জাঁ-নেসার ওসমান
“হেঃ হেঃ আন্নেরে কি হাগলা ছাগলে ফালদি পাললা দিছেনি? হাগলের লান কন “দুনিয়ার বাঙালি এক হও?”
“খারাপ কী বললাম! দুনিয়ার বাঙালি এক হলে পৃথিবীতে একটা কতবড় শক্তিশালী জাতি জন্মাবে জানিস? তখন তোর বাংলাদেশের ভিসা পাবার জন্য বহু দেশের পাবলিক পচিশ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ করবে। তোর দেশে চাকরি পাবার জন্য নৌকায়... নৌকা না, নৌকা না, কেনটাকি ভেলায় চড়ে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ভোলা আর বোরহানুদ্দিনে এসে ভিড় করবে!”
“আরে মিয়া ভিসা পচিশ লক্ষ বা পঞ্চাশ লক্ষ হোউক, কোনো ফারাক পড়বো না। দুনিয়ার বাঙালি কক্ষণই এক হোইবো না। বরং দুনিয়ার কাঙ্গালিরা এক হোইবো তবুও দুনিয়ার বাঙালি এক হোইবো না!”
“ক্যানো নয়! উনিশ’শ একাত্তর সালে তোরা কী বললি, বর্বর পাকিস্তানিরা বাঙালির উপর অত্যাচার করছে, বৈষম্য করছে, তাই তোর মাতৃভাষায় হ্যেগোরো খ্যেদায়া দেশ স্বাধীন করেন। তখন সব বাঙালি এক হয়ে পাকিস্তানি তাড়ালি আর পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ বলে একটা নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হলো যার মেয়েরা এক’শ চল্লিশ কোটির দেশ ভারতকে সার্ক ফুটবলে হারিয়ে সারা বিশ্বকে দেখিয়ে দিলো যে, দ্যেখ ব্যাটা বাংলাদেশের তেজ দ্যেখ।”
“আরে মিয়া ভাই বাঙালি এক হোইলে স্বাধীন দেশ পাওয়া যায়, পানিওয়ালীর পোলা বাঙালি অখন প্রাইভেট এয়ার লাইনসের মালিক চিন্তা করতে পারেন! স্বাধীন না হোইলে বাঙালি হোইতো প্রাইভেট এয়ারলাইনসের ক্লিনার, মাইনে, মাইনষের গোবর পরিষ্কার করতো।”
“আরে আমিতো সেই জন্যই বলছি, উদাত্ত আহ্বান করছি যে, দুনিয়ার বাঙালি এক হও, এক হও।”
“আপনের আহ্বান তো খুবই ভালো, কিন্তু বাঙালিতো মানুষই হয় নাই, হ্যায় কেমনে এক হোইবো! জানেন তো, কথাশিল্পী শওকত ওসমান বলছিলেন, “এ-দেশে মানুষ হওয়ার আগে, হিন্দু, খৃষ্টান, বৌদ্ধ হওয়া লাগে।” হ্যায় কোইতে চায় যে, আমরা হালায় মানুষই হোইলাম না, তয় আমরা বৌদ্ধ ধর্মের অহিংসার বাণী, যীশু খৃষ্টের এক গালে চড় মারলে, আর একগাল পাতিয়া দাও, হিন্দুগো আর্য়ুবেদ-শাকাহারি বুজমু ক্যেমনে। জনতু জানোয়ার, বাচ্চা কুত্তা, বাচ্চা শুয়োর হ্যারা কি ধর্মের, বাণী বুঝবো কন? কন?”
“না না, জন্তু জানোয়ার কোনোদিনও বৌদ্ধ-ক্রীশ্চান ধর্ম কেনো, জন্তু-জানোয়ার পৃথিবীর চার’শতাধিক ধর্মের কোনোটারই অনুশাসন বুঝতে বা উপলব্ধি করতে পারবে না!”
“তো! আপনে দেখছেন এক পাড়ার কুত্তা আর এক পাড়ায় গেলে, ওই পাড়ার কুত্তারা ক্যেমনে ঘেউ ঘেউ, ভেউ ভেউ, কেঁউ কেঁউ কইরা ব্যেবাগতে মিল্লা কামুড় দিয়া ধরে...”
“হ্যাঁ হ্যাঁ, দেখেছি এক পাড়ার সারমেয় তার এলাকার বাইরে নতুন কোনো স্থানে এলে, অন্য সকল স্থানীয় মনুষ্যেতর, ইতরপ্রাণী, চতুষ্পদ সারমেয়, নেড়ি কুকুর, খেঁকি কুত্তি-ভষক- সকলে হৈ হৈ রৈ রৈ করিয়া ওই কুকুরকে ক্যানাইন টুথ মানে কুত্তা-দাঁত দিয়ে আক্রমণ করে।”
“জ্বী, এবার বুজেলিন, পৃরথীবিতে হালার কুত্তাগুলাই এক হোইতে পারে না, আর আপনে কন দুনিয়ার বাঙালি এক হোইবো! গাঞ্জাখোর নি কোনো!”
“আরে ভাই ওরা তো কুকুর, সারমেয়, জন্তু-জানোয়ার। ওরাতো মানুষ না! ওরা কী করে এক হবে! তুই দেখিস না মা-মাছ নিজেই নিজের বাচ্চাকে খেয়ে ফ্যেলে! এ’সব প্রাণীকুলের বিষয়। এরা সৃষ্টির সেরা জীব না, এরা জন্তু-জানোয়ার।”
“জ্বী, জ্বী, আপনের দেশেও পরকীয়া দেইখালচ্চে তাই মা’ও প্রেমিক মিল্লা বাচ্চারে খুন! তো জন্তু-জানোয়ার আর আন্নের খালার মইধ্যে তফাৎ কী দেখলেন?”
“তাইতো রে, বিষয়টা আমাকেও ভাবাচ্ছে আমরা যদি সত্যিকারের মানুষের মতো ব্যবহার না করি, তাহলে আমাদের মাঝে আর জন্তু-জানোয়ারের মাঝে তফাৎ কী রইলো! কুকুররা যেমন অন্য পাড়ার কুকুর সহ্য করতে পারে না! আমরাও তেমনি অন্য রাজনৈতিক দলের মতালম্বীদের দেখতে পারি না! বুলডোজার নিয়ে পিছে পিছে দৌড়াই...”
“ভাইনা ভালা, আপনে ওই সব বাঙালি এক করার চেষ্টা না কোইরা, দুনিয়ার সব কাঙালি এক করনের চেষ্টা করেন। তায়লে দেখবেন বগুড়ার আকবরিয়ার মতুন ব্যেবাগ ফইন্নির পোলা একলগে মাঙনা খাবার খাইতে আইবো, আর সব এক হয়া যাইবো!”
“ঠিক আছে তাহলে তোর কথাই থাক। আমার স্লোগান চেইঞ্জ, দুনিয়ার বাঙালি...না না দুনিয়ার কাঙালি এক হও এক হও... ”
“ঘুরু থুমি আগ্গাও, আমরা আছি তুমার পিছে হাঁটুম শুধু মিছে মিছে... হেঁ হেঁ দুনিয়ার বাঙালি, না না দুনিয়ার কাঙালি এক হও এক হও... ”
“কিন্তু দুনিয়ার বঙালি এক হলে খুব ভালো হতো রে...”
[লেখক: চলচ্চিত্রকার]
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
জাঁ-নেসার ওসমান
বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫
“হেঃ হেঃ আন্নেরে কি হাগলা ছাগলে ফালদি পাললা দিছেনি? হাগলের লান কন “দুনিয়ার বাঙালি এক হও?”
“খারাপ কী বললাম! দুনিয়ার বাঙালি এক হলে পৃথিবীতে একটা কতবড় শক্তিশালী জাতি জন্মাবে জানিস? তখন তোর বাংলাদেশের ভিসা পাবার জন্য বহু দেশের পাবলিক পচিশ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ করবে। তোর দেশে চাকরি পাবার জন্য নৌকায়... নৌকা না, নৌকা না, কেনটাকি ভেলায় চড়ে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ভোলা আর বোরহানুদ্দিনে এসে ভিড় করবে!”
“আরে মিয়া ভিসা পচিশ লক্ষ বা পঞ্চাশ লক্ষ হোউক, কোনো ফারাক পড়বো না। দুনিয়ার বাঙালি কক্ষণই এক হোইবো না। বরং দুনিয়ার কাঙ্গালিরা এক হোইবো তবুও দুনিয়ার বাঙালি এক হোইবো না!”
“ক্যানো নয়! উনিশ’শ একাত্তর সালে তোরা কী বললি, বর্বর পাকিস্তানিরা বাঙালির উপর অত্যাচার করছে, বৈষম্য করছে, তাই তোর মাতৃভাষায় হ্যেগোরো খ্যেদায়া দেশ স্বাধীন করেন। তখন সব বাঙালি এক হয়ে পাকিস্তানি তাড়ালি আর পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ বলে একটা নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হলো যার মেয়েরা এক’শ চল্লিশ কোটির দেশ ভারতকে সার্ক ফুটবলে হারিয়ে সারা বিশ্বকে দেখিয়ে দিলো যে, দ্যেখ ব্যাটা বাংলাদেশের তেজ দ্যেখ।”
“আরে মিয়া ভাই বাঙালি এক হোইলে স্বাধীন দেশ পাওয়া যায়, পানিওয়ালীর পোলা বাঙালি অখন প্রাইভেট এয়ার লাইনসের মালিক চিন্তা করতে পারেন! স্বাধীন না হোইলে বাঙালি হোইতো প্রাইভেট এয়ারলাইনসের ক্লিনার, মাইনে, মাইনষের গোবর পরিষ্কার করতো।”
“আরে আমিতো সেই জন্যই বলছি, উদাত্ত আহ্বান করছি যে, দুনিয়ার বাঙালি এক হও, এক হও।”
“আপনের আহ্বান তো খুবই ভালো, কিন্তু বাঙালিতো মানুষই হয় নাই, হ্যায় কেমনে এক হোইবো! জানেন তো, কথাশিল্পী শওকত ওসমান বলছিলেন, “এ-দেশে মানুষ হওয়ার আগে, হিন্দু, খৃষ্টান, বৌদ্ধ হওয়া লাগে।” হ্যায় কোইতে চায় যে, আমরা হালায় মানুষই হোইলাম না, তয় আমরা বৌদ্ধ ধর্মের অহিংসার বাণী, যীশু খৃষ্টের এক গালে চড় মারলে, আর একগাল পাতিয়া দাও, হিন্দুগো আর্য়ুবেদ-শাকাহারি বুজমু ক্যেমনে। জনতু জানোয়ার, বাচ্চা কুত্তা, বাচ্চা শুয়োর হ্যারা কি ধর্মের, বাণী বুঝবো কন? কন?”
“না না, জন্তু জানোয়ার কোনোদিনও বৌদ্ধ-ক্রীশ্চান ধর্ম কেনো, জন্তু-জানোয়ার পৃথিবীর চার’শতাধিক ধর্মের কোনোটারই অনুশাসন বুঝতে বা উপলব্ধি করতে পারবে না!”
“তো! আপনে দেখছেন এক পাড়ার কুত্তা আর এক পাড়ায় গেলে, ওই পাড়ার কুত্তারা ক্যেমনে ঘেউ ঘেউ, ভেউ ভেউ, কেঁউ কেঁউ কইরা ব্যেবাগতে মিল্লা কামুড় দিয়া ধরে...”
“হ্যাঁ হ্যাঁ, দেখেছি এক পাড়ার সারমেয় তার এলাকার বাইরে নতুন কোনো স্থানে এলে, অন্য সকল স্থানীয় মনুষ্যেতর, ইতরপ্রাণী, চতুষ্পদ সারমেয়, নেড়ি কুকুর, খেঁকি কুত্তি-ভষক- সকলে হৈ হৈ রৈ রৈ করিয়া ওই কুকুরকে ক্যানাইন টুথ মানে কুত্তা-দাঁত দিয়ে আক্রমণ করে।”
“জ্বী, এবার বুজেলিন, পৃরথীবিতে হালার কুত্তাগুলাই এক হোইতে পারে না, আর আপনে কন দুনিয়ার বাঙালি এক হোইবো! গাঞ্জাখোর নি কোনো!”
“আরে ভাই ওরা তো কুকুর, সারমেয়, জন্তু-জানোয়ার। ওরাতো মানুষ না! ওরা কী করে এক হবে! তুই দেখিস না মা-মাছ নিজেই নিজের বাচ্চাকে খেয়ে ফ্যেলে! এ’সব প্রাণীকুলের বিষয়। এরা সৃষ্টির সেরা জীব না, এরা জন্তু-জানোয়ার।”
“জ্বী, জ্বী, আপনের দেশেও পরকীয়া দেইখালচ্চে তাই মা’ও প্রেমিক মিল্লা বাচ্চারে খুন! তো জন্তু-জানোয়ার আর আন্নের খালার মইধ্যে তফাৎ কী দেখলেন?”
“তাইতো রে, বিষয়টা আমাকেও ভাবাচ্ছে আমরা যদি সত্যিকারের মানুষের মতো ব্যবহার না করি, তাহলে আমাদের মাঝে আর জন্তু-জানোয়ারের মাঝে তফাৎ কী রইলো! কুকুররা যেমন অন্য পাড়ার কুকুর সহ্য করতে পারে না! আমরাও তেমনি অন্য রাজনৈতিক দলের মতালম্বীদের দেখতে পারি না! বুলডোজার নিয়ে পিছে পিছে দৌড়াই...”
“ভাইনা ভালা, আপনে ওই সব বাঙালি এক করার চেষ্টা না কোইরা, দুনিয়ার সব কাঙালি এক করনের চেষ্টা করেন। তায়লে দেখবেন বগুড়ার আকবরিয়ার মতুন ব্যেবাগ ফইন্নির পোলা একলগে মাঙনা খাবার খাইতে আইবো, আর সব এক হয়া যাইবো!”
“ঠিক আছে তাহলে তোর কথাই থাক। আমার স্লোগান চেইঞ্জ, দুনিয়ার বাঙালি...না না দুনিয়ার কাঙালি এক হও এক হও... ”
“ঘুরু থুমি আগ্গাও, আমরা আছি তুমার পিছে হাঁটুম শুধু মিছে মিছে... হেঁ হেঁ দুনিয়ার বাঙালি, না না দুনিয়ার কাঙালি এক হও এক হও... ”
“কিন্তু দুনিয়ার বঙালি এক হলে খুব ভালো হতো রে...”
[লেখক: চলচ্চিত্রকার]