দুই হাত নেই, মুখে কলম আটকে কনুইয়ের সাহায্যে লিখেন বাহার উদ্দিন
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার কৃতিসন্তান অদম্য শিক্ষার্থী বাহার উদ্দিন রায়হানের এক হাত নেই, আরেক হাত আছে কনুই পর্যন্ত। ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত মুখে কলম আটকে হাতের কনুইয়ের সাহায্যে লিখে প্রতিটি পরীক্ষা দিয়েছেন। বরাবরে উত্তীর্ণও হয়েছেন সফলতার সঙ্গে। এভাবে শিক্ষাজীবনের সাফল্যগাঁথা গ্র্যাজুয়েশন তথা প্রথম শ্রেণীতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অদম্য এই শিক্ষার্থী।
গত ১৪ মে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম সমাবর্তনে গ্র্যাজুয়েশনের সনদ গ্রহণ করেছেন তিনি। সমাবর্তনের গাউন-টুপি পরে উচ্ছ্বসিত ছিলেন অদম্য রায়হান। তার দুর্দান্ত ইচ্ছাশক্তিতে যেমন মুগ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা, তেমনি তাঁর অবিস্মরণীয় গৌরবময় এই অর্জনে খুশিতে পঞ্চমুখ রায়হানের জন্মভূমি চকরিয়া উপজেলাবাসি।
কৃতি শিক্ষার্থী বাহার উদ্দিন রায়হান বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ইতিহাস বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী। তিনি কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের বাসিন্দা মরহুম বশির উদ্দিনের একমাত্র সন্তান। ২০২৪ সালে বিয়ে করেছেন রায়হান। মা এবং স্ত্রী মিলেই এখন তার পরিবার। বর্তমানে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন তিনি।
বাহার উদ্দিন রায়হান জানালেন, ২০০৪ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে থাকাবস্থায় অসাবধানবশত, ট্রান্সফরমারের বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে ঝলসে যায় তার দুই হাত। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার এক হাত এবং আরেক হাতের কনুই পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়।
জীবনের পথচলা শুরুতে এমন ভয়ানক দুর্ঘটনার সম্মুখীন হবার পরও এতটুকু দমে যাননি রায়হান। শিক্ষাজীবনে শুরু করেন নতুন প্রচেষ্ঠা। সেই থেকে মুখ দিয়ে লেখা আয়ত্ত করা শুরু তার। আত্মবিশ্বাসী অদম্য রায়হান ২০০৮ সাল থেকে নতুন করে শুরু করেন লেখাপড়া। শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হাত হারিয়ে দমে না যাওয়া সেই অদম্য মানুষ বাহার উদ্দিন রায়হান কনুইয়ের সাহায্যে লিখে আজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো দেশসেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে
প্রথম শ্রেণীতে স্নাতকোত্তর গ্র্যাজুয়েশন সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছেন। নিজের ইচ্ছা শক্তি আর দৃঢ় বিশ্বাসের বদৌলতে অদম্য রায়হান আজ সবার কাছে অনুপ্রেরণার বাতিঘর হিসেবে তৈরি হয়েছে।
অদম্য শিক্ষার্থী রায়হান বলেন, ২০২৩ সালের ১৫ মে আমার ইচ্ছাশক্তি ও আত্মবিশ্বাস দেখে একটি চাকরি দেয় তৎকালীন সরকারের আইসিটি মন্ত্রণালয়। আইসিটি বিভাগের এনহ্যান্সিং ডিজিটাল গভর্নমেন্ট অ্যান্ড ইকোনমি (ইডিজিই) প্রকল্পের সমন্বয়ক পদে প্রথমে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নানামুখী গড়িমসিতে সাতমাসের মাথায় আমাকে সেই চাকরি হারাতে হয়েছে। কৃতী শিক্ষার্থী বাহার উদ্দিন রায়হান বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় আকস্মিক দুর্ঘটনায় আঘাত পেয়েছি, দুই হাত হারিয়েছি। তবু আমি ভেঙে পড়িনি। চেষ্টা করেছি, লেখাপড়া চালিয়ে যাবো। আমার ইচ্ছা শক্তি ও অদম্য আত্মবিশ্বাস আজ আমাকে সফলতার সোপানে নিয়ে এসেছে।
আমি মনে করি, জীবন চলার পথে যেকোনো পরিস্থিতিতে মনোবল চাঙ্গা রাখতে হবে, ভেঙে পড়া যাবে না। নিজের লক্ষ্য অটুট রাখতে হবে। সেজন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। তাহলে প্রতিটি মানুষের জীবনের সফলতা অর্জন একেবারে সহজ হবে।
দুই হাত নেই, মুখে কলম আটকে কনুইয়ের সাহায্যে লিখেন বাহার উদ্দিন
রোববার, ১৮ মে ২০২৫
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার কৃতিসন্তান অদম্য শিক্ষার্থী বাহার উদ্দিন রায়হানের এক হাত নেই, আরেক হাত আছে কনুই পর্যন্ত। ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত মুখে কলম আটকে হাতের কনুইয়ের সাহায্যে লিখে প্রতিটি পরীক্ষা দিয়েছেন। বরাবরে উত্তীর্ণও হয়েছেন সফলতার সঙ্গে। এভাবে শিক্ষাজীবনের সাফল্যগাঁথা গ্র্যাজুয়েশন তথা প্রথম শ্রেণীতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অদম্য এই শিক্ষার্থী।
গত ১৪ মে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম সমাবর্তনে গ্র্যাজুয়েশনের সনদ গ্রহণ করেছেন তিনি। সমাবর্তনের গাউন-টুপি পরে উচ্ছ্বসিত ছিলেন অদম্য রায়হান। তার দুর্দান্ত ইচ্ছাশক্তিতে যেমন মুগ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা, তেমনি তাঁর অবিস্মরণীয় গৌরবময় এই অর্জনে খুশিতে পঞ্চমুখ রায়হানের জন্মভূমি চকরিয়া উপজেলাবাসি।
কৃতি শিক্ষার্থী বাহার উদ্দিন রায়হান বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ইতিহাস বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী। তিনি কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের বাসিন্দা মরহুম বশির উদ্দিনের একমাত্র সন্তান। ২০২৪ সালে বিয়ে করেছেন রায়হান। মা এবং স্ত্রী মিলেই এখন তার পরিবার। বর্তমানে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন তিনি।
বাহার উদ্দিন রায়হান জানালেন, ২০০৪ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে থাকাবস্থায় অসাবধানবশত, ট্রান্সফরমারের বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে ঝলসে যায় তার দুই হাত। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার এক হাত এবং আরেক হাতের কনুই পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়।
জীবনের পথচলা শুরুতে এমন ভয়ানক দুর্ঘটনার সম্মুখীন হবার পরও এতটুকু দমে যাননি রায়হান। শিক্ষাজীবনে শুরু করেন নতুন প্রচেষ্ঠা। সেই থেকে মুখ দিয়ে লেখা আয়ত্ত করা শুরু তার। আত্মবিশ্বাসী অদম্য রায়হান ২০০৮ সাল থেকে নতুন করে শুরু করেন লেখাপড়া। শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হাত হারিয়ে দমে না যাওয়া সেই অদম্য মানুষ বাহার উদ্দিন রায়হান কনুইয়ের সাহায্যে লিখে আজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো দেশসেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে
প্রথম শ্রেণীতে স্নাতকোত্তর গ্র্যাজুয়েশন সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছেন। নিজের ইচ্ছা শক্তি আর দৃঢ় বিশ্বাসের বদৌলতে অদম্য রায়হান আজ সবার কাছে অনুপ্রেরণার বাতিঘর হিসেবে তৈরি হয়েছে।
অদম্য শিক্ষার্থী রায়হান বলেন, ২০২৩ সালের ১৫ মে আমার ইচ্ছাশক্তি ও আত্মবিশ্বাস দেখে একটি চাকরি দেয় তৎকালীন সরকারের আইসিটি মন্ত্রণালয়। আইসিটি বিভাগের এনহ্যান্সিং ডিজিটাল গভর্নমেন্ট অ্যান্ড ইকোনমি (ইডিজিই) প্রকল্পের সমন্বয়ক পদে প্রথমে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নানামুখী গড়িমসিতে সাতমাসের মাথায় আমাকে সেই চাকরি হারাতে হয়েছে। কৃতী শিক্ষার্থী বাহার উদ্দিন রায়হান বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় আকস্মিক দুর্ঘটনায় আঘাত পেয়েছি, দুই হাত হারিয়েছি। তবু আমি ভেঙে পড়িনি। চেষ্টা করেছি, লেখাপড়া চালিয়ে যাবো। আমার ইচ্ছা শক্তি ও অদম্য আত্মবিশ্বাস আজ আমাকে সফলতার সোপানে নিয়ে এসেছে।
আমি মনে করি, জীবন চলার পথে যেকোনো পরিস্থিতিতে মনোবল চাঙ্গা রাখতে হবে, ভেঙে পড়া যাবে না। নিজের লক্ষ্য অটুট রাখতে হবে। সেজন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। তাহলে প্রতিটি মানুষের জীবনের সফলতা অর্জন একেবারে সহজ হবে।