alt

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

তাদের আমি খুঁজে বেড়াই

জ্যোর্তিময় ধর

: শুক্রবার, ১১ জুন ২০২১
image

‘১৯৭১ সালে তোমাদের দেশে যে ভয়ঙ্কর গণহত্যা, ধর্ষণ, ধ্বংসযজ্ঞ, দেশত্যাগ, গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দেয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে সেটা এত অবিশ্বাস্য যে আজ থেকে ১০-২০ বছর পর পৃথিবীর কেউ এটি বিশ্বাস করবে না’ জনৈক মার্কিন গবেষকের উক্তি। মুক্তিযুদ্ধের চার যুগ পার হওয়ার আগেই ওই গবেষকের ভবিষ্যদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে সত্যি প্রমাণিত হয়েছে। তাই এখনও তিন লাখ তা ৩০ লাখ নিয়ে এখানকার বুদ্ধিজীবীরা তর্কে লিপ্ত। এই ব্যাপারে আমাদের সুশীল সমাজের সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখার কথা। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য এই দেশের সব বুদ্ধিজীবীরা সেই দায়িত্ব পালন করতে রাজি নন। ‘নিরপেক্ষতা’, ‘বাকস্বাধীনতা’ এ রকম বড় বড় শব্দ ব্যবহার করে তারা মুক্তিযুদ্ধের প্রতিষ্ঠিত সত্যগুলোর মূল ধরে টানাটানি শুরু করেছেন। আপনারা কি জানেন চট্টগ্রামের পাহাড়তলী বধ্যভূমির শুধু একটা গর্ত থেকে ১ হাজার ১০০টা মাথার খুলি পাওয়া গিয়েছিল। সেই বধ্যভূমিতে এরকম প্রায় ১০০টি গর্ত ছিল। আর WCFC-র হিসাব অনুসারে সারাদেশে এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়েছে ৯৪২টি। যে বুদ্ধিজীবীরা এই দেশের তরুণ প্রজন্মকে দিক নির্দেশনা দেবেন তারাই যদি উল্টো তাদের বিভ্রান্ত করতে শুরু করেন তাহলে আমার হতাশা অনুভব করা উচিত ছিল। কিন্তু আমি বিন্দুমাত্র হতাশ নই।

যাই হোক মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি। বেশ কিছুদিন আগে আমার স্যার কিংশুক দাশ চৌধুরী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম দুজন অপরিচিত মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদের ব্যাপারে একটা লেখা পোস্ট দিয়েছিল, তা চোখে পড়ে। আমি উৎসাহিত হয়ে, সেই শহীদের একজনের সমাধি পরিদর্শনে যাই এবং আরও তথ্য সংগ্রহে কমিউনিস্ট পার্টির অশোক সাহা এবং কমরেড শাহ আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করি। পরে যা জানলাম, সে ঘটনা রীতিমতো অবিশ্বাস্য। মুক্তিযুদ্ধের এ রকম নাম না জানা শহীদদের মতো তারাও হয়তো একদিন হারিয়ে যাবেন। সেই শহীদ দুজন পিসি বর্মন এবং তার সন্তান রতন বর্মন।

শ্রী প্রবোধ চন্দ্র বর্মন, যিনি শহরে পিসি বর্মন নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। তিনি ছিলেন তৎকালীন চট্টগ্রাম ইউনিয়ন ব্যাংকের ডাইরেক্টর যেটা এখন জনতা ব্যাংক। পাকিস্তানিরা এই ব্যাংক হস্তগত করতে ১৯৬৮ সালে কৌশলে উনাকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে জেলে দিয়েছিল। জেলে থাকা অবস্থায় তার সঙ্গে ছিলেন চট্টগ্রামের ওই সময়কার তুখোড় নেতারা, তাদের মধ্যে অন্যতম কমরেড পূর্ণেন্দু দস্তিদার, কমরেড শাহ আলম, এসএম ইউসুফ প্রমুখ।

কমরেড শাহ আলমের স্মৃতিচারণ থেকে জানা যায়, পিসি বর্মন দেখতে শুনতে সুপুরুষ ছিলেন, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের মতো দাড়ি। তিনি নির্বিরোধ, মার্জিত এবং সংস্কৃতমনা মানুষ ছিলেন। জেলে বসে কমিউনিস্ট পার্টির লোকজনের সান্নিধ্যে আসার কারণে তিনি ধীরে ধীরে বাংলার স্বাধিকার আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। জেলে বসে তিনি নিজে কবিতা লিখে রাজবন্দীদের পড়ে শোনাতেন। ১৯৭১ সালের ৭ এপ্রিল তার কর্মস্থল ইউনিয়ন ব্যাংক কার্যালয় থেকে পাকিস্তান আর্মি তাকে তুলে নিলেও তার অতি মার্জিত ও ভদ্র ব্যাবহারে তাকে আবার ছেড়ে দেয়। পরের দিন ৮ এপ্রিল সন্ধ্যার দিকে পাকিস্তান আর্মি, রাজাকারদের সহায়তায় নন্দন কানন ১ নং গলির বাসা ঘেরাও করে এবং এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে, যে গুলির দাগ এখনও তার বাসভবনে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে। তাকে টেনে-হিঁচড়ে বাইরে নিয়ে এসে নন্দনকানন পুকুরপাড়ে গুলি করা হয় এবং মৃতদেহ ওখানেই পুঁতে ফেলা হয়। তার সমাধি এখনও অযত্নে-অবহেলায় আমাদের চট্টগ্রাম শহরে নন্দন কানন ১নং গলিতে পড়ে আছে। এটা শুধু সমাধি নয়- এগুলো একটি জাতির ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যা সংরক্ষণ এখন অতিব জরুরি।

অন্যদিকে রতন কুমার বর্মন চট্টগ্রামে ছাত্র ইউনিয়নের নেতা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে তিনি সংগঠক হিসেবে শহর ত্যাগ করেন। তিনি তার বাবা শ্রী প্রবোধ চন্দ্র বর্মনকে বার বার শহর ত্যাগের অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু তার বাবা চট্টগ্রাম শহর ছেড়ে কোথাও যাননি। গোপন সূত্রে খবর পেয়েছিলেন যে তার বাবার জীবন বিপন্ন। তাই বাবাকে শহর থেকে নিয়ে যেতে তিনি কর্ণফুলীর ওপাড় থেকে আসার প্রাক্কালে চাক্তাই ঘাটে তিনি রাজাকারদের হাতে সন্ধ্যায় ধরা পড়েন। পাকিস্তান আর্মিদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে তাকে গুলি করে মারা হয় এবং লাশ ছুড়ে ফেলা হয় কর্ণফুলীতে। ভরা পূর্ণিমায় রক্তস্নাত হলো প্রবল প্রমত্তা কর্ণফুলী। সবশেষে আমাদের মনে রাখতে হবে, মুক্তিযুদ্ধ আমাদের শ্রেষ্ঠ অর্জন। মুক্তিযুদ্ধের গল্প, প্রসব যন্ত্রণায় কাতর মায়ের এক একটা আর্তনাদ। অনেকের অজানা এই দুই শহীদের কথা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের তথ্য ও দলিল এ উল্লেখ নেই। পিসি বর্মন এর সমাধিটা নন্দন কানন ১নং গলিতে অযত্নে আর অবহেলায় পড়ে আছে। আমাদের বীর চট্টলার এই দুই শহীদের জন্য কি আমাদের কিছুই করার নেই?

[লেখক : প্রকৌশলী, জার্মান ইনস্টিটিউট অব অলটারনেটিভ এনার্জির বাংলাদেশ প্রতিনিধি]

পোশাক শিল্প : অগ্রগতি ও শ্রমিকের অধিকার

গণভোটের রাজনৈতিক গুরুত্ব

বামঘরানার বাটখারা...

বাগদা ফার্ম : স্মারকলিপি, অবরোধ, অনশন, আন্দোলন- কিছুতেই বরফ গলেনি

ব্যাটারি-শকট: নতুন সংকট

মতপ্রকাশ কিংবা দ্বিমত পোষণ: নাগরিক অধিকার ও রাজনৈতিক বাস্তবতা

সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন ব্যাংক কি আদৌ প্রয়োজন

ট্রাম্প ও শি’র ‘কৌশলগত শান্তি’

আশার সমাজতত্ত্ব: বিভ্রান্তির যুগে ভবিষ্যৎ নির্মাণের বিপ্লবী বিজ্ঞান

পিএইচডি: উচ্চ শিক্ষার মানদণ্ড না প্রতীকী মরীচিকা?

ডিম নয় তবু অশ্বডিম্ব!

ছবি

অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও নির্বাচন

পিএইচডি: উচ্চ শিক্ষার মানদণ্ড না প্রতীকী মরীচিকা?

প্রকৃতার্থে ফকির কারা

এনসিপি চায় অবিনাশী জুলাই সনদ

পিএইচডি: উচ্চ শিক্ষার মানদণ্ড না প্রতীকী মরীচিকা?

আলুর প্রাচুর্যে কৃষকের সংকট

তাহলে কী ‘কোটা’ই জয়যুক্ত হবে!

ব্যাংকিং খাতে বিষফোঁড়া: বাংলাদেশের অর্থনীতির ধমনী বিষাক্ত হয়ে উঠছে

ছবি

ঢাকার নদী ও খালের দখল-দূষণ: পুনরুদ্ধার কোন পথে

জমি কী মূলে রেকর্ড হয়েছে, দলিল মূলে না উত্তরাধিকার মূলে?

কার্বন-নিরপেক্ষ শিশুর অনুপ্রেরণায় দেশ

এবার আমরা সভ্য হলাম!

সোনার প্রাসাদের দেয়ালে ঘামের দাগ

নিরাপদ সড়ক চাই কিন্তু কার্যকর উদ্যোগ কোথায়?

অবহেলিত শিক্ষার দুর্দশা বাড়ছে

টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত নিরাপদ সড়ক

বাংলার সংস্কৃতি কি মূলধারা হারিয়ে ফেলবে?

ছবি

সমদৃষ্টি, বহুত্ববাদী সমাজ এবং সহিষ্ণুতা

খাদ্য অপচয় : ক্ষুধার্ত পৃথিবীর এক নিঃশব্দ ট্র্যাজেডি

টেকসই বাংলাদেশ গঠনে পরিবেশ সংস্কার কেন অপরিহার্য

সে এক রূপকথারই দেশ

উপকূলের খাদ্যসংকট নিয়ে ভাবছেন কি নীতিনির্ধারকেরা?

মানসিক স্বাস্থ্য: মানবাধিকারের নতুন চ্যালেঞ্জ

ঢাকার যানজট ও বিকেন্দ্রীকরণ

নির্বাচনী মাঠে জামায়াতী হেকমত

tab

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

তাদের আমি খুঁজে বেড়াই

জ্যোর্তিময় ধর

image

শুক্রবার, ১১ জুন ২০২১

‘১৯৭১ সালে তোমাদের দেশে যে ভয়ঙ্কর গণহত্যা, ধর্ষণ, ধ্বংসযজ্ঞ, দেশত্যাগ, গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দেয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে সেটা এত অবিশ্বাস্য যে আজ থেকে ১০-২০ বছর পর পৃথিবীর কেউ এটি বিশ্বাস করবে না’ জনৈক মার্কিন গবেষকের উক্তি। মুক্তিযুদ্ধের চার যুগ পার হওয়ার আগেই ওই গবেষকের ভবিষ্যদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে সত্যি প্রমাণিত হয়েছে। তাই এখনও তিন লাখ তা ৩০ লাখ নিয়ে এখানকার বুদ্ধিজীবীরা তর্কে লিপ্ত। এই ব্যাপারে আমাদের সুশীল সমাজের সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখার কথা। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য এই দেশের সব বুদ্ধিজীবীরা সেই দায়িত্ব পালন করতে রাজি নন। ‘নিরপেক্ষতা’, ‘বাকস্বাধীনতা’ এ রকম বড় বড় শব্দ ব্যবহার করে তারা মুক্তিযুদ্ধের প্রতিষ্ঠিত সত্যগুলোর মূল ধরে টানাটানি শুরু করেছেন। আপনারা কি জানেন চট্টগ্রামের পাহাড়তলী বধ্যভূমির শুধু একটা গর্ত থেকে ১ হাজার ১০০টা মাথার খুলি পাওয়া গিয়েছিল। সেই বধ্যভূমিতে এরকম প্রায় ১০০টি গর্ত ছিল। আর WCFC-র হিসাব অনুসারে সারাদেশে এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়েছে ৯৪২টি। যে বুদ্ধিজীবীরা এই দেশের তরুণ প্রজন্মকে দিক নির্দেশনা দেবেন তারাই যদি উল্টো তাদের বিভ্রান্ত করতে শুরু করেন তাহলে আমার হতাশা অনুভব করা উচিত ছিল। কিন্তু আমি বিন্দুমাত্র হতাশ নই।

যাই হোক মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি। বেশ কিছুদিন আগে আমার স্যার কিংশুক দাশ চৌধুরী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম দুজন অপরিচিত মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদের ব্যাপারে একটা লেখা পোস্ট দিয়েছিল, তা চোখে পড়ে। আমি উৎসাহিত হয়ে, সেই শহীদের একজনের সমাধি পরিদর্শনে যাই এবং আরও তথ্য সংগ্রহে কমিউনিস্ট পার্টির অশোক সাহা এবং কমরেড শাহ আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করি। পরে যা জানলাম, সে ঘটনা রীতিমতো অবিশ্বাস্য। মুক্তিযুদ্ধের এ রকম নাম না জানা শহীদদের মতো তারাও হয়তো একদিন হারিয়ে যাবেন। সেই শহীদ দুজন পিসি বর্মন এবং তার সন্তান রতন বর্মন।

শ্রী প্রবোধ চন্দ্র বর্মন, যিনি শহরে পিসি বর্মন নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। তিনি ছিলেন তৎকালীন চট্টগ্রাম ইউনিয়ন ব্যাংকের ডাইরেক্টর যেটা এখন জনতা ব্যাংক। পাকিস্তানিরা এই ব্যাংক হস্তগত করতে ১৯৬৮ সালে কৌশলে উনাকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে জেলে দিয়েছিল। জেলে থাকা অবস্থায় তার সঙ্গে ছিলেন চট্টগ্রামের ওই সময়কার তুখোড় নেতারা, তাদের মধ্যে অন্যতম কমরেড পূর্ণেন্দু দস্তিদার, কমরেড শাহ আলম, এসএম ইউসুফ প্রমুখ।

কমরেড শাহ আলমের স্মৃতিচারণ থেকে জানা যায়, পিসি বর্মন দেখতে শুনতে সুপুরুষ ছিলেন, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের মতো দাড়ি। তিনি নির্বিরোধ, মার্জিত এবং সংস্কৃতমনা মানুষ ছিলেন। জেলে বসে কমিউনিস্ট পার্টির লোকজনের সান্নিধ্যে আসার কারণে তিনি ধীরে ধীরে বাংলার স্বাধিকার আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। জেলে বসে তিনি নিজে কবিতা লিখে রাজবন্দীদের পড়ে শোনাতেন। ১৯৭১ সালের ৭ এপ্রিল তার কর্মস্থল ইউনিয়ন ব্যাংক কার্যালয় থেকে পাকিস্তান আর্মি তাকে তুলে নিলেও তার অতি মার্জিত ও ভদ্র ব্যাবহারে তাকে আবার ছেড়ে দেয়। পরের দিন ৮ এপ্রিল সন্ধ্যার দিকে পাকিস্তান আর্মি, রাজাকারদের সহায়তায় নন্দন কানন ১ নং গলির বাসা ঘেরাও করে এবং এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে, যে গুলির দাগ এখনও তার বাসভবনে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে। তাকে টেনে-হিঁচড়ে বাইরে নিয়ে এসে নন্দনকানন পুকুরপাড়ে গুলি করা হয় এবং মৃতদেহ ওখানেই পুঁতে ফেলা হয়। তার সমাধি এখনও অযত্নে-অবহেলায় আমাদের চট্টগ্রাম শহরে নন্দন কানন ১নং গলিতে পড়ে আছে। এটা শুধু সমাধি নয়- এগুলো একটি জাতির ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যা সংরক্ষণ এখন অতিব জরুরি।

অন্যদিকে রতন কুমার বর্মন চট্টগ্রামে ছাত্র ইউনিয়নের নেতা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে তিনি সংগঠক হিসেবে শহর ত্যাগ করেন। তিনি তার বাবা শ্রী প্রবোধ চন্দ্র বর্মনকে বার বার শহর ত্যাগের অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু তার বাবা চট্টগ্রাম শহর ছেড়ে কোথাও যাননি। গোপন সূত্রে খবর পেয়েছিলেন যে তার বাবার জীবন বিপন্ন। তাই বাবাকে শহর থেকে নিয়ে যেতে তিনি কর্ণফুলীর ওপাড় থেকে আসার প্রাক্কালে চাক্তাই ঘাটে তিনি রাজাকারদের হাতে সন্ধ্যায় ধরা পড়েন। পাকিস্তান আর্মিদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে তাকে গুলি করে মারা হয় এবং লাশ ছুড়ে ফেলা হয় কর্ণফুলীতে। ভরা পূর্ণিমায় রক্তস্নাত হলো প্রবল প্রমত্তা কর্ণফুলী। সবশেষে আমাদের মনে রাখতে হবে, মুক্তিযুদ্ধ আমাদের শ্রেষ্ঠ অর্জন। মুক্তিযুদ্ধের গল্প, প্রসব যন্ত্রণায় কাতর মায়ের এক একটা আর্তনাদ। অনেকের অজানা এই দুই শহীদের কথা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের তথ্য ও দলিল এ উল্লেখ নেই। পিসি বর্মন এর সমাধিটা নন্দন কানন ১নং গলিতে অযত্নে আর অবহেলায় পড়ে আছে। আমাদের বীর চট্টলার এই দুই শহীদের জন্য কি আমাদের কিছুই করার নেই?

[লেখক : প্রকৌশলী, জার্মান ইনস্টিটিউট অব অলটারনেটিভ এনার্জির বাংলাদেশ প্রতিনিধি]

back to top