alt

অর্থ-বাণিজ্য

খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ

বড় ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে চামড়ার দাম কম

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : বুধবার, ১৯ জুন ২০২৪

ঈদের আগে সরকার চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল। কিন্তু দেশের অধিকাংশ জায়গায় সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া বিক্রি হচ্ছে না। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মৌসুমি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ট্যানারি-মলিকরা সিন্ডিকেট করে কম দামে চামড়া কিনছে। এতে ক্রয়কৃত চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। দেশের রাজশাহী, রংপুর, জয়পুরহাটসহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর নিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

উত্তরাঞ্চলের জেলা জয়পুরহাটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলায় গত বছরের মত এবারও কোরবানির চামড়ার বাজারে ধস নেমেছে। আগে যে ছাগলের চামড়া বিক্রি হতো ৫০০ টাকায়, এবার তা মাত্র ৫ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। পাঁচ বছর আগে গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকায় অথচ এখন তা বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৫০০ টাকায়। এতে লোকসানে পড়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।

এছাড়া সাতক্ষীরায়ও সরকার নির্ধারিত দামে বেচাকেনা হচ্ছে না গরুর চামড়া ফলে হতাশ মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। ঠিক মতো মজুরি না পাওয়ায় চামড়ার আড়তে খেটে খাওয়া শ্রমিকরাও আছেন বিপাকে। ট্যানারি মালিকদের সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে কাঁচা চামড়া বিদেশে পুনরায় রপ্তানি করার দাবি সাতক্ষীরা চামড়া সমিতির। এদিকে কোরবানির চামড়া পাচার প্রতিরোধে বিজিবি ও পুলিশ শক্ত অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছে।

বাগেরহাটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সময় মতো লবণ দিতে না পারায় পচে যাচ্ছে চামড়া। কোরবানির চামড়া সংরক্ষণ করতে না পেরে বাধ্য হয়ে নামমাত্র মূল্যে চামড়া বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় চামড়া শিল্পকে রক্ষা করতে সরকারকেই পদক্ষেপ নিতে হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

রংপুরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকার নির্ধারিত ন্যায্য দাম পাননি কেউ। হাতেগোনা কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা সামান্য লাভের মুখ দেখলেও অধিকাংশই বিক্রি করেছে কম দামে। ফলে গতবারের চেয়ে এবার প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ঢাকায় ৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৭ টাকা বাড়ানো হলেও কাক্সিক্ষত দাম পাননি মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।

রংপুরে সরেজমিনে চামড়া কেনাবেচার স্থানগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, সরকার নির্ধারিত লবণযুক্ত চামড়ার দামের অর্ধেক দামেও বিক্রি করতে না পেরে লোকসানে হতাশ মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।

খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, প্রতি বছর এ রকম সিন্ডিকেটের ফাঁদে রংপুরে একদিকে কমছে কোরবানির পশুর চামড়ার আমদানি। অন্যদিকে ন্যায্য দাম না পেয়ে চামড়া মাটিচাপা দেওয়ার ঘটনাও ঘটছে। রংপুর নগরীর চামড়া কেনাবেচার সবচেয়ে বৃহৎ এলাকা চামড়াপট্টিতে দেখা গেছে, পুরো চামড়ার বাজার একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণে নেন আড়তদারসহ বড় বড় ব্যবসায়ীরা।

সাধারণ মানুষ এবং মৌসুমি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, চামড়ার জন্য প্রসিদ্ধ রংপুর নগরীর শাপলা চত্বর টার্মিনাল রোডের চামড়াপট্টি এলাকার ব্যবসায়ীরাসহ জেলার বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে এবারও সস্তায় চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন তারা। গরুর চামড়ায় দাম মিললেও ছাগলের চামড়া ফ্রি-তে দিতে হয়েছে। চামড়ার দাম কম দিতে নানা অজুহাতের ফাঁদ গল্প শুনতে হয়েছে তাদের।

রংপুরের বিভিন্ন স্থানে দেখা যায়, এবার প্রতি পিস গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ২৫০ থেকে ৬০০ টাকায়। আর ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে মাত্র ৫ থেকে ১০ টাকায়। মৌসুমি চামড়া বিক্রেতারা জানিয়েছে, বিভিন্ন জায়গা থেকে চামড়া কিনে আনার পর আড়তদারদের কাছে চামড়ার ন্যায্য দাম পাওয়া যায়নি। এতে করে হতাশ তারা।

খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, তাদের গরুর দাম ছিল ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। কিন্তু সেই গরুর চামড়া বিক্রি করেছেন মাত্র ৪০০ টাকায়। প্রায় চার ঘণ্টা ছিলাম। কোনো ক্রেতাই এর থেকে দাম বেশি বলেনি। উপায় না থাকায় কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি। এতে করে আমার ক্ষতি না হলেও সাধারণ গরিব-মিসকিনেরতো ঠিকই ক্ষতি হচ্ছে। কারণ কোরবানির পশুর চামড়ার টাকায় তো তাদের হক রয়েছে।

তবে আড়তদারদের দাবি, ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে পাওনা টাকা তুলতে না পারা, পুঁজি সংকটসহ লবণের দাম বৃদ্ধি ও বিভিন্ন কারণে সরকার নির্ধারিত দামে তারা চামড়া কিনতে পারেননি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছর ১৫-২০ জন ফড়িয়া ও অর্ধশত মৌসুমি ব্যবসায়ী এবং হাতেগোনা ৬-১০ জন ব্যবসায়ী চামড়া কিনলেও এ বছর বেশির ভাগকেই চামড়া কেনাবেচায় দেখা যায়নি। সবমিলিয়ে চার-পাঁচজন ছাড়া চামড়া কেনার মতো বড় কোনো ব্যবসায়ী ও আড়তদার ছিল না এ এলাকায়। অথচ এক সময় চামড়াপট্টি এলাকায় শতাধিকের বেশি চামড়ার গুদাম ছিল।

রাজশাহীতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের মতো এবারও কোরবানির পশুর চামড়ার দামে খুব বেশি হেরফের হয়নি। তবে গত কয়েক বছর ধরে যেভাবে কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করতে না পেরে খাল নর্দমায় ফেলে দিতে হয়েছিল এবার পরিস্থিতি ততটা খারাপ হয়নি। তবুও দামে খুশি নন বিক্রেতারা। যদিও ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে পানির দামে।

এক বা দুই লাখ টাকার একটি বড় গরুর চামড়া এবার রাজশাহীতে সর্বোচ্চ ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে একেকটি ছাগলের চামড়ার বিক্রি হয়েছে ৫ থেকে সর্বোচ্চ ২০ টাকা পর্যন্ত দামে।

জানা গেছে, পাঁচ বছর আগেও যেখানে একটি গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকায়। এখন সেখানে এবার বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকায়। আগে একটি ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে ৮০০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত। এবার সেই চামড়া ৫ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কোথাও কোথাও বিনা টাকাতেই চামড়া গছিয়ে দিয়েছেন মালিকরা। কারণ চামড়া বাড়িতে রাখার জিনিসও নয়।

রাজশাহী নগরীর কাজলা মহল্লার মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম জানান, তারা এসব চামড়া কিনে আড়তে দেন। গত কয়েক বছর ধরে ছাগলের চামড়া নেয় না গুদামের ব্যাপারীরা। ফলে এবার তারা ছাগলের একটা চামড়াও কেনেননি।

তিনি আরও জানান, এবার গরুর চামড়ার দামটা গতবারের তুলনায় প্রতিটিতে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বেশি হয়েছে। এবার তারা বড় গরুর চামড়া ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত কিনেছেন। গতবার বড় গরুর প্রতিটি চামড়ার দাম ছিল ২০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে।

অন্যদিকে ঈদের দিনই রাজশাহীর বিভিন্ন মহল্লা ও এলাকায় চামড়া বেচাকেনা হয়। পাড়া মহল্লা থেকে যারা চামড়া সংগ্রহ করেন তারা মৌসুমি ব্যবসায়ী। নগরীর রেলগেট এলাকায় রয়েছে চামড়ার মজুদের অনেকগুলি গুদাম। গুদামের ব্যাপারীরা খুচরা ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া কেনেন। ব্যাপারীরা কাঁচা চামড়া কিনে লবণ লাগিয়ে কয়েকদিন রাখেন নিজেদের গুদামে। পরে সেগুলি বোঝা আকারে ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করেন। এবারও রাজশাহীর গুদামে চামড়া বিক্রি করতে এসে বিপাকে পড়েন কয়েকজন মৌসুমি ব্যবসায়ী।

রাজশাহী চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আসাদুজ্জামান জানান, চামড়ার দাম গত বছরের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। এবার এক হাজার টাকাতেও গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে এবার যা গত কয়েক বছরের তুলনায় অনেক বেশি। গত বছর আমরা ৩০০ টাকাতেও গরুর চামড়া কিনেছি। সে তুলনায় এবার দাম ভালই বলতে হবে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সবশেষ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি থেকে ৯৬ কোটি ১৫ লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪ দশমিক ১৭ শতাংশ কম। ১৩৫ কোটি (১.৩৫ বিলিয়ন) ডলার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে ২১ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে আয় হয়েছিল ১১২ কোটি ডলার। পুরো অর্থবছরে (জুলাই-জুন) এসেছিল ১২২ কোটি ৩৬ লাখ ডলার যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ১ দশমিক ৭৪ শতাংশ কম। লক্ষ্যের চেয়ে কম ছিল ১৫ দশমিক শূন্য তিন শতাংশ। বিদায়ী অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে কাঁচা চামড়া রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১২ কোটি ৫৭ লাখ ডলার যা গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ বেশি।

অন্যদিকে চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি থেকে এসেছে ৩৫ কোটি ৮৫ লাখ ডলার যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে দশমিক ৮১ শতাংশ কম। আর লেদার ফুটওয়্যার বা চামড়ার জুতো রপ্তানি করে জুলাই-মে সময়ে ৪৭ কোটি ৭২ লাখ ডলারের বিদেশি মুদ্রা দেশে এসেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২৬ শতাংশ কম।

ছবি

ভারতের সিদ্ধ চাল রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, শুল্ক কমল ১০ শতাংশে

ছবি

ভারত থেকে চাল রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার: কৃষি খাতে ‘গেম চেঞ্জার’

ছবি

নতুন গ্রাহকদের জন্য কার্ড থেকে বিকাশে অ্যাড মানিতে ক্যাশব্যাক অফার

ছবি

উত্তরার জসীমউদ্দিনে ডোমিনোজ পিৎজা’র ৩৪তম শাখা

ছবি

বই ও সুপারস্টোর পণ্যে রকমারি’র ৭০% পর্যন্ত ছাড়

ছবি

বিএটি বাংলাদেশের পরিচালনা পর্ষদে যোগ দিলেন নুমায়ের আলম

ছবি

স্বস্তি ফেরেনি পোশাক শিল্পে, বুধবারও বন্ধ ছিল প্রায় ১৯ কারখানা

ছবি

কোটি টাকার ব্যাংক হিসাব বেড়েছে প্রায় ৩ হাজার

ছবি

স্বর্ণের দামে রেকর্ড বৃদ্ধি, ২২ ক্যারেটের ভরি ১ লাখ ৩৫ হাজার ৬৬৪ টাকা

ছবি

বাণিজ্য সহজীকরণের লক্ষ্যে অ্যামচ্যাম প্রতিনিধিদের সঙ্গে বাণিজ্য উপদেষ্টার আলোচনা

ছবি

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে সক্রিয়তা বৃদ্ধিতে ব্যাংকের সহায়তা চাওয়া হয়েছে

ছবি

বাজারে অনারের আল্ট্রা স্লিম প্যাড এক্স৮এ

চট্টগ্রাম রুটে ফ্লাইট বৃদ্ধি করছে এয়ার এ্যাস্ট্রা

ছবি

বাজারে থ্রিডি কার্ভড ডিসপ্লে সমৃদ্ধ ইনফিনিক্স নোট ৪০এস

ছবি

গার্ডিয়ান লাইফ ও গ্রামীণ ডিজিটাল হেলথকেয়ার সল্যুশনের মধ্যে চুক্তি

বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতিতে প্রশাসক নিয়োগ

ছবি

বাজারে টেলিটকের জেন জি প্যাকেজ

ছবি

এরিকসনের সহযোগিতায় গ্রাহক অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ করলো গ্র্রামীণফোন

ছবি

অর্থনৈতিক অস্থিরতায় চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি কমার শঙ্কা, মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১০ শতাংশে

ছবি

মেয়াদপূর্তির দিনই মিলবে সঞ্চয়পত্রের আসলসহ মুনাফার টাকা

ছবি

সরকারের ১ লাখ ৪০ হাজার টন সার কেনার সিদ্ধান্ত

ছবি

বেসিস আমেরিকা ডেস্ক স্টেকহোল্ডারস মিট অনুষ্ঠিত

ছবি

রবির কর্মী ও গ্রাহকদের জন্য কোডার্সট্রাস্ট’র কোর্সে বিশেষছাড়

ছবি

বাংলালিংক অরেঞ্জ ক্লাব সদস্যদের জন্য পাঠাও-এ বিশেষ ডিসকাউন্ট

ছবি

বুয়েট গ্র্যাজুয়েটস ক্লাব ও ইউসিবি’র মধ্যে এমওইউ

ছবি

আইএমএফের বাড়তি ঋণ সংস্কারের কাজে ব্যবহার করা হবে: অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

গাজীপুরে কাজে যোগ দিয়েছে শিল্প কারখানার শ্রমিকরা

ছবি

অডিটরদের ১১তম থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার দাবিতে বিক্ষোভ

ছবি

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব এর সঙ্গে বেবিচক চেয়ারম্যান এর সৌজন্য সাক্ষাৎ

ছবি

দক্ষিণ কোরিয়ায় ক্যাসপারস্কি’র নতুন ট্রান্সপারেন্সি সেন্টার

ছবি

ডেঙ্গু টেস্টে বিকাশ পেমেন্ট করলে ক্যাশব্যাক ও ডিসকাউন্ট

ছবি

অপো’র দুই দশক পূর্তিতে ইউনেস্কোর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ

ছবি

মাস্টারকার্ডের ‘স্পেন্ড অ্যান্ড উইন’ ক্যাম্পেইন বিজয়ীদের নাম ঘোষণা

ছবি

৫ ব্যাংকের জন্য নতুন সহায়তা চুক্তি, আশা সঞ্চার

ছবি

গ্রামীণ ডিজিটাল হেলথের সাথে ‘আমি প্রবাসী’র উদ্যোগ

ছবি

বাজারে রিভো’র ইলেকট্রিক মোটরসাইকেল এ০১ ও সি০৩

tab

অর্থ-বাণিজ্য

খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ

বড় ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে চামড়ার দাম কম

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

বুধবার, ১৯ জুন ২০২৪

ঈদের আগে সরকার চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল। কিন্তু দেশের অধিকাংশ জায়গায় সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া বিক্রি হচ্ছে না। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মৌসুমি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ট্যানারি-মলিকরা সিন্ডিকেট করে কম দামে চামড়া কিনছে। এতে ক্রয়কৃত চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। দেশের রাজশাহী, রংপুর, জয়পুরহাটসহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর নিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

উত্তরাঞ্চলের জেলা জয়পুরহাটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলায় গত বছরের মত এবারও কোরবানির চামড়ার বাজারে ধস নেমেছে। আগে যে ছাগলের চামড়া বিক্রি হতো ৫০০ টাকায়, এবার তা মাত্র ৫ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। পাঁচ বছর আগে গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকায় অথচ এখন তা বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৫০০ টাকায়। এতে লোকসানে পড়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।

এছাড়া সাতক্ষীরায়ও সরকার নির্ধারিত দামে বেচাকেনা হচ্ছে না গরুর চামড়া ফলে হতাশ মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। ঠিক মতো মজুরি না পাওয়ায় চামড়ার আড়তে খেটে খাওয়া শ্রমিকরাও আছেন বিপাকে। ট্যানারি মালিকদের সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে কাঁচা চামড়া বিদেশে পুনরায় রপ্তানি করার দাবি সাতক্ষীরা চামড়া সমিতির। এদিকে কোরবানির চামড়া পাচার প্রতিরোধে বিজিবি ও পুলিশ শক্ত অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছে।

বাগেরহাটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সময় মতো লবণ দিতে না পারায় পচে যাচ্ছে চামড়া। কোরবানির চামড়া সংরক্ষণ করতে না পেরে বাধ্য হয়ে নামমাত্র মূল্যে চামড়া বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় চামড়া শিল্পকে রক্ষা করতে সরকারকেই পদক্ষেপ নিতে হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

রংপুরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকার নির্ধারিত ন্যায্য দাম পাননি কেউ। হাতেগোনা কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা সামান্য লাভের মুখ দেখলেও অধিকাংশই বিক্রি করেছে কম দামে। ফলে গতবারের চেয়ে এবার প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ঢাকায় ৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৭ টাকা বাড়ানো হলেও কাক্সিক্ষত দাম পাননি মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।

রংপুরে সরেজমিনে চামড়া কেনাবেচার স্থানগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, সরকার নির্ধারিত লবণযুক্ত চামড়ার দামের অর্ধেক দামেও বিক্রি করতে না পেরে লোকসানে হতাশ মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।

খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, প্রতি বছর এ রকম সিন্ডিকেটের ফাঁদে রংপুরে একদিকে কমছে কোরবানির পশুর চামড়ার আমদানি। অন্যদিকে ন্যায্য দাম না পেয়ে চামড়া মাটিচাপা দেওয়ার ঘটনাও ঘটছে। রংপুর নগরীর চামড়া কেনাবেচার সবচেয়ে বৃহৎ এলাকা চামড়াপট্টিতে দেখা গেছে, পুরো চামড়ার বাজার একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণে নেন আড়তদারসহ বড় বড় ব্যবসায়ীরা।

সাধারণ মানুষ এবং মৌসুমি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, চামড়ার জন্য প্রসিদ্ধ রংপুর নগরীর শাপলা চত্বর টার্মিনাল রোডের চামড়াপট্টি এলাকার ব্যবসায়ীরাসহ জেলার বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে এবারও সস্তায় চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন তারা। গরুর চামড়ায় দাম মিললেও ছাগলের চামড়া ফ্রি-তে দিতে হয়েছে। চামড়ার দাম কম দিতে নানা অজুহাতের ফাঁদ গল্প শুনতে হয়েছে তাদের।

রংপুরের বিভিন্ন স্থানে দেখা যায়, এবার প্রতি পিস গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ২৫০ থেকে ৬০০ টাকায়। আর ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে মাত্র ৫ থেকে ১০ টাকায়। মৌসুমি চামড়া বিক্রেতারা জানিয়েছে, বিভিন্ন জায়গা থেকে চামড়া কিনে আনার পর আড়তদারদের কাছে চামড়ার ন্যায্য দাম পাওয়া যায়নি। এতে করে হতাশ তারা।

খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, তাদের গরুর দাম ছিল ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। কিন্তু সেই গরুর চামড়া বিক্রি করেছেন মাত্র ৪০০ টাকায়। প্রায় চার ঘণ্টা ছিলাম। কোনো ক্রেতাই এর থেকে দাম বেশি বলেনি। উপায় না থাকায় কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি। এতে করে আমার ক্ষতি না হলেও সাধারণ গরিব-মিসকিনেরতো ঠিকই ক্ষতি হচ্ছে। কারণ কোরবানির পশুর চামড়ার টাকায় তো তাদের হক রয়েছে।

তবে আড়তদারদের দাবি, ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে পাওনা টাকা তুলতে না পারা, পুঁজি সংকটসহ লবণের দাম বৃদ্ধি ও বিভিন্ন কারণে সরকার নির্ধারিত দামে তারা চামড়া কিনতে পারেননি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছর ১৫-২০ জন ফড়িয়া ও অর্ধশত মৌসুমি ব্যবসায়ী এবং হাতেগোনা ৬-১০ জন ব্যবসায়ী চামড়া কিনলেও এ বছর বেশির ভাগকেই চামড়া কেনাবেচায় দেখা যায়নি। সবমিলিয়ে চার-পাঁচজন ছাড়া চামড়া কেনার মতো বড় কোনো ব্যবসায়ী ও আড়তদার ছিল না এ এলাকায়। অথচ এক সময় চামড়াপট্টি এলাকায় শতাধিকের বেশি চামড়ার গুদাম ছিল।

রাজশাহীতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের মতো এবারও কোরবানির পশুর চামড়ার দামে খুব বেশি হেরফের হয়নি। তবে গত কয়েক বছর ধরে যেভাবে কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করতে না পেরে খাল নর্দমায় ফেলে দিতে হয়েছিল এবার পরিস্থিতি ততটা খারাপ হয়নি। তবুও দামে খুশি নন বিক্রেতারা। যদিও ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে পানির দামে।

এক বা দুই লাখ টাকার একটি বড় গরুর চামড়া এবার রাজশাহীতে সর্বোচ্চ ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে একেকটি ছাগলের চামড়ার বিক্রি হয়েছে ৫ থেকে সর্বোচ্চ ২০ টাকা পর্যন্ত দামে।

জানা গেছে, পাঁচ বছর আগেও যেখানে একটি গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকায়। এখন সেখানে এবার বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকায়। আগে একটি ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে ৮০০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত। এবার সেই চামড়া ৫ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কোথাও কোথাও বিনা টাকাতেই চামড়া গছিয়ে দিয়েছেন মালিকরা। কারণ চামড়া বাড়িতে রাখার জিনিসও নয়।

রাজশাহী নগরীর কাজলা মহল্লার মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম জানান, তারা এসব চামড়া কিনে আড়তে দেন। গত কয়েক বছর ধরে ছাগলের চামড়া নেয় না গুদামের ব্যাপারীরা। ফলে এবার তারা ছাগলের একটা চামড়াও কেনেননি।

তিনি আরও জানান, এবার গরুর চামড়ার দামটা গতবারের তুলনায় প্রতিটিতে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বেশি হয়েছে। এবার তারা বড় গরুর চামড়া ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত কিনেছেন। গতবার বড় গরুর প্রতিটি চামড়ার দাম ছিল ২০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে।

অন্যদিকে ঈদের দিনই রাজশাহীর বিভিন্ন মহল্লা ও এলাকায় চামড়া বেচাকেনা হয়। পাড়া মহল্লা থেকে যারা চামড়া সংগ্রহ করেন তারা মৌসুমি ব্যবসায়ী। নগরীর রেলগেট এলাকায় রয়েছে চামড়ার মজুদের অনেকগুলি গুদাম। গুদামের ব্যাপারীরা খুচরা ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া কেনেন। ব্যাপারীরা কাঁচা চামড়া কিনে লবণ লাগিয়ে কয়েকদিন রাখেন নিজেদের গুদামে। পরে সেগুলি বোঝা আকারে ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করেন। এবারও রাজশাহীর গুদামে চামড়া বিক্রি করতে এসে বিপাকে পড়েন কয়েকজন মৌসুমি ব্যবসায়ী।

রাজশাহী চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আসাদুজ্জামান জানান, চামড়ার দাম গত বছরের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। এবার এক হাজার টাকাতেও গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে এবার যা গত কয়েক বছরের তুলনায় অনেক বেশি। গত বছর আমরা ৩০০ টাকাতেও গরুর চামড়া কিনেছি। সে তুলনায় এবার দাম ভালই বলতে হবে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সবশেষ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি থেকে ৯৬ কোটি ১৫ লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪ দশমিক ১৭ শতাংশ কম। ১৩৫ কোটি (১.৩৫ বিলিয়ন) ডলার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে ২১ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে আয় হয়েছিল ১১২ কোটি ডলার। পুরো অর্থবছরে (জুলাই-জুন) এসেছিল ১২২ কোটি ৩৬ লাখ ডলার যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ১ দশমিক ৭৪ শতাংশ কম। লক্ষ্যের চেয়ে কম ছিল ১৫ দশমিক শূন্য তিন শতাংশ। বিদায়ী অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে কাঁচা চামড়া রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১২ কোটি ৫৭ লাখ ডলার যা গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ বেশি।

অন্যদিকে চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি থেকে এসেছে ৩৫ কোটি ৮৫ লাখ ডলার যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে দশমিক ৮১ শতাংশ কম। আর লেদার ফুটওয়্যার বা চামড়ার জুতো রপ্তানি করে জুলাই-মে সময়ে ৪৭ কোটি ৭২ লাখ ডলারের বিদেশি মুদ্রা দেশে এসেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২৬ শতাংশ কম।

back to top