ভাঙ্গুড়া (পাবনা) : পৌরসভা ভবন -সংবাদ
ভাঙ্গুড়া পৌরসভায় আগে থেকেই অন্যান্য দপ্তরের অর্থায়নে সম্পন্ন হওয়া সড়কে পুনরায় প্রকল্প দেখিয়ে ৮১ লাখ টাকার তিনটি প্রকল্পের বিল তোলার চেষ্টা এবং একাধিক প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। পৌরসভার কিছু কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের যোগসাজশে অন্তত ৩ টি প্রকল্পে কাজ না করেই বিল উত্তোলনের অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
এসংক্রান্ত তথ্য যাচাই করে দেখা যায়—সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) ২০২২২৩ অর্থবছরে শহরের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের সংস্কার কাজ শেষ করে। এরপরও ২০২৩–২৪ অর্থবছরে ওই সড়কগুলোতে আবারও সংস্কারের দরপত্র আহ্বান করে পৌরসভা। শিশুকুঞ্জ থেকে শিমুলতলা পর্যন্ত ২৫ লাখ টাকা, শিমুলতলা থেকে জগতলা পর্যন্ত ৩৫ লাখ ৮১ হাজার টাকা এবং বাজার চারমাথা মোড় থেকে কালিবাড়ী বাজার পর্যন্ত ২৬ লাখ ১৫ হাজার টাকা এই তিন প্রকল্পের মোট বরাদ্দ ছিল ৮১ লাখ টাকা।
তথ্য যাচাই করে জানা যায়, এসব সড়কে সওজের কাজ সম্পন্ন করেছিলেন পাবনার ঠিকাদার মিঠু সরদার ও ওহিদুল ইসলাম। কিন্তু পৌরসভা প্রকল্পগুলো বাতিল না করে গোপন রাখে। পরে বিষয়টি নজরে এলে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক নাজমুন নাহার গত ২৬ আগস্ট প্রকল্প বাতিলের প্রস্তাব পাঠান। তাঁর বদলির পরও প্রকল্পগুলো এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল হয়নি।
এছাড়া শরৎনগর বাজারের কলেজ মোড় থেকে বাংলা স্যারের মোড় পর্যন্ত প্রায় ১৫০ মিটার সড়কের জন্যও দরপত্র আহ্বান করা হয়। কিন্তু এর আগে এলজিইডির অর্থায়নে ওই সড়কের সংস্কার কাজ শেষ হয়। কাজ না করেও প্রকল্পের ঠিকাদার সঙ্গীত কুমার পাল বিল তুলে নেন। বিষয়টি জানাজানি হলে তিনি সম্প্রতি বাধ্য হয়ে কাজ শুরু করেন।
একইভাবে শরৎনগর বাজারে গরু হাট থেকে জিগাতলা পর্যন্ত ২০০ মিটার সড়কের জন্যও দরপত্র আহ্বান করা হয়। ওই প্রকল্পের বিল তোলা ঠিকাদার রতন আহমেদও দীর্ঘদিন কাজ না করে সম্প্রতি দায়সারাভাবে কাজ শুরু করেছেন।
সরেজমিনে নিম্নমানের কাজ সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ সড়কে নিম্নমানের কার্পেটিং করা হচ্ছে। কোথাও টেক কোড বা প্রাইম কোড ছাড়াই সরাসরি বিটুমিন ছড়িয়ে কার্পেটিং করা হচ্ছে। এমনকি উপজেলা পরিষদের ভেতরের এক সড়কে সংস্কারের পরদিনই কার্পেটিং বসে গেছে। কাজ চলাকালে পৌর প্রকৌশলী উপস্থিত থাকলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি।
অভিযোগ অস্বীকার, দায় এড়ানোর চেষ্টা কয়েকটি প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার সঙ্গীত কুমার পাল বলেন, ‘অনেক আগে এগুলো আমাদের কিনে নেওয়া কাজ। সব কাজই করা হবে, যদিও এখন লস আসবে।’ কাজ এক বছর আটকে থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘সওজ বা এলজিইডি যে প্রকল্পগুলো করেছে, সেগুলো বাতিলের জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে প্রকল্প বাতিল না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, একই প্যাকেজে একাধিক প্রকল্প থাকায় বাতিলের সুযোগ নেই। সওজ যে কাজ করেছে, তা বাদ দিয়ে ফাইনাল বিল পাঠানো হয়েছে।’ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও বর্তমান পৌর প্রশাসক মিজানুর রহমান বলেন, এসব প্রকল্প আগের মেয়র ও আগের প্রশাসনের সময়ের। সওজ বাস্তবায়িত যে তিনটি প্রকল্প, সেগুলো বাতিলের প্রস্তাব সাবেক পৌর প্রশাসক ২৬ আগস্ট পাঠিয়েছে। ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে সওজ প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে কেন ২০২৩-২০২৪ অর্থবছর প্রকল্প দিয়েছে বিষয়টি পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলীর থেকে জানতে হবে।
এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ প্রকল্প বাতিল না করে এবং আগে করা সড়কেও পুনরায় দরপত্র আহ্বান করে অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা চলছে। প্রশাসনিক পরিবর্তনের পর কিছু ঠিকাদার কাজে নেমেছেন, আবার কেউ কেউ নাকি বিল ফেরতের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
ভাঙ্গুড়া (পাবনা) : পৌরসভা ভবন -সংবাদ
রোববার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫
ভাঙ্গুড়া পৌরসভায় আগে থেকেই অন্যান্য দপ্তরের অর্থায়নে সম্পন্ন হওয়া সড়কে পুনরায় প্রকল্প দেখিয়ে ৮১ লাখ টাকার তিনটি প্রকল্পের বিল তোলার চেষ্টা এবং একাধিক প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। পৌরসভার কিছু কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের যোগসাজশে অন্তত ৩ টি প্রকল্পে কাজ না করেই বিল উত্তোলনের অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
এসংক্রান্ত তথ্য যাচাই করে দেখা যায়—সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) ২০২২২৩ অর্থবছরে শহরের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের সংস্কার কাজ শেষ করে। এরপরও ২০২৩–২৪ অর্থবছরে ওই সড়কগুলোতে আবারও সংস্কারের দরপত্র আহ্বান করে পৌরসভা। শিশুকুঞ্জ থেকে শিমুলতলা পর্যন্ত ২৫ লাখ টাকা, শিমুলতলা থেকে জগতলা পর্যন্ত ৩৫ লাখ ৮১ হাজার টাকা এবং বাজার চারমাথা মোড় থেকে কালিবাড়ী বাজার পর্যন্ত ২৬ লাখ ১৫ হাজার টাকা এই তিন প্রকল্পের মোট বরাদ্দ ছিল ৮১ লাখ টাকা।
তথ্য যাচাই করে জানা যায়, এসব সড়কে সওজের কাজ সম্পন্ন করেছিলেন পাবনার ঠিকাদার মিঠু সরদার ও ওহিদুল ইসলাম। কিন্তু পৌরসভা প্রকল্পগুলো বাতিল না করে গোপন রাখে। পরে বিষয়টি নজরে এলে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক নাজমুন নাহার গত ২৬ আগস্ট প্রকল্প বাতিলের প্রস্তাব পাঠান। তাঁর বদলির পরও প্রকল্পগুলো এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল হয়নি।
এছাড়া শরৎনগর বাজারের কলেজ মোড় থেকে বাংলা স্যারের মোড় পর্যন্ত প্রায় ১৫০ মিটার সড়কের জন্যও দরপত্র আহ্বান করা হয়। কিন্তু এর আগে এলজিইডির অর্থায়নে ওই সড়কের সংস্কার কাজ শেষ হয়। কাজ না করেও প্রকল্পের ঠিকাদার সঙ্গীত কুমার পাল বিল তুলে নেন। বিষয়টি জানাজানি হলে তিনি সম্প্রতি বাধ্য হয়ে কাজ শুরু করেন।
একইভাবে শরৎনগর বাজারে গরু হাট থেকে জিগাতলা পর্যন্ত ২০০ মিটার সড়কের জন্যও দরপত্র আহ্বান করা হয়। ওই প্রকল্পের বিল তোলা ঠিকাদার রতন আহমেদও দীর্ঘদিন কাজ না করে সম্প্রতি দায়সারাভাবে কাজ শুরু করেছেন।
সরেজমিনে নিম্নমানের কাজ সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ সড়কে নিম্নমানের কার্পেটিং করা হচ্ছে। কোথাও টেক কোড বা প্রাইম কোড ছাড়াই সরাসরি বিটুমিন ছড়িয়ে কার্পেটিং করা হচ্ছে। এমনকি উপজেলা পরিষদের ভেতরের এক সড়কে সংস্কারের পরদিনই কার্পেটিং বসে গেছে। কাজ চলাকালে পৌর প্রকৌশলী উপস্থিত থাকলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি।
অভিযোগ অস্বীকার, দায় এড়ানোর চেষ্টা কয়েকটি প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার সঙ্গীত কুমার পাল বলেন, ‘অনেক আগে এগুলো আমাদের কিনে নেওয়া কাজ। সব কাজই করা হবে, যদিও এখন লস আসবে।’ কাজ এক বছর আটকে থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘সওজ বা এলজিইডি যে প্রকল্পগুলো করেছে, সেগুলো বাতিলের জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে প্রকল্প বাতিল না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, একই প্যাকেজে একাধিক প্রকল্প থাকায় বাতিলের সুযোগ নেই। সওজ যে কাজ করেছে, তা বাদ দিয়ে ফাইনাল বিল পাঠানো হয়েছে।’ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও বর্তমান পৌর প্রশাসক মিজানুর রহমান বলেন, এসব প্রকল্প আগের মেয়র ও আগের প্রশাসনের সময়ের। সওজ বাস্তবায়িত যে তিনটি প্রকল্প, সেগুলো বাতিলের প্রস্তাব সাবেক পৌর প্রশাসক ২৬ আগস্ট পাঠিয়েছে। ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে সওজ প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে কেন ২০২৩-২০২৪ অর্থবছর প্রকল্প দিয়েছে বিষয়টি পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলীর থেকে জানতে হবে।
এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ প্রকল্প বাতিল না করে এবং আগে করা সড়কেও পুনরায় দরপত্র আহ্বান করে অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা চলছে। প্রশাসনিক পরিবর্তনের পর কিছু ঠিকাদার কাজে নেমেছেন, আবার কেউ কেউ নাকি বিল ফেরতের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।