রাজবাড়ী বিসিক শিল্পনগরীর রাস্তার বেহাল দশা -সংবাদ
রাজবাড়ীর রামকান্তপুর এলাকায় ১৯৬৪ সালে ১৫.২৮ একর জমির ওপর অবস্থিত রাজবাড়ী বিসিক শিল্পনগরী। ৭৭টি প্লট নিয়ে যাত্রা শুরু করা এই শিল্পনগরী বেশিরভাগই বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। প্রথমদিকে ৫৩টি প্রতিষ্ঠান চালু হলেও ৬০ বছরের মাথাই উন্নয়নের বদলে বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে এ শিল্পনগরী। লোডশেডিং,খাবার পানি সংকট, ড্রেনেজ ব্যবস্থা অকেজোসহ রয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাব। সঠিক পরিকল্পনা ও সরকারি পৃষ্ঠপোশকতার কারণে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি শিল্পনগরীর বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান। লোকসানের মুখে বন্ধ হয়ে গেছে এ শিল্পনগরীর বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিসিক শিল্প নগরীতে গড়ে ওঠা বেশিরভাগ শিল্পপ্রতিষ্ঠানই বন্ধ হয়ে গেছে, কিছু প্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে। কাজ করছে শ্রমিকরা। আবার কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান তালাবদ্ধ। বিভিন্ন যায়গাতে ময়লা-আবর্জনা ও চারপাশ জঙ্গলে ভরা। অনেক প্লট পরিত্যক্ত। রাস্তার অবস্থা বেহাল, সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় শিল্পনগরীর বেশিরভাগ এলাকায়। কোনো রকম সচল রয়েছে সিলভার পণ্য তৈরির কারখানা, চাল ও স্বয়ংক্রিয় ময়দার মিল, তেলের মিল, আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশন আড়ং উৎপাদন কেন্দ্র রাজবাড়ী, অরবিট এগ্রোসহ কয়েকটি ফ্যাক্টরি।
সিলভার পণ্য তৈরির কারখানার হারুন নামের একজন বলেন, বিসিক শিল্পনগরীতে লোডশেডিং হওয়ার কথা না। তবুও মাঝে মাঝে লোডশেডিংএ অনেক ঝামেলাতে পড়তে হয়। বিদ্যুৎ চলে গেলে আমাদের মেশিন চলে না, কাজের অনেক ক্ষতি হয়।
শহীদ নামের একজন বলেন, এখানে কোনো নিরাপত্তা নেই। প্রতিনিয়ত এ এলাকায় ঘটছে চুরির ঘটনা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। বিদ্যুতের তার, ফ্যাক্টরির মোটর চুরি হয়। বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে বলার পর মিলছে না সমাধান।
অরবিট এগ্রোর কয়েকজন কর্মচারী বলেন, বৃষ্টি হলে আমাদের গেটের পাশেই হাঁটু পানি জমে যায়। ড্রেনগুলো নোংরা, পরিষ্কার করা হয় না। বেশি বৃষ্টি হলে বাথরুমের ময়লা পানি (দুর্গন্ধ) চলে আসে। পানি বের হতে না পেরে ফ্যাক্টরির ভিতরে চলে আসে। আমাদের যাতায়াতের সমস্যা হয়। এছাড়া খাবারের পানিতে অনেক সমস্যা রয়েছে। আয়রণতো আছেই মাঝে মাঝে পানি থেকে দুর্গন্ধ পাওয়া যায়।
সাগর অটো ফ্লাওয়ার ও সাগর অয়েল মিলের অ্যাসিস্ট্যান্ট মেনেজার জাহাঙ্গীর আলম জানান, এখানে প্রধান সমস্যা হচ্ছে ড্রেনের সমস্যা, রাস্তা ভাঙাচোরা, একটু বৃষ্টি হলে পানি জমে যায়। পানি নিষ্কাশনের তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। পানি জমলে আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আসা-যাওয়া, গাড়ি চলাচলে অনেক সমস্যা হয়। আমাদের মিলের নিজস্ব খরচে বেশ কয়েকবার রাস্তা সংস্কার করা হয়েছে। আমরা বিসিকের কর্মকর্তাকে একাধিক বার আমাদের সমস্যার কথা তুলে ধরেছি। কিন্তু বলে কি হবে, কোনো সমস্যাই সমাধান হচ্ছে না
রাজবাড়ী চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ইমামুল করিম জকি বলেন, বিসিকের ব্যবসায়ীদের জন্য সরকারি কোনো সুযোগ সুবিধা নেই বললেই চলে। জমি ট্যাক্সের টাকা কয়েক গুণ বেড়েছে। যে কারণে বেশিরভাগ ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। গভমেন্টের যতগুলো ডিপার্টমেন্ট, ইন্ড্রাস্ট্রিজকে হেল্প করার জন্য পাঠাচ্ছে ততগুলো ক্ষতির কারণ হচ্ছে ইন্ডাস্ট্রিজগুলো। একটা ইন্ডাস্ট্রিজ করতে গেলে মিনিমাম ৮-১০টি লাইসেন্স নিতে হবে। ট্রেড লাইসেন্স, ফায়ার লাইসেন্স, পরিবেশের ছারপত্র, ভ্যাটসহ অন্য লাইসেন্স নিয়ে প্রতিষ্ঠান চালু করতে হবে। আবার এসব লাইসেন্স নিতে তাদের সন্তুষ্ট করতে না পারলে লাইসেন্স পাওয়া যায় না। নতুন উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসবে কিভাবে। বিসিক উন্নয়ন করতে গেলে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে কাজ শুরু করে উদ্যোক্তাদের নিয়ে বসতে হবে। উদ্যোক্তাদের সমস্যাগুলো শুনে সেগুলোর সমাধান করতে হবে।
রাজবাড়ী বিসিকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক চয়ন বিশ্বাস বেশ কিছু সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, বিসিক শিল্পনগরীতে যে রাস্তাটি রয়েছে সেটির অবস্থা খারাপ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা, বাউন্ডারীসহ বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে বিসিক হেড অফিসে যোগাযোগ করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, আগামী অর্থ বছরে কিছু বরাদ্দ পাওয়া যেতে পারে। বরাদ্দ পেলে সমস্যাগুলো ধাপে ধাপে কাটিয়ে উঠবে বলে জানায় বিসিক শিল্পনগরীর সহকারী মহাব্যবস্থাপক।
রাজবাড়ী বিসিক শিল্পনগরীর রাস্তার বেহাল দশা -সংবাদ
বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫
রাজবাড়ীর রামকান্তপুর এলাকায় ১৯৬৪ সালে ১৫.২৮ একর জমির ওপর অবস্থিত রাজবাড়ী বিসিক শিল্পনগরী। ৭৭টি প্লট নিয়ে যাত্রা শুরু করা এই শিল্পনগরী বেশিরভাগই বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। প্রথমদিকে ৫৩টি প্রতিষ্ঠান চালু হলেও ৬০ বছরের মাথাই উন্নয়নের বদলে বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে এ শিল্পনগরী। লোডশেডিং,খাবার পানি সংকট, ড্রেনেজ ব্যবস্থা অকেজোসহ রয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাব। সঠিক পরিকল্পনা ও সরকারি পৃষ্ঠপোশকতার কারণে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি শিল্পনগরীর বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান। লোকসানের মুখে বন্ধ হয়ে গেছে এ শিল্পনগরীর বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিসিক শিল্প নগরীতে গড়ে ওঠা বেশিরভাগ শিল্পপ্রতিষ্ঠানই বন্ধ হয়ে গেছে, কিছু প্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে। কাজ করছে শ্রমিকরা। আবার কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান তালাবদ্ধ। বিভিন্ন যায়গাতে ময়লা-আবর্জনা ও চারপাশ জঙ্গলে ভরা। অনেক প্লট পরিত্যক্ত। রাস্তার অবস্থা বেহাল, সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় শিল্পনগরীর বেশিরভাগ এলাকায়। কোনো রকম সচল রয়েছে সিলভার পণ্য তৈরির কারখানা, চাল ও স্বয়ংক্রিয় ময়দার মিল, তেলের মিল, আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশন আড়ং উৎপাদন কেন্দ্র রাজবাড়ী, অরবিট এগ্রোসহ কয়েকটি ফ্যাক্টরি।
সিলভার পণ্য তৈরির কারখানার হারুন নামের একজন বলেন, বিসিক শিল্পনগরীতে লোডশেডিং হওয়ার কথা না। তবুও মাঝে মাঝে লোডশেডিংএ অনেক ঝামেলাতে পড়তে হয়। বিদ্যুৎ চলে গেলে আমাদের মেশিন চলে না, কাজের অনেক ক্ষতি হয়।
শহীদ নামের একজন বলেন, এখানে কোনো নিরাপত্তা নেই। প্রতিনিয়ত এ এলাকায় ঘটছে চুরির ঘটনা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। বিদ্যুতের তার, ফ্যাক্টরির মোটর চুরি হয়। বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে বলার পর মিলছে না সমাধান।
অরবিট এগ্রোর কয়েকজন কর্মচারী বলেন, বৃষ্টি হলে আমাদের গেটের পাশেই হাঁটু পানি জমে যায়। ড্রেনগুলো নোংরা, পরিষ্কার করা হয় না। বেশি বৃষ্টি হলে বাথরুমের ময়লা পানি (দুর্গন্ধ) চলে আসে। পানি বের হতে না পেরে ফ্যাক্টরির ভিতরে চলে আসে। আমাদের যাতায়াতের সমস্যা হয়। এছাড়া খাবারের পানিতে অনেক সমস্যা রয়েছে। আয়রণতো আছেই মাঝে মাঝে পানি থেকে দুর্গন্ধ পাওয়া যায়।
সাগর অটো ফ্লাওয়ার ও সাগর অয়েল মিলের অ্যাসিস্ট্যান্ট মেনেজার জাহাঙ্গীর আলম জানান, এখানে প্রধান সমস্যা হচ্ছে ড্রেনের সমস্যা, রাস্তা ভাঙাচোরা, একটু বৃষ্টি হলে পানি জমে যায়। পানি নিষ্কাশনের তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। পানি জমলে আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আসা-যাওয়া, গাড়ি চলাচলে অনেক সমস্যা হয়। আমাদের মিলের নিজস্ব খরচে বেশ কয়েকবার রাস্তা সংস্কার করা হয়েছে। আমরা বিসিকের কর্মকর্তাকে একাধিক বার আমাদের সমস্যার কথা তুলে ধরেছি। কিন্তু বলে কি হবে, কোনো সমস্যাই সমাধান হচ্ছে না
রাজবাড়ী চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ইমামুল করিম জকি বলেন, বিসিকের ব্যবসায়ীদের জন্য সরকারি কোনো সুযোগ সুবিধা নেই বললেই চলে। জমি ট্যাক্সের টাকা কয়েক গুণ বেড়েছে। যে কারণে বেশিরভাগ ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। গভমেন্টের যতগুলো ডিপার্টমেন্ট, ইন্ড্রাস্ট্রিজকে হেল্প করার জন্য পাঠাচ্ছে ততগুলো ক্ষতির কারণ হচ্ছে ইন্ডাস্ট্রিজগুলো। একটা ইন্ডাস্ট্রিজ করতে গেলে মিনিমাম ৮-১০টি লাইসেন্স নিতে হবে। ট্রেড লাইসেন্স, ফায়ার লাইসেন্স, পরিবেশের ছারপত্র, ভ্যাটসহ অন্য লাইসেন্স নিয়ে প্রতিষ্ঠান চালু করতে হবে। আবার এসব লাইসেন্স নিতে তাদের সন্তুষ্ট করতে না পারলে লাইসেন্স পাওয়া যায় না। নতুন উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসবে কিভাবে। বিসিক উন্নয়ন করতে গেলে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে কাজ শুরু করে উদ্যোক্তাদের নিয়ে বসতে হবে। উদ্যোক্তাদের সমস্যাগুলো শুনে সেগুলোর সমাধান করতে হবে।
রাজবাড়ী বিসিকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক চয়ন বিশ্বাস বেশ কিছু সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, বিসিক শিল্পনগরীতে যে রাস্তাটি রয়েছে সেটির অবস্থা খারাপ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা, বাউন্ডারীসহ বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে বিসিক হেড অফিসে যোগাযোগ করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, আগামী অর্থ বছরে কিছু বরাদ্দ পাওয়া যেতে পারে। বরাদ্দ পেলে সমস্যাগুলো ধাপে ধাপে কাটিয়ে উঠবে বলে জানায় বিসিক শিল্পনগরীর সহকারী মহাব্যবস্থাপক।