হবিগঞ্জের নিখোঁজ সেই ৩৫ তরুণ -সংবাদ
অবৈধ পথে লিবিয়ার সমুদ্রযোগে ইতালির উদ্দেশে রওনা দেয়া একটি নৌকা নিখোঁজ হওয়ার ১৪ দিন পেরিয়ে গেলেও হবিগঞ্জের ৩৫ তরুণের কোনো সন্ধান মেলেনি। এ ঘটনায় নিখোঁজদের পরিবারগুলো চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন।
নিখোঁজ যুবকদের স্বজন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১ অক্টোবর লিবিয়ার ত্রিপলি থেকে চারটি নৌকা ইতালির উদ্দেশে ভূমধ্যসাগরে পাড়ি জমায়। এরমধ্যে তিনটি নৌকা ইতালিতে পৌঁছালেও একটি নৌকা এখনও নিখোঁজ রয়েছে। ওই নৌকাতেই ছিলেন হবিগঞ্জের অন্তত ৩৫ তরুণসহ প্রায় ৭০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী।
নিখোঁজদের বেশিরভাগই হবিগঞ্জ সদর উপজেলার উমেদনগর, বানিয়াচং উপজেলার সদর ও তারাসই এবং আজমিরীগঞ্জ উপজেলার শিবপাশা ও পশ্চিমভাগ গ্রামের বাসিন্দা।
নিখোঁজদের মধ্যে রয়েছেন- বানিয়াচং উপজেলার যাত্রাপাশা তলাবপাড়ার আলফাজ মিয়া রনি (২১), মোজাক্কির আহমেদ (২১), সিয়াম জমাদার (২১) ও মিজান আহমেদ (২০)। এছাড়া হবিগঞ্জের উমেদনগর, আজমিরীগঞ্জের পশ্চিমভাগ, জলসুখা ও বানিয়াচং উপজেলার তারাসই গ্রামের আরও অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন।
নিখোঁজ আলফাজ মিয়া রনির বড় ভাই মনির মিয়া জানান, গত ১ অক্টোবর ত্রিপলি থেকে চারটি নৌকা ছাড়ে। এর একটি নৌকায় হবিগঞ্জের ৩৫ জনসহ প্রায় ৭০ জন ছিলেন। বাকি তিনটি নৌকা ইতালিতে পৌঁছালেও ওই নৌকার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
তিনি জানান, আজমিরীগঞ্জের পশ্চিমভাগ গ্রামের লিবিয়া প্রবাসী হাসান আশরাফের মাধ্যমে ওই যুবকেরা ১৭-২০ লাখ টাকা করে দিয়ে ইতালি যাওয়ার উদ্যোগ নেন। রনি ও মোজাক্কিরের পরিবারের দাবি, হাসান আশরাফ তাদের কাছ থেকে মোট ৩৬ লাখ টাকা নিয়েছিলেন। গত ৩০ সেপ্টেম্বর নৌকায় তোলার পর থেকেই তাদের আর কোনো যোগাযোগ নেই।
এ বিষয়ে লিবিয়ায় অবস্থানকারী দালাল হাসান আশরাফ বলেন, ‘গত ১ অক্টোবর চারটি নৌকা লিবিয়ার তাজুরা সীমান্ত এলাকা দিয়ে ইতালির উদ্দেশে রওনা হয়। এরমধ্যে তিনটি পৌঁছেছে, একটি নৌকা নিখোঁজ। সেই নৌকায় হবিগঞ্জের ৩৫ জন যুবক ছিল। শেষবার শুনেছিলাম, তারা ইতালি সীমান্ত থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে আছে। এরপর যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেক সময় ইতালিয়ান সীমান্তরক্ষীদের হাতে আটক হলে তাদের খোঁজ পেতে ১০-১৫ দিন লেগে যায়। কখনও ২০ দিন পরও খবর পাওয়া যায়। যদি লিবিয়া বা তিউনিসিয়ায় আটক হতো, তাহলে খবর পাওয়া যেত। এমনকি মৃত্যু হলেও লাশ উদ্ধারের তথ্য পাওয়া যেত।’
হাসান আশরাফ দাবি করেন, তিনি এতদিনে তিন হাজারের বেশি মানুষকে ওই পথে ইতালি পাঠিয়েছেন, কারও কোনো সমস্যা হয়নি। তার ভাষায়, ‘আমি কাউকে প্ররোচিত করিনি। যারা যায়, তারা নিজের ইচ্ছায় যোগাযোগ করে। তারা পৌঁছালে টাকা দেয়। যারা এখন নিখোঁজ, তারা এখনও টাকা দেয়নি।’
এদিকে বানিয়াচং উপজেলার জাতুকর্ণপাড়া গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে আবুল কাশেম জানান, তিনি ধারকর্জ করে ১৭ লাখ টাকা দিয়ে লিবিয়া হয়ে ইতালি গেছেন। তিনি বলেন, ‘অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে পার হতে হয়েছে। আগে জানলে এই পথে কখনও যেতাম না।’
বানিয়াচং উপজেলা সদরের এক বাসিন্দা জানান, তার পরিবারের ছয় সদস্য হাসান আশরাফের মাধ্যমে ১৮ লাখ টাকা করে দিয়ে ইতালি গেছেন। তবে তার আরও দুই আত্মীয় লিবিয়ায় আটকা থাকায় তিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছা জানান।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাসান আশরাফ গত ছয় মাসে প্রায় এক হাজার বাংলাদেশিকে ১৭-১৮ লাখ টাকা করে নিয়ে অবৈধভাবে ইতালি পাঠিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
নিখোঁজদের পরিবারগুলো এখন তাদের প্রিয়জনের কোনো খোঁজ না পেয়ে উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। কেউ কেউ এখনও বিশ্বাস করছেন তাদের সন্তানরা হয়তো ইতালির সীমান্তরক্ষীদের হেফাজতে রয়েছেন এবং কোনো একদিন হয়তো তাদের জীবিত অবস্থায় খবর পাওয়া যাবে।
হবিগঞ্জের নিখোঁজ সেই ৩৫ তরুণ -সংবাদ
বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫
অবৈধ পথে লিবিয়ার সমুদ্রযোগে ইতালির উদ্দেশে রওনা দেয়া একটি নৌকা নিখোঁজ হওয়ার ১৪ দিন পেরিয়ে গেলেও হবিগঞ্জের ৩৫ তরুণের কোনো সন্ধান মেলেনি। এ ঘটনায় নিখোঁজদের পরিবারগুলো চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন।
নিখোঁজ যুবকদের স্বজন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১ অক্টোবর লিবিয়ার ত্রিপলি থেকে চারটি নৌকা ইতালির উদ্দেশে ভূমধ্যসাগরে পাড়ি জমায়। এরমধ্যে তিনটি নৌকা ইতালিতে পৌঁছালেও একটি নৌকা এখনও নিখোঁজ রয়েছে। ওই নৌকাতেই ছিলেন হবিগঞ্জের অন্তত ৩৫ তরুণসহ প্রায় ৭০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী।
নিখোঁজদের বেশিরভাগই হবিগঞ্জ সদর উপজেলার উমেদনগর, বানিয়াচং উপজেলার সদর ও তারাসই এবং আজমিরীগঞ্জ উপজেলার শিবপাশা ও পশ্চিমভাগ গ্রামের বাসিন্দা।
নিখোঁজদের মধ্যে রয়েছেন- বানিয়াচং উপজেলার যাত্রাপাশা তলাবপাড়ার আলফাজ মিয়া রনি (২১), মোজাক্কির আহমেদ (২১), সিয়াম জমাদার (২১) ও মিজান আহমেদ (২০)। এছাড়া হবিগঞ্জের উমেদনগর, আজমিরীগঞ্জের পশ্চিমভাগ, জলসুখা ও বানিয়াচং উপজেলার তারাসই গ্রামের আরও অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন।
নিখোঁজ আলফাজ মিয়া রনির বড় ভাই মনির মিয়া জানান, গত ১ অক্টোবর ত্রিপলি থেকে চারটি নৌকা ছাড়ে। এর একটি নৌকায় হবিগঞ্জের ৩৫ জনসহ প্রায় ৭০ জন ছিলেন। বাকি তিনটি নৌকা ইতালিতে পৌঁছালেও ওই নৌকার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
তিনি জানান, আজমিরীগঞ্জের পশ্চিমভাগ গ্রামের লিবিয়া প্রবাসী হাসান আশরাফের মাধ্যমে ওই যুবকেরা ১৭-২০ লাখ টাকা করে দিয়ে ইতালি যাওয়ার উদ্যোগ নেন। রনি ও মোজাক্কিরের পরিবারের দাবি, হাসান আশরাফ তাদের কাছ থেকে মোট ৩৬ লাখ টাকা নিয়েছিলেন। গত ৩০ সেপ্টেম্বর নৌকায় তোলার পর থেকেই তাদের আর কোনো যোগাযোগ নেই।
এ বিষয়ে লিবিয়ায় অবস্থানকারী দালাল হাসান আশরাফ বলেন, ‘গত ১ অক্টোবর চারটি নৌকা লিবিয়ার তাজুরা সীমান্ত এলাকা দিয়ে ইতালির উদ্দেশে রওনা হয়। এরমধ্যে তিনটি পৌঁছেছে, একটি নৌকা নিখোঁজ। সেই নৌকায় হবিগঞ্জের ৩৫ জন যুবক ছিল। শেষবার শুনেছিলাম, তারা ইতালি সীমান্ত থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে আছে। এরপর যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেক সময় ইতালিয়ান সীমান্তরক্ষীদের হাতে আটক হলে তাদের খোঁজ পেতে ১০-১৫ দিন লেগে যায়। কখনও ২০ দিন পরও খবর পাওয়া যায়। যদি লিবিয়া বা তিউনিসিয়ায় আটক হতো, তাহলে খবর পাওয়া যেত। এমনকি মৃত্যু হলেও লাশ উদ্ধারের তথ্য পাওয়া যেত।’
হাসান আশরাফ দাবি করেন, তিনি এতদিনে তিন হাজারের বেশি মানুষকে ওই পথে ইতালি পাঠিয়েছেন, কারও কোনো সমস্যা হয়নি। তার ভাষায়, ‘আমি কাউকে প্ররোচিত করিনি। যারা যায়, তারা নিজের ইচ্ছায় যোগাযোগ করে। তারা পৌঁছালে টাকা দেয়। যারা এখন নিখোঁজ, তারা এখনও টাকা দেয়নি।’
এদিকে বানিয়াচং উপজেলার জাতুকর্ণপাড়া গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে আবুল কাশেম জানান, তিনি ধারকর্জ করে ১৭ লাখ টাকা দিয়ে লিবিয়া হয়ে ইতালি গেছেন। তিনি বলেন, ‘অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে পার হতে হয়েছে। আগে জানলে এই পথে কখনও যেতাম না।’
বানিয়াচং উপজেলা সদরের এক বাসিন্দা জানান, তার পরিবারের ছয় সদস্য হাসান আশরাফের মাধ্যমে ১৮ লাখ টাকা করে দিয়ে ইতালি গেছেন। তবে তার আরও দুই আত্মীয় লিবিয়ায় আটকা থাকায় তিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছা জানান।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাসান আশরাফ গত ছয় মাসে প্রায় এক হাজার বাংলাদেশিকে ১৭-১৮ লাখ টাকা করে নিয়ে অবৈধভাবে ইতালি পাঠিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
নিখোঁজদের পরিবারগুলো এখন তাদের প্রিয়জনের কোনো খোঁজ না পেয়ে উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। কেউ কেউ এখনও বিশ্বাস করছেন তাদের সন্তানরা হয়তো ইতালির সীমান্তরক্ষীদের হেফাজতে রয়েছেন এবং কোনো একদিন হয়তো তাদের জীবিত অবস্থায় খবর পাওয়া যাবে।