alt

উপ-সম্পাদকীয়

‘বেতন আলোচনা সাপেক্ষ’

আলাউদ্দিন আহমেদ

: বৃহস্পতিবার, ১৪ অক্টোবর ২০২১

দেশে শিক্ষিত বেকার তরুণের সংখ্যার কোন সঠিক পরিসংখ্যান নেই। গুগল অথবা অনলাইনের অন্য কোন সূত্র থেকে এ সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। তবে সংবাদপত্রে প্রকাশিত বিভিন্ন লেখার তথ্যমতে এ সংখ্যা প্রায় তিন কোটি। আঠারো কোটি জনসংখ্যার দেশে লেখাপড়া জানা বেকারের সংখ্যা তিন কোটি, একেবারে কম নয় সংখ্যাটি।

স্বাভাবিকভাবে সরকারি চাকরিজীবীদের বিভিন্ন আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধা থাকায় বেকারদের ঝোঁক থাকে সরকারি চাকরির দিকেই। কালেভদ্রে সরকারি চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। লাখো তরুণ আবেদন করেন, ভাগ্যে চাকরি জোটে অতি নগণ্য সংখ্যকের। এরপর বাকি থাকে বেসরকারি বিভিন্ন কোম্পানি, ব্যাংক, শিল্পপ্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ। সেইদিকে চেয়ে থাকে বহু সংখ্যক চাকরিপ্রার্থী অসহায় তরুণ যাদের ভবিষ্যৎ জীবনের স্বপ্ন নাড়া দেয় সবসময়। কিন্তু বাস্তবতা এমনই নির্মম যে সেইদিকেও পরিচ্ছন্ন কোন ব্যবস্থা নেই।

বেসরকারি পর্যায়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ইত্যাদির নানা কিছু চাওয়ার পর জুড়ে দেয়া হয়, ‘বেতন আলোচনা সাপেক্ষ’। এটা কেন? আপনার পদের বিপরীতে সব যোগ্যতা পূরণ করে একজন মেধাবী শিক্ষিত তরুণ-তরুণী আবেদন করবেন; অথচ আপনি বেতনটি উল্লেখ করবেন না, এটা কোন ধরনের নিয়ম? এই অপকৌশলের কারণ একটাই সেটা হচ্ছে অসংখ্য বেকারের এই দেশে অতি কম পারিশ্রমিকে মানুষ পাওয়া যায়। এভাবে সহজেই তাদের শ্রম শোষণ করা যায়। একজন না করলে আর একজন রেডি হয়ে আছে। সুতরাং সমস্যা তো ওই শিল্পপতি অথবা সংশ্লিষ্ট নিয়োগ কর্তৃপক্ষের না। এ যেন বেকারদের নিয়ে স্বাধীন দেশে এক ধরনের উপহাস!

একটি তথ্যে দেখা যায়, দেশে এখন সরকারি চাকরিজীবীর সংখ্যা ষোলো লাখ। এদের সামগ্রিক তথ্য-উপাত্ত সরকারের কাছে আছে। নির্দিষ্ট নিয়ম-নীতির আলোকেই তারা চাকরি করেন। কিন্তু এর বাইরে লাখ লাখ বেসরকারি চাকরিজীবীর জন্য বাস্তবে কি কোন নীতিমালা আছে? তাদের কর্মঘণ্টা কত, পরিশ্রম অনুযায়ী বেতন কত, অবসরের পর তাদের আর্থিক নিরাপত্তা কি? মৌলিক এই সমস্যাগুলো যে সমাধান করা যায় না তা তো নয়। কিন্তু কেন তা করা হয় না?

বড় বড় শিল্প গ্রুপ, প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারদের রাজনৈতিক যোগাযোগ ও সুসম্পর্কের কারণেই বোধ করি পার্লামেন্টে এ ব্যাপারে সঠিক একটি নীতিমালা তৈরির জন্য কেউ কোন কথা বলেন না। যখনই বেকার তরুণদের সঙ্গে কথা বলবেন তখনই তারা হতাশার সুরেই এ ধরনের জবাব দেবেন। যারা বেসরকারি চাকরিজীবী তাদের মধ্যে মুষ্টিমেয় ভালো দু-একটি কোম্পানি বাদে সবাই তাদের অমানুষিক পরিশ্রমের বিপরীতে বেতনের হতাশাজনক অঙ্কই প্রকাশ করেন। এর ওপর যখন-তখন ছাঁটাইয়ের বিষয়টি তো আছেই।

যন্ত্রণাময় এই পরিস্থিতিতে বেসরকারি সেক্টরে চাকরির যুক্তিসঙ্গত বেতন কাঠামো প্রণয়ন, নিয়মনীতি, কর্মসময় নির্ধারণ ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে রাজনৈতিক নেতা বিশেষ করে সংসদ সদস্যদের ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানাচ্ছি। কারণ শ্রমের অপচয়ে অনেক মেধাবীর মূল্যবান সময় হারিয়ে যাচ্ছে। চাকরিদাতা ও প্রার্থীর মধ্যে যুক্তিসঙ্গত নিয়মনীতি প্রণয়ন ও তা কার্যকর করা অসম্ভব কিছু নয়। সরকার উদ্যোগ নিলে হয় না এমন কিছু নেই।

সুতরাং আমরা আর বেকারদের নিয়ে রসিকতা দেখতে চাই না। বেতন যা দেবেন তা বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করুন। চাকরি প্রার্থী মনে করলে আবেদন করবেন, বেতন পছন্দ না হলে করবেন না। কিন্তু দয়া করে ‘বেতন আলোচনা সাপেক্ষ’ আর লিখবেন না। আপনি শিল্পপতি, গ্রুপের মালিক, ধনাঢ্য তাতে আমাদের কোন ঈর্ষা নেই। কিন্তু বেকাররাও এ দেশের নাগরিক, দেশের ভবিষ্যৎ। এটুকু অন্তত মূল্য দেয়ার চেষ্টা করুন।

[লেখক : সাবেক ছাত্রনেতা, পাবনা ]

ছবি

স্মরণ : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

দাবদাহে সুস্থ থাকবেন কীভাবে

কত দিন পরে এলে, একটু শোনো

রম্যগদ্য : আনন্দ, দ্বিগুণ আনন্দ...

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

উদার-উদ্দাম বৈশাখ চাই

ঈদ নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি, বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ

প্রসঙ্গ: বিদেশি ঋণ

ছাত্ররাজনীতি কি খারাপ?

জাকাত : বিশ্বের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

প্রবাসীর ঈদ-ভাবনা

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস

ধানের ফলন বাড়াতে ক্লাইমেট স্মার্ট গুটি ইউরিয়া প্রযুক্তি

কমিশন কিংবা ভিজিটে জমি রেজিস্ট্রির আইনি বিধান ও প্রাসঙ্গিকতা

ছবি

ঈদের অর্থনীতি

পশ্চিমবঙ্গে ভোটের রাজনীতিতে ‘পোস্ট পার্টিশন সিনড্রম’

শিক্ষকের বঞ্চনা, শিক্ষকের বেদনা

নিরাপদ সড়ক কেন চাই

রম্যগদ্য : ‘প্রহরীর সাতশ কোটি টাকা...’

ছবি

অবন্তিকাদের আত্মহনন

শিক্ষাবিষয়ক ভাবনা

অপ্রয়োজনে সিজারিয়ান নয়

পণ্য রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে

আত্মহত্যা রোধে নৈতিক শিক্ষা

আউশ ধান : পরিবেশ ও কৃষকবান্ধব ফসল

ছবি

বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আতুড়ঘর

চেক ডিজঅনার মামলার অধিক্ষেত্র ও প্রাসঙ্গিকতা

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশের কৃষি

ছবি

‘হৃৎ কলমের’ পাখি এবং আমাদের জেগে ওঠা

ছবি

ভূগর্ভস্থ পানি সুরক্ষায় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ

tab

উপ-সম্পাদকীয়

‘বেতন আলোচনা সাপেক্ষ’

আলাউদ্দিন আহমেদ

বৃহস্পতিবার, ১৪ অক্টোবর ২০২১

দেশে শিক্ষিত বেকার তরুণের সংখ্যার কোন সঠিক পরিসংখ্যান নেই। গুগল অথবা অনলাইনের অন্য কোন সূত্র থেকে এ সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। তবে সংবাদপত্রে প্রকাশিত বিভিন্ন লেখার তথ্যমতে এ সংখ্যা প্রায় তিন কোটি। আঠারো কোটি জনসংখ্যার দেশে লেখাপড়া জানা বেকারের সংখ্যা তিন কোটি, একেবারে কম নয় সংখ্যাটি।

স্বাভাবিকভাবে সরকারি চাকরিজীবীদের বিভিন্ন আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধা থাকায় বেকারদের ঝোঁক থাকে সরকারি চাকরির দিকেই। কালেভদ্রে সরকারি চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। লাখো তরুণ আবেদন করেন, ভাগ্যে চাকরি জোটে অতি নগণ্য সংখ্যকের। এরপর বাকি থাকে বেসরকারি বিভিন্ন কোম্পানি, ব্যাংক, শিল্পপ্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ। সেইদিকে চেয়ে থাকে বহু সংখ্যক চাকরিপ্রার্থী অসহায় তরুণ যাদের ভবিষ্যৎ জীবনের স্বপ্ন নাড়া দেয় সবসময়। কিন্তু বাস্তবতা এমনই নির্মম যে সেইদিকেও পরিচ্ছন্ন কোন ব্যবস্থা নেই।

বেসরকারি পর্যায়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ইত্যাদির নানা কিছু চাওয়ার পর জুড়ে দেয়া হয়, ‘বেতন আলোচনা সাপেক্ষ’। এটা কেন? আপনার পদের বিপরীতে সব যোগ্যতা পূরণ করে একজন মেধাবী শিক্ষিত তরুণ-তরুণী আবেদন করবেন; অথচ আপনি বেতনটি উল্লেখ করবেন না, এটা কোন ধরনের নিয়ম? এই অপকৌশলের কারণ একটাই সেটা হচ্ছে অসংখ্য বেকারের এই দেশে অতি কম পারিশ্রমিকে মানুষ পাওয়া যায়। এভাবে সহজেই তাদের শ্রম শোষণ করা যায়। একজন না করলে আর একজন রেডি হয়ে আছে। সুতরাং সমস্যা তো ওই শিল্পপতি অথবা সংশ্লিষ্ট নিয়োগ কর্তৃপক্ষের না। এ যেন বেকারদের নিয়ে স্বাধীন দেশে এক ধরনের উপহাস!

একটি তথ্যে দেখা যায়, দেশে এখন সরকারি চাকরিজীবীর সংখ্যা ষোলো লাখ। এদের সামগ্রিক তথ্য-উপাত্ত সরকারের কাছে আছে। নির্দিষ্ট নিয়ম-নীতির আলোকেই তারা চাকরি করেন। কিন্তু এর বাইরে লাখ লাখ বেসরকারি চাকরিজীবীর জন্য বাস্তবে কি কোন নীতিমালা আছে? তাদের কর্মঘণ্টা কত, পরিশ্রম অনুযায়ী বেতন কত, অবসরের পর তাদের আর্থিক নিরাপত্তা কি? মৌলিক এই সমস্যাগুলো যে সমাধান করা যায় না তা তো নয়। কিন্তু কেন তা করা হয় না?

বড় বড় শিল্প গ্রুপ, প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারদের রাজনৈতিক যোগাযোগ ও সুসম্পর্কের কারণেই বোধ করি পার্লামেন্টে এ ব্যাপারে সঠিক একটি নীতিমালা তৈরির জন্য কেউ কোন কথা বলেন না। যখনই বেকার তরুণদের সঙ্গে কথা বলবেন তখনই তারা হতাশার সুরেই এ ধরনের জবাব দেবেন। যারা বেসরকারি চাকরিজীবী তাদের মধ্যে মুষ্টিমেয় ভালো দু-একটি কোম্পানি বাদে সবাই তাদের অমানুষিক পরিশ্রমের বিপরীতে বেতনের হতাশাজনক অঙ্কই প্রকাশ করেন। এর ওপর যখন-তখন ছাঁটাইয়ের বিষয়টি তো আছেই।

যন্ত্রণাময় এই পরিস্থিতিতে বেসরকারি সেক্টরে চাকরির যুক্তিসঙ্গত বেতন কাঠামো প্রণয়ন, নিয়মনীতি, কর্মসময় নির্ধারণ ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে রাজনৈতিক নেতা বিশেষ করে সংসদ সদস্যদের ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানাচ্ছি। কারণ শ্রমের অপচয়ে অনেক মেধাবীর মূল্যবান সময় হারিয়ে যাচ্ছে। চাকরিদাতা ও প্রার্থীর মধ্যে যুক্তিসঙ্গত নিয়মনীতি প্রণয়ন ও তা কার্যকর করা অসম্ভব কিছু নয়। সরকার উদ্যোগ নিলে হয় না এমন কিছু নেই।

সুতরাং আমরা আর বেকারদের নিয়ে রসিকতা দেখতে চাই না। বেতন যা দেবেন তা বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করুন। চাকরি প্রার্থী মনে করলে আবেদন করবেন, বেতন পছন্দ না হলে করবেন না। কিন্তু দয়া করে ‘বেতন আলোচনা সাপেক্ষ’ আর লিখবেন না। আপনি শিল্পপতি, গ্রুপের মালিক, ধনাঢ্য তাতে আমাদের কোন ঈর্ষা নেই। কিন্তু বেকাররাও এ দেশের নাগরিক, দেশের ভবিষ্যৎ। এটুকু অন্তত মূল্য দেয়ার চেষ্টা করুন।

[লেখক : সাবেক ছাত্রনেতা, পাবনা ]

back to top