বগুড়ার নন্দীগ্রাম সিংজানি মাদ্রাসার শ্রেণি কক্ষেই প্রকাশ্যে চলছে মাধ্যমিকের ইংরেজি ও গণিত দুই শিক্ষকের কোচিং বাণিজ্য। কোচিং না করলে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকিও দিচ্ছেন শিক্ষকরা। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়েই এই দুই শিক্ষকের কোচিং করছেন শিক্ষার্থীরা এমন ঘটনার অভিযোগ উঠেছে উপজেলার ১নং বুড়ইল ইউনিয়নের সিংজানী ডি.এস.এস সিনিয়র আলিম মাদ্রাসার গণিত বিভাগের শিক্ষক রাশেদুল ইসলাম ও ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক আনোয়ার হোসেন এর বিরুদ্ধে।
স্থানীয়রা জানান, মাদ্রাসায় পাঠদান শুরু হওয়ার আগের এক ঘণ্টা এবং ক্লাস শেষে এক ঘণ্টা ধরে প্রতিষ্ঠানটির এই দুই শিক্ষক মাদ্রাসার কক্ষে কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। দুই শিফটে একসাথে কয়েকটি ব্যাচ পড়িয়ে প্রতি মাসে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, গণিত বিভাগের শিক্ষক রাশেদুল ইসলাম ও ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক আনোয়ার হোসেন মাসে ১৩ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত কোচিং করিয়ে প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছেন। তিন থেকে চার শতাধিক শিক্ষার্থীর মধ্যে অন্তত শতাধিক শিক্ষার্থীকে চার-পাঁচটি ব্যাচে ভাগ করে পড়ানো হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, ক্লাসে ঠিকমতো পড়ান না স্যাররা। পরে বলেন, প্রাইভেটে না পড়লে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেবেন। তাই বাধ্য হয়ে আমরা টাকা দিয়ে পড়ি। ক্লাসে আমাদের ঠিক মতো পড়ালে আর কোচিং করতে হতো না।
অভিভাবকদের অভিযোগের ভিত্তিতে সাংবাদিকরা মাদ্রাসায় গেলে অভিযুক্ত শিক্ষকরা সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে দ্রুত কক্ষ ত্যাগ করেন। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক আনোয়ার হোসেনের বলেন, শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের অনুরোধেই আমরা পড়াই। কেউ জোর করে নয়, তারা ইচ্ছায় টাকা দেয়। তবে মাদ্রাসায় কোচিং করানোটা আমাদের ভুল হয়েছে। ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক রাশেদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের পিতা-মাতাদের অনুরোধে আমরা ক্লাসের বাহিরে এক্সট্রা টাইম পড়াই। তবে এখন আর পড়াচ্ছি না।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল আব্দুল মান্নান বলেন, মাদ্রাসা কক্ষে কোচিং করানোর বিষয়টি জানার পর শিক্ষকদের সতর্ক করা হয়েছে। পুনরায় এমনটি হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিভাবকদের দাবি, সরকারি নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও শ্রেণি কক্ষে কোচিং বাণিজ্য বন্ধ হচ্ছে না। ফলে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়ছে, আর শিক্ষা ব্যবসায় পরিণত হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও নন্দীগ্রামের বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও চলছে ছাত্রদের জিম্মি করে এমন কোচিং বাণিজ্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিংজানি মাদ্রাসার এক শিক্ষক বলেন, মাদ্রাসা বা স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা যদি ছাত্রদের বিদ্যালয় ঠিকমতো পাঠদান করা তো তাহলে আলাদা করে ওই ছাত্র-ছাত্রীদের আর বিদ্যালয়ে কোচিং করতে হতো না। এছাড়াও নন্দীগ্রামে শিক্ষা ব্যবস্থার মান নেই বললেই চলে। তাই প্রশাসনকে দ্রুত কোচিং সেন্টার গুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এ বিষয়ে মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫
বগুড়ার নন্দীগ্রাম সিংজানি মাদ্রাসার শ্রেণি কক্ষেই প্রকাশ্যে চলছে মাধ্যমিকের ইংরেজি ও গণিত দুই শিক্ষকের কোচিং বাণিজ্য। কোচিং না করলে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকিও দিচ্ছেন শিক্ষকরা। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়েই এই দুই শিক্ষকের কোচিং করছেন শিক্ষার্থীরা এমন ঘটনার অভিযোগ উঠেছে উপজেলার ১নং বুড়ইল ইউনিয়নের সিংজানী ডি.এস.এস সিনিয়র আলিম মাদ্রাসার গণিত বিভাগের শিক্ষক রাশেদুল ইসলাম ও ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক আনোয়ার হোসেন এর বিরুদ্ধে।
স্থানীয়রা জানান, মাদ্রাসায় পাঠদান শুরু হওয়ার আগের এক ঘণ্টা এবং ক্লাস শেষে এক ঘণ্টা ধরে প্রতিষ্ঠানটির এই দুই শিক্ষক মাদ্রাসার কক্ষে কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। দুই শিফটে একসাথে কয়েকটি ব্যাচ পড়িয়ে প্রতি মাসে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, গণিত বিভাগের শিক্ষক রাশেদুল ইসলাম ও ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক আনোয়ার হোসেন মাসে ১৩ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত কোচিং করিয়ে প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছেন। তিন থেকে চার শতাধিক শিক্ষার্থীর মধ্যে অন্তত শতাধিক শিক্ষার্থীকে চার-পাঁচটি ব্যাচে ভাগ করে পড়ানো হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, ক্লাসে ঠিকমতো পড়ান না স্যাররা। পরে বলেন, প্রাইভেটে না পড়লে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেবেন। তাই বাধ্য হয়ে আমরা টাকা দিয়ে পড়ি। ক্লাসে আমাদের ঠিক মতো পড়ালে আর কোচিং করতে হতো না।
অভিভাবকদের অভিযোগের ভিত্তিতে সাংবাদিকরা মাদ্রাসায় গেলে অভিযুক্ত শিক্ষকরা সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে দ্রুত কক্ষ ত্যাগ করেন। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক আনোয়ার হোসেনের বলেন, শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের অনুরোধেই আমরা পড়াই। কেউ জোর করে নয়, তারা ইচ্ছায় টাকা দেয়। তবে মাদ্রাসায় কোচিং করানোটা আমাদের ভুল হয়েছে। ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক রাশেদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের পিতা-মাতাদের অনুরোধে আমরা ক্লাসের বাহিরে এক্সট্রা টাইম পড়াই। তবে এখন আর পড়াচ্ছি না।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল আব্দুল মান্নান বলেন, মাদ্রাসা কক্ষে কোচিং করানোর বিষয়টি জানার পর শিক্ষকদের সতর্ক করা হয়েছে। পুনরায় এমনটি হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিভাবকদের দাবি, সরকারি নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও শ্রেণি কক্ষে কোচিং বাণিজ্য বন্ধ হচ্ছে না। ফলে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়ছে, আর শিক্ষা ব্যবসায় পরিণত হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও নন্দীগ্রামের বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও চলছে ছাত্রদের জিম্মি করে এমন কোচিং বাণিজ্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিংজানি মাদ্রাসার এক শিক্ষক বলেন, মাদ্রাসা বা স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা যদি ছাত্রদের বিদ্যালয় ঠিকমতো পাঠদান করা তো তাহলে আলাদা করে ওই ছাত্র-ছাত্রীদের আর বিদ্যালয়ে কোচিং করতে হতো না। এছাড়াও নন্দীগ্রামে শিক্ষা ব্যবস্থার মান নেই বললেই চলে। তাই প্রশাসনকে দ্রুত কোচিং সেন্টার গুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এ বিষয়ে মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।