দেশের দুইটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দল বেঁধে নির্মমভাবে হত্যার ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হয়েছে, ঘটনায় হতভম্ভ মানুষ শিউরে উঠেছে, চাইছে বিচার। একই দিনে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে গণপিটুনি নিয়ে কখনো কখনো কথা হয়। সাধারণ মানুষ কখনো বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। এরপর সেই খবর কেউ রাখে না, হয় না বিচার।
১৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন মানুষকে পেট পুরে খাইয়ে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গ্রিলে বেঁধে পিটিয়ে হত্যা করেছে। অন্য আরেকজনকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক থেকে ধরে নিয়ে একাধিকবার পিটিয়ে আধমরা করা হয়েছে, হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
কিছুদিন আগেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতাকে পিটিয়ে হত্যাকে ঘিরে সমালোচনা হয়। ওই নেতা তার সদ্যোজাত সন্তানের জন্য ওষুধ কিনতে যান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী আব্দুল গফুর বলেন, ‘চোর সন্দেহে যারা পিটিয়ে হত্যা করেছে তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। এসব বন্ধ করা এবং জড়িতদের আইনের আওতায় আনা অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম চ্যালেঞ্জ।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, তাদের সঙ্গে যা হয়েছে তা বর্বর, বিকারগ্রস্ত, নৈরাজ্যপূর্ণ সমাজ মনস্তত্বেরই গল্প। দ-প্রাপ্ত আসামিকেও ন্যায়বিচারের সুযোগ দিতে হবে, প্রতিশোধ পরায়ণ মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। প্রতিশোধ পরায়ণতা ফ্যাসিজম তৈরি করে। যেকোনো উপায়ে যেকোনো হত্যাকা-ের সুষ্ঠু বিচার হতে হবে।
কয়েকদিনে ঘটে যাওয়া ঘটনা সম্পর্কে সোশ্যাল এক্টিভিস্ট চারু হক সংবাদকে বলেন, ‘গণপিটুনির ঘটনা ঘটে প্রচলিত আইন-কানুনে আস্থা হারানোর কারণে। আর, আস্থার এই সংকট এতটাই ভয়ানক ছিল যে বিগত আওয়ামী আমলে এইভাবে ১ হাজারেরও বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। এমনকি বিচারের ভার তুলে নিতে সে সময়কার রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকেও গণপিটুনির আহবান জানাতে দেখা গেছে। যার মধ্য দিয়ে তিনি শুধু আইন-কানুন অস্বীকার নয়, খোদ রাষ্ট্রকে- এবং এই অর্থে নিজের পদগত অস্তিত্বকেই অস্বীকার করেছিলেন।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোশরেকা অদিতি হক সংবাদকে বলেন, ‘বিচার বহির্ভূত হত্যাকা- যে রূপেই হোক না কেন তা ঘৃণ্য অপরাধ। এভাবে দল বেঁধে খুনের গল্পটা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগকর্মী শামিমের সঙ্গে হোক বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মানসিক ভারসাম্যহীন ভবঘুরে তোফাজ্জলের সঙ্গে, শেষ পর্যন্ত এটা একটা বর্বর, বিকারগ্রস্ত, নৈরাজ্যপূর্ণ সমাজ মনস্তত্বেরই গল্প।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক সংবাদকে বলেন, ‘দেশে যে পরিস্থিতি চলছে তা এক কথাই গ্রহণযোগ্য নয়, যা হচ্ছে একন কোন রকমের কোন বিচারহীন হত্যাকা-ই তো আমরা চাই না। গত ১৫ বছরে এ ধরনের অনেক বিচারহীন হত্যাকা- ঘটেছে। এ রকম বিচারহীন হত্যাক- গণঅদ্ভুত্থানের পর তো আমরা চাই না। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এ ব্যাপারে একটা কড়া অবস্থান থাকা দরকার।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের সময়ে এসেছে এই জায়গাগুলোকে ব্রেক করার। তাছাড়া এমন একটার পর একটা ঘটনা চলতেই থাকবে। আমরা যে নতুন বাংলাদেশের কথা বলছি, সেই বাংলাদেশ গড়তে গেলে গত ১৫ বছরের বাংলাদেশে যা দেখছি সেটা আমরা চাই না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাদেকা হালিম সংবাদকে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ঘটনা ঘটেছে সেটা সমাজ বিজ্ঞানী হিসেবে মানুষ হিসেবে আর একজন শিক্ষক হিসেবে আমি অত্যন্ত মর্মাহত। এ ঘটনায় আমি বাকরুদ্ধ, প্রতিবাদ করার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছি। একারণেই বলব; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তো একটা জনগণের জায়গা। এখানে সাবেক বর্তমান শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ সবাই প্রবেশ করতে পারে কারণ একানে কোনো গেইট সিস্টেম নাই। এটা পুরাতন একটি বিশ্ববিদ্যালয় এখানে মানুষ দেখতে আসে।’
সাদেকা হালিম বলেন, ‘ছাত্ররা যে আচরণটা করলো, যে কারণে ছেলেটি মারা গেল এই প্রিসিডেন্টটা ভালো হলোনা। তবে, সারাদেশের বৈশম্যবিরোধী শিক্ষার্থীর গ্রহণযোগ্যতার জায়গাটা হালকা হয়ে গেল। তবে তাদের যে দুইজন উপদেষ্টা তার কিন্তু খুব সুস্পষ্টবাবে বলেছে; তারা সুশাসন চায়, তারা শিক্ষাজ্ঞনে শান্তি চায়, তারা শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরতে চায়। তারা কোনো অন্যায় অবিচার দেখতে পারে না, তারা ?দুর্নীতি বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এই তোফাজ্জলকে মনে হলো অনেকেই চিনে। অনেকেই তার জন্য ফোনও করেছে। বলা হয়েছে; সে মানুসিকভাবে ভারসাম্যহীন। তাকে যে চোর সাবস্ত করা হলো তার যে মুক্তিপণ চাওয়া হলো সেটার বেসিসও আমরা জানিনা। ফজললু হক হলে কী হলো সেটা মনেকরি একটা সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার।’
ড. মোশরেকা অদিতি হক আরো বলেন, ‘তোফাজ্জলের মতো ভাসমান মানুষ যেহেতু ক্ষমতা বা সোশ্যাল ক্যাপিটালের কোন বর্গেই পড়ে না, তাই চড়াও হওয়াও খুব সহজ। আর দলীয় পরিচয় তো অনেক পরের আলাপ, মানুষ হিসেবেই এদেশের প্রতিটি মানুষের ন্যূনতম মানবিক মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকারের কথা বলেই জুলাই গণঅভ্যুত্থান সফল হয়েছে। মব জাস্টিস বলে কোন হত্যাকা-ের দায় এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। যেকোন উপায়ে যেকোন হত্যাকা-ের সুষ্ঠু বিচার হতে হবে। এগুলো মব ভায়োলেন্স, ইন দ্য মোস্ট ব্রুটাল ফর্ম।’
চারু হক বলেন, ‘অস্বীকৃত সেই রাষ্ট্রের প্রায় সমস্ত এপারেটাস, যেমন- পুলিশ, প্রশাসন অনেকটা একইরকমভাবে বহাল আছে। গোদা পালিয়ে গেলেও তার পালেরা রয়ে গেছে সমাজে, সর্বজনের মাঝে। সুতরাং সামাজিক সংহতি চাইলে এখন সময়ের আইনকানুন পুলিশ প্রশাসন সংস্কার করতেই হবে। মানুষের অন্তরে তার আকাক্সিক্ষত রাষ্ট্রকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
মৃত্যুদ- প্রাপ্ত আসামিকেও ডিফেন্ট করা সুযোগ দিতে হবে উল্লেখ করে সাদেকা হালিম বলেন, ‘দেশে এখন পরিবর্তিত অবস্থায় বারবার বলা হচ্ছে আমরা বৈষম্য করবো না। অর্থাৎ অতীতে আমরা যেসকল বৈষম্য দেখেছি আমরা সে বৈষম্য থেকে উতরে উঠতে চাই।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে শিক্ষার্থীদের মারধরে তোফাজ্জল হোসেন মৃত্যু হয়েছে। ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে ঢাবি প্রশাসন জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছে। গঠন করেছে তদন্ত কমিটি, করেছে মামলা। পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত ক্যাম্পাসে ছাত্র-শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ধরনের দলীয় রাজনৈতিক কর্মকা- বন্ধ ঘোষণা করেছে।
জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শামীম হত্যার ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন ও ৮ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করার কথা জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ডেপুটি রেজিস্ট্রার (সাধারণ প্রশাসন) মো. মাহতাব-উজ-জাহিদ। প্রতœতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক স্বাধীন সেনকে প্রধান করে করা এই তদন্ত কমিটিকে ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
দেশের দুইটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দল বেঁধে নির্মমভাবে হত্যার ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হয়েছে, ঘটনায় হতভম্ভ মানুষ শিউরে উঠেছে, চাইছে বিচার। একই দিনে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে গণপিটুনি নিয়ে কখনো কখনো কথা হয়। সাধারণ মানুষ কখনো বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। এরপর সেই খবর কেউ রাখে না, হয় না বিচার।
১৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন মানুষকে পেট পুরে খাইয়ে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গ্রিলে বেঁধে পিটিয়ে হত্যা করেছে। অন্য আরেকজনকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক থেকে ধরে নিয়ে একাধিকবার পিটিয়ে আধমরা করা হয়েছে, হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
কিছুদিন আগেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতাকে পিটিয়ে হত্যাকে ঘিরে সমালোচনা হয়। ওই নেতা তার সদ্যোজাত সন্তানের জন্য ওষুধ কিনতে যান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী আব্দুল গফুর বলেন, ‘চোর সন্দেহে যারা পিটিয়ে হত্যা করেছে তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। এসব বন্ধ করা এবং জড়িতদের আইনের আওতায় আনা অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম চ্যালেঞ্জ।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, তাদের সঙ্গে যা হয়েছে তা বর্বর, বিকারগ্রস্ত, নৈরাজ্যপূর্ণ সমাজ মনস্তত্বেরই গল্প। দ-প্রাপ্ত আসামিকেও ন্যায়বিচারের সুযোগ দিতে হবে, প্রতিশোধ পরায়ণ মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। প্রতিশোধ পরায়ণতা ফ্যাসিজম তৈরি করে। যেকোনো উপায়ে যেকোনো হত্যাকা-ের সুষ্ঠু বিচার হতে হবে।
কয়েকদিনে ঘটে যাওয়া ঘটনা সম্পর্কে সোশ্যাল এক্টিভিস্ট চারু হক সংবাদকে বলেন, ‘গণপিটুনির ঘটনা ঘটে প্রচলিত আইন-কানুনে আস্থা হারানোর কারণে। আর, আস্থার এই সংকট এতটাই ভয়ানক ছিল যে বিগত আওয়ামী আমলে এইভাবে ১ হাজারেরও বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। এমনকি বিচারের ভার তুলে নিতে সে সময়কার রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকেও গণপিটুনির আহবান জানাতে দেখা গেছে। যার মধ্য দিয়ে তিনি শুধু আইন-কানুন অস্বীকার নয়, খোদ রাষ্ট্রকে- এবং এই অর্থে নিজের পদগত অস্তিত্বকেই অস্বীকার করেছিলেন।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোশরেকা অদিতি হক সংবাদকে বলেন, ‘বিচার বহির্ভূত হত্যাকা- যে রূপেই হোক না কেন তা ঘৃণ্য অপরাধ। এভাবে দল বেঁধে খুনের গল্পটা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগকর্মী শামিমের সঙ্গে হোক বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মানসিক ভারসাম্যহীন ভবঘুরে তোফাজ্জলের সঙ্গে, শেষ পর্যন্ত এটা একটা বর্বর, বিকারগ্রস্ত, নৈরাজ্যপূর্ণ সমাজ মনস্তত্বেরই গল্প।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক সংবাদকে বলেন, ‘দেশে যে পরিস্থিতি চলছে তা এক কথাই গ্রহণযোগ্য নয়, যা হচ্ছে একন কোন রকমের কোন বিচারহীন হত্যাকা-ই তো আমরা চাই না। গত ১৫ বছরে এ ধরনের অনেক বিচারহীন হত্যাকা- ঘটেছে। এ রকম বিচারহীন হত্যাক- গণঅদ্ভুত্থানের পর তো আমরা চাই না। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এ ব্যাপারে একটা কড়া অবস্থান থাকা দরকার।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের সময়ে এসেছে এই জায়গাগুলোকে ব্রেক করার। তাছাড়া এমন একটার পর একটা ঘটনা চলতেই থাকবে। আমরা যে নতুন বাংলাদেশের কথা বলছি, সেই বাংলাদেশ গড়তে গেলে গত ১৫ বছরের বাংলাদেশে যা দেখছি সেটা আমরা চাই না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাদেকা হালিম সংবাদকে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ঘটনা ঘটেছে সেটা সমাজ বিজ্ঞানী হিসেবে মানুষ হিসেবে আর একজন শিক্ষক হিসেবে আমি অত্যন্ত মর্মাহত। এ ঘটনায় আমি বাকরুদ্ধ, প্রতিবাদ করার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছি। একারণেই বলব; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তো একটা জনগণের জায়গা। এখানে সাবেক বর্তমান শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ সবাই প্রবেশ করতে পারে কারণ একানে কোনো গেইট সিস্টেম নাই। এটা পুরাতন একটি বিশ্ববিদ্যালয় এখানে মানুষ দেখতে আসে।’
সাদেকা হালিম বলেন, ‘ছাত্ররা যে আচরণটা করলো, যে কারণে ছেলেটি মারা গেল এই প্রিসিডেন্টটা ভালো হলোনা। তবে, সারাদেশের বৈশম্যবিরোধী শিক্ষার্থীর গ্রহণযোগ্যতার জায়গাটা হালকা হয়ে গেল। তবে তাদের যে দুইজন উপদেষ্টা তার কিন্তু খুব সুস্পষ্টবাবে বলেছে; তারা সুশাসন চায়, তারা শিক্ষাজ্ঞনে শান্তি চায়, তারা শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরতে চায়। তারা কোনো অন্যায় অবিচার দেখতে পারে না, তারা ?দুর্নীতি বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এই তোফাজ্জলকে মনে হলো অনেকেই চিনে। অনেকেই তার জন্য ফোনও করেছে। বলা হয়েছে; সে মানুসিকভাবে ভারসাম্যহীন। তাকে যে চোর সাবস্ত করা হলো তার যে মুক্তিপণ চাওয়া হলো সেটার বেসিসও আমরা জানিনা। ফজললু হক হলে কী হলো সেটা মনেকরি একটা সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার।’
ড. মোশরেকা অদিতি হক আরো বলেন, ‘তোফাজ্জলের মতো ভাসমান মানুষ যেহেতু ক্ষমতা বা সোশ্যাল ক্যাপিটালের কোন বর্গেই পড়ে না, তাই চড়াও হওয়াও খুব সহজ। আর দলীয় পরিচয় তো অনেক পরের আলাপ, মানুষ হিসেবেই এদেশের প্রতিটি মানুষের ন্যূনতম মানবিক মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকারের কথা বলেই জুলাই গণঅভ্যুত্থান সফল হয়েছে। মব জাস্টিস বলে কোন হত্যাকা-ের দায় এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। যেকোন উপায়ে যেকোন হত্যাকা-ের সুষ্ঠু বিচার হতে হবে। এগুলো মব ভায়োলেন্স, ইন দ্য মোস্ট ব্রুটাল ফর্ম।’
চারু হক বলেন, ‘অস্বীকৃত সেই রাষ্ট্রের প্রায় সমস্ত এপারেটাস, যেমন- পুলিশ, প্রশাসন অনেকটা একইরকমভাবে বহাল আছে। গোদা পালিয়ে গেলেও তার পালেরা রয়ে গেছে সমাজে, সর্বজনের মাঝে। সুতরাং সামাজিক সংহতি চাইলে এখন সময়ের আইনকানুন পুলিশ প্রশাসন সংস্কার করতেই হবে। মানুষের অন্তরে তার আকাক্সিক্ষত রাষ্ট্রকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
মৃত্যুদ- প্রাপ্ত আসামিকেও ডিফেন্ট করা সুযোগ দিতে হবে উল্লেখ করে সাদেকা হালিম বলেন, ‘দেশে এখন পরিবর্তিত অবস্থায় বারবার বলা হচ্ছে আমরা বৈষম্য করবো না। অর্থাৎ অতীতে আমরা যেসকল বৈষম্য দেখেছি আমরা সে বৈষম্য থেকে উতরে উঠতে চাই।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে শিক্ষার্থীদের মারধরে তোফাজ্জল হোসেন মৃত্যু হয়েছে। ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে ঢাবি প্রশাসন জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছে। গঠন করেছে তদন্ত কমিটি, করেছে মামলা। পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত ক্যাম্পাসে ছাত্র-শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ধরনের দলীয় রাজনৈতিক কর্মকা- বন্ধ ঘোষণা করেছে।
জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শামীম হত্যার ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন ও ৮ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করার কথা জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ডেপুটি রেজিস্ট্রার (সাধারণ প্রশাসন) মো. মাহতাব-উজ-জাহিদ। প্রতœতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক স্বাধীন সেনকে প্রধান করে করা এই তদন্ত কমিটিকে ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।