মনিজা রহমান
শিল্পী : সঞ্জয় দে রিপন
শাওন যখন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তাকায়, তখন ওর মনে একটি গভীর শূন্যতা বাসা বাঁধে। ও জানে, কোথাও ওর আসল জায়গা নেই। আছে শুধু বাবা-মা, যাদের কাছে এ পৃথিবীটা শুধুই বেঁচে থাকার সংগ্রাম, তারা দিন দিন কেমন ছায়ার মতো লীন হয়ে যাচ্ছে। একদিন, এক যুবক পিছন থেকে ওকে ধাক্কা দেয় এবং চিৎকার করে বলে, “গো ব্যাক টু ইয়োর কান্ট্রি!” সেই মুহূর্ত থেকে শাওনের মাথায় প্রচ- আওয়াজে বাক্যটি প্রতিধ্বনিত হতে থাকে, যেন পৃথিবী জুড়ে কোনো এক অদৃশ্য শক্তি ওর আত্মার গভীরে প্রতিধ্বনিত করছে।
কথাটা ওর মধ্যে এমনভাবে গেঁথে যায় যে, প্রত্যেক দিনশেষে শাওন ওর ঘরে এসে বসে, চুপচাপ নিঃশব্দে বাতাসে মনের দুঃখকে খুঁজে পায় আর ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদে। ঠিক তখনই কিছু অদ্ভুত ঘটে। ওর ঘরটি ওর কাছে একটু বদলে যায়- ঘরটা তখন ওর জন্য আরামদায়ক স্থান থাকে না; এটা যেন এক অপরিচিত সময়ের অংশ হয়ে যায়। ঘরের কোণে মৃদু আলো ঝলমল করতে থাকে, যেন অতীতের কোনো ছবি ওর সামনে উঠে আসছে। শাওন কাঁপতে কাঁপতে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে থাকে। হঠাৎ বাতাসের মধ্যে থেকে একটি অতিপ্রাকৃত মুখ ওর দিকে তাকিয়ে থাকে।
শাওনের বাবা জাহিদুল ইসলাম ও মা আফরোজা ইসলাম ২০০৮ সালে রোটারি ক্লাবের ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশনে যোগ দিতে আসেন আমেরিকায়। শাওনের বয়স তখন দশ বছর। বাংলাদেশের মতো নির্বাচনী ঝড় সেই সময় এদেশেও। এই প্রথম একজন কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ ডেমোক্র্যাট পার্টির মনোনয়ন পেয়েছেন। সিনেটর বারাক ওবামা অত্যন্তপ্রগতিশীল একজন মানুষ। চারদিকে তার জয় জয়কার। আমেরিকান মুসলমানরা একটু বেশি আনন্দিত। বারাকের পিতৃকূল মুসলিম। তার নামের মধ্যাংশে আছে হোসেন। তিনি অবশ্য নামে হোসেন ব্যবহার করেন না। এ দেশের নিয়ম অনুসারে মিডল ইনিশিয়াল এইচ লেখেন। আর তিনি পিতৃকূল নয়, মাতৃকূলের খ্রিস্টান ধর্ম অনুসরণ করেন।
আটলান্টায় কনভেনশন থেকে স্ত্রী আর কন্যাকে নিয়ে নিউইয়র্কে আসেন জাহিদুল। এখানে তার চাচাতো ভাই নজরুল ইসলাম থাকেন। পেশায় তিনি ফার্মাসিস্ট। নিউইয়র্কে এসে তারা নজরুলের বাসায় ওঠেন। কুইন্সের ফ্রেশ মেডো এলাকায় নিরিবিলি পরিচ্ছন্ন এলাকায় বেশ বড় বাড়ি। জাহিদুল, আফরোজা ও শাওনের খুব ভালো লাগে বাড়ি আর আশেপাশের পরিবেশ।
রাতে ডিনার খেতে খেতে নজরুল বলেন, ‘তুমি তো এখনো দেশে সেই গার্মেন্টস কোম্পানিতেই আছো এ্যাকাউন্টস অফিসার হিসেবে? দেখো যদি চেষ্টা করে ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাস চেঞ্জ করে আমেরিকায় থেকে যেতে পারো কিনা! অনেকেই তো বিভিন্নভাবে এসব করে। আমি অবশ্য ইমিগ্রেশন বিষয়ে তেমন কিছু বুঝি না।’
জাহিদুলের মাথায় যে এমন ভাবনা আসেনি তা নয়।
সবাইকে চুপচাপ দেখে নজরুল আবার বলে ওঠেন, ‘মনে হচ্ছে এবার ওবামা জিতে যাবে। অনেকেই বলছে ওবামা জিতলে এ্যামনেস্টি জাতীয় কিছু দিতে পারে।’
আমেরিকায় থাকার ভাবনায় জাহিদুলের মাথায় হঠাৎ শত বর্ণেরপ্রদীপ জ্বলে ওঠে। সেও একদিন তার চাচাতো ভাইয়ের মতো এমন সুন্দর জীবন যাপন করতে পারবে। তাছাড়া দশ বছর বয়সী শাওনের কথা ভেবে আরো ভালো লাগে। মেয়েটা বড় ন¤্র আর মেধাবী। এ দেশে পড়ালেখা করার সুযোগ পেলে নিশ্চয় অনেক ভালো করতে পারবে। মেয়েকে ডাক্তার বানাতে চান বাবা-মা।
ভিসার মেয়াদ থাকতে থাকতে জাহিদুল দেশে গিয়ে চাকরি ছেড়ে বাড়িঘর অন্যের জিম্মায় রেখে আসে। বাঙালিদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে একটা কাজের ব্যবস্থা করেন নজরুল।
জ্যামাইকায় একটি পরিবারের সাথে থাকারও ব্যবস্থা করে দেন। শাওনকে স্কুলে ভর্তি করানো হয়। আফরোজা একটি দোকানের কাজে ঢুকে যায়।
বারাক ওবামা নির্বাচনে জিতে প্রেসিডেন্ট হন। বছর না ঘুরতে আমেরিকার অর্থনীতিতে ধস নামে। ব্যাংক ও মর্গের জালিয়াতির কারণে মন্দা নেমে আসে। চাকরির বাজারও সংকুচিত হয়ে আসে। দুইবার চাকরি হারিয়ে জাহিদুল নিজে নিজে কাজ খুঁজে নেয়ার চেষ্টা করে। কিছু কাগজপত্র না থাকায় সেখানেও বাধা পেতে থাকেন পদে পদে। অর্থনীতি ও হেলথ কেয়ার বিল সামলাতে গিয়ে হাউজে ইমিগ্রেশন রিফর্ম বিল উঠলেও তা পাসনা হয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে। কারণ কংগ্রেস তখন রিপাবলিকানের নিয়ন্ত্রণে। জাহিদুলের স্বপ্ন বিবর্ণ হতে শুরু করে।
পরিচিতজনদের পরামর্শে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেন জাহিদুল। বাংলাদেশে কোনোদিন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না তিনি। নিউইয়র্কে বাংলাদেশের রাজনৈতিক শাখা দলগুলো খুবই তৎপর। বাংলাদেশে কিছু ঘটলে এখানকার শাখাগুলি সভা করে, প্রতিবাদ বিক্ষোভ করে। জাহিদুল একটি দলে ভিড়ে যায়। প্রতিবাদ বিক্ষোভে যোগ দিয়ে ছবি তুলে সাবমিট করে। কিন্তু ইমিগ্রেশন জজ তার বাংলাদেশে কর্মকা- দেখতে চান। এই ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয় জাহিদুল। যদিও দুইবার ঢাকার অফিস থেকে দুটি প্রত্যয়নপত্র এনে দিয়েছে এখানকার নেতৃস্থানীয় একজন। এর জন্য তাকে টাকাও খরচ করতে হয়েছে। কিন্তু জাহিদুল জানত না সেসব কাগজ ছিল ভুয়া।
প্রেসিডেন্ট ওবামা ড্যাকা নামে একটি কর্মসূচী দেন তখন নির্বাহী আদেশে। অনেক ছেলেমেয়ে আছে লশশবে বাবা-মা’র সাথে আমেরিকায় এসেছে, কিন্তু তাদের বাবা-মায়ের স্ট্যাটাস আইনগতভাবে সিদ্ধ হয়নি। ড্যাকার অধীনে তাদের আনডকুমেন্টেড হিসেবে অস্থায়ী ভিত্তিতে এপয়নমেন্ট অথরাইজেশন দেয়া হয়। দুই বছর পরপর নবায়ন করতে হবে। কিন্তু সিটিজেনশিপ দেয়ার বিষয়টি এই আদেশে নেই। শাওনকে ড্যাকার কর্মসূচিতে ঢোকানো হয়।
শাওন মেয়েটা শৈশব থেকে বড় অন্তর্মুখী। দিন দিন সে বড় হচ্ছে। মেধাবী ছাত্রী হিসেবে শিক্ষকরা খুব ভালোবাসে ওকে। ৩.৯ জিপিএ পেয়ে স্কলারশিপ নিয়ে হাইস্কুল থেকে গ্রাজুয়েশন করে শাওন। নিউইয়র্ক স্টেটের গভর্নরের বদান্যতায় মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা যদি দরিদ্র হয় আর কাগজপত্র না থাকে তাহলে বিনামূল্যে সিটির কলেজে পড়ার সুযোগ পায়। শাওন বাড়ির কাছে কুইন্স বরো কমিউনিটি কলেজে ভর্তি হয়।
এটর্নি জজের নির্দেশে আরো কিছু সাপোর্টিং ডকুমেন্টস দাখিল করতে বললে, দিতে ব্যর্থ হয় জাহিদুল। এটর্নিকেও প্রয়োজনীয় টাকা দিতে পারে না। বারবার টাকা পরিশোধের কথা বলে না পেরে শেষ পর্যন্ত যোগাযোগ করাটাই ছেড়ে দেয়। একদিন ইমিগ্রেশন কোর্ট থেকে জাহিদুলের বাড়ির ঠিকানায় ডিপোর্টেশন অর্ডার আসে। তারা সেখানে জানতে চায় জাহিদুল কি আপিল করবে অর্ডার চ্যালেঞ্জ করে? এর জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। জাহিদুল কোনো উত্তর দেয় না। পুরনো বাড়ি ছেড়ে দিয়ে রাতের অন্ধকারে অন্য ঠিকানায় চলে যায় যাতে ইমিগ্রেশন এজেন্টরা তার বাড়ি না খুঁজে না পায়।
ওবামার বিদায়ের পরে ডোনাল্ড ট্রাম্প নামে একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী হিলারি ক্লিনটনকে পরাজিত করে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হন। তিনি চরমভাবে অভিবাসী ও মুসলিম বিদ্বেষী। নতুন প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব পেয়ে মুসলিম ব্যান ঘোষণা করেছেন। নির্দেশ দিয়েছেন অবৈধদের ডিপোর্টেশনের জন্য।
জাহিদুল ও আফরোজা সব সময় আতঙ্কের মধ্যে থাকে। কাগজপত্র না থাকায় তাদের দুজনেরই কাজ চলে গেছে। কারণ সব প্রতিষ্ঠানেই কর্মীদের আইডি চাওয়া হয়েছে। আনডকুমেন্টেডদের কাজ দিলে নিয়োগদাতাকে কমপক্ষে ১০ হাজার ডলার জরিমানা করা হবে।
মেধাবী হওয়ায় শাওন বাংলাদেশীদের একটি টিউটোরিয়ালে পড়ায়। কয়েকজন স্কুল ছাত্রীর বাড়িতে গিয়েও পড়ায়। সেখানেও বেশিদিন কাজ করতে পারে না।
একদিন জ্যামাইকায় সন্ধের সময় বাড়ি ফেরার পথে এক যুবক শাওনকে আচমকা পিছন থেকে ধাক্কা দেয়। পড়তে পড়তে ও বেঁচে যায়। এক কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা ওকে ধরে ফেলে। যুবক দুইবার চেঁচিয়ে বলে, ‘গো ব্যাক টু ইয়োর ওউন কান্ট্রি।’ মহিলা ওই যুবককে এফ ওয়ার্ড দিয়ে গালি দিলে সে পালিয়ে যায়। শাওনকে মহিলা পুলিশের কাছে রিপোর্ট করার পরামর্শ দেয়। কিন্তু শাওনের সাহস হয়না রিপোর্ট করার।
নতুন প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দিলেন, তিনি ওবামার নির্বাহী আদেশে চালু হওয়া ড্যাকা কর্মসূচি আর নবায়ন করবেন না। বরং যারা এই কর্মসূচিতে এনরোল করেছে তাদেরকে ডিপোর্ট করা হবে।
শাওন মুষড়ে পড়ে। বাবা-মায়ের অসহায়হত্ব, বখাটে যুবকের দ্বারা লাঞ্ছিত হবার ঘটনা ওর ভিতরে গভীর বিষাদের সৃষ্টি করে। আত্মহত্যা করে নিজের জীবন শেষ করে দেবার কথা ভাবে। পরমুহূর্তে ভাবে, ও তো বাবা-মায়ের একমাত্র ভরসা। ওর সামান্য আয়ে তবু কিছু গ্রাচ্ছাদন হয় ওদের। বাড়ি ভাড়া দেবার মতো ডলার থাকে না। কয়েক মাসের বাড়ি ভাড়া বাকি পড়েছে। তারপর হয়তো ঘর ছাড়ার নোটিশ আসবে।
আফরোজার এখন কোনো কাজ নেই। তবে জাহিদুল প্রতিদিন কাজের খোঁজে বের হয়। জ্যাকসন হাইটসের ৬৯ স্ট্রিটে দাঁড়িয়ে থাকে অন্য হিসপ্যানিকদের সঙ্গে। কন্ট্রাক্টররা গাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়ে ভারি ভারি কাজ করিয়ে নেয় ওদের দিয়ে খুব কম বেতনে। তাও প্রতিদিন কাজের কোনো নিশ্চয়তা নেই। দিনমজুরের কাজ বলে কথা!
হঠাৎ একদিন সন্ধ্যায় কাজ শেষে জাহিদুল বাসায় ফেরেন না। পরের দিনও না। ওরা প্রচ- দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। এ যে মড়ার ওপর খাড়ার ঘায়ের মতো। আফরোজা পুলিশে খবর দিতে ভয় পান। নিয়মিত বিল দিতে না পারায় জাহিদুলের ফোন লাইন কেটে দেয়া হয়েছে। শাওন কোনোভাবে বাবার হদিস করতে না পেরে শেষ ভরসা হিসেবে ছুটে যায় নজরুল চাচার কাছে। উনি ওদের বর্তমান করুণ পরিস্থিতির কথা জানতেন না। অবাক হন, অপরাধবোধেও আক্রান্ত হন। কারণ ওনার পরামর্শে জাহিদুল এই দেশে থাকার পরিকল্পনা করেছিল। নজরুল ওনার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা চালাতে থাকেন চাচাতো ভাইকে খোঁজার। কিন্তু কোনো লাভ হয় না।
বাবার ফেরার অপেক্ষা করতে করতে শাওন একসময় ঘুমিয়ে পড়ে, তারপর এক স্বপ্নে ডুবে যায়। সেখানে সে বাংলাদেশে ফিরে গেছে, সেই প্রাচীন গ্রামে যেখানে সে জন্মেছিল। কিন্তু এই গ্রামটা অনেকটা বদলে গেছে। সেখানে এক বিশাল নদী বয়ে যাচ্ছে, যা কখনো থেমে যায় না। নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে শাওন দেখে, সেখানে সব কিছু অদ্ভুতভাবে জেগে উঠছে। ঘরবাড়ি, পাখি, এমনকি মাটি পর্যন্ত কথা বলছে। শাওন অনুভব করে, তার আত্মা যেন নদীর সাথে এক হয়ে গেছে। তার চুল, পায়ের পাতায় মাটি যেন নিজের অজান্তেই তাকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
তবে ও জানে, এই পৃথিবী শুধু কল্পনা নয়, বাস্তব। শাওন যতবার তার মাতৃভূমির কাছে ফিরতে চায়, ততবারই সে অনুভব করে, কিছু একটা অদৃশ্য শক্তি তাকে আটকে রেখেছে। ও জানে না, কীভাবে সে ঐ অদৃশ্য বেষ্টনী ভেঙে বের হতে পারবে।
অবশেষে জাহিদুলের ফোন আসে শাওনের মোবাইলে। আমেরিকার কোথাও না, ওর বাবা ফোন করেছেন বাংলাদেশ থেকে।
শাওন আর ওর মা বিস্ময়ে দিশেহারা। কীভাবে কী হলো!
জ্যাকসন হাইটসে কাজের জন্য সেদিন অপেক্ষা করছিলেন জাহিদুল। ওই সময় দুইজন এজেন্ট এসে ওনাকেসহ তিনজনকে ধরে নিয়ে যায় ডিটেনশন সেন্টারে। সেখান থেকে বাংলাদেশে যাবার প্লেনে তুলে দেয়।
জাহিদুল কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, এভাবে তো ফিরতে চাইনি মা।
বাবার কথাগুলি শাওনের কানে বাজতে থাকে। ও হাঁটতে থাকে উদ্দেশ্যহীনভাবে। অদৃশ্য শক্তি যেন ওকে পথ দেখায়। শাওন রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে এমন একটি স্থান পায়, যেখানে আকাশের রঙ বদলে যায়, পৃথিবী ঘুরতে থাকে এবং সেখানে এক অদ্ভুত সুর বাজতে থাকে। সেই সুর যেন তার অন্তরকে জাগিয়ে তোলে, তাকে মনে করিয়ে দেয় যে, সে এখানে একমাত্র নয়, পৃথিবী জুড়ে কোটি কোটি মানুষ এমনই অনুভব করছে- এক অবাস্তবতার মধ্যে বাস্তবতা খুঁজে চলেছে।
মনিজা রহমান
শিল্পী : সঞ্জয় দে রিপন
শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫
শাওন যখন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তাকায়, তখন ওর মনে একটি গভীর শূন্যতা বাসা বাঁধে। ও জানে, কোথাও ওর আসল জায়গা নেই। আছে শুধু বাবা-মা, যাদের কাছে এ পৃথিবীটা শুধুই বেঁচে থাকার সংগ্রাম, তারা দিন দিন কেমন ছায়ার মতো লীন হয়ে যাচ্ছে। একদিন, এক যুবক পিছন থেকে ওকে ধাক্কা দেয় এবং চিৎকার করে বলে, “গো ব্যাক টু ইয়োর কান্ট্রি!” সেই মুহূর্ত থেকে শাওনের মাথায় প্রচ- আওয়াজে বাক্যটি প্রতিধ্বনিত হতে থাকে, যেন পৃথিবী জুড়ে কোনো এক অদৃশ্য শক্তি ওর আত্মার গভীরে প্রতিধ্বনিত করছে।
কথাটা ওর মধ্যে এমনভাবে গেঁথে যায় যে, প্রত্যেক দিনশেষে শাওন ওর ঘরে এসে বসে, চুপচাপ নিঃশব্দে বাতাসে মনের দুঃখকে খুঁজে পায় আর ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদে। ঠিক তখনই কিছু অদ্ভুত ঘটে। ওর ঘরটি ওর কাছে একটু বদলে যায়- ঘরটা তখন ওর জন্য আরামদায়ক স্থান থাকে না; এটা যেন এক অপরিচিত সময়ের অংশ হয়ে যায়। ঘরের কোণে মৃদু আলো ঝলমল করতে থাকে, যেন অতীতের কোনো ছবি ওর সামনে উঠে আসছে। শাওন কাঁপতে কাঁপতে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে থাকে। হঠাৎ বাতাসের মধ্যে থেকে একটি অতিপ্রাকৃত মুখ ওর দিকে তাকিয়ে থাকে।
শাওনের বাবা জাহিদুল ইসলাম ও মা আফরোজা ইসলাম ২০০৮ সালে রোটারি ক্লাবের ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশনে যোগ দিতে আসেন আমেরিকায়। শাওনের বয়স তখন দশ বছর। বাংলাদেশের মতো নির্বাচনী ঝড় সেই সময় এদেশেও। এই প্রথম একজন কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ ডেমোক্র্যাট পার্টির মনোনয়ন পেয়েছেন। সিনেটর বারাক ওবামা অত্যন্তপ্রগতিশীল একজন মানুষ। চারদিকে তার জয় জয়কার। আমেরিকান মুসলমানরা একটু বেশি আনন্দিত। বারাকের পিতৃকূল মুসলিম। তার নামের মধ্যাংশে আছে হোসেন। তিনি অবশ্য নামে হোসেন ব্যবহার করেন না। এ দেশের নিয়ম অনুসারে মিডল ইনিশিয়াল এইচ লেখেন। আর তিনি পিতৃকূল নয়, মাতৃকূলের খ্রিস্টান ধর্ম অনুসরণ করেন।
আটলান্টায় কনভেনশন থেকে স্ত্রী আর কন্যাকে নিয়ে নিউইয়র্কে আসেন জাহিদুল। এখানে তার চাচাতো ভাই নজরুল ইসলাম থাকেন। পেশায় তিনি ফার্মাসিস্ট। নিউইয়র্কে এসে তারা নজরুলের বাসায় ওঠেন। কুইন্সের ফ্রেশ মেডো এলাকায় নিরিবিলি পরিচ্ছন্ন এলাকায় বেশ বড় বাড়ি। জাহিদুল, আফরোজা ও শাওনের খুব ভালো লাগে বাড়ি আর আশেপাশের পরিবেশ।
রাতে ডিনার খেতে খেতে নজরুল বলেন, ‘তুমি তো এখনো দেশে সেই গার্মেন্টস কোম্পানিতেই আছো এ্যাকাউন্টস অফিসার হিসেবে? দেখো যদি চেষ্টা করে ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাস চেঞ্জ করে আমেরিকায় থেকে যেতে পারো কিনা! অনেকেই তো বিভিন্নভাবে এসব করে। আমি অবশ্য ইমিগ্রেশন বিষয়ে তেমন কিছু বুঝি না।’
জাহিদুলের মাথায় যে এমন ভাবনা আসেনি তা নয়।
সবাইকে চুপচাপ দেখে নজরুল আবার বলে ওঠেন, ‘মনে হচ্ছে এবার ওবামা জিতে যাবে। অনেকেই বলছে ওবামা জিতলে এ্যামনেস্টি জাতীয় কিছু দিতে পারে।’
আমেরিকায় থাকার ভাবনায় জাহিদুলের মাথায় হঠাৎ শত বর্ণেরপ্রদীপ জ্বলে ওঠে। সেও একদিন তার চাচাতো ভাইয়ের মতো এমন সুন্দর জীবন যাপন করতে পারবে। তাছাড়া দশ বছর বয়সী শাওনের কথা ভেবে আরো ভালো লাগে। মেয়েটা বড় ন¤্র আর মেধাবী। এ দেশে পড়ালেখা করার সুযোগ পেলে নিশ্চয় অনেক ভালো করতে পারবে। মেয়েকে ডাক্তার বানাতে চান বাবা-মা।
ভিসার মেয়াদ থাকতে থাকতে জাহিদুল দেশে গিয়ে চাকরি ছেড়ে বাড়িঘর অন্যের জিম্মায় রেখে আসে। বাঙালিদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে একটা কাজের ব্যবস্থা করেন নজরুল।
জ্যামাইকায় একটি পরিবারের সাথে থাকারও ব্যবস্থা করে দেন। শাওনকে স্কুলে ভর্তি করানো হয়। আফরোজা একটি দোকানের কাজে ঢুকে যায়।
বারাক ওবামা নির্বাচনে জিতে প্রেসিডেন্ট হন। বছর না ঘুরতে আমেরিকার অর্থনীতিতে ধস নামে। ব্যাংক ও মর্গের জালিয়াতির কারণে মন্দা নেমে আসে। চাকরির বাজারও সংকুচিত হয়ে আসে। দুইবার চাকরি হারিয়ে জাহিদুল নিজে নিজে কাজ খুঁজে নেয়ার চেষ্টা করে। কিছু কাগজপত্র না থাকায় সেখানেও বাধা পেতে থাকেন পদে পদে। অর্থনীতি ও হেলথ কেয়ার বিল সামলাতে গিয়ে হাউজে ইমিগ্রেশন রিফর্ম বিল উঠলেও তা পাসনা হয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে। কারণ কংগ্রেস তখন রিপাবলিকানের নিয়ন্ত্রণে। জাহিদুলের স্বপ্ন বিবর্ণ হতে শুরু করে।
পরিচিতজনদের পরামর্শে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেন জাহিদুল। বাংলাদেশে কোনোদিন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না তিনি। নিউইয়র্কে বাংলাদেশের রাজনৈতিক শাখা দলগুলো খুবই তৎপর। বাংলাদেশে কিছু ঘটলে এখানকার শাখাগুলি সভা করে, প্রতিবাদ বিক্ষোভ করে। জাহিদুল একটি দলে ভিড়ে যায়। প্রতিবাদ বিক্ষোভে যোগ দিয়ে ছবি তুলে সাবমিট করে। কিন্তু ইমিগ্রেশন জজ তার বাংলাদেশে কর্মকা- দেখতে চান। এই ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয় জাহিদুল। যদিও দুইবার ঢাকার অফিস থেকে দুটি প্রত্যয়নপত্র এনে দিয়েছে এখানকার নেতৃস্থানীয় একজন। এর জন্য তাকে টাকাও খরচ করতে হয়েছে। কিন্তু জাহিদুল জানত না সেসব কাগজ ছিল ভুয়া।
প্রেসিডেন্ট ওবামা ড্যাকা নামে একটি কর্মসূচী দেন তখন নির্বাহী আদেশে। অনেক ছেলেমেয়ে আছে লশশবে বাবা-মা’র সাথে আমেরিকায় এসেছে, কিন্তু তাদের বাবা-মায়ের স্ট্যাটাস আইনগতভাবে সিদ্ধ হয়নি। ড্যাকার অধীনে তাদের আনডকুমেন্টেড হিসেবে অস্থায়ী ভিত্তিতে এপয়নমেন্ট অথরাইজেশন দেয়া হয়। দুই বছর পরপর নবায়ন করতে হবে। কিন্তু সিটিজেনশিপ দেয়ার বিষয়টি এই আদেশে নেই। শাওনকে ড্যাকার কর্মসূচিতে ঢোকানো হয়।
শাওন মেয়েটা শৈশব থেকে বড় অন্তর্মুখী। দিন দিন সে বড় হচ্ছে। মেধাবী ছাত্রী হিসেবে শিক্ষকরা খুব ভালোবাসে ওকে। ৩.৯ জিপিএ পেয়ে স্কলারশিপ নিয়ে হাইস্কুল থেকে গ্রাজুয়েশন করে শাওন। নিউইয়র্ক স্টেটের গভর্নরের বদান্যতায় মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা যদি দরিদ্র হয় আর কাগজপত্র না থাকে তাহলে বিনামূল্যে সিটির কলেজে পড়ার সুযোগ পায়। শাওন বাড়ির কাছে কুইন্স বরো কমিউনিটি কলেজে ভর্তি হয়।
এটর্নি জজের নির্দেশে আরো কিছু সাপোর্টিং ডকুমেন্টস দাখিল করতে বললে, দিতে ব্যর্থ হয় জাহিদুল। এটর্নিকেও প্রয়োজনীয় টাকা দিতে পারে না। বারবার টাকা পরিশোধের কথা বলে না পেরে শেষ পর্যন্ত যোগাযোগ করাটাই ছেড়ে দেয়। একদিন ইমিগ্রেশন কোর্ট থেকে জাহিদুলের বাড়ির ঠিকানায় ডিপোর্টেশন অর্ডার আসে। তারা সেখানে জানতে চায় জাহিদুল কি আপিল করবে অর্ডার চ্যালেঞ্জ করে? এর জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। জাহিদুল কোনো উত্তর দেয় না। পুরনো বাড়ি ছেড়ে দিয়ে রাতের অন্ধকারে অন্য ঠিকানায় চলে যায় যাতে ইমিগ্রেশন এজেন্টরা তার বাড়ি না খুঁজে না পায়।
ওবামার বিদায়ের পরে ডোনাল্ড ট্রাম্প নামে একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী হিলারি ক্লিনটনকে পরাজিত করে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হন। তিনি চরমভাবে অভিবাসী ও মুসলিম বিদ্বেষী। নতুন প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব পেয়ে মুসলিম ব্যান ঘোষণা করেছেন। নির্দেশ দিয়েছেন অবৈধদের ডিপোর্টেশনের জন্য।
জাহিদুল ও আফরোজা সব সময় আতঙ্কের মধ্যে থাকে। কাগজপত্র না থাকায় তাদের দুজনেরই কাজ চলে গেছে। কারণ সব প্রতিষ্ঠানেই কর্মীদের আইডি চাওয়া হয়েছে। আনডকুমেন্টেডদের কাজ দিলে নিয়োগদাতাকে কমপক্ষে ১০ হাজার ডলার জরিমানা করা হবে।
মেধাবী হওয়ায় শাওন বাংলাদেশীদের একটি টিউটোরিয়ালে পড়ায়। কয়েকজন স্কুল ছাত্রীর বাড়িতে গিয়েও পড়ায়। সেখানেও বেশিদিন কাজ করতে পারে না।
একদিন জ্যামাইকায় সন্ধের সময় বাড়ি ফেরার পথে এক যুবক শাওনকে আচমকা পিছন থেকে ধাক্কা দেয়। পড়তে পড়তে ও বেঁচে যায়। এক কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা ওকে ধরে ফেলে। যুবক দুইবার চেঁচিয়ে বলে, ‘গো ব্যাক টু ইয়োর ওউন কান্ট্রি।’ মহিলা ওই যুবককে এফ ওয়ার্ড দিয়ে গালি দিলে সে পালিয়ে যায়। শাওনকে মহিলা পুলিশের কাছে রিপোর্ট করার পরামর্শ দেয়। কিন্তু শাওনের সাহস হয়না রিপোর্ট করার।
নতুন প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দিলেন, তিনি ওবামার নির্বাহী আদেশে চালু হওয়া ড্যাকা কর্মসূচি আর নবায়ন করবেন না। বরং যারা এই কর্মসূচিতে এনরোল করেছে তাদেরকে ডিপোর্ট করা হবে।
শাওন মুষড়ে পড়ে। বাবা-মায়ের অসহায়হত্ব, বখাটে যুবকের দ্বারা লাঞ্ছিত হবার ঘটনা ওর ভিতরে গভীর বিষাদের সৃষ্টি করে। আত্মহত্যা করে নিজের জীবন শেষ করে দেবার কথা ভাবে। পরমুহূর্তে ভাবে, ও তো বাবা-মায়ের একমাত্র ভরসা। ওর সামান্য আয়ে তবু কিছু গ্রাচ্ছাদন হয় ওদের। বাড়ি ভাড়া দেবার মতো ডলার থাকে না। কয়েক মাসের বাড়ি ভাড়া বাকি পড়েছে। তারপর হয়তো ঘর ছাড়ার নোটিশ আসবে।
আফরোজার এখন কোনো কাজ নেই। তবে জাহিদুল প্রতিদিন কাজের খোঁজে বের হয়। জ্যাকসন হাইটসের ৬৯ স্ট্রিটে দাঁড়িয়ে থাকে অন্য হিসপ্যানিকদের সঙ্গে। কন্ট্রাক্টররা গাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়ে ভারি ভারি কাজ করিয়ে নেয় ওদের দিয়ে খুব কম বেতনে। তাও প্রতিদিন কাজের কোনো নিশ্চয়তা নেই। দিনমজুরের কাজ বলে কথা!
হঠাৎ একদিন সন্ধ্যায় কাজ শেষে জাহিদুল বাসায় ফেরেন না। পরের দিনও না। ওরা প্রচ- দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। এ যে মড়ার ওপর খাড়ার ঘায়ের মতো। আফরোজা পুলিশে খবর দিতে ভয় পান। নিয়মিত বিল দিতে না পারায় জাহিদুলের ফোন লাইন কেটে দেয়া হয়েছে। শাওন কোনোভাবে বাবার হদিস করতে না পেরে শেষ ভরসা হিসেবে ছুটে যায় নজরুল চাচার কাছে। উনি ওদের বর্তমান করুণ পরিস্থিতির কথা জানতেন না। অবাক হন, অপরাধবোধেও আক্রান্ত হন। কারণ ওনার পরামর্শে জাহিদুল এই দেশে থাকার পরিকল্পনা করেছিল। নজরুল ওনার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা চালাতে থাকেন চাচাতো ভাইকে খোঁজার। কিন্তু কোনো লাভ হয় না।
বাবার ফেরার অপেক্ষা করতে করতে শাওন একসময় ঘুমিয়ে পড়ে, তারপর এক স্বপ্নে ডুবে যায়। সেখানে সে বাংলাদেশে ফিরে গেছে, সেই প্রাচীন গ্রামে যেখানে সে জন্মেছিল। কিন্তু এই গ্রামটা অনেকটা বদলে গেছে। সেখানে এক বিশাল নদী বয়ে যাচ্ছে, যা কখনো থেমে যায় না। নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে শাওন দেখে, সেখানে সব কিছু অদ্ভুতভাবে জেগে উঠছে। ঘরবাড়ি, পাখি, এমনকি মাটি পর্যন্ত কথা বলছে। শাওন অনুভব করে, তার আত্মা যেন নদীর সাথে এক হয়ে গেছে। তার চুল, পায়ের পাতায় মাটি যেন নিজের অজান্তেই তাকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
তবে ও জানে, এই পৃথিবী শুধু কল্পনা নয়, বাস্তব। শাওন যতবার তার মাতৃভূমির কাছে ফিরতে চায়, ততবারই সে অনুভব করে, কিছু একটা অদৃশ্য শক্তি তাকে আটকে রেখেছে। ও জানে না, কীভাবে সে ঐ অদৃশ্য বেষ্টনী ভেঙে বের হতে পারবে।
অবশেষে জাহিদুলের ফোন আসে শাওনের মোবাইলে। আমেরিকার কোথাও না, ওর বাবা ফোন করেছেন বাংলাদেশ থেকে।
শাওন আর ওর মা বিস্ময়ে দিশেহারা। কীভাবে কী হলো!
জ্যাকসন হাইটসে কাজের জন্য সেদিন অপেক্ষা করছিলেন জাহিদুল। ওই সময় দুইজন এজেন্ট এসে ওনাকেসহ তিনজনকে ধরে নিয়ে যায় ডিটেনশন সেন্টারে। সেখান থেকে বাংলাদেশে যাবার প্লেনে তুলে দেয়।
জাহিদুল কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, এভাবে তো ফিরতে চাইনি মা।
বাবার কথাগুলি শাওনের কানে বাজতে থাকে। ও হাঁটতে থাকে উদ্দেশ্যহীনভাবে। অদৃশ্য শক্তি যেন ওকে পথ দেখায়। শাওন রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে এমন একটি স্থান পায়, যেখানে আকাশের রঙ বদলে যায়, পৃথিবী ঘুরতে থাকে এবং সেখানে এক অদ্ভুত সুর বাজতে থাকে। সেই সুর যেন তার অন্তরকে জাগিয়ে তোলে, তাকে মনে করিয়ে দেয় যে, সে এখানে একমাত্র নয়, পৃথিবী জুড়ে কোটি কোটি মানুষ এমনই অনুভব করছে- এক অবাস্তবতার মধ্যে বাস্তবতা খুঁজে চলেছে।