alt

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে পারিবারিক শিক্ষা

জিল্লুর রহমান

: মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ ২০২৩

সম্প্রতি পটুয়াখালীর বাউফলে কিশোর গ্যাংয়ের ছুরিকাঘাতে দশম শ্রেণির দুই মেধাবী শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে এবং আরও একজন গুরুতর আহত হয়েছে। সারা দেশেই উঠতি কিশোরদের ‘গ্যাং কালচার’ দিন দিন ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। স্কুল-কলেজের গন্ডি পেরোনোর আগেই কিশোরদের একটা অংশের বেপরোয়া আচরণ এখন পাড়া-মহল্লায় আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরা পাড়া-মহল্লা, বাজারের অলিগলিতে আড্ডা এবং বিভিন্ন সময় তারা অপরাধ ঘটিয়ে আলোচিত সমালোচিত হয়। এসব অঘটনের পর বিব্রত হয় স্থানীয় প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট অভিভাবক।

বখাটে কিশোর গ্যাং কালচার মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে দিনভর বখাটেরা আড্ডায় মেতে উঠে। তাছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-অলিগলিতে বখাটে ও কিশোর গ্যাংস্টারের উপদ্রব উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। কিশোর গ্যাংস্টাররা অপরাধ কর্মকান্ডে বেপরোয়া হয়ে উঠায় অনিরাপদ হয়ে উঠেছে জনজীবন। প্রতিপক্ষকে হেনস্তা করতে গিয়ে খুন-খারাবির মতো ঘটনা ঘটছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও কিশোরদের গ্যাং কালচারের উৎপাত নিয়ে বেশ বিব্রত ও উদ্বিগ্ন।

এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কারও বয়সই আঠারোর বেশি নয়। কেউ পড়াশোনা করে, কেউ ব্যবসা করে, আবার কেউ কিছুই করে না। বেপরোয়া তাদের স্বভাব, কথাবার্তা ও চলাফেরাও বেশ উগ্র। এলাকায় নিজেদের অবস্থান জানান দিতে তারা দল বেঁধে চলে। ইভটিজিং থেকে শুরু করে এই কিশোররা জড়িয়ে পড়ে নানা অপরাধমূলক কাজে। এরই মধ্যে বিভিন্ন ঘটনায় আলোচনায় এসেছে কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, জীবনকে রঙিন করতে, না বুঝে অনেকেই পা বাড়ায় এ ধ্বংসের পথে।

মূলত কিশোর গ্যাং শহরের অলিগলিতে চায়ের দোকান বা বিশেষ কিছু স্থানে অবস্থান নেয়। তাদের দ্বারা প্রতিনিয়ত সংগঠিত হচ্ছে নানা অপরাধ। বিশেষ করে মোটরসাইকেল চুরি, ইয়াবা সেবন, ছিনতাই, মদ বিক্রি ও সেবন, জিম্মি রেখে টাকা আদায়সহ ভয়ংকর সব অপরাধ করে বেড়ায় কিশোর গ্যাং বা সন্ত্রাসী গ্রুপ। বখাটেপনা বা কিশোর গ্যাং অপরাধ দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় চরম উদ্বেগ তৈরি হয়েছে শহরে। তাদের বিরুদ্ধে সামাজিকভাবে প্রতিরোধ করার উপায় না থাকায় অভিভাবকরা চরম শঙ্কিত।

কিশোরদের গ্যাং কালচার এবং কিশোর অপরাধ বর্তমান সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সমস্যা। এ সমস্যা নিরসনে সর্বপ্রথম এর কারণ চিহ্নিত করা দরকার। অনেকে বলছেন- পারিবারিক সুশিক্ষা ও নৈতিক ধর্মীয় শিক্ষার অভাব এর জন্য মূলত দায়ী। এক্ষেত্রে পরিবারকে সবচেয়ে বেশি সচেতন থাকতে হবে। পরিবারে কিশোরদের একাকী বা বিচ্ছিন্ন না রেখে যথেষ্ট সময় দিতে হবে। প্রথমেই এগিয়ে আসতে হবে পিতা-মাতাকে। সন্তান কী করে, কার সঙ্গে মেশে, কোথায় সময় কাটায়- এসব বিষয়ে পর্যাপ্ত মনিটর করতে পারলেই গ্যাংয়ের মতো বাজে কালচারে সন্তানের জড়িয়ে পড়া রোধ করা সম্ভব। এর বাইরে ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই।

একাডেমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পড়ালেখা করে শিক্ষিত হওয়া যায়, মেধাবী হয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে দেশের সীমানা পেরিয়ে ভিনদেশেও নাম কুড়ানো যায়; কিন্তু পরিবার থেকে সুশিক্ষা না পেলে একসময় সব শিক্ষাই ম্লান হয়ে যায়। প্রত্যেক মানুষের সবচেয়ে বেশি যা প্রয়োজন তা হলো পারিবারিক নৈতিক সুশিক্ষা। কারণ সভ্যতা, ভদ্রতা, নৈতিকতা, কৃতজ্ঞতা বোধ, অপরের প্রতি শ্রদ্ধা-স্নেহ, পরোপকার, উদার মানসিকতা- এগুলো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে খুব বেশি অর্জন করা যায় না। এগুলোর ভিত্তি প্রোথিত হয় পারিবারিক মূল্যবোধ লালন-পালন ও সুশিক্ষার মাধ্যমে।

[লেখক : ব্যাংকার]

আমন ধানে ব্রাউন প্ল্যান্টহপারের প্রাদুর্ভাব

বৈষম্য, অপচয় ও খাদ্যনিরাপত্তার সংকট

“বাঙালি আমরা, নহিতো...”

নারী নির্যাতন, মানসিক স্বাস্থ্য এবং সমাজের দায়

কাঁপছে ডলারের সিংহাসন

ত্রিশতম জলবায়ু সম্মেলন : প্রতীকী প্রদর্শনী, নাকি বৈশ্বিক জলবায়ু রাজনীতির বাঁক নেওয়ার মুহূর্ত?

অপরিণত নবজাতক : ঝুঁকি, প্রতিরোধ ও যত্নের জরুরি বাস্তবতা

বাংলাদেশী উত্তরাধিকার: প্রবাস-জীবন ও আমাদের সংস্কৃতি

রাজনীতিতে ভাষার সহনীয় প্রয়োগ

ভারত : এসআইআর এবং সাম্প্রদায়িক বিভাজন

মনে কী দ্বিধা নিয়ে...

নিরাপদ সড়ক ভাবনা

অপরিকল্পিত বাঁধ-শিল্পায়নে বিপর্যস্ত বরেন্দ্র কৃষি

ছবি

মামদানি দেখালেন নেতৃত্বের মূল পরিচয় কী

চেকের মামলায় বৈধ বিনিময়, লেনদেন, দেনা-পাওনা প্রমাণ ছাড়া আর জেল নয়

নবাগত শিক্ষকদের পেশাগত ভাবনা

মাদকাসক্তি: শুধু নিরাময় নয়, চাই সমাজ ব্যবস্থার সংস্কার

আমেরিকার “নো কিংস” আন্দোলন

ঘি তো আমাদের লাগবেই, নো হাংকি পাংকি!

“মামদানি না জামদানি...”

ভাষার বৈচিত্র্য রক্ষায় নীরব বিপ্লব

উপাত্ত সুরক্ষা আইন : গোপনীয়তা রক্ষা নাকি রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ?

সমতা কি ন্যায্যতা নিশ্চিত করে?

ডেঙ্গু সংকট দূরদৃষ্টির ব্যর্থতা

ষাটের দশকে বামপন্থী ভাবনার উত্থান ও বিবর্তন

দেখিতে পাও না তুমি মৃত্যুদূত দাঁড়ায়েছে দ্বারে!

বায়ুর অপর নাম জীবন

ছবি

হাওরের জীবন ও সংস্কৃতি

বিখণ্ডিত আত্মপরিচয়: তরল সহানুভূতিতে নৈতিক মূলধনের সমাজতত্ত্ব

প্রভাষকের ‘প্রভা’ যখন ‘শোক’: শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতি বঞ্চনা

যুদ্ধ বিরতি গাজাবাসীর জন্য জরুরি ছিল

লবলং খালের মৃত্যু: স্মৃতিতে নদী, বাস্তবে দূষণ

বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা: অর্থনৈতিক স্থিতির পূর্বশর্ত

হায় যম! আর কতক্ষণ, হবে অপেক্ষা করিতে মোরে?

পোশাক শিল্প : অগ্রগতি ও শ্রমিকের অধিকার

গণভোটের রাজনৈতিক গুরুত্ব

tab

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে পারিবারিক শিক্ষা

জিল্লুর রহমান

মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ ২০২৩

সম্প্রতি পটুয়াখালীর বাউফলে কিশোর গ্যাংয়ের ছুরিকাঘাতে দশম শ্রেণির দুই মেধাবী শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে এবং আরও একজন গুরুতর আহত হয়েছে। সারা দেশেই উঠতি কিশোরদের ‘গ্যাং কালচার’ দিন দিন ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। স্কুল-কলেজের গন্ডি পেরোনোর আগেই কিশোরদের একটা অংশের বেপরোয়া আচরণ এখন পাড়া-মহল্লায় আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরা পাড়া-মহল্লা, বাজারের অলিগলিতে আড্ডা এবং বিভিন্ন সময় তারা অপরাধ ঘটিয়ে আলোচিত সমালোচিত হয়। এসব অঘটনের পর বিব্রত হয় স্থানীয় প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট অভিভাবক।

বখাটে কিশোর গ্যাং কালচার মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে দিনভর বখাটেরা আড্ডায় মেতে উঠে। তাছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-অলিগলিতে বখাটে ও কিশোর গ্যাংস্টারের উপদ্রব উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। কিশোর গ্যাংস্টাররা অপরাধ কর্মকান্ডে বেপরোয়া হয়ে উঠায় অনিরাপদ হয়ে উঠেছে জনজীবন। প্রতিপক্ষকে হেনস্তা করতে গিয়ে খুন-খারাবির মতো ঘটনা ঘটছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও কিশোরদের গ্যাং কালচারের উৎপাত নিয়ে বেশ বিব্রত ও উদ্বিগ্ন।

এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কারও বয়সই আঠারোর বেশি নয়। কেউ পড়াশোনা করে, কেউ ব্যবসা করে, আবার কেউ কিছুই করে না। বেপরোয়া তাদের স্বভাব, কথাবার্তা ও চলাফেরাও বেশ উগ্র। এলাকায় নিজেদের অবস্থান জানান দিতে তারা দল বেঁধে চলে। ইভটিজিং থেকে শুরু করে এই কিশোররা জড়িয়ে পড়ে নানা অপরাধমূলক কাজে। এরই মধ্যে বিভিন্ন ঘটনায় আলোচনায় এসেছে কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, জীবনকে রঙিন করতে, না বুঝে অনেকেই পা বাড়ায় এ ধ্বংসের পথে।

মূলত কিশোর গ্যাং শহরের অলিগলিতে চায়ের দোকান বা বিশেষ কিছু স্থানে অবস্থান নেয়। তাদের দ্বারা প্রতিনিয়ত সংগঠিত হচ্ছে নানা অপরাধ। বিশেষ করে মোটরসাইকেল চুরি, ইয়াবা সেবন, ছিনতাই, মদ বিক্রি ও সেবন, জিম্মি রেখে টাকা আদায়সহ ভয়ংকর সব অপরাধ করে বেড়ায় কিশোর গ্যাং বা সন্ত্রাসী গ্রুপ। বখাটেপনা বা কিশোর গ্যাং অপরাধ দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় চরম উদ্বেগ তৈরি হয়েছে শহরে। তাদের বিরুদ্ধে সামাজিকভাবে প্রতিরোধ করার উপায় না থাকায় অভিভাবকরা চরম শঙ্কিত।

কিশোরদের গ্যাং কালচার এবং কিশোর অপরাধ বর্তমান সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সমস্যা। এ সমস্যা নিরসনে সর্বপ্রথম এর কারণ চিহ্নিত করা দরকার। অনেকে বলছেন- পারিবারিক সুশিক্ষা ও নৈতিক ধর্মীয় শিক্ষার অভাব এর জন্য মূলত দায়ী। এক্ষেত্রে পরিবারকে সবচেয়ে বেশি সচেতন থাকতে হবে। পরিবারে কিশোরদের একাকী বা বিচ্ছিন্ন না রেখে যথেষ্ট সময় দিতে হবে। প্রথমেই এগিয়ে আসতে হবে পিতা-মাতাকে। সন্তান কী করে, কার সঙ্গে মেশে, কোথায় সময় কাটায়- এসব বিষয়ে পর্যাপ্ত মনিটর করতে পারলেই গ্যাংয়ের মতো বাজে কালচারে সন্তানের জড়িয়ে পড়া রোধ করা সম্ভব। এর বাইরে ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই।

একাডেমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পড়ালেখা করে শিক্ষিত হওয়া যায়, মেধাবী হয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে দেশের সীমানা পেরিয়ে ভিনদেশেও নাম কুড়ানো যায়; কিন্তু পরিবার থেকে সুশিক্ষা না পেলে একসময় সব শিক্ষাই ম্লান হয়ে যায়। প্রত্যেক মানুষের সবচেয়ে বেশি যা প্রয়োজন তা হলো পারিবারিক নৈতিক সুশিক্ষা। কারণ সভ্যতা, ভদ্রতা, নৈতিকতা, কৃতজ্ঞতা বোধ, অপরের প্রতি শ্রদ্ধা-স্নেহ, পরোপকার, উদার মানসিকতা- এগুলো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে খুব বেশি অর্জন করা যায় না। এগুলোর ভিত্তি প্রোথিত হয় পারিবারিক মূল্যবোধ লালন-পালন ও সুশিক্ষার মাধ্যমে।

[লেখক : ব্যাংকার]

back to top