বদরগঞ্জ (রংপুর) : চিকলী নদীর ভাংড়িরঘাটে ব্রিজ না হওয়ায় এভাবেই বাঁশের সাঁকো দিয়ে পার হচ্ছেন এলাকাবাসী -সংবাদ
‘একঝোন কচিল পুল না হইলে বিয়াও কইরব্যার নাও। আরেকঝোনের তোকনে দিনের ভোট আইতোত থ্যাববানু তাও পুলখ্যান হইলনা।’ স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও পৌরশহরের চিকলী নদীর ভাংড়িরঘাটে ব্রীজ না হওয়ায় এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের শেখেরহাট এলাকার স’মিল মালিক নাজমুল হোসেন।
কারণ কৃষক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ সরকার বিটু ব্রীজ নির্মাণের প্রতিশ্রুতিতে এলাকাবাসীর ভোট নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।
সে সময় তিনি লোকজনকে এ বলে আশ^স্ত করেছিলেন যে, তিনি ব্রীজ দিতে না পারলে কখনোই বিয়ে করবেন না। এরপর ব্রীজ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা ডিউক চৌধুরী একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। যদিও আওয়ামী লীগসহ তার বিরুদ্ধে ভোট কারচুপির অভিযোগ রয়েছে। তবে তারা নির্বাচিত হওয়ার পর কথা রাখেননি। আর একারণেই ক্ষোভে ফুঁসছেন স’মিল মালিক নাজমুল। শুধুমাত্র নাজমুল নন ব্রিজ না হওয়ার কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দামোদরপুর ইউনিয়নের সকলেই।
জানা যায়, দামোরদরপুর ইউনিয়ন নদীবেষ্টিত এলাকা। যমুনেশ^রী, চিকলী, আখিরা খালসহ বিভিন্ন নদী-নালা ওই ইউনিয়নকে নানাভাগে বিভক্ত করে রেখেছে। একারণে ওই ইউনিয়নের বাসিন্দাদের প্রকৃতির সাথে অনেকটা যুদ্ধ করেই বেঁচে থাকতে হয়। তবে ওইসব নদীর দু’ একটি জায়গায় ব্রিজ হলেও ভাংড়ির ঘাটে আজ পর্যন্ত ব্রিজ নির্মিত হয়নি। অথচ শত প্রতিকুলতার মাঝেও ভাংড়িরঘাট দিয়ে প্রতিনিয়ত পারাপার করেন দামোদরপুর ইউনিয়নসহ তারাগঞ্জ ও নীলফামারির কিশোরগঞ্জ উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ।
স্বাধীনতার পর থেকে এসব এলাকার মানুষ ভাংড়ির ঘাটে ব্রিজ নির্মাণের দাবী জানিয়ে আসলেও কোন কাজ হয়নি। বরং ব্রিজ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বার বার জনগণের ভোট নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন নেতারা। এরপর তারা ব্রিজ নির্মাণের বিষয়টি বেমালুম ভুলে গেছেন। ফলে আজো এসব এলাকার মানুষকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সরেজমিন এলাকা পরিদর্শনকালে কথা হয় শেখেরহাট ব্যাপারীপাড়ার ব্যবসায়ী রোমান আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, শুকনো মওসুমে দুর্ভোগ থাকলেও বাঁশের সাঁকো দিয়ে তবুও মালামাল পারাপার করা সম্ভব হয়। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে তা আর সম্ভব হয়না। তখন ১০ কিলোমিটার ঘুরে শহরে ঢুকতে হয়।
মোস্তফাপুর এলাকার গুদামপাড়ার ফনি চন্দ্র দাস বলেন, অন্যান্য পাড়ার লোকজনের চেয়ে আমাদের পাড়ার লোকজনের ভোগান্তি সবচেয়ে বেশি। কারণ আমাদের পাড়াকে আরো একটি নদী বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। ওই নদী পার হয়ে তারপর এ নদীর পাড়ে আসতে হয়। তিনি বলেন, বর্ষা মওসুমে কেউ অসুস্থ হলে কিংবা ছোট ছোট ছেলেমেয়ে স্কুলে যেতে চাইলে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
শেখেরহাটের রেজাউল হক বলেন, বদরগঞ্জ-শেখেরহাট সড়কটি শুধু ইউনিয়ন-উপজেলা সংযোগ সড়ক নয়। এটি নীলফামারির কিশোরগঞ্জ উপজেলার সাথেও সরাসরি সংযুক্ত। কিন্তু এ বিষয়টি জেনেও নেতারা কেন ব্রীজটি নির্মাণ করেননা তা’ অজানা।
মোস্তফাপুর এলাকার শিঙ্গিমারীর বাসিন্দা সিদ্দিকুল ইসলাম বলেন, ভাংড়ির ঘাটে ব্রীজ না থাকায় বদরগঞ্জ শহরে যেতে প্রত্যেক মানুষকে মোস্তফাপুরে অপেক্ষা করতে হয়। অথচ ব্রিজটি হলে বদরগঞ্জ, তারাগঞ্জসহ নীলফামারির কিশোরগঞ্জে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে।
ঘাট ইজারাদার আফজাল হোসেন বলেন, জন্মের পর থেকে শুনি ভাংড়ির ঘাটে ব্রিজ হবে। কিন্তু বৃদ্ধ বয়সেও তা’ আর দেখা হলনা। ভবিষ্যতে ব্রিজটি দেখতে পাব কিনা তাও জানিনা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শুধুমাত্র নেতৃত্বের দ্বন্দ্বের কারণে ভাংড়ির ঘাটে আজো ব্রিজ হয়নি। কারণ মোস্তফাপুরে কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ^নাথ সরকার বিটুর বাড়ি। তার সাথে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাদের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। তিনি আওয়ামীলীগ নেতা ডিউক চৌধুরীকে হারিয়ে একবার উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। এমনকি সর্বশেষ সংসদ নির্বাচনেও তিনি আওয়ামীলীগের প্রার্থী ডিউক চৌধুরীর বিরুদ্ধে ভোট যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। মূলতঃ কৃষকলীগ নেতা বিটুর কারণেই ব্রিজটি নির্মাণ করেননি তৎকালিণ আওয়ামীলীগ সংসদ সদস্য ডিউক চৌধুরী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বদরগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হেনা মোরশেদ আলম বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। পৌর প্রশাসক ভালো বলতে পারবেন।
পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমান বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ব্রিজ নির্মাণের জন্য টেণ্ডার আহ্বান করেছে। সেটি ইভ্যালুয়েশন পর্যায়ে রয়েছে। নির্মাণ ঠিকাদারীর বিষয়ে এখনো কোনো ডিসিশন হয়নি।
বদরগঞ্জ (রংপুর) : চিকলী নদীর ভাংড়িরঘাটে ব্রিজ না হওয়ায় এভাবেই বাঁশের সাঁকো দিয়ে পার হচ্ছেন এলাকাবাসী -সংবাদ
রোববার, ১৮ মে ২০২৫
‘একঝোন কচিল পুল না হইলে বিয়াও কইরব্যার নাও। আরেকঝোনের তোকনে দিনের ভোট আইতোত থ্যাববানু তাও পুলখ্যান হইলনা।’ স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও পৌরশহরের চিকলী নদীর ভাংড়িরঘাটে ব্রীজ না হওয়ায় এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের শেখেরহাট এলাকার স’মিল মালিক নাজমুল হোসেন।
কারণ কৃষক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ সরকার বিটু ব্রীজ নির্মাণের প্রতিশ্রুতিতে এলাকাবাসীর ভোট নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।
সে সময় তিনি লোকজনকে এ বলে আশ^স্ত করেছিলেন যে, তিনি ব্রীজ দিতে না পারলে কখনোই বিয়ে করবেন না। এরপর ব্রীজ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা ডিউক চৌধুরী একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। যদিও আওয়ামী লীগসহ তার বিরুদ্ধে ভোট কারচুপির অভিযোগ রয়েছে। তবে তারা নির্বাচিত হওয়ার পর কথা রাখেননি। আর একারণেই ক্ষোভে ফুঁসছেন স’মিল মালিক নাজমুল। শুধুমাত্র নাজমুল নন ব্রিজ না হওয়ার কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দামোদরপুর ইউনিয়নের সকলেই।
জানা যায়, দামোরদরপুর ইউনিয়ন নদীবেষ্টিত এলাকা। যমুনেশ^রী, চিকলী, আখিরা খালসহ বিভিন্ন নদী-নালা ওই ইউনিয়নকে নানাভাগে বিভক্ত করে রেখেছে। একারণে ওই ইউনিয়নের বাসিন্দাদের প্রকৃতির সাথে অনেকটা যুদ্ধ করেই বেঁচে থাকতে হয়। তবে ওইসব নদীর দু’ একটি জায়গায় ব্রিজ হলেও ভাংড়ির ঘাটে আজ পর্যন্ত ব্রিজ নির্মিত হয়নি। অথচ শত প্রতিকুলতার মাঝেও ভাংড়িরঘাট দিয়ে প্রতিনিয়ত পারাপার করেন দামোদরপুর ইউনিয়নসহ তারাগঞ্জ ও নীলফামারির কিশোরগঞ্জ উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ।
স্বাধীনতার পর থেকে এসব এলাকার মানুষ ভাংড়ির ঘাটে ব্রিজ নির্মাণের দাবী জানিয়ে আসলেও কোন কাজ হয়নি। বরং ব্রিজ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বার বার জনগণের ভোট নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন নেতারা। এরপর তারা ব্রিজ নির্মাণের বিষয়টি বেমালুম ভুলে গেছেন। ফলে আজো এসব এলাকার মানুষকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সরেজমিন এলাকা পরিদর্শনকালে কথা হয় শেখেরহাট ব্যাপারীপাড়ার ব্যবসায়ী রোমান আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, শুকনো মওসুমে দুর্ভোগ থাকলেও বাঁশের সাঁকো দিয়ে তবুও মালামাল পারাপার করা সম্ভব হয়। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে তা আর সম্ভব হয়না। তখন ১০ কিলোমিটার ঘুরে শহরে ঢুকতে হয়।
মোস্তফাপুর এলাকার গুদামপাড়ার ফনি চন্দ্র দাস বলেন, অন্যান্য পাড়ার লোকজনের চেয়ে আমাদের পাড়ার লোকজনের ভোগান্তি সবচেয়ে বেশি। কারণ আমাদের পাড়াকে আরো একটি নদী বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। ওই নদী পার হয়ে তারপর এ নদীর পাড়ে আসতে হয়। তিনি বলেন, বর্ষা মওসুমে কেউ অসুস্থ হলে কিংবা ছোট ছোট ছেলেমেয়ে স্কুলে যেতে চাইলে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
শেখেরহাটের রেজাউল হক বলেন, বদরগঞ্জ-শেখেরহাট সড়কটি শুধু ইউনিয়ন-উপজেলা সংযোগ সড়ক নয়। এটি নীলফামারির কিশোরগঞ্জ উপজেলার সাথেও সরাসরি সংযুক্ত। কিন্তু এ বিষয়টি জেনেও নেতারা কেন ব্রীজটি নির্মাণ করেননা তা’ অজানা।
মোস্তফাপুর এলাকার শিঙ্গিমারীর বাসিন্দা সিদ্দিকুল ইসলাম বলেন, ভাংড়ির ঘাটে ব্রীজ না থাকায় বদরগঞ্জ শহরে যেতে প্রত্যেক মানুষকে মোস্তফাপুরে অপেক্ষা করতে হয়। অথচ ব্রিজটি হলে বদরগঞ্জ, তারাগঞ্জসহ নীলফামারির কিশোরগঞ্জে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে।
ঘাট ইজারাদার আফজাল হোসেন বলেন, জন্মের পর থেকে শুনি ভাংড়ির ঘাটে ব্রিজ হবে। কিন্তু বৃদ্ধ বয়সেও তা’ আর দেখা হলনা। ভবিষ্যতে ব্রিজটি দেখতে পাব কিনা তাও জানিনা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শুধুমাত্র নেতৃত্বের দ্বন্দ্বের কারণে ভাংড়ির ঘাটে আজো ব্রিজ হয়নি। কারণ মোস্তফাপুরে কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ^নাথ সরকার বিটুর বাড়ি। তার সাথে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাদের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। তিনি আওয়ামীলীগ নেতা ডিউক চৌধুরীকে হারিয়ে একবার উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। এমনকি সর্বশেষ সংসদ নির্বাচনেও তিনি আওয়ামীলীগের প্রার্থী ডিউক চৌধুরীর বিরুদ্ধে ভোট যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। মূলতঃ কৃষকলীগ নেতা বিটুর কারণেই ব্রিজটি নির্মাণ করেননি তৎকালিণ আওয়ামীলীগ সংসদ সদস্য ডিউক চৌধুরী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বদরগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হেনা মোরশেদ আলম বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। পৌর প্রশাসক ভালো বলতে পারবেন।
পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমান বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ব্রিজ নির্মাণের জন্য টেণ্ডার আহ্বান করেছে। সেটি ইভ্যালুয়েশন পর্যায়ে রয়েছে। নির্মাণ ঠিকাদারীর বিষয়ে এখনো কোনো ডিসিশন হয়নি।