alt

উপ-সম্পাদকীয়

বাবার সম্পদ থেকে বোনকে বঞ্চিত করার আইনি প্রতিকার

সিরাজ প্রামাণিক

: শুক্রবার, ০৬ জানুয়ারী ২০২৩

আমাদের সমাজে একটি ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত রয়েছে, বোনেরা বাবার পৈতৃক ভিটার অংশ পায় না আবার বাপের বাড়ির সম্পত্তি ভাগ নিলে স্বামীর সংসারে অভাব অনটন নেমে আসে। এ সব ভ্রান্ত ধারণা দূর করতে আসছে ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন। পিতার সম্পত্তি থেকে বোনকে বঞ্চিত করলে ভাইকে শাস্তি পেতে হবে বলে জানিয়েছেন ভূমি সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান। তবে এই আইন পাস হওয়ার আগ পর্যন্ত এর প্রতিকার হচ্ছে এসিল্যান্ডের কাছে রেকর্ড সংশোধনের আবেদন করা।

বোনদের বঞ্চিত করে ভুয়া ওয়ারিশ সনদের ওপর হওয়া রেকর্ড সংশোধনের জন্য এসিল্যান্ডের কাছে প্রমাণসহ আবেদন করলে এসিল্যান্ড তদন্ত করে তা সংশোধন করে দেবে। আবার এনআইডির সঙ্গে যদি নামের কিছুটা ব্যতিক্রম থাকে বা ভুল থাকে এমন ক্ষেত্রে করণিক ভুল সংশোধন সংশ্লিষ্ট ২৯ জুলাই ২০২১ সালে জারি করা পরিপত্রে বিষয়টি গ্রহণের জন্য নির্দেশনা রয়েছে।

তবে কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে। একজন নারী বিবাহ পর্যন্ত পৈতৃক ভিটার সহঅংশীদার হিসেবে বিবেচ্য হবেন। কিন্তু বিবাহের স্বামীর বাড়িতে বসবাস কালে তিনি আগন্তুক হিসেবে বিবেচিত হবেন। তাই তিনি উক্ত পৈতৃক ভিটায় অবস্থিত বসতগৃহ বা কুটিরের কোন একচ্ছত্র অংশ দাবি করতে পারেন না। এ কারণে বাটোয়ারা মামলায় স্বামী গৃহে বসবাসরত বিবাহিত কন্যা পিতৃগৃহ বা কুটিরের অংশ বিশেষ প্রাপ্তির বিষয়টি বিবেচিত হয় না। কারণ উক্ত সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারীদের (পুত্র সন্তান) মধ্যে বিবাদ বা বিরোধ বৃদ্ধি পাবে বলে উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত রয়েছে। (১৩ ডি.এল.আর, ২৩০ পৃষ্ঠা)।

জমি বণ্টন বা ভাগবাটোয়ারা সম্পর্কিত যে মামলা আদালতে করা হয় সেটা হচ্ছে বিভাগ বণ্টন মামলা বা বাটোয়ারা মামলা বা পারটিশান স্যুট বা বিভাগ মামলা নামে পরিচিত। পৈতৃক সম্পত্তি ওয়ারিশদের মাঝে সমবণ্টন না হলে কিংবা ফিতা বণ্টন চিহ্নিত না হলে কিংবা জমির সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত বিরোধ হলে কিংবা সম্পত্তি অন্য শরিকরা জোর করে দখলে রাখলে কিংবা প্রাপ্য অংশ কম দিলে কিংবা প্রাপ্য অংশ দিতে অস্বীকার করলে কিংবা অন্য শরিকরা দাবিকৃত অংশ বণ্টন অস্বীকার করলে সাধারণত এ মামলার উদ্ভব হয়।

মেয়ের বিবাহ হলে মেয়ে যদি স্বামীর বাড়িতে বসবাস করে, তাহলে বাটোয়ারা আইনের ৪ ধারা মতে পৈতৃক বাড়ি বাটোয়ারা করতে পারবে না। কারণ, সে একই পরিবারভুক্ত নয়। (৩৪ ডিএলআর ২৪৫ পৃষ্ঠা)

একটি উদাহরণ দিলেই আজকের আলোচ্য বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে। রহিমরা চার ভাই ও এক বোন। রহিমের বাবা মারা গেছেন। তার মা বেঁচে আছেন। এখন রহিমরা চার ভাই মিলে বাবার সম্পত্তি নিজেদের নামে ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন। ভাইয়েরা কিছুতেই বোনের বাবার সম্পত্তির অংশ দিতে চাচ্ছেন না। এখন বোন কী করবেন?

ভাইয়েরা ইচ্ছা করলেই বোনদের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে বোনের বিয়ে হোক বা না হোক, সেটি বিবেচ্য নয়। বঞ্চিত বোনরা বাটোয়ারা বা বণ্টনের মোকদ্দমা করতে পারেন

মুসলিম আইনে বাবা বা মা মারা গেলে মৃত ব্যক্তির যদি ছেলে এবং মেয়ে উভয়ই থাকে তাহলে রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে ছেলেরা যা পাবেন, মেয়ে বা মেয়েরা তার অর্ধেক পাবেন। অর্থাৎ ভাইয়েরা ইচ্ছা করলেই বোনদের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে বোনের বিয়ে হোক বা না হোক, সেটি বিবেচ্য নয়। বঞ্চিত বোনরা বাটোয়ারা বা বণ্টনের মোকদ্দমা করতে পারেন। মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তির ভাগ-বণ্টন নিয়ে উত্তরাধিকারীদের নিজেদের মধ্যে বনিবনা না হলে- বাটোয়ারা মামলা করে অধিকার ফিরে পাওয়া যায়। এই মোকদ্দমা চলাকালে কেউ মারা গেলে তাদের উত্তরাধিকারীরা অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন এবং অংশ চাইতে পারেন। অর্থাৎ শুধু বোনরা নন, বোনরা মারা যাওয়ার পর তার উত্তরাধিকারীরাও এই মামলায় পক্ষ হতে পারেন।

তবে বিবেচিত বিষয় হচ্ছে এই যে, যেহেতু মেয়েদের ঠিকানা হয় শশুরবাড়ি তাই বাপের বাড়ির গৃহের অংশ তাদের ব??্যবহার করার দরকার পড়ে না। এছাড়া একটা পর্যায় বোনরা বাপের বাড়ির জমি পেলেই জমি অনে?্যর কাছে বিক্রি করে চলে যায়। অন?্যদিকে ছেলেদের বাপের গৃহই সম্বল। সামাজিক আর পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় পিতৃগৃহের ভিটে বাড়ির জমি ব্যতীত সমপরিমাণ জমি অন্য জায়গা থেকে দেয়া হয়। অর্থাৎ বোনের হক যাতে কোনভাবেই বিনষ্ট না হয় এমন জমি থেকে তার অংশ বুঝিয়ে দেয়া। সেটাও যদি ভাইয়েরা বা ভাইপোরা বুঝিয়ে দিতে অস্বীকার করে তাহলে রীতিরকম বাটোয়ারা মামলা করে অংশ বুঝিয়ে নেয়া সম্ভব।

এ মামলা করতে হলে কিন্তু সম্পত্তির মালিকানা সংশ্লিষ্ট সব কাগজপত্র যেমন ভূমি জরিপ খতিয়ান, নামজারি খতিয়ান, মালিকানা দলিল, উত্তরাধিকার সনদ ইত্যাদির প্রয়োজন হয়। কারণ নালিশি আর্জিতে সম্পত্তির মালিকানা অর্জনের বিবরণ যেমন খরিদ, দানসূত্রে কিংবা ওয়ারেশ সূত্রে কিনা, উত্তরাধিকার সূত্রে কিনা, যৌথ মালিকানার মাধ্যমে কিনা, দখলের পরিপ্রেক্ষিতে স্বত্ব অর্জন কিনা, বন্ধক বা অন্য কোনভাবে স্বত্ব অর্জন কিনা ইত্যাদি বিষয়সমূহ ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করতে হয়।

বাটোয়ারা মামলা করার আগে নিশ্চিত হতে হবে যে, সম্পত্তি আগে উইল বা হেবা করা হয়েছে কিনা। যদি হয়ে থাকে তাহলে উইলের ক্ষেত্রে ১/৩ অংশ বাদ দিয়ে কিংবা হেবা করা হলে হেবার দলিলে যে পরিমাণ মালিকানা আছে সেটা বাদ দিয়ে অন্য সহশরীকের অংশ বের করতে হবে। এ মামলায় দুবার ডিক্রি হয়।

প্রাথমিক ডিক্রির পর বণ্টন না করা হলে আদালত অ্যাডভোকেট কমিশনার নিয়োগ করে অংশ নির্ধারণ করে দেন এবং চূড়ান্ত ডিক্রি প্রদান করেন। মামলা চলাকালীন আদালতের মাধ্যমে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির সুযোগ রয়েছে। বণ্টন ডিক্রি পাওয়ার পরও দখল না পেলে কিংবা পক্ষরা দখল বুঝিয়ে না দিলে কিংবা হিস্যা বুঝিয়ে না দিলে ‘উচ্ছেদের মামলা’ করা যেতে পারে, স্বত্ব দখলের মামলা করা যেতে পারে।

এজমালি ও বিভাগযোগ্য সম্পত্তি যে এলাকায় অবস্থিত, সে এলাকার উপযুক্ত আদালতে এ মামলা দাখিল করতে হয়। দেওয়ানি কার্যবিধি আইনের ১৬ ধারা অনুযায়ী নিম্নতম এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে এ জাতীয় মামলা দাখিল করতে হয়। তবে সম্পত্তির মালিক যিনি তার সম্পত্তি দুটি মৌজায় স্থিত হলে, তিনি দেওয়ানী কার্যবিধি আইনের ১৭ বিধি অনুযায়ী যে কোন প্রকার মৌজায় এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে মামলাটি দাখিল করা যায়। যেক্ষেত্রে স্থানীয় অধিক্ষেত্র মূল্যায়ন নির্দিষ্ট না হয়, সেই ক্ষেত্রে দেওয়ানি কার্যবিধি আইনের ১৮ বিধি অনুযায়ী যেকোন আদালতে মোকদ্দমাটি দাখিল করা যাবে। কোর্ট ফি আইনের বিধান অনুযায়ী ৩০০ টাকা কোর্ট ফিস দিয়ে এ মোকদ্দমা করতে হয়।

[লেখক: আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট]

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাম্পান

তিন দিক থেকে স্বাস্থ্যঝুঁকি : করোনা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া

দেশের অর্থ পাচারের বাস্তবতা

খাদ্য নিরাপত্তার নতুন দিগন্ত

আবারও কি রোহিঙ্গাদের ত্যাগ করবে বিশ্ব?

প্লান্ট ক্লিনিক বদলে দিচ্ছে কৃষির ভবিষ্যৎ

ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরী করতে করণীয়

রম্যগদ্য : ‘ডন ডনা ডন ডন...’

ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব : কে সন্ত্রাসী, কে শিকার?

সুস্থ ও শক্তিশালী জাতি গঠনে শারীরিক শিক্ষার গুরুত্ব

প্রতিরোধই উত্তম : মাদকমুক্ত প্রজন্ম গড়ার ডাক

ছবি

বিকাশের পথকে পরিত্যাগ করা যাবে না

বর্ষা ও বৃক্ষরোপণ : সবুজ বিপ্লবের আহ্বান

প্রাথমিক শিক্ষায় ঝরে পড়া রোধে শিক্ষকের করণীয়

পারমাণবিক ন্যায়বিচার ও বৈশ্বিক ভণ্ডামির প্রতিচ্ছবি

পরিবেশের নীরব রক্ষক : শকুন সংরক্ষণে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন

মশার উপদ্রব : জনস্বাস্থ্য ও নগর ব্যবস্থাপনার চরম ব্যর্থতা

ভুল স্বীকারে গ্লানি নেই

ভাঙনের বুকে টিকে থাকা স্বপ্ন

একটি সফর, একাধিক সংকেত : কে পেল কোন বার্তা?

দেশের কারা ব্যবস্থার বাস্তবতা

ইসলামী ব্যাংক একীভূতকরণ : আস্থা ফেরাতে সংস্কার, না দায়মুক্তির প্রহসন?

রম্যগদ্য : চাঁদাবাজি চলছে, চলবে

বায়ুদূষণ : নীরব ঘাতক

ইসরায়েলের কৌশলগত ঔদ্ধত্য

পরিবার : সুনাগরিক ও সুশাসক তৈরির ভিত্তিমূল

শিল্পে গ্যাস সংকট : দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নিন

আমাদের লড়াইটা আমাদের লড়তে দিন

ব্যাকবেঞ্চারদের পৃথিবী : ব্যর্থতার গায়ে সাফল্যের ছাপ

আমের অ্যানথ্রাকনোজ ও বোঁটা পঁচা রোগ

শিশুদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি : স্কুল ব্যাংকিংয়ের সম্ভাবনা ও সংকট

প্রশিক্ষণ থেকে কেন বাদ নারী কৃষকরা?

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত ও বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া

লই গো বুক পেতে অনল-বাণ!

সরকারি হাসপাতালের পরিবেশ

আমেরিকার অলিগার্কি পতনের আখ্যান

tab

উপ-সম্পাদকীয়

বাবার সম্পদ থেকে বোনকে বঞ্চিত করার আইনি প্রতিকার

সিরাজ প্রামাণিক

শুক্রবার, ০৬ জানুয়ারী ২০২৩

আমাদের সমাজে একটি ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত রয়েছে, বোনেরা বাবার পৈতৃক ভিটার অংশ পায় না আবার বাপের বাড়ির সম্পত্তি ভাগ নিলে স্বামীর সংসারে অভাব অনটন নেমে আসে। এ সব ভ্রান্ত ধারণা দূর করতে আসছে ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন। পিতার সম্পত্তি থেকে বোনকে বঞ্চিত করলে ভাইকে শাস্তি পেতে হবে বলে জানিয়েছেন ভূমি সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান। তবে এই আইন পাস হওয়ার আগ পর্যন্ত এর প্রতিকার হচ্ছে এসিল্যান্ডের কাছে রেকর্ড সংশোধনের আবেদন করা।

বোনদের বঞ্চিত করে ভুয়া ওয়ারিশ সনদের ওপর হওয়া রেকর্ড সংশোধনের জন্য এসিল্যান্ডের কাছে প্রমাণসহ আবেদন করলে এসিল্যান্ড তদন্ত করে তা সংশোধন করে দেবে। আবার এনআইডির সঙ্গে যদি নামের কিছুটা ব্যতিক্রম থাকে বা ভুল থাকে এমন ক্ষেত্রে করণিক ভুল সংশোধন সংশ্লিষ্ট ২৯ জুলাই ২০২১ সালে জারি করা পরিপত্রে বিষয়টি গ্রহণের জন্য নির্দেশনা রয়েছে।

তবে কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে। একজন নারী বিবাহ পর্যন্ত পৈতৃক ভিটার সহঅংশীদার হিসেবে বিবেচ্য হবেন। কিন্তু বিবাহের স্বামীর বাড়িতে বসবাস কালে তিনি আগন্তুক হিসেবে বিবেচিত হবেন। তাই তিনি উক্ত পৈতৃক ভিটায় অবস্থিত বসতগৃহ বা কুটিরের কোন একচ্ছত্র অংশ দাবি করতে পারেন না। এ কারণে বাটোয়ারা মামলায় স্বামী গৃহে বসবাসরত বিবাহিত কন্যা পিতৃগৃহ বা কুটিরের অংশ বিশেষ প্রাপ্তির বিষয়টি বিবেচিত হয় না। কারণ উক্ত সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারীদের (পুত্র সন্তান) মধ্যে বিবাদ বা বিরোধ বৃদ্ধি পাবে বলে উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত রয়েছে। (১৩ ডি.এল.আর, ২৩০ পৃষ্ঠা)।

জমি বণ্টন বা ভাগবাটোয়ারা সম্পর্কিত যে মামলা আদালতে করা হয় সেটা হচ্ছে বিভাগ বণ্টন মামলা বা বাটোয়ারা মামলা বা পারটিশান স্যুট বা বিভাগ মামলা নামে পরিচিত। পৈতৃক সম্পত্তি ওয়ারিশদের মাঝে সমবণ্টন না হলে কিংবা ফিতা বণ্টন চিহ্নিত না হলে কিংবা জমির সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত বিরোধ হলে কিংবা সম্পত্তি অন্য শরিকরা জোর করে দখলে রাখলে কিংবা প্রাপ্য অংশ কম দিলে কিংবা প্রাপ্য অংশ দিতে অস্বীকার করলে কিংবা অন্য শরিকরা দাবিকৃত অংশ বণ্টন অস্বীকার করলে সাধারণত এ মামলার উদ্ভব হয়।

মেয়ের বিবাহ হলে মেয়ে যদি স্বামীর বাড়িতে বসবাস করে, তাহলে বাটোয়ারা আইনের ৪ ধারা মতে পৈতৃক বাড়ি বাটোয়ারা করতে পারবে না। কারণ, সে একই পরিবারভুক্ত নয়। (৩৪ ডিএলআর ২৪৫ পৃষ্ঠা)

একটি উদাহরণ দিলেই আজকের আলোচ্য বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে। রহিমরা চার ভাই ও এক বোন। রহিমের বাবা মারা গেছেন। তার মা বেঁচে আছেন। এখন রহিমরা চার ভাই মিলে বাবার সম্পত্তি নিজেদের নামে ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন। ভাইয়েরা কিছুতেই বোনের বাবার সম্পত্তির অংশ দিতে চাচ্ছেন না। এখন বোন কী করবেন?

ভাইয়েরা ইচ্ছা করলেই বোনদের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে বোনের বিয়ে হোক বা না হোক, সেটি বিবেচ্য নয়। বঞ্চিত বোনরা বাটোয়ারা বা বণ্টনের মোকদ্দমা করতে পারেন

মুসলিম আইনে বাবা বা মা মারা গেলে মৃত ব্যক্তির যদি ছেলে এবং মেয়ে উভয়ই থাকে তাহলে রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে ছেলেরা যা পাবেন, মেয়ে বা মেয়েরা তার অর্ধেক পাবেন। অর্থাৎ ভাইয়েরা ইচ্ছা করলেই বোনদের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে বোনের বিয়ে হোক বা না হোক, সেটি বিবেচ্য নয়। বঞ্চিত বোনরা বাটোয়ারা বা বণ্টনের মোকদ্দমা করতে পারেন। মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তির ভাগ-বণ্টন নিয়ে উত্তরাধিকারীদের নিজেদের মধ্যে বনিবনা না হলে- বাটোয়ারা মামলা করে অধিকার ফিরে পাওয়া যায়। এই মোকদ্দমা চলাকালে কেউ মারা গেলে তাদের উত্তরাধিকারীরা অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন এবং অংশ চাইতে পারেন। অর্থাৎ শুধু বোনরা নন, বোনরা মারা যাওয়ার পর তার উত্তরাধিকারীরাও এই মামলায় পক্ষ হতে পারেন।

তবে বিবেচিত বিষয় হচ্ছে এই যে, যেহেতু মেয়েদের ঠিকানা হয় শশুরবাড়ি তাই বাপের বাড়ির গৃহের অংশ তাদের ব??্যবহার করার দরকার পড়ে না। এছাড়া একটা পর্যায় বোনরা বাপের বাড়ির জমি পেলেই জমি অনে?্যর কাছে বিক্রি করে চলে যায়। অন?্যদিকে ছেলেদের বাপের গৃহই সম্বল। সামাজিক আর পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় পিতৃগৃহের ভিটে বাড়ির জমি ব্যতীত সমপরিমাণ জমি অন্য জায়গা থেকে দেয়া হয়। অর্থাৎ বোনের হক যাতে কোনভাবেই বিনষ্ট না হয় এমন জমি থেকে তার অংশ বুঝিয়ে দেয়া। সেটাও যদি ভাইয়েরা বা ভাইপোরা বুঝিয়ে দিতে অস্বীকার করে তাহলে রীতিরকম বাটোয়ারা মামলা করে অংশ বুঝিয়ে নেয়া সম্ভব।

এ মামলা করতে হলে কিন্তু সম্পত্তির মালিকানা সংশ্লিষ্ট সব কাগজপত্র যেমন ভূমি জরিপ খতিয়ান, নামজারি খতিয়ান, মালিকানা দলিল, উত্তরাধিকার সনদ ইত্যাদির প্রয়োজন হয়। কারণ নালিশি আর্জিতে সম্পত্তির মালিকানা অর্জনের বিবরণ যেমন খরিদ, দানসূত্রে কিংবা ওয়ারেশ সূত্রে কিনা, উত্তরাধিকার সূত্রে কিনা, যৌথ মালিকানার মাধ্যমে কিনা, দখলের পরিপ্রেক্ষিতে স্বত্ব অর্জন কিনা, বন্ধক বা অন্য কোনভাবে স্বত্ব অর্জন কিনা ইত্যাদি বিষয়সমূহ ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করতে হয়।

বাটোয়ারা মামলা করার আগে নিশ্চিত হতে হবে যে, সম্পত্তি আগে উইল বা হেবা করা হয়েছে কিনা। যদি হয়ে থাকে তাহলে উইলের ক্ষেত্রে ১/৩ অংশ বাদ দিয়ে কিংবা হেবা করা হলে হেবার দলিলে যে পরিমাণ মালিকানা আছে সেটা বাদ দিয়ে অন্য সহশরীকের অংশ বের করতে হবে। এ মামলায় দুবার ডিক্রি হয়।

প্রাথমিক ডিক্রির পর বণ্টন না করা হলে আদালত অ্যাডভোকেট কমিশনার নিয়োগ করে অংশ নির্ধারণ করে দেন এবং চূড়ান্ত ডিক্রি প্রদান করেন। মামলা চলাকালীন আদালতের মাধ্যমে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির সুযোগ রয়েছে। বণ্টন ডিক্রি পাওয়ার পরও দখল না পেলে কিংবা পক্ষরা দখল বুঝিয়ে না দিলে কিংবা হিস্যা বুঝিয়ে না দিলে ‘উচ্ছেদের মামলা’ করা যেতে পারে, স্বত্ব দখলের মামলা করা যেতে পারে।

এজমালি ও বিভাগযোগ্য সম্পত্তি যে এলাকায় অবস্থিত, সে এলাকার উপযুক্ত আদালতে এ মামলা দাখিল করতে হয়। দেওয়ানি কার্যবিধি আইনের ১৬ ধারা অনুযায়ী নিম্নতম এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে এ জাতীয় মামলা দাখিল করতে হয়। তবে সম্পত্তির মালিক যিনি তার সম্পত্তি দুটি মৌজায় স্থিত হলে, তিনি দেওয়ানী কার্যবিধি আইনের ১৭ বিধি অনুযায়ী যে কোন প্রকার মৌজায় এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে মামলাটি দাখিল করা যায়। যেক্ষেত্রে স্থানীয় অধিক্ষেত্র মূল্যায়ন নির্দিষ্ট না হয়, সেই ক্ষেত্রে দেওয়ানি কার্যবিধি আইনের ১৮ বিধি অনুযায়ী যেকোন আদালতে মোকদ্দমাটি দাখিল করা যাবে। কোর্ট ফি আইনের বিধান অনুযায়ী ৩০০ টাকা কোর্ট ফিস দিয়ে এ মোকদ্দমা করতে হয়।

[লেখক: আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট]

back to top