alt

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

নবম পে স্কেল ও এর আর্থসামাজিক প্রভাব

ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ

: রোববার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সরকারি কর্মচারীরা নতুন পে-স্কেল, তথা নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।

বেতন কাঠামোর পরিবর্তন সাধারণত মূল্যস্ফীতি, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, দক্ষ জনবল ধরে রাখা এবং প্রশাসনিক সেবা উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে একীভূত হয়ে আসে

তাদের মূল প্রস্তাবনায় বর্তমান বেতন কাঠামোর বৈষম্য দূর করে একটি নতুন, যুগোপযোগী এবং আরও ন্যায্য বেতন কাঠামো প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে। সর্বশেষ পে-স্কেল ২০১৫ সালে কার্যকর হয়েছিল, এরপর থেকে আর নতুন কোনো পূর্ণাঙ্গ বেতন কাঠামো ঘোষণা করা হয়নি। কর্মচারীদের প্রস্তাবিত কাঠামোয় সর্বনিম্ন বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫,০০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ বেতন হবে ১,৪০,০০০ টাকা। বর্তমানে নিম্ন ও উচ্চ গ্রেডের মধ্যে বেতনের বিশাল ব্যবধান রয়েছে। এই বৈষম্য কমাতে কর্মচারীরা ১:৪ অনুপাতে একটি বেতন কাঠামো তৈরির দাবি জানিয়েছেন। বিদ্যমান গ্রেড সংখ্যা কমিয়ে মোট ১২টি গ্রেডে সীমিত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যা বেতন কাঠামোকে আরও সহজ ও যৌক্তিক করবে। জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ইনক্রিমেন্ট নিশ্চিত করতে মূল্যস্ফীতির হার অনুযায়ী বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট সমন্বয়ের দাবি জানানো হয়েছে। বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ও পরিবহন ভাতার মতো অতিরিক্ত ভাতাগুলো বর্তমান বাজারমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পুনর্বিবেচনা ও বৃদ্ধির দাবি তোলা হয়েছে। সরকারি কর্মচারীদের মতে, বর্তমান বেতন কাঠামো দিয়ে ক্রমবর্ধমান দ্রব্যমূল্যের বাজারে জীবনযাত্রার মান ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। এই কারণে কর্মচারীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে এবং তাদের কর্মোদ্দীপনা কমে যাচ্ছে। তারা বিশ্বাস করেন, নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়ন হলে এটি শুধু তাদের আর্থিক দুর্দশা কমাবে না, বরং কর্মক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং কাজের প্রতি আরও বেশি আগ্রহ তৈরি করবে। সরকারি কর্মচারীরা আশা করছেন, বর্তমান সরকার তাদের এই যৌক্তিক দাবি বিবেচনা করবে এবং প্রস্তাবিত ৯ম পে-স্কেলটি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের শুরু থেকেই কার্যকর করবে। তাদের এই দাবি এখন সরকারের উচ্চ মহলের আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।

বাংলাদেশের অর্থনীতি, সমাজ, বাজারব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রীয় প্রশাসনিক কাঠামোয় বহুমাত্রিক পরিবর্তন এনেছে, যা শুধু সরকারি কর্মচারীদের জীবনমান নয়, জাতির সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বৈষম্য কাঠামোকেও পুনর্গঠিত করছে। বেতন কাঠামোর পরিবর্তন সাধারণত মূল্যস্ফীতি, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, দক্ষ জনবল ধরে রাখা এবং প্রশাসনিক সেবা উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে একীভূত হয়ে আসে। নবম পে স্কেলও এর ব্যতিক্রম নয়; এটি মূলত সরকারি খাতে কর্মরত লাখো কর্মচারীর আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে প্রণীত হলেও এর প্রভাব দেশের বৃহত্তর সামাজিক পরিসরে বিস্তৃত। নতুন বেতন কাঠামো চালুর ফলে কর্মচারীদের বেতন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে, বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যম পর্যায়ের কর্মীরা আর্থিক সঙ্কট থেকে কিছুটা মুক্তি পাবে। তাদের দৈনন্দিন ব্যয়, সন্তানদের শিক্ষা, চিকিৎসা ব্যয় এবং বাসস্থানের উন্নয়ন এখন তুলনামূলক সহজ হবে। বেতনের এই বৃদ্ধি তাদের অর্থনৈতিক সামর্থ্য বাড়ানোর পাশাপাশি জীবনের মান উন্নয়নে সহায়তা করবে এবং সামাজিক নিরাপত্তা ও মানসিক শান্তির অনুভূতি জাগাবে, যা তাদের কাজের প্রতি মনোযোগ, সমর্পণ এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

নবম পে স্কেলের এই ইতিবাচক দিকের পাশাপাশি রয়েছে নানা আর্থসামাজিক চ্যালেঞ্জ। বেতন বৃদ্ধির কারণে একদিকে বাজারে ভোগব্যয় বাড়বে, যার ফলে সামগ্রিক অর্থনীতিতে একধরনের প্রবাহ তৈরি হবে; বাজারে চাহিদা বাড়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আসবে এবং উদ্যোক্তাদের নতুন বিনিয়োগের সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। মানুষ এখন আগের তুলনায় বেশি ব্যয় করবে, যা খুচরা ব্যবসা, গৃহনির্মাণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা খাতে নতুন উদ্দীপনা জাগাবে । এই ভোগ ব্যয়ের বৃদ্ধি অভ্যন্তরীণ উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে পারে, যদি উৎপাদন খাত সেই বাড়তি চাহিদা পূরণের সক্ষমতা অর্জন করে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, উৎপাদন খাতের সক্ষমতা তেমন বাড়বে না, বরং অনেক ব্যবসায়ী বাড়তি চাহিদার সুবিধা নিয়ে পণ্য ও সেবার দাম বাড়াবে। এর ফলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে এবং সাধারণ জনগণ বিশেষ করে নিম্ন-আয়ের মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ফলে সরকারি কর্মচারীদের বাড়তি বেতন তাদের আর্থিক স্থিতিশীলতা বাড়ালেও অধিকাংশ সাধারণ মানুষের প্রকৃত আয় কমে যাবে, যা আয়-বৈষম্যকে আরও প্রকট করে তুলবে। সরকারের রাজস্ব ব্যয়ও নবম পে স্কেলের কারণে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে। বেতন-ভাতা বাবদ সরকারের ব্যয় পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি হওয়ায় বাজেটের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে এবং বাজেট ঘাটতি বাড়বে।

এই ঘাটতি মোকাবিলায় সরকারকে অতিরিক্ত কর আরোপ, কর আদায় প্রক্রিয়া জোরদার, বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ বা উন্নয়ন ব্যয়ে কাটছাঁট করতে হতে পারে। এর ফলে উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলো ধীরগতির হতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। পাশাপাশি দেশীয় মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারকে অতিরিক্ত নীতিগত পদক্ষেপ নিতে হয়, যা আর্থিক নীতি ও মুদ্রানীতির ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।

ব্যাংকিং খাতেও নবম পে স্কেলের প্রভাব উল্লেখযোগ্য। বাড়তি বেতনের কারণে সঞ্চয় বৃদ্ধি পাবে এবং ব্যাংকের আমানত বাড়বে । এর ফলে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণে আরও সক্ষমতা পাবে, যা উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও ব্যবসা সম্প্রসারণে সহায়ক। তবে ঋণ গ্রহণের প্রবণতা বেশি হলে ব্যক্তিগত ঋণের দায় বাড়তে পারে, যা ভবিষ্যতে আর্থিক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, বিশেষ করে যখন মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং পণ্যমূল্য হঠাৎ বেড়ে যাবে। রাষ্ট্রীয় সেবা ব্যবস্থার ওপরও নবম পে স্কেলের প্রভাব রয়েছে। সরকারি কর্মচারীরা বাড়তি বেতন পাওয়ায় তারা কাজের প্রতি আরও উৎসাহী হবে বলে আশা করা হলেও বাস্তবে সবসময় এমনটা হয় না। বেতন বৃদ্ধি কর্মদক্ষতা ও সততার নিশ্চয়তা দেয় না; এজন্য প্রয়োজন প্রশাসনিক সংস্কার, জবাবদিহিতা বৃদ্ধি, সেবা মূল্যায়ন কাঠামো এবং কর্মদক্ষতা ভিত্তিক পদোন্নতির ব্যবস্থা। নবম পে স্কেল কেবল তখনই পুরোপুরি কার্যকর হবে যখন এটি দক্ষতা, জবাবদিহিতা এবং সেবার মান উন্নয়নের সঙ্গে সমন্বিত হবে।

নবম পে স্কেল বেসরকারি ও সরকারি খাতের প্রস্তাবিত বেতন কাঠামোতে নতুন ধরনের বৈষম্য তৈরি করবে । সরকারি খাতে বেতন বাড়ায় এখন অনেক দক্ষ কর্মী বেসরকারি খাতের তুলনায় সরকারি চাকরিকে অধিক আকর্ষণীয় মনে করবে। ফলস্বরূপ বেসরকারি খাতে যোগ্য কর্মী ধরে রাখা কঠিন হয়ে পরবে, বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, ব্যাংকিং, প্রযুক্তি এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানে দক্ষ জনবল সংকট দেখা দিতে পারে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কর্মীদের ধরে রাখতে বেতন বাড়ানোর চাপের মুখে পড়লেও ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে এটি বাস্তবায়ন করা কঠিন, ফলে তারা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পরবে। এর ফলে সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা কমে যেতে পারে এবং বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হতে পারে। সামাজিক কাঠামোর দিক থেকে নবম পে স্কেল মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে সম্প্রসারিত করবে, যা সামগ্রিকভাবে দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ার জন্য ইতিবাচক। একটি শক্তিশালী মধ্যবিত্ত শ্রেণি অর্থনীতির অভ্যন্তরীণ চাহিদা স্থিতিশীল রাখে, সামাজিক মূল্যবোধ রক্ষা করে এবং রাষ্ট্রীয় নীতিমালার প্রতি আস্থা তৈরি করে। তবে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির মধ্যে আয়-বৈষম্যও বাড়বে, বিশেষ করে যেসব পরিবার সরকারি সেবার বাইরের খাতে কাজ করে তারা মূল্যস্ফীতির চাপে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বেতন বাড়ায় অনেক সরকারি কর্মচারী নতুন বাসা কেনা, জমি কেনা বা বাড়ি নির্মাণের প্রবণতা দেখাবেন, যা রিয়েল এস্টেট বাজারে নতুন চাহিদা সৃষ্টি করবে, কিন্তু একই সঙ্গে জমি ও বাড়ির দাম বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষদের জন্য বাসস্থান আরও দূরহ হয়ে উঠবে। নারী কর্মসংস্থান, শিক্ষা খাত এবং স্বাস্থ্য খাতেও নবম পে স্কেলের ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। নারী সরকারি কর্মচারীদের আর্থিক স্বাবলম্বিতা বাড়ছে, তাদের পরিবারের ওপর আর্থিক প্রভাব বৃদ্ধি পাবে এবং সামাজিক অবস্থান সুদৃঢ় পাবে। শিক্ষক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বেতন বৃদ্ধি তাদের পেশার মর্যাদা বাড়িয়েছে এবং তরুণ প্রজন্মকে এসব পেশার প্রতি আকৃষ্ট করছে, যদিও এখনও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সামগ্রিকভাবে দেখা যায়, নবম পে স্কেল বাংলাদেশের আর্থসামাজিক কাঠামোয় নতুন আশার সঞ্চার করবে। এটি সরকারি কর্মচারীদের জীবনমান উন্নত করবে, বাজারে চাহিদা বাড়াবে, বিনিয়োগ উৎসাহিত করবে এবং একটি শক্তিশালী মধ্যবিত্ত শ্রেণি তৈরি করবে। তবে চ্যালেঞ্জও কম নয় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বাজেট ঘাটতি সামলানো, আয়-বৈষম্য হ্রাস করা, বেসরকারি খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা নিশ্চিত করা এবং প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি করা এখন সময়ের দাবি। সঠিক নীতি, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং সুষম অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই নবম পে স্কেলের সুফল সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হবে। এটি শুধু একটি বেতন কাঠামো নয়; এটি বাংলাদেশের সমগ্র অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থার রূপান্তরের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, যার ওপর দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের দিকনির্দেশনা নির্ভর করে। নবম পে স্কেল একটি বৃহৎ প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত। এর ইতিবাচকতা যেমন রয়েছে-কর্মচারীদের জীবনমান উন্নয়ন, কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি, মানবসম্পদ উন্নয়ন-তেমনি নেতিবাচকতাও রয়েছে-অর্থনৈতিক চাপ, সম্ভাব্য মূল্যস্ফীতি, বেসরকারি খাতের বৈষম্য। ফলে নতুন পে স্কেল বাস্তবায়নের আগে ভারসাম্যপূর্ণ পরিকল্পনা, অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ এবং ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন অত্যন্ত প্রয়োজন। একটি আদর্শ পে স্কেল শুধুমাত্র বেতন বৃদ্ধির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, কর্মচারীদের দক্ষতা, প্রশাসনিক জবাবদিহিতা এবং সাধারণ মানুষের সেবাপ্রাপ্তির যৌথ ফসল। সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে নবম পে স্কেল বাংলাদেশের সরকারি প্রশাসনকে আরও শক্তিশালী ও মানবিক করে তুলতে পারে।

(মতামত লেখকের নিজস্ব)

[লেখক: সাবেক উপ-মহাপরিচালক, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি]

মৃত্যুদণ্ড, তারপর...

জমির ভুয়া দলিল কীভাবে বাতিল করবেন?

জুলাই সনদ আদিবাসীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি

ব্যাংকের দুরবস্থা থামানো যাচ্ছে না কেন

আমন ধানে ব্রাউন প্ল্যান্টহপারের প্রাদুর্ভাব

বৈষম্য, অপচয় ও খাদ্যনিরাপত্তার সংকট

“বাঙালি আমরা, নহিতো...”

নারী নির্যাতন, মানসিক স্বাস্থ্য এবং সমাজের দায়

কাঁপছে ডলারের সিংহাসন

ত্রিশতম জলবায়ু সম্মেলন : প্রতীকী প্রদর্শনী, নাকি বৈশ্বিক জলবায়ু রাজনীতির বাঁক নেওয়ার মুহূর্ত?

অপরিণত নবজাতক : ঝুঁকি, প্রতিরোধ ও যত্নের জরুরি বাস্তবতা

বাংলাদেশী উত্তরাধিকার: প্রবাস-জীবন ও আমাদের সংস্কৃতি

রাজনীতিতে ভাষার সহনীয় প্রয়োগ

ভারত : এসআইআর এবং সাম্প্রদায়িক বিভাজন

মনে কী দ্বিধা নিয়ে...

নিরাপদ সড়ক ভাবনা

অপরিকল্পিত বাঁধ-শিল্পায়নে বিপর্যস্ত বরেন্দ্র কৃষি

ছবি

মামদানি দেখালেন নেতৃত্বের মূল পরিচয় কী

চেকের মামলায় বৈধ বিনিময়, লেনদেন, দেনা-পাওনা প্রমাণ ছাড়া আর জেল নয়

নবাগত শিক্ষকদের পেশাগত ভাবনা

মাদকাসক্তি: শুধু নিরাময় নয়, চাই সমাজ ব্যবস্থার সংস্কার

আমেরিকার “নো কিংস” আন্দোলন

ঘি তো আমাদের লাগবেই, নো হাংকি পাংকি!

“মামদানি না জামদানি...”

ভাষার বৈচিত্র্য রক্ষায় নীরব বিপ্লব

উপাত্ত সুরক্ষা আইন : গোপনীয়তা রক্ষা নাকি রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ?

সমতা কি ন্যায্যতা নিশ্চিত করে?

ডেঙ্গু সংকট দূরদৃষ্টির ব্যর্থতা

ষাটের দশকে বামপন্থী ভাবনার উত্থান ও বিবর্তন

দেখিতে পাও না তুমি মৃত্যুদূত দাঁড়ায়েছে দ্বারে!

বায়ুর অপর নাম জীবন

ছবি

হাওরের জীবন ও সংস্কৃতি

বিখণ্ডিত আত্মপরিচয়: তরল সহানুভূতিতে নৈতিক মূলধনের সমাজতত্ত্ব

প্রভাষকের ‘প্রভা’ যখন ‘শোক’: শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতি বঞ্চনা

যুদ্ধ বিরতি গাজাবাসীর জন্য জরুরি ছিল

লবলং খালের মৃত্যু: স্মৃতিতে নদী, বাস্তবে দূষণ

tab

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

নবম পে স্কেল ও এর আর্থসামাজিক প্রভাব

ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ

রোববার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সরকারি কর্মচারীরা নতুন পে-স্কেল, তথা নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।

বেতন কাঠামোর পরিবর্তন সাধারণত মূল্যস্ফীতি, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, দক্ষ জনবল ধরে রাখা এবং প্রশাসনিক সেবা উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে একীভূত হয়ে আসে

তাদের মূল প্রস্তাবনায় বর্তমান বেতন কাঠামোর বৈষম্য দূর করে একটি নতুন, যুগোপযোগী এবং আরও ন্যায্য বেতন কাঠামো প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে। সর্বশেষ পে-স্কেল ২০১৫ সালে কার্যকর হয়েছিল, এরপর থেকে আর নতুন কোনো পূর্ণাঙ্গ বেতন কাঠামো ঘোষণা করা হয়নি। কর্মচারীদের প্রস্তাবিত কাঠামোয় সর্বনিম্ন বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫,০০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ বেতন হবে ১,৪০,০০০ টাকা। বর্তমানে নিম্ন ও উচ্চ গ্রেডের মধ্যে বেতনের বিশাল ব্যবধান রয়েছে। এই বৈষম্য কমাতে কর্মচারীরা ১:৪ অনুপাতে একটি বেতন কাঠামো তৈরির দাবি জানিয়েছেন। বিদ্যমান গ্রেড সংখ্যা কমিয়ে মোট ১২টি গ্রেডে সীমিত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যা বেতন কাঠামোকে আরও সহজ ও যৌক্তিক করবে। জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ইনক্রিমেন্ট নিশ্চিত করতে মূল্যস্ফীতির হার অনুযায়ী বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট সমন্বয়ের দাবি জানানো হয়েছে। বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ও পরিবহন ভাতার মতো অতিরিক্ত ভাতাগুলো বর্তমান বাজারমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পুনর্বিবেচনা ও বৃদ্ধির দাবি তোলা হয়েছে। সরকারি কর্মচারীদের মতে, বর্তমান বেতন কাঠামো দিয়ে ক্রমবর্ধমান দ্রব্যমূল্যের বাজারে জীবনযাত্রার মান ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। এই কারণে কর্মচারীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে এবং তাদের কর্মোদ্দীপনা কমে যাচ্ছে। তারা বিশ্বাস করেন, নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়ন হলে এটি শুধু তাদের আর্থিক দুর্দশা কমাবে না, বরং কর্মক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং কাজের প্রতি আরও বেশি আগ্রহ তৈরি করবে। সরকারি কর্মচারীরা আশা করছেন, বর্তমান সরকার তাদের এই যৌক্তিক দাবি বিবেচনা করবে এবং প্রস্তাবিত ৯ম পে-স্কেলটি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের শুরু থেকেই কার্যকর করবে। তাদের এই দাবি এখন সরকারের উচ্চ মহলের আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।

বাংলাদেশের অর্থনীতি, সমাজ, বাজারব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রীয় প্রশাসনিক কাঠামোয় বহুমাত্রিক পরিবর্তন এনেছে, যা শুধু সরকারি কর্মচারীদের জীবনমান নয়, জাতির সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বৈষম্য কাঠামোকেও পুনর্গঠিত করছে। বেতন কাঠামোর পরিবর্তন সাধারণত মূল্যস্ফীতি, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, দক্ষ জনবল ধরে রাখা এবং প্রশাসনিক সেবা উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে একীভূত হয়ে আসে। নবম পে স্কেলও এর ব্যতিক্রম নয়; এটি মূলত সরকারি খাতে কর্মরত লাখো কর্মচারীর আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে প্রণীত হলেও এর প্রভাব দেশের বৃহত্তর সামাজিক পরিসরে বিস্তৃত। নতুন বেতন কাঠামো চালুর ফলে কর্মচারীদের বেতন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে, বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যম পর্যায়ের কর্মীরা আর্থিক সঙ্কট থেকে কিছুটা মুক্তি পাবে। তাদের দৈনন্দিন ব্যয়, সন্তানদের শিক্ষা, চিকিৎসা ব্যয় এবং বাসস্থানের উন্নয়ন এখন তুলনামূলক সহজ হবে। বেতনের এই বৃদ্ধি তাদের অর্থনৈতিক সামর্থ্য বাড়ানোর পাশাপাশি জীবনের মান উন্নয়নে সহায়তা করবে এবং সামাজিক নিরাপত্তা ও মানসিক শান্তির অনুভূতি জাগাবে, যা তাদের কাজের প্রতি মনোযোগ, সমর্পণ এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

নবম পে স্কেলের এই ইতিবাচক দিকের পাশাপাশি রয়েছে নানা আর্থসামাজিক চ্যালেঞ্জ। বেতন বৃদ্ধির কারণে একদিকে বাজারে ভোগব্যয় বাড়বে, যার ফলে সামগ্রিক অর্থনীতিতে একধরনের প্রবাহ তৈরি হবে; বাজারে চাহিদা বাড়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আসবে এবং উদ্যোক্তাদের নতুন বিনিয়োগের সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। মানুষ এখন আগের তুলনায় বেশি ব্যয় করবে, যা খুচরা ব্যবসা, গৃহনির্মাণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা খাতে নতুন উদ্দীপনা জাগাবে । এই ভোগ ব্যয়ের বৃদ্ধি অভ্যন্তরীণ উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে পারে, যদি উৎপাদন খাত সেই বাড়তি চাহিদা পূরণের সক্ষমতা অর্জন করে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, উৎপাদন খাতের সক্ষমতা তেমন বাড়বে না, বরং অনেক ব্যবসায়ী বাড়তি চাহিদার সুবিধা নিয়ে পণ্য ও সেবার দাম বাড়াবে। এর ফলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে এবং সাধারণ জনগণ বিশেষ করে নিম্ন-আয়ের মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ফলে সরকারি কর্মচারীদের বাড়তি বেতন তাদের আর্থিক স্থিতিশীলতা বাড়ালেও অধিকাংশ সাধারণ মানুষের প্রকৃত আয় কমে যাবে, যা আয়-বৈষম্যকে আরও প্রকট করে তুলবে। সরকারের রাজস্ব ব্যয়ও নবম পে স্কেলের কারণে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে। বেতন-ভাতা বাবদ সরকারের ব্যয় পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি হওয়ায় বাজেটের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে এবং বাজেট ঘাটতি বাড়বে।

এই ঘাটতি মোকাবিলায় সরকারকে অতিরিক্ত কর আরোপ, কর আদায় প্রক্রিয়া জোরদার, বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ বা উন্নয়ন ব্যয়ে কাটছাঁট করতে হতে পারে। এর ফলে উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলো ধীরগতির হতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। পাশাপাশি দেশীয় মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারকে অতিরিক্ত নীতিগত পদক্ষেপ নিতে হয়, যা আর্থিক নীতি ও মুদ্রানীতির ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।

ব্যাংকিং খাতেও নবম পে স্কেলের প্রভাব উল্লেখযোগ্য। বাড়তি বেতনের কারণে সঞ্চয় বৃদ্ধি পাবে এবং ব্যাংকের আমানত বাড়বে । এর ফলে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণে আরও সক্ষমতা পাবে, যা উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও ব্যবসা সম্প্রসারণে সহায়ক। তবে ঋণ গ্রহণের প্রবণতা বেশি হলে ব্যক্তিগত ঋণের দায় বাড়তে পারে, যা ভবিষ্যতে আর্থিক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, বিশেষ করে যখন মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং পণ্যমূল্য হঠাৎ বেড়ে যাবে। রাষ্ট্রীয় সেবা ব্যবস্থার ওপরও নবম পে স্কেলের প্রভাব রয়েছে। সরকারি কর্মচারীরা বাড়তি বেতন পাওয়ায় তারা কাজের প্রতি আরও উৎসাহী হবে বলে আশা করা হলেও বাস্তবে সবসময় এমনটা হয় না। বেতন বৃদ্ধি কর্মদক্ষতা ও সততার নিশ্চয়তা দেয় না; এজন্য প্রয়োজন প্রশাসনিক সংস্কার, জবাবদিহিতা বৃদ্ধি, সেবা মূল্যায়ন কাঠামো এবং কর্মদক্ষতা ভিত্তিক পদোন্নতির ব্যবস্থা। নবম পে স্কেল কেবল তখনই পুরোপুরি কার্যকর হবে যখন এটি দক্ষতা, জবাবদিহিতা এবং সেবার মান উন্নয়নের সঙ্গে সমন্বিত হবে।

নবম পে স্কেল বেসরকারি ও সরকারি খাতের প্রস্তাবিত বেতন কাঠামোতে নতুন ধরনের বৈষম্য তৈরি করবে । সরকারি খাতে বেতন বাড়ায় এখন অনেক দক্ষ কর্মী বেসরকারি খাতের তুলনায় সরকারি চাকরিকে অধিক আকর্ষণীয় মনে করবে। ফলস্বরূপ বেসরকারি খাতে যোগ্য কর্মী ধরে রাখা কঠিন হয়ে পরবে, বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, ব্যাংকিং, প্রযুক্তি এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানে দক্ষ জনবল সংকট দেখা দিতে পারে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কর্মীদের ধরে রাখতে বেতন বাড়ানোর চাপের মুখে পড়লেও ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে এটি বাস্তবায়ন করা কঠিন, ফলে তারা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পরবে। এর ফলে সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা কমে যেতে পারে এবং বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হতে পারে। সামাজিক কাঠামোর দিক থেকে নবম পে স্কেল মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে সম্প্রসারিত করবে, যা সামগ্রিকভাবে দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ার জন্য ইতিবাচক। একটি শক্তিশালী মধ্যবিত্ত শ্রেণি অর্থনীতির অভ্যন্তরীণ চাহিদা স্থিতিশীল রাখে, সামাজিক মূল্যবোধ রক্ষা করে এবং রাষ্ট্রীয় নীতিমালার প্রতি আস্থা তৈরি করে। তবে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির মধ্যে আয়-বৈষম্যও বাড়বে, বিশেষ করে যেসব পরিবার সরকারি সেবার বাইরের খাতে কাজ করে তারা মূল্যস্ফীতির চাপে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বেতন বাড়ায় অনেক সরকারি কর্মচারী নতুন বাসা কেনা, জমি কেনা বা বাড়ি নির্মাণের প্রবণতা দেখাবেন, যা রিয়েল এস্টেট বাজারে নতুন চাহিদা সৃষ্টি করবে, কিন্তু একই সঙ্গে জমি ও বাড়ির দাম বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষদের জন্য বাসস্থান আরও দূরহ হয়ে উঠবে। নারী কর্মসংস্থান, শিক্ষা খাত এবং স্বাস্থ্য খাতেও নবম পে স্কেলের ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। নারী সরকারি কর্মচারীদের আর্থিক স্বাবলম্বিতা বাড়ছে, তাদের পরিবারের ওপর আর্থিক প্রভাব বৃদ্ধি পাবে এবং সামাজিক অবস্থান সুদৃঢ় পাবে। শিক্ষক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বেতন বৃদ্ধি তাদের পেশার মর্যাদা বাড়িয়েছে এবং তরুণ প্রজন্মকে এসব পেশার প্রতি আকৃষ্ট করছে, যদিও এখনও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সামগ্রিকভাবে দেখা যায়, নবম পে স্কেল বাংলাদেশের আর্থসামাজিক কাঠামোয় নতুন আশার সঞ্চার করবে। এটি সরকারি কর্মচারীদের জীবনমান উন্নত করবে, বাজারে চাহিদা বাড়াবে, বিনিয়োগ উৎসাহিত করবে এবং একটি শক্তিশালী মধ্যবিত্ত শ্রেণি তৈরি করবে। তবে চ্যালেঞ্জও কম নয় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বাজেট ঘাটতি সামলানো, আয়-বৈষম্য হ্রাস করা, বেসরকারি খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা নিশ্চিত করা এবং প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি করা এখন সময়ের দাবি। সঠিক নীতি, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং সুষম অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই নবম পে স্কেলের সুফল সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হবে। এটি শুধু একটি বেতন কাঠামো নয়; এটি বাংলাদেশের সমগ্র অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থার রূপান্তরের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, যার ওপর দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের দিকনির্দেশনা নির্ভর করে। নবম পে স্কেল একটি বৃহৎ প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত। এর ইতিবাচকতা যেমন রয়েছে-কর্মচারীদের জীবনমান উন্নয়ন, কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি, মানবসম্পদ উন্নয়ন-তেমনি নেতিবাচকতাও রয়েছে-অর্থনৈতিক চাপ, সম্ভাব্য মূল্যস্ফীতি, বেসরকারি খাতের বৈষম্য। ফলে নতুন পে স্কেল বাস্তবায়নের আগে ভারসাম্যপূর্ণ পরিকল্পনা, অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ এবং ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন অত্যন্ত প্রয়োজন। একটি আদর্শ পে স্কেল শুধুমাত্র বেতন বৃদ্ধির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, কর্মচারীদের দক্ষতা, প্রশাসনিক জবাবদিহিতা এবং সাধারণ মানুষের সেবাপ্রাপ্তির যৌথ ফসল। সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে নবম পে স্কেল বাংলাদেশের সরকারি প্রশাসনকে আরও শক্তিশালী ও মানবিক করে তুলতে পারে।

(মতামত লেখকের নিজস্ব)

[লেখক: সাবেক উপ-মহাপরিচালক, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি]

back to top