগ এ্যান্ড বলস, আই মিন মিট বলস, ফ্রেঞ্চটোস্ট, সব মেনু বলতে গেলে আবু জাফর শামসুদ্দিনের পদ্মা-মেঘনা-যমুনা উপন্যাসের চেয়েও বড় হয়ে যাবে।”

“তায়লে এসএমএস মানে শর্ট মেসেজ সার্ভিসের মতুন শর্টকাটে কয়া ফ্যালান।”

“তারপর রয়েছে খিচুড়ী, পোলাও, কিমা, মুরগী ভুনা, পারাটা, নান...”

“এ্যারাম, এইডা কী কন! ব্রেকফাস্ট মানে নাস্তায় খিচুড়ি, পোলাও, কিমা, মুরগী ভুনা... এগুলাতো দুপুরের বা রাইতের খাওন!”

“কিন্তু কী করবি বল? পাবলিক ডিমান্ড, পানিওয়ালির পোলা এখন মস্ত অফিসার, ঘুষের চোটে বাবুর এখন টাকা বিস্তার।”

“তো এই কুটি ট্যাকার পোলা নাস্তায় খিচুড়ী খাইবো!”

“কেনো নয়? পানিওয়ালির পোলা, ভ্যান চালকের পোলা, কামের বেটি রেহিমার পোলার টাকা হয়েছে কিন্তু রুচি তো বদলায়নি। ওর জন্ম থেকে সাতাশ বছরের সকালের নাস্তা, পান্তা ভাত, মরিচ, পিঁয়াজ, চ্যাপা শুটকি আর মাঝে মাঝে আটাগুলে খামির বানিয়ে গুড় দিয়ে খাওয়া। বুঝেছিস না, টাকা যতোই হোক রুচি তো পাল্টায়নি। বড় অফিসার হয়েছে বলে কি রাতারাতি ওর ডিএনএ চেঞ্জ হবে! ও কি বিটোভেন শুনবে? ও শুনবে মমতাজের ফাইট্টা যায় বুকটা ফাইট্টা যায়। তাই ওর জন্য নাস্তায়, খিচুড়ি, পোলাও, কিমা, মুরগী ভুনা, বেগুন ভর্তা, আলু র্ভতা... ”

“বুচছি ভাইডি বুচছি, এই বৌ’য়ের ছোট ভায়ের জ্বালায় সারা বাংলাদেশ জ্বলতাছে।”

“আরে জ্বলুনির দেখেছিস কি? এই রূপকথার দেশের ঈশ্বর বন্দনায় প্রার্থনার জন্য যে পট্যবস্ত্র দেয়া হয় সেটা তুই ভুলে নিয়ে এলে টা. ১২,০০০/-(বার হাজার) টাকা, জরিমানা!”

“তায়লে পাঁচ হাজার ট্যাকার বালিশ কিনলে দুষ কি?”

“আবার তুই যদি রূপকথার দেশ থেকে বেরুতে দশ মিনিট দেরি করেছিস তাহলে টা. ৯,০০০/-(নয় হাজার) টাকা ফাইন। কিন্তু যদি দশ মিনিট আগে বের হস তাহলে কোনোই পুরষ্কার নেই। আবার তুই চাইলে একান্তে নিভৃতে রাত দুই’টা পর্যন্ত নাসিরজ্জার ডিভানে শুয়ে সাগরের কলতান শুনতে পারবি।”

“তো নাসিরজ্জার কাছ থেকে নাকি মাসে টা. ৩০,০০০/-(তিরিশ হাজার) টাকার চান্দা নেন। আবার রূপকথার দেশের বোর্ডারদের এক ঘণ্টার ফ্রি কুপন দেন, এদিকে বোর্ডার ছাড়া সাধারণ কেউ নাসিরজ্জার ডিভানে বসতে পারবে না! তাহলে নাসিরজ্জার ব্যবসা চলবে কি করে!”

“সেটা নাসিরজ্জা বুঝবে, তোর জ্বলে ক্যেনো?”

“না বলছিলাম একটা বিবেক আছে না!”

“বিবেক নেই কি বলিস! এই যে পাকিস্তানের ফাস্ট বোলার আকিব জাবেদের মিতা জনাব আকিব বোর্ডারকে কক্সবাজারের ফ্লাইট ধরাবার জন্য শর্টকাটে সরু রাস্তা দিয়ে শাটল কোস্টারটা নিয়ে জায়গায় জায়গায় লাফ দিয়ে কোস্টার থেকে নেমে নেমে ঠিক সময়মতো প্যাসেঞ্জারকে ফ্লাইট ধরিয়ে দিলো এগুলো তুই দেখবি না!”

“কিন্তু শুনলাম শাটল কোস্টার ছাড়ার আগে এক বোর্ডার সিটের জন্য নাকি বস্তিবাসীর মতো ঝগড়া করলো! ফলে কোস্টার ছাড়তে দশ মিনিট লেট।”

“চেক আউট দশমিনিট দেরি হলে টা. ৯,০০০/-(নয় হাজার) টাকা ফাইন, তয় কোষ্টার ছাড়তে দশ মিনিট ডিলে হইলে প্যাসেঞ্জারকে ট্যাকা দিবেন না ক্যান?”

“থাক এনিয়ে কথা বাড়াস না, সেদিন ওদের ড্রাইভারটা রাস্তার ধারের এক পথচারীর মাথায় রেয়ারভিউ মিরারের ধাক্কায় মাটিতে ফেলে দেড় হাজার টাকায় দফা রফা। এসব ছাড়, তুই পারলে একবার ওখানে যা।”

“তো আপনার এই রূপকথার দেশের নাম কী?”

“নাম যতদূর শুনেছি, শাখাওয়াত বলছিলো, বর্তমানে হাইয়েস্ট প্রফিট আর্নার, রিস্ট ওয়াচ, বার্ড ওয়াচ, নাকি সি ওয়াচ, মনে হয় ওয়াচ ডগ, না না ঠিক মনে পড়ছে না।”

“ঠিক আছে মিয়া ভাই, চিন্তা কোইরেন না, আমি গুগুলে সার্চ দিয়া দ্যেইখ্যা লমুনে।”

“ঠিক আছে তুই মেরিনের কাছ থেকে রুবেল বা রাসেলের সেল ফোন নাম্বার নিয়ে, ক্যামেরা ম্যানের, সাথে যোগাযোগ করে প্রকৃত নামটা জেনে নিস।”

“ওকে আসল নামটা জাইন্না তারপর দ্যেইক্ষা আমুনে, যেখানে বাঙালি টাকার অভাবে, ঠিকমতো খাওন, লেখাপড়া, চিকিৎসা পায় না সেখানে এক রাইতের স্বপ্ন দেখার খরচ মানে এক রাইতের রুম ভাড়া টা. ৯০,০০০/-(নব্বই হাজার) ট্যাকা! সেই রূপকথার দেশে, ফাগুন কখনো শেষ হয় না...এক এক বেলায় খাওন জুটে দেড়’শ পদের... ই...য়ে... চল যাই ড্রিম প্রজেক্ট চট্টগ্রামে...!”

[লেখক: চলচ্চিত্রকার]

খাদ্য অপচয় : ক্ষুধার্ত পৃথিবীর এক নিঃশব্দ ট্র্যাজেডি

টেকসই বাংলাদেশ গঠনে পরিবেশ সংস্কার কেন অপরিহার্য

উপকূলের খাদ্যসংকট নিয়ে ভাবছেন কি নীতিনির্ধারকেরা?

মানসিক স্বাস্থ্য: মানবাধিকারের নতুন চ্যালেঞ্জ

ঢাকার যানজট ও বিকেন্দ্রীকরণ

নির্বাচনী মাঠে জামায়াতী হেকমত

শিক্ষা ব্যবস্থায় গভীর বৈষম্য ও জাতির অগ্রযাত্রাধ

উপমহাদেশে সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন, বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ

এইচএসসি ফল: সংখ্যার খেল না কি শিক্ষার বাস্তব চিত্র?

বিনা ভোট, নিশি ভোট, ডামি ভোটের পরে এবার নাকি গণভোট!

কমরেড ইলা মিত্রের শততম জন্মজয়ন্তী

কত মৃত্যু হলে জাগবে বিবেক?

বৈষম্যের বিবিধ মুখ

মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় জরুরি আইনি সহায়তা

গাজা : এখন শান্তি রক্ষা করবে কে?

দোসর, বাই ডিফল্ট!

জমি কেনা দাগে দাগে কিন্তু ভোগদখল একদাগে

রাষ্ট্র কি শুধু শিক্ষকদের বেলায় এসে দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে?

শতরঞ্জ কি খিলাড়ী

শিক্ষক থাকে রাজপথে, আর পুলিশ ছাড়ে থানা

উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা : স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবিষ্যৎ কী?

ছবি

শ্লীলতা, অশ্লীলতার রাজনৈতিক সংস্কৃতি

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: অবক্ষয়ের চোরাবালিতে আলোর দিশারী

অটোমেশন ও দেশের যুব কর্মসংস্থানের ভবিষ্যৎ

দুর্যোগে ভয় নয়, প্রস্তুতিই শক্তি

বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন

ছবি

‘আল্লাহ তুই দেহিস’: এ কোন ঘৃণার আগুন, ছড়িয়ে গেল সবখানে!

চেকের মামলায় আসামী যেসব ডিফেন্স নিয়ে খালাস পেতে পারেন

খেলনাশিল্প: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

ছবি

প্রান্তিক মানুষের হৃদয়ে ফিরে আসা কালো মেঘ

গীর্জায় হামলার নেপথ্যে কী?

সংঘের শতবর্ষের রাজনৈতিক তাৎপর্য

দুর্নীতি আর চাঁদাবাজি রাজনৈতিক-সংস্কৃতির অংশ

বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস

বাংলার সংস্কৃতি : উৎস, বিবর্তন ও বর্তমান সমাজ-মনন

রম্যগদ্য: শিক্ষা সহজ, বিদ্যা কঠিন

tab

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

সে এক রূপকথারই দেশ

জাঁ-নেসার ওসমান

বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

“সে এক রূপকথারই দেশ/ ফাগুন যেথা হয় না কভু শেষ/ আনারকলি পাপড়ি ঝরায়/ সেথায় পথের ধারে... দেখে এলাম তারে...”

“কী মিয়া ভাই, বেইন্না ফজরত “উত্তম-সুচিত্রার” সাগরিকা সিনেমার গান গাইতাছেন, গায়ক শ্যামল মিত্রের ভূত চাপছেনি?”

“র্ধূ বুরবক, ঘাড়ে ভূত চাপবে কেন, সত্যিকারের এক রূপকথার দেশ দেখে এলাম। ফাগুন যেথা হয় না কভু শেষ...”

“থামেন ভাই থামেন, আবার স্বপ্নে দেখা রাজকন্যার গল্প ফাঁইন্দেন না!”

“আরে বিশ্বাস কর, এটা স্বপ্নেদেখা না, এক দম জলজ্যান্ত বাস্তব, সে এক রূপকথারই দেশ...”

“হেঃ হেঃ দুই হাজার পঁচিশ সালে রূপকথারই দেশ...মিয়া ভাং, গাঁজা, আফিম, ফেন্সিডাইল, এল.এস.ডি, মারিজুয়ানা, ভদকা, হুইস্কি সব মিলায়া ককটেল বানায়া খইলেও কুনো হালায় রূপকথারই দেশের কথা বিশ্বাস করবো না।”

“আরে তোর বিশ্বাসের অবিশ্বাসের কোনো বেইল নেইরে, বিশ্বাস কর সত্যিই সে এক রূপকথারই দেশ...”

“হ্যাৎ মিয়া পৃথিবীতে এখন রূপকথার দেশ আছেনি?”

“আরে ভাই রাখ তোর পৃথিবী, এই রূপকথার দেশ তোর বাংলাদেশের মাঝেই অবস্থিত।”

“কন কী, আমাগো বাংলাদেশের মাঝে রূপকথারই দেশ! অবশ্য সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশ, হোইতেও পারে বাংলাদেশের মাঝেই রইছে রূপকথার এক দেশ!”

“ হোইতেও পারে না, এটাই বাস্তব, বাংলাদেশেই রয়েছে এক রূপকথারই দেশ...”

“ভাইরে ভাই, ভাই না ভালা, তয় আপনের এই রূপকথারই দেশ বাংলাদেশের কোন গ্রামে বাস করের...”

“ আরে ব্যাটা, বহুবছর পূর্বে আরব ব্যবসায়িরা বলতেন, শাটগাম মানে সপ্তনদীর গ্রাম, আর চট্টেশ্বরী দেবীর নামানুসারে পর্তুগীজরা বলতো চাটগুন আর বর্তমানে সেটা হচ্ছে আমাদের চট্টগ্রাম।”

“বলেন কী মিয়া ভাই, আমরার চট্টগ্রামেনি আপনের রূপকথার দেশ?”

“অয় অয়, কেনো নয়। জানিস আমার এই রূপকথার দেশে শুধুমাত্র এক রাত স্বপ্ন দেখতে খরচ হয় বাংলাদেশের টাকায় ৯০,০০০/-(নব্বই হাজার টাকা) টাকা।”

“আন্নে কিয়াকন, এক রাইতের এক স্বপ্ন দেখার খরচ টা. ৯০,০০০/-(নব্বই হাজার) ট্যাকা! আর আমাগো পিরাইমারি এমপিওভুক্ত মাস্টারেরা মাসিক পাঁচ’শ টাকা ঘরভাড়াদি দিন কাটার! ঈশ্বরের লীলাখেলা বুজা ভার।”

“আরে ব্যাটা এখানে তোর ঈশ্বরের কুনোই হাত নেই, আছে শুধু অফুরন্ত ফাল্গুন, এই রূপকথার দেশে প্রবেশের সাথে সাথে তুই পাবি বঙ্গোপসাগরের নীল জলরাশির নিলীমা মিশ্রিত নীল রঙের ফ্রি মকটেল, যা পান করেই প্রশান্ত মহাসাগরের প্রশান্তিতে ডুবে যাবি।”

“ তারপর...”

“ তারপর, তার আর পর নেই, নেই কোনো ঠিকানা, এবার সন্মুখে তোর দাঁড়িয়ে আছে উদ্ভিন্ন যৌবনা এক আদিবাসী ললনা...”

“উহ্ রে, মরে যাই সখী তোর অমরা ফুলের গন্ধে! কন কন রূপকথার দেশের কিচ্ছা কন...”

“এবার, এবার এলো সেই মহেন্দ্রক্ষণ, ব্রেকফাস্ট বা নাস্তা, ওরে বাব্বারে বাব্বা, কিসের কেশের,পঞ্চ-ব্যাঞ্জন, তুই পাবি দেড়’শ পদের খাবার, কী নেই সেখানে, ড্রাগন ফ্রুট জুস, গোয়াভা জুস, পিওর হানি ফ্রম দি কুইন বী, লটস অব ব্যানানা, ফাইভ টাইপস অব এগ এ্যান্ড বলস, আই মিন মিট বলস, ফ্রেঞ্চটোস্ট, সব মেনু বলতে গেলে আবু জাফর শামসুদ্দিনের পদ্মা-মেঘনা-যমুনা উপন্যাসের চেয়েও বড় হয়ে যাবে।”

“তায়লে এসএমএস মানে শর্ট মেসেজ সার্ভিসের মতুন শর্টকাটে কয়া ফ্যালান।”

“তারপর রয়েছে খিচুড়ী, পোলাও, কিমা, মুরগী ভুনা, পারাটা, নান...”

“এ্যারাম, এইডা কী কন! ব্রেকফাস্ট মানে নাস্তায় খিচুড়ি, পোলাও, কিমা, মুরগী ভুনা... এগুলাতো দুপুরের বা রাইতের খাওন!”

“কিন্তু কী করবি বল? পাবলিক ডিমান্ড, পানিওয়ালির পোলা এখন মস্ত অফিসার, ঘুষের চোটে বাবুর এখন টাকা বিস্তার।”

“তো এই কুটি ট্যাকার পোলা নাস্তায় খিচুড়ী খাইবো!”

“কেনো নয়? পানিওয়ালির পোলা, ভ্যান চালকের পোলা, কামের বেটি রেহিমার পোলার টাকা হয়েছে কিন্তু রুচি তো বদলায়নি। ওর জন্ম থেকে সাতাশ বছরের সকালের নাস্তা, পান্তা ভাত, মরিচ, পিঁয়াজ, চ্যাপা শুটকি আর মাঝে মাঝে আটাগুলে খামির বানিয়ে গুড় দিয়ে খাওয়া। বুঝেছিস না, টাকা যতোই হোক রুচি তো পাল্টায়নি। বড় অফিসার হয়েছে বলে কি রাতারাতি ওর ডিএনএ চেঞ্জ হবে! ও কি বিটোভেন শুনবে? ও শুনবে মমতাজের ফাইট্টা যায় বুকটা ফাইট্টা যায়। তাই ওর জন্য নাস্তায়, খিচুড়ি, পোলাও, কিমা, মুরগী ভুনা, বেগুন ভর্তা, আলু র্ভতা... ”

“বুচছি ভাইডি বুচছি, এই বৌ’য়ের ছোট ভায়ের জ্বালায় সারা বাংলাদেশ জ্বলতাছে।”

“আরে জ্বলুনির দেখেছিস কি? এই রূপকথার দেশের ঈশ্বর বন্দনায় প্রার্থনার জন্য যে পট্যবস্ত্র দেয়া হয় সেটা তুই ভুলে নিয়ে এলে টা. ১২,০০০/-(বার হাজার) টাকা, জরিমানা!”

“তায়লে পাঁচ হাজার ট্যাকার বালিশ কিনলে দুষ কি?”

“আবার তুই যদি রূপকথার দেশ থেকে বেরুতে দশ মিনিট দেরি করেছিস তাহলে টা. ৯,০০০/-(নয় হাজার) টাকা ফাইন। কিন্তু যদি দশ মিনিট আগে বের হস তাহলে কোনোই পুরষ্কার নেই। আবার তুই চাইলে একান্তে নিভৃতে রাত দুই’টা পর্যন্ত নাসিরজ্জার ডিভানে শুয়ে সাগরের কলতান শুনতে পারবি।”

“তো নাসিরজ্জার কাছ থেকে নাকি মাসে টা. ৩০,০০০/-(তিরিশ হাজার) টাকার চান্দা নেন। আবার রূপকথার দেশের বোর্ডারদের এক ঘণ্টার ফ্রি কুপন দেন, এদিকে বোর্ডার ছাড়া সাধারণ কেউ নাসিরজ্জার ডিভানে বসতে পারবে না! তাহলে নাসিরজ্জার ব্যবসা চলবে কি করে!”

“সেটা নাসিরজ্জা বুঝবে, তোর জ্বলে ক্যেনো?”

“না বলছিলাম একটা বিবেক আছে না!”

“বিবেক নেই কি বলিস! এই যে পাকিস্তানের ফাস্ট বোলার আকিব জাবেদের মিতা জনাব আকিব বোর্ডারকে কক্সবাজারের ফ্লাইট ধরাবার জন্য শর্টকাটে সরু রাস্তা দিয়ে শাটল কোস্টারটা নিয়ে জায়গায় জায়গায় লাফ দিয়ে কোস্টার থেকে নেমে নেমে ঠিক সময়মতো প্যাসেঞ্জারকে ফ্লাইট ধরিয়ে দিলো এগুলো তুই দেখবি না!”

“কিন্তু শুনলাম শাটল কোস্টার ছাড়ার আগে এক বোর্ডার সিটের জন্য নাকি বস্তিবাসীর মতো ঝগড়া করলো! ফলে কোস্টার ছাড়তে দশ মিনিট লেট।”

“চেক আউট দশমিনিট দেরি হলে টা. ৯,০০০/-(নয় হাজার) টাকা ফাইন, তয় কোষ্টার ছাড়তে দশ মিনিট ডিলে হইলে প্যাসেঞ্জারকে ট্যাকা দিবেন না ক্যান?”

“থাক এনিয়ে কথা বাড়াস না, সেদিন ওদের ড্রাইভারটা রাস্তার ধারের এক পথচারীর মাথায় রেয়ারভিউ মিরারের ধাক্কায় মাটিতে ফেলে দেড় হাজার টাকায় দফা রফা। এসব ছাড়, তুই পারলে একবার ওখানে যা।”

“তো আপনার এই রূপকথার দেশের নাম কী?”

“নাম যতদূর শুনেছি, শাখাওয়াত বলছিলো, বর্তমানে হাইয়েস্ট প্রফিট আর্নার, রিস্ট ওয়াচ, বার্ড ওয়াচ, নাকি সি ওয়াচ, মনে হয় ওয়াচ ডগ, না না ঠিক মনে পড়ছে না।”

“ঠিক আছে মিয়া ভাই, চিন্তা কোইরেন না, আমি গুগুলে সার্চ দিয়া দ্যেইখ্যা লমুনে।”

“ঠিক আছে তুই মেরিনের কাছ থেকে রুবেল বা রাসেলের সেল ফোন নাম্বার নিয়ে, ক্যামেরা ম্যানের, সাথে যোগাযোগ করে প্রকৃত নামটা জেনে নিস।”

“ওকে আসল নামটা জাইন্না তারপর দ্যেইক্ষা আমুনে, যেখানে বাঙালি টাকার অভাবে, ঠিকমতো খাওন, লেখাপড়া, চিকিৎসা পায় না সেখানে এক রাইতের স্বপ্ন দেখার খরচ মানে এক রাইতের রুম ভাড়া টা. ৯০,০০০/-(নব্বই হাজার) ট্যাকা! সেই রূপকথার দেশে, ফাগুন কখনো শেষ হয় না...এক এক বেলায় খাওন জুটে দেড়’শ পদের... ই...য়ে... চল যাই ড্রিম প্রজেক্ট চট্টগ্রামে...!”

[লেখক: চলচ্চিত্রকার]

back to top