alt

মুক্ত আলোচনা

মুক্তির কোন বয়স নেই

রহিমা আক্তার মৌ

: বুধবার, ০৩ এপ্রিল ২০১৯

‘স্বাধীনতার বয়স ৪৮ বছর, আমার বয়স ৪৩ বছর। কিন্তু মুক্তির কোন বয়স নেই, কারণ মুক্তির আজও জন্মই হয়নি।’ স্বাধীনতা দিবসের পূর্বক্ষণে ২৫ মার্চ নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে কথাগুলো লিখি। দীর্ঘ কুঁড়ি দিন পর কলম হাতে নিয়েছি, ৫ মার্চের পর পত্রিকায় লেখা আসে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস নিয়ে। অনেকে বলে সংসার সামলিয়ে এত লেখার সময় পাই কোথায়? আসলে নিজের কাজের সঙ্গে রুটিন করে নিলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আর অবসর বলতে কোন সময়ই নেই, ঘর সংসার আর পরিবারের দায়িত্ব পালনের পর যেটুকু সময় পাই তাকেই কাজে লাগাই। বড় মেয়ে রৌদ্রের বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, এতটাই ব্যস্ত ছিলাম নিজের লেখালেখির পরিচয়টা ভুলেই গেছি। ব্যস্ততা কমলেই আবার ফিরে এলাম লেখায়।

স্বাধীনতার ৪৮ বছর বয়সের সঙ্গে মুক্তির বয়সের কথা বলায় অনেকে ভিন্ন ভিন্ন মতামত দিতে থাকে। আমি শুধু দেখেই যাই, আর ভাবি বাবার কিছু কথা। আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধের একজন কমান্ডার। বাবা ১৯৬৯ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ’৭০-এর নির্বাচন আর নির্বাচনপরবর্তী অনেক কিছুই বাবা নিজ চোখে দেখেন। সেনাবাহিনী এলাকায় ছিলেন বলে বাবা খবরগুলো একটু আগেই পেতেন। আমার দুর্ভাগ্য বাবাকে নিয়ে আজও আমি কোন বই লিখিনি, আল্লাহ চায় তো এবার একটা কাজ করব। বাবার কাছেই শোনা কথা, ১৯৭১ সালের ১৭ মার্চ বাবা নিজের অস্ত্র নিয়ে বেরিয়ে আসেন। সোজা চলে যান বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক কার্যালয়ে। সেখানে গিয়েই দেখেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে মিলাদ ও দোয়া পড়ানো হচ্ছে। বাবা নিজেও প্রিয় নেতাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান। বাবার সেই কথাগুলো দিয়ে লিখেছি- ‘শুভ জন্মদিন নেতা’। লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে চলচ্চিত্র অধিদপ্তরের অধীনে প্রকাশিত ‘নবারুণ’ পত্রিকার মার্চ ২০১৯ সংখ্যায়।

বাবার সঙ্গে মাঝে কথা হয় আমার, বাবা আমাকে সব বলতেও চান না। যদি কোন অনিয়ম আমি লিখে ফেলি। যে লোকটাকে সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে এলাকার সব্বাই চিনত জানত, যে লোকটা গ্রামের অনেক অনেক যুবককে মুক্তিযুদ্ধের জন্যে ট্রেনিং দেন তাকেই অমুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নেয়া হয়। বাবা এসব আমায় বলেন না। আমি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বাবাকে জিজ্ঞেস করি। বাবা আমায় বলতে লজ্জা পান, বাবার মতো ব্যক্তিকে মুক্তিযুদ্ধের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়। আমরা চার ভাইবোন সবাই নিজ নিজ জায়গায় ভালোই আছি, আমি ছাড়া আমার বাকি তিন-ভাইবোনকে দিয়েই মা রত্নগর্ভা হতে পারেন। আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়ে কোন সুযোগ-সুবিধা নিইনি। তবুও তালিকা নেই। তিন বছর আগে অমর একুশে বইমেলায় কবি ও আবৃতি শিল্পী বদরুল আহসান খান অন্য একজনের সিনিয়রের সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেন- ‘রহিমা একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’। আমি কিছুটা তিরস্কারভাবে জবাব দিই। অতঃপর পরিচয় পর্ব শেষ হলে জানতে পারি সেই সিনিয়র মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে আছেন। তিনি চতুর্থতম বিসিএস ক্যাডার। কিছু কথা শুনে উনি নিজেই আমাকে উনার ভিজিটিং কার্ড দেন। বাবাকে নিয়ে দেখা করতে বলেন। আমি বাবাকে নিয়ে যেতে যেতে উনি দায়িত্ব থেকে সরে যান। যাবার সময় উনার ভিজিটিং কার্ডটি নিয়ে যাই। বাবা আর আমি একবার ৫ম তালায় আবার ৬ষ্ঠ তালায় দৌড়াই। বাবা আমায় বলেন- ‘মা আজ আর ডায়াবেটিসের ওষুধ খেতে হবে না, দৌড়ানিতেই কাজ হবে।’ যদি স্বাধীন দেশে মুক্তিই আছে তাহলে একজন কমান্ডার অমুক্তিযোদ্ধার তালিকায় যায় কী করে? আর দিন দিন মুক্তিযোদ্ধার তালিকা বড় হয় কী করে?

ঘুরে ঘুরে আমরা একজন অফিসারের কাছে যাই, সব খুলে বলি। উনাদের কাছে সব তথ্য ও আছে। আমি সেই সিনিয়রের পরিচয় দিই, কার্ড দেখাই। ৩২-৩৩তম বিসিএসে এই অফিসার পাশ করেন। উনি সিনিয়রের কার্ড দেখে বলেন- ‘উনি তো চতুর্থতম ব্যাচের’। একজন জুনিয়র তার সিনিয়রকে নিয়ে কিভাবে কথা বলবেন, তা সেই কর্মকর্তার জানা ছিল না। অতঃপর বছরখানেক আগে বাবার নাম মুক্তিযোদ্ধার লিস্টে উঠে, কিন্তু এখনও ভাতা বন্ধ আছে। প্রিয় পাঠক প্রশ্ন করতে পারেন- লেখার শিরোনামের সঙ্গে এ কথাগুলোর সম্পর্ক কী?

সম্পর্ক একটাই আমাদের মুক্তির, কোথাও নেই স্বচ্ছতা, স্বচ্ছতা থাকলে একজন কমান্ডারের নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ পড়ে কী করে?

প্রিয় পাঠক, সময়টা এখন ২৫ মার্চ রাত নয়টা কুঁড়ি মিনিট। একটু আগেই দেখলাম প্রিয় রূপা মাহমুদ ভাবি নিজের টাইমলাইনে দিয়েছেন- ‘আসুন রাত নয়টায় আমরা এক মিনিট ঘরের আলো বন্ধ রাখি।’ গণহত্যায় যারা শহীদ হয়েছেন তাদের স্মরণেই এমন কথা লেখা। গভীর শ্রদ্ধা সেই সব বীর শহীদদের। যদি মুক্তিই আছে আমাদের যদি মুক্তির জন্ম হয়ে থাকে তাহলে কেনো স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্লোগান ভাসে-

অ্যাকশন অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন। কেন রাত দশটায় মাইকে বাজানো হয় জাতীয় সংগীত। কেন স্বাধীনতা দিবসে বিজয় দিবসে দেশাত্মবোধক গানের পাশাপাশি হিন্দি গান অশ্লীল গান বেজে উঠে এই স্বাধীন বাংলাদেশে। এই রাতে এই দিনে তো আমরা আমাদের জন্য আমাদের পরের প্রজন্মের জন্য গণহত্যার আসল তথ্য প্রকাশ করব, তুলে ধরব।

আমরা স্বাধীন দেশের রাজধানীতে বসবাস করি। আসলে এই শহরে বসবাস করার কোন যোগ্যতা আমাদের নেই। কারণ বেঁচে থাকার জন্যে আমাদের একেকজনকে ফাইটার হতে হবে। আমরা তো ফাইটার নই, তাই এই শহর আমাদের জন্যে নয়। যে শহরে এগারোতালার উপরে পানি দেয়ার যন্ত্র নেই, সেই দেশে ২২-২৪ তালা ভবন নির্মাণ হয় কী করে? এমন আগুন আমাদের জন্য নতুন কিছু না। ক’দিন পরপরই ঘটছে। তারপরও আমাদের প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা নেই! দুর্ঘটনা ঘটলেই বলা হয়, ‘আমাদের ফায়ার ফাইটার যথেষ্ঠ না।’ প্রশ্ন হলো- ঘটনা মোকাবেলা করার সরঞ্জামই বা কি আছে আমাদের?

রানা প্লাজা ভেঙ্গে পড়লে আমরা রড সিমেন্টের দোষ দিই, পুরান ঢাকায় আগুন লাগলে আমরা কেমিক্যালের দোষ দিই। বহুতল ভবনে আগুন লাগলে আমরা বাইরের সিকিউরিটি সিঁড়ির কথা বলি। পানির অভাবের কথা বলি। আগুন লাগতেই পারে, দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে, কিন্তু তাকে মোকাবেলা করার জন্যে প্রস্তুত থাকা মানেই আমাদের মুক্তি। কোটি কোটি টাকা দিয়ে ভবন তৈরি করা হয়, কয়েক হাজার টাকায় বাইরের সিঁড়ি দেয়া হয় না। প্রতি মাসে ভাড়া বাবদ লাখ লাখ টাকা আয় করে তবুও আগুন নিভানোর যন্ত্র তাদের থাকে না। শত শত লোক কাজ করে তাদের শিল্পপতি বানায় অথচ ছাদের গেটে তারা মরণ যন্ত্রের তালা ঝুলিয়ে রাখে। তবে কি এই আমাদের স্বাধীন দেশ? কিভাবে বলতে পারি আমাদের মুক্তি আছে। কিভাবে বলি মুক্তিরও বয়স আছে।

যদি আমাদের মুক্তিই আছে তাহলে কেন মুকুল মজুমদার তার টাইমলাইনে লিখেন- ‘স্যাটেলাইট যখন মহাকাশে! তখন ২২তলা থেকে নামার একটা সিঁড়ি নেই। অথচ আমরা বাস করছি একটি উন্নতশীল দেশে। আমরা বাস করছি বিশ্বের ২য় সিঙ্গাপুরে। আমরা বাস করছি সেই গ্রামে যে গ্রাম কিছুদিন পর শহর হয়ে যাবে! আর তখন আমরাও ৭ তলা, ১৫ তলা কিংবা ২২ তলায় জ্বলে পুড়ে মরব।’

প্রাণে বাঁচতে মানুষের এই প্রাণান্তকর চেষ্টা, ভেতরে আটকে থেকে ফেসবুকের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা, অক্সিজেন মাস্কের জন্য ইশারা দেয়া, এয়ার লিফট পাঠিয়ে উদ্ধার করার আকুতি, বাঁচার জন্যে বিদ্যুতের তার বেয়ে নামার চেষ্টা- এসব না পাওয়াই বলে দেয় আমাদের মুক্তি নেই। মুক্তির কোন জন্মই হয়নি, বয়স হবে কী করে?

সাংবাদিক জয়নাল আবেদীনের লেখায় জানতে পারিÑ রাজউকের অনুমোদন ছিল ১৮ তলা। সেটি না মেনে করা হয় ২৩ তলা। এছাড়া ১৮ তলার যে মূল নকশা অনুমোদিত ছিল, সেটিও হেরফের হয়েছিল এফআর টাওয়ার নির্মাণে। ওপরের অননুমোদিত অন্তত তিনটি ফ্লোর মাড়িয়ে কেউ যেন ছাদে উঠতে না পারে, সেজন্য ছাদের দরজা তালাবদ্ধ থাকত সর্বক্ষণ। বৃহস্পতিবার ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের পর বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্যগুলো। এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের পর ভবনটির নকশাবহির্ভূত কাজ এবং অনুমোদনহীন আরও পাঁচটি ফ্লোর নির্মাণের বিষয়টি নজরে আসে রাজউকের। সংস্থাটির চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ‘আজকে আগুন লাগার পর আমরা যখন তথ্য ঘাঁটতে গেছি, তখন আমরা এটা পেয়েছি।’

রাজউক চেয়ারম্যান জানান, ‘যে ভবনটিতে আগুন লাগে, সেটির ফাইল আমি যতটুকু দেখেছি, ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর এটিকে একটি ১৮ তলা ভবন হিসেবে করার জন্য নকশা অনুমোদন করা হয়। কিন্তু এ ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে ২৩ তলা। শুধু তাই নয়, রাউজকের অনুমোদিত নকশা থেকে এই ভবনের নকশায় আরও অনেক বিচ্যুতি রয়েছে।’

রাজউকের চেয়ারম্যান বিবিসি বাংলাকে আরও জানান, এফআর টাওয়ারের মালিকপক্ষ ২০০৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি রাজউকের কাছে আরেকটি নকশা পেশ করে, যার সঙ্গে রাজউকে সংরক্ষিত নকশার কোন মিল নেই। এই ভবন নির্মাণের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল, তাদের সবারই শাস্তি হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। ভবনটি এ কারণেই অনিরাপদ ছিল কি-না, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমাদের নকশা থেকে বিচ্যুতির কারণে ভবনটি অবশ্যই অনিরাপদ হতে পারে। কারণ আমাদের নকশায় অগ্নিনিরাপত্তা থেকে শুরু করে সব নিরাপত্তার বিষয়টি দেখা হয়।’

এফআর টাওয়ারের একজন দোকান মালিকের সঙ্গে কথা বলে নিউজ৭১ জানতে পেরেছে যে, বর্তমানে এ ভবনটির আনুষঙ্গিক দায়িত্বে আছেন জমির মালিক ফারুক হোসেনের স্ত্রী সাবিনা ফারুক; যিনি একইসঙ্গে বনানীর একটি স্কুলের অধ্যক্ষ। অগ্নিকান্ডের বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে ওই দোকান মালিক নিশ্চিত করেছেন, রাজউকের নকশাবহির্ভূত ভবন নির্মাণের কারণে এ টাওয়ারের কোনো দোকান মালিককেই রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়নি। তবে তাদের প্রত্যেককে দোকান বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে সময়মতো।

স্বাধীন দেশে যদি মুক্তিই আছে তাহলে প্রভাষ আমিন কেন লিখলেনÑ ‘বাংলাদেশে ফায়ার সার্ভিসের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। এনটিভি ভবনে আগুন লাগার পর উঁচু মইয়ের অভাব নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। তারপর কেনাও হয়েছে। কিন্তু এখনও বাংলাদেশে সর্বোচ্চ মই ১৪ তলা উঁচু। এফআর টাওয়ারের সপ্তম তলায় আগুন না লেগে যদি ২০ তলায় লাগতো; তাহলে তো ফায়ার ফাইটারদেরও উৎসুক জনতার মতো চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া কিছু করার থাকত না। উঁচু মই থাকলে এফআর টাওয়ার থেকে আরও দ্রুত আরও বেশি মানুষকে উদ্ধার করা সম্ভব হতো।

আমরা কথায় কথায় বলি, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। সাবমেরিন, পদ্মা সেতু, স্যাটেলাইট- জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে আমাদের সক্ষমতার বার্তা পৌঁছে দেয় সারা বিশ্বে। কিন্তু সব সময় নিরাপত্তাই প্রথম বিবেচনা। মানুষের জীবনের চেয়ে মূল্যবান আর কিছু নেই। বাংলাদেশে এখন ১৪ তলার চেয়ে উঁচু ভবন আছে অনেক। পূর্বাচলে হচ্ছে আইকনিক টাওয়ার। উঁচু ভবন বানানোর আগে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ফায়ার সার্ভিসকে আধুনিক ও আরও বেশি সক্ষম করতে হবে। স্যাটেলাইটের চেয়ে উঁচু মই অনেক বেশি জরুরি।

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে বলব- ভবনগুলো তৈরির সময় কোথায় কি ছিল আমাদের এসবের দায়িত্বে থাকা লোকেরা। নাকি মোটা অংকের টাকা পেয়ে শান্তির ঘুম দিয়েছেন। যে দেশে আইন নেই সে দেশে মুক্তির জন্ম হবে কী করে। যে দেশে একটা মেয়েকে ধর্ষণ করার পরও আইন-আদালত আর প্রমাণের নামে বারবার ধর্ষণ করা হয়- সে দেশে মুক্তির জন্ম কি আসলেই হবে কোন এক সময়ে। স্বাধীনতার ৪৮-৫৮ কিংবা ৬০ বছর বয়সে।

[লেখক : সাহিত্যিক, কলামিস্ট ও প্রাবন্ধিক]

rbabygolpo710@gmail.com

দৈনিক সংবাদ : ৩ এপ্রিল ২০১৯, বুধবার, ৭ এর পাতায় প্রকাশিত

মুজিবনগরে স্বাধীনতার সূর্যোদয়

বঙ্গাব্দ প্রচলনের ইতিকথা

পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব

কেউতো অপেক্ষায় নেই

ফরগেট মি নট

ছবি

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বীমা শিল্পের গুরুত্ব

একুশে ফেব্রুয়ারি আত্মপরিচয়ের দিন

দিদি, আপা, “বু” খালা

হিজল-করচ-আড়াংবন

ছবি

শেখ হাসিনা, এক উৎসারিত আলোকধারা

মনমাঝি

সেই ইটনা

ছবি

আংকর ওয়াট : উন্নত সভ্যতার স্মৃতিচিহ্ন যেখানে

নিয়ত ও নিয়তি

হারিয়ে যাওয়া ট্রেন

টম সয়ার না রবিনহুড

ছবি

‘ঝড়-বৃষ্টি আঁধার রাতে, আমরা আছি তোমার সাথে’

বাংলাদেশ-জাপান সহযোগিতা স্মারক: স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অনন্য মাইলফলক

রাষ্ট্রের কূটনৈতিক মিশনের পরিবর্তন আশু প্রয়োজন

কুয়েতের জীবনযাত্রার সাতকাহন: পর্ব-১-বিয়ে

বিবেকের লড়াই

ছবি

ছবি যেন শুধু ছবি নয়

বাত ব্যথার কারণ ও আধুনিক চিকিৎসা

ছবি

স্বাধীন স্বদেশে মুক্ত বঙ্গবন্ধু

ছবি

মহান নেতার স্বভূমিতে ফিরে আসা

ছবি

মেট্রোরেল : প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী চিন্তার ফসল

ছবি

আমার মা

ডিজিটাল বাংলাদেশ: প্রগতিশীল প্রযুক্তি, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নতি

ছবি

৩ নভেম্বর: ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের ধারাবাহিকতা

দেশের ইতিহাসে কলঙ্কজনক দ্বিতীয় অধ্যায়

এইচ এস সি ও সমমান পরীক্ষার্থীদের অনুশীলন

ছবি

ত্রিশ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়

শিল্প কারখানার পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় এনভায়রনমেন্টাল ইন্জিনিয়ারিং

অসুর: এক পরাজিত বিপ্লবী

অসুর জাতির ইতিহাস

tab

মুক্ত আলোচনা

মুক্তির কোন বয়স নেই

রহিমা আক্তার মৌ

বুধবার, ০৩ এপ্রিল ২০১৯

‘স্বাধীনতার বয়স ৪৮ বছর, আমার বয়স ৪৩ বছর। কিন্তু মুক্তির কোন বয়স নেই, কারণ মুক্তির আজও জন্মই হয়নি।’ স্বাধীনতা দিবসের পূর্বক্ষণে ২৫ মার্চ নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে কথাগুলো লিখি। দীর্ঘ কুঁড়ি দিন পর কলম হাতে নিয়েছি, ৫ মার্চের পর পত্রিকায় লেখা আসে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস নিয়ে। অনেকে বলে সংসার সামলিয়ে এত লেখার সময় পাই কোথায়? আসলে নিজের কাজের সঙ্গে রুটিন করে নিলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আর অবসর বলতে কোন সময়ই নেই, ঘর সংসার আর পরিবারের দায়িত্ব পালনের পর যেটুকু সময় পাই তাকেই কাজে লাগাই। বড় মেয়ে রৌদ্রের বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, এতটাই ব্যস্ত ছিলাম নিজের লেখালেখির পরিচয়টা ভুলেই গেছি। ব্যস্ততা কমলেই আবার ফিরে এলাম লেখায়।

স্বাধীনতার ৪৮ বছর বয়সের সঙ্গে মুক্তির বয়সের কথা বলায় অনেকে ভিন্ন ভিন্ন মতামত দিতে থাকে। আমি শুধু দেখেই যাই, আর ভাবি বাবার কিছু কথা। আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধের একজন কমান্ডার। বাবা ১৯৬৯ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ’৭০-এর নির্বাচন আর নির্বাচনপরবর্তী অনেক কিছুই বাবা নিজ চোখে দেখেন। সেনাবাহিনী এলাকায় ছিলেন বলে বাবা খবরগুলো একটু আগেই পেতেন। আমার দুর্ভাগ্য বাবাকে নিয়ে আজও আমি কোন বই লিখিনি, আল্লাহ চায় তো এবার একটা কাজ করব। বাবার কাছেই শোনা কথা, ১৯৭১ সালের ১৭ মার্চ বাবা নিজের অস্ত্র নিয়ে বেরিয়ে আসেন। সোজা চলে যান বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক কার্যালয়ে। সেখানে গিয়েই দেখেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে মিলাদ ও দোয়া পড়ানো হচ্ছে। বাবা নিজেও প্রিয় নেতাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান। বাবার সেই কথাগুলো দিয়ে লিখেছি- ‘শুভ জন্মদিন নেতা’। লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে চলচ্চিত্র অধিদপ্তরের অধীনে প্রকাশিত ‘নবারুণ’ পত্রিকার মার্চ ২০১৯ সংখ্যায়।

বাবার সঙ্গে মাঝে কথা হয় আমার, বাবা আমাকে সব বলতেও চান না। যদি কোন অনিয়ম আমি লিখে ফেলি। যে লোকটাকে সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে এলাকার সব্বাই চিনত জানত, যে লোকটা গ্রামের অনেক অনেক যুবককে মুক্তিযুদ্ধের জন্যে ট্রেনিং দেন তাকেই অমুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নেয়া হয়। বাবা এসব আমায় বলেন না। আমি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বাবাকে জিজ্ঞেস করি। বাবা আমায় বলতে লজ্জা পান, বাবার মতো ব্যক্তিকে মুক্তিযুদ্ধের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়। আমরা চার ভাইবোন সবাই নিজ নিজ জায়গায় ভালোই আছি, আমি ছাড়া আমার বাকি তিন-ভাইবোনকে দিয়েই মা রত্নগর্ভা হতে পারেন। আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়ে কোন সুযোগ-সুবিধা নিইনি। তবুও তালিকা নেই। তিন বছর আগে অমর একুশে বইমেলায় কবি ও আবৃতি শিল্পী বদরুল আহসান খান অন্য একজনের সিনিয়রের সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেন- ‘রহিমা একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’। আমি কিছুটা তিরস্কারভাবে জবাব দিই। অতঃপর পরিচয় পর্ব শেষ হলে জানতে পারি সেই সিনিয়র মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে আছেন। তিনি চতুর্থতম বিসিএস ক্যাডার। কিছু কথা শুনে উনি নিজেই আমাকে উনার ভিজিটিং কার্ড দেন। বাবাকে নিয়ে দেখা করতে বলেন। আমি বাবাকে নিয়ে যেতে যেতে উনি দায়িত্ব থেকে সরে যান। যাবার সময় উনার ভিজিটিং কার্ডটি নিয়ে যাই। বাবা আর আমি একবার ৫ম তালায় আবার ৬ষ্ঠ তালায় দৌড়াই। বাবা আমায় বলেন- ‘মা আজ আর ডায়াবেটিসের ওষুধ খেতে হবে না, দৌড়ানিতেই কাজ হবে।’ যদি স্বাধীন দেশে মুক্তিই আছে তাহলে একজন কমান্ডার অমুক্তিযোদ্ধার তালিকায় যায় কী করে? আর দিন দিন মুক্তিযোদ্ধার তালিকা বড় হয় কী করে?

ঘুরে ঘুরে আমরা একজন অফিসারের কাছে যাই, সব খুলে বলি। উনাদের কাছে সব তথ্য ও আছে। আমি সেই সিনিয়রের পরিচয় দিই, কার্ড দেখাই। ৩২-৩৩তম বিসিএসে এই অফিসার পাশ করেন। উনি সিনিয়রের কার্ড দেখে বলেন- ‘উনি তো চতুর্থতম ব্যাচের’। একজন জুনিয়র তার সিনিয়রকে নিয়ে কিভাবে কথা বলবেন, তা সেই কর্মকর্তার জানা ছিল না। অতঃপর বছরখানেক আগে বাবার নাম মুক্তিযোদ্ধার লিস্টে উঠে, কিন্তু এখনও ভাতা বন্ধ আছে। প্রিয় পাঠক প্রশ্ন করতে পারেন- লেখার শিরোনামের সঙ্গে এ কথাগুলোর সম্পর্ক কী?

সম্পর্ক একটাই আমাদের মুক্তির, কোথাও নেই স্বচ্ছতা, স্বচ্ছতা থাকলে একজন কমান্ডারের নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ পড়ে কী করে?

প্রিয় পাঠক, সময়টা এখন ২৫ মার্চ রাত নয়টা কুঁড়ি মিনিট। একটু আগেই দেখলাম প্রিয় রূপা মাহমুদ ভাবি নিজের টাইমলাইনে দিয়েছেন- ‘আসুন রাত নয়টায় আমরা এক মিনিট ঘরের আলো বন্ধ রাখি।’ গণহত্যায় যারা শহীদ হয়েছেন তাদের স্মরণেই এমন কথা লেখা। গভীর শ্রদ্ধা সেই সব বীর শহীদদের। যদি মুক্তিই আছে আমাদের যদি মুক্তির জন্ম হয়ে থাকে তাহলে কেনো স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্লোগান ভাসে-

অ্যাকশন অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন। কেন রাত দশটায় মাইকে বাজানো হয় জাতীয় সংগীত। কেন স্বাধীনতা দিবসে বিজয় দিবসে দেশাত্মবোধক গানের পাশাপাশি হিন্দি গান অশ্লীল গান বেজে উঠে এই স্বাধীন বাংলাদেশে। এই রাতে এই দিনে তো আমরা আমাদের জন্য আমাদের পরের প্রজন্মের জন্য গণহত্যার আসল তথ্য প্রকাশ করব, তুলে ধরব।

আমরা স্বাধীন দেশের রাজধানীতে বসবাস করি। আসলে এই শহরে বসবাস করার কোন যোগ্যতা আমাদের নেই। কারণ বেঁচে থাকার জন্যে আমাদের একেকজনকে ফাইটার হতে হবে। আমরা তো ফাইটার নই, তাই এই শহর আমাদের জন্যে নয়। যে শহরে এগারোতালার উপরে পানি দেয়ার যন্ত্র নেই, সেই দেশে ২২-২৪ তালা ভবন নির্মাণ হয় কী করে? এমন আগুন আমাদের জন্য নতুন কিছু না। ক’দিন পরপরই ঘটছে। তারপরও আমাদের প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা নেই! দুর্ঘটনা ঘটলেই বলা হয়, ‘আমাদের ফায়ার ফাইটার যথেষ্ঠ না।’ প্রশ্ন হলো- ঘটনা মোকাবেলা করার সরঞ্জামই বা কি আছে আমাদের?

রানা প্লাজা ভেঙ্গে পড়লে আমরা রড সিমেন্টের দোষ দিই, পুরান ঢাকায় আগুন লাগলে আমরা কেমিক্যালের দোষ দিই। বহুতল ভবনে আগুন লাগলে আমরা বাইরের সিকিউরিটি সিঁড়ির কথা বলি। পানির অভাবের কথা বলি। আগুন লাগতেই পারে, দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে, কিন্তু তাকে মোকাবেলা করার জন্যে প্রস্তুত থাকা মানেই আমাদের মুক্তি। কোটি কোটি টাকা দিয়ে ভবন তৈরি করা হয়, কয়েক হাজার টাকায় বাইরের সিঁড়ি দেয়া হয় না। প্রতি মাসে ভাড়া বাবদ লাখ লাখ টাকা আয় করে তবুও আগুন নিভানোর যন্ত্র তাদের থাকে না। শত শত লোক কাজ করে তাদের শিল্পপতি বানায় অথচ ছাদের গেটে তারা মরণ যন্ত্রের তালা ঝুলিয়ে রাখে। তবে কি এই আমাদের স্বাধীন দেশ? কিভাবে বলতে পারি আমাদের মুক্তি আছে। কিভাবে বলি মুক্তিরও বয়স আছে।

যদি আমাদের মুক্তিই আছে তাহলে কেন মুকুল মজুমদার তার টাইমলাইনে লিখেন- ‘স্যাটেলাইট যখন মহাকাশে! তখন ২২তলা থেকে নামার একটা সিঁড়ি নেই। অথচ আমরা বাস করছি একটি উন্নতশীল দেশে। আমরা বাস করছি বিশ্বের ২য় সিঙ্গাপুরে। আমরা বাস করছি সেই গ্রামে যে গ্রাম কিছুদিন পর শহর হয়ে যাবে! আর তখন আমরাও ৭ তলা, ১৫ তলা কিংবা ২২ তলায় জ্বলে পুড়ে মরব।’

প্রাণে বাঁচতে মানুষের এই প্রাণান্তকর চেষ্টা, ভেতরে আটকে থেকে ফেসবুকের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা, অক্সিজেন মাস্কের জন্য ইশারা দেয়া, এয়ার লিফট পাঠিয়ে উদ্ধার করার আকুতি, বাঁচার জন্যে বিদ্যুতের তার বেয়ে নামার চেষ্টা- এসব না পাওয়াই বলে দেয় আমাদের মুক্তি নেই। মুক্তির কোন জন্মই হয়নি, বয়স হবে কী করে?

সাংবাদিক জয়নাল আবেদীনের লেখায় জানতে পারিÑ রাজউকের অনুমোদন ছিল ১৮ তলা। সেটি না মেনে করা হয় ২৩ তলা। এছাড়া ১৮ তলার যে মূল নকশা অনুমোদিত ছিল, সেটিও হেরফের হয়েছিল এফআর টাওয়ার নির্মাণে। ওপরের অননুমোদিত অন্তত তিনটি ফ্লোর মাড়িয়ে কেউ যেন ছাদে উঠতে না পারে, সেজন্য ছাদের দরজা তালাবদ্ধ থাকত সর্বক্ষণ। বৃহস্পতিবার ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের পর বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্যগুলো। এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের পর ভবনটির নকশাবহির্ভূত কাজ এবং অনুমোদনহীন আরও পাঁচটি ফ্লোর নির্মাণের বিষয়টি নজরে আসে রাজউকের। সংস্থাটির চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ‘আজকে আগুন লাগার পর আমরা যখন তথ্য ঘাঁটতে গেছি, তখন আমরা এটা পেয়েছি।’

রাজউক চেয়ারম্যান জানান, ‘যে ভবনটিতে আগুন লাগে, সেটির ফাইল আমি যতটুকু দেখেছি, ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর এটিকে একটি ১৮ তলা ভবন হিসেবে করার জন্য নকশা অনুমোদন করা হয়। কিন্তু এ ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে ২৩ তলা। শুধু তাই নয়, রাউজকের অনুমোদিত নকশা থেকে এই ভবনের নকশায় আরও অনেক বিচ্যুতি রয়েছে।’

রাজউকের চেয়ারম্যান বিবিসি বাংলাকে আরও জানান, এফআর টাওয়ারের মালিকপক্ষ ২০০৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি রাজউকের কাছে আরেকটি নকশা পেশ করে, যার সঙ্গে রাজউকে সংরক্ষিত নকশার কোন মিল নেই। এই ভবন নির্মাণের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল, তাদের সবারই শাস্তি হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। ভবনটি এ কারণেই অনিরাপদ ছিল কি-না, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমাদের নকশা থেকে বিচ্যুতির কারণে ভবনটি অবশ্যই অনিরাপদ হতে পারে। কারণ আমাদের নকশায় অগ্নিনিরাপত্তা থেকে শুরু করে সব নিরাপত্তার বিষয়টি দেখা হয়।’

এফআর টাওয়ারের একজন দোকান মালিকের সঙ্গে কথা বলে নিউজ৭১ জানতে পেরেছে যে, বর্তমানে এ ভবনটির আনুষঙ্গিক দায়িত্বে আছেন জমির মালিক ফারুক হোসেনের স্ত্রী সাবিনা ফারুক; যিনি একইসঙ্গে বনানীর একটি স্কুলের অধ্যক্ষ। অগ্নিকান্ডের বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে ওই দোকান মালিক নিশ্চিত করেছেন, রাজউকের নকশাবহির্ভূত ভবন নির্মাণের কারণে এ টাওয়ারের কোনো দোকান মালিককেই রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়নি। তবে তাদের প্রত্যেককে দোকান বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে সময়মতো।

স্বাধীন দেশে যদি মুক্তিই আছে তাহলে প্রভাষ আমিন কেন লিখলেনÑ ‘বাংলাদেশে ফায়ার সার্ভিসের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। এনটিভি ভবনে আগুন লাগার পর উঁচু মইয়ের অভাব নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। তারপর কেনাও হয়েছে। কিন্তু এখনও বাংলাদেশে সর্বোচ্চ মই ১৪ তলা উঁচু। এফআর টাওয়ারের সপ্তম তলায় আগুন না লেগে যদি ২০ তলায় লাগতো; তাহলে তো ফায়ার ফাইটারদেরও উৎসুক জনতার মতো চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া কিছু করার থাকত না। উঁচু মই থাকলে এফআর টাওয়ার থেকে আরও দ্রুত আরও বেশি মানুষকে উদ্ধার করা সম্ভব হতো।

আমরা কথায় কথায় বলি, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। সাবমেরিন, পদ্মা সেতু, স্যাটেলাইট- জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে আমাদের সক্ষমতার বার্তা পৌঁছে দেয় সারা বিশ্বে। কিন্তু সব সময় নিরাপত্তাই প্রথম বিবেচনা। মানুষের জীবনের চেয়ে মূল্যবান আর কিছু নেই। বাংলাদেশে এখন ১৪ তলার চেয়ে উঁচু ভবন আছে অনেক। পূর্বাচলে হচ্ছে আইকনিক টাওয়ার। উঁচু ভবন বানানোর আগে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ফায়ার সার্ভিসকে আধুনিক ও আরও বেশি সক্ষম করতে হবে। স্যাটেলাইটের চেয়ে উঁচু মই অনেক বেশি জরুরি।

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে বলব- ভবনগুলো তৈরির সময় কোথায় কি ছিল আমাদের এসবের দায়িত্বে থাকা লোকেরা। নাকি মোটা অংকের টাকা পেয়ে শান্তির ঘুম দিয়েছেন। যে দেশে আইন নেই সে দেশে মুক্তির জন্ম হবে কী করে। যে দেশে একটা মেয়েকে ধর্ষণ করার পরও আইন-আদালত আর প্রমাণের নামে বারবার ধর্ষণ করা হয়- সে দেশে মুক্তির জন্ম কি আসলেই হবে কোন এক সময়ে। স্বাধীনতার ৪৮-৫৮ কিংবা ৬০ বছর বয়সে।

[লেখক : সাহিত্যিক, কলামিস্ট ও প্রাবন্ধিক]

rbabygolpo710@gmail.com

দৈনিক সংবাদ : ৩ এপ্রিল ২০১৯, বুধবার, ৭ এর পাতায় প্রকাশিত

back to top