ঢাকাই সিনেমার নায়িকা নুসরাত ফারিয়ার মামলার তদন্ত শেষ না হওয়ায় তিনি নির্দোষ কি না তা এখনো স্পষ্ট নয় বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, এই কারণেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সোমবার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বহু মামলায় নিরীহ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে—এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “নিরীহ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয়, সে বিষয়ে আমরা অনেকবার বলেছি। আমরা বলেছি, শুধু দুষ্কৃতিকারীরা যেন আইনের আওতায় আসে এবং শাস্তি পায়; কোনো একটা নিরীহ লোক যেন ভোগান্তির শিকার না হয়।”

তবে সাংবাদিকরা প্রশ্ন তোলেন, চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড যেতে চাওয়া নুসরাত ফারিয়াকে তাহলে কেন গ্রেপ্তার করা হলো? জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “উনার বিরুদ্ধে তো তদন্ত শেষ হয়নি। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে তো আমরা বলতে পারব না… এই অবস্থায় আবার ছেড়ে দিলে আপনারাই বলবেন যে ছেড়ে দিলাম কেন?”

রোববার সকালে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে নুসরাত ফারিয়াকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের এক হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। সোমবার সকালে শুনানি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।

একই দিন সাংবাদিকদের একজন জানতে চান, বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থের স্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনো মামলা না থাকলেও কেন তাকে আটকানো হয়েছিল?

জবাবে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “বিদেশযাত্রার ক্ষেত্রে একটা পলিসি আছে। ওই পলিসির মধ্যে যারা পড়ে, তাদের আটকানো হয়।”

আন্দালিব রহমান পার্থর স্ত্রী শেখ শাইরা শারমিন গত ১৩ মে বিদেশ যাওয়ার সময় শাহজালাল বিমানবন্দরে বাধার মুখে পড়েন। পরে রোববার তিনি থাইল্যান্ড যেতে সক্ষম হন।

নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তারকে ‘বিব্রতকর’ আখ্যা দিয়ে সোমবার ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি লেখেন, “আমাদের সরকারের কাজ প্রকৃত অপরাধীদের বিচার করা। ঢালাও মামলার ক্ষেত্রে আমাদের পরিষ্কার অবস্থান হলো, প্রাথমিক তদন্তে সংশ্লিষ্টতা না থাকলে কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে না এবং সেই নীতিই অনুসরণ করা হচ্ছিল। ফারিয়ার বিরুদ্ধে এই মামলা তো অনেকদিন ধরেই ছিল। সরকারের পক্ষ থেকে তদন্ত শেষ হওয়ার আগে গ্রেপ্তারের কোনো উদ্যোগ নেওয়ার বিষয় আমার নজরে আসেনি।”

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “তিনি কী বলেছেন, সেটা তো আর আমি জানি না। তবে একটা কথা হচ্ছে মত প্রকাশের স্বাধীনতা; যার যার ব্যক্তিগত মত প্রকাশের স্বাধীনতা তো থাকবেই।”

পোশাক শ্রমিকদের বোনাস মে মাসেই

কোরবানির ঈদ উপলক্ষে পশুর হাটসহ বিভিন্ন বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথাও জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, “এখানে গার্মেন্টসের প্রতিনিধিরা ছিল। তাদের বলা হয়েছে, তারা মে মাসের মধ্যে শ্রমিকদের বোনাস দিয়ে দেবেন। আর জুন মাসের ১ থেকে ৩ তারিখের মধ্যে বেতন দেবেন। শ্রমিকদের কোনো যৌক্তিক দাবি থাকলে তা মালিকপক্ষ পূরণ করবেন। কিন্তু অযৌক্তিক দাবি নিয়ে কেউ রাস্তা নামলে বা কোথাও ঘেরাও করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেখানে ব্যবস্থা নেবে।”

পশুরহাট বিষয়ে তিনি বলেন, “রাস্তার পাশে কোনো পশুর হাট বসানো যাবে না। পশুবাহী ট্রাক বা নৌকাগুলো কোন হাটে যাচ্ছে, তা একটি ব্যানারে লিখে ঝুলিয়ে রাখতে হবে— যাতে পথিমধ্যে এক হাটের গরু কেউ আরেক হাটে জোর করে নিয়ে যেতে না পারে। ট্রাক থেকে গরু নামাতে হবে হাটের ভেতরে, রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে পশু ওঠানামা করা যাবে না। এবার হাটে আনসার সদস্যদের মোতায়ন করা হবে। হাটপ্রতি কম বেশি ৭৫ জন করে আনসার দেওয়া হবে।”