চট্টগ্রামের লালদিয়ার চরে কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সোমবার ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে এ উপলক্ষে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল সৈয়দ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান এবং ডেনমার্কের এপিএম টার্মিনালসের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টেইন ভ্যান ডোঙ্গেন চুক্তি সই করেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নৌ উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, পিপিপি কর্তৃপক্ষ ও বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, ডেনমার্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট বিষয়ক স্টেট সেক্রেটারি লিনা গেন্ডলস হেনসেন এবং ঢাকায় ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টিয়ান ব্রিক্স মুলার।
নৌপরিবহন উপদেষ্টা অনুষ্ঠানে বলেন, “এ চুক্তি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জাতির জন্য বড় অবদান। যাদের মধ্যে এ নিয়ে সন্দেহ ছিল, আশা করি, আজ তা দূর হবে।”
বিডা চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বলেন, “লালদিয়া দেখিয়ে দিয়েছে পিপিপি শুধু তত্ত্বে নয়, বাস্তবেও কার্যকর। ভবিষ্যতেও আমরা বাস্তবায়নকেন্দ্রিক অবকাঠামো উন্নয়নেই মনোযোগ দেব। আগামী কয়েক বছরে চারটি নতুন সমুদ্র বন্দর বাস্তবায়নের কাজ চলছে, যার মধ্যে আছে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর, একটি আন্তর্জাতিক টার্মিনাল ও একটি নির্ধারিত মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল।”
এপি মোলারের মূল কোম্পানি মেয়ার্স্কের চেয়ারম্যান রবার্ট মেয়ার্স্ক উগলা বলেন, “লালদিয়ায় এটি হচ্ছে ইউরোপের কোনো দেশের একক বৃহৎ বিনিয়োগ। লালদিয়া হবে অত্যাধুনিক গ্রিনফিল্ড টার্মিনাল, যেখানে নিরাপত্তা, অটোমেশন ও স্থায়িত্বের সর্বোচ্চ মান থাকবে। এতে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়বে এবং লজিস্টিকস খাতের অগ্রযাত্রায় এটি বিশেষ মুহূর্ত হয়ে থাকবে।”
চুক্তি সইয়ের পর বিকালে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ডেনিশ প্রতিনিধি দল। এসময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এটি একটি নতুন যুগের সূচনা। এই বন্দর বাংলাদেশে বৃহৎ বিনিয়োগ ও পণ্যবৈচিত্র্যের নতুন দ্বার উন্মোচন করবে।”
বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, ২০৩০ সালে লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল চালু হলে বড় জাহাজ ভিড়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। এতে ডেনিশ বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে এবং অঞ্চলে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে।
এপিএম টার্মিনালস বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় এপি মোলার-মেয়ার্স্ক গ্রুপের সম্পূর্ণ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। বিশ্বের শীর্ষ ২০টি বন্দরের ১০টি তাদের ব্যবস্থাপনায় রয়েছে। বর্তমানে ৩৩টি দেশে ৬০টির বেশি টার্মিনাল পরিচালনা করছে তারা—ইউরোপসহ ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর ও চীনে।
চুক্তির শর্ত
বিডার পক্ষ থেকে জানানো হয়, লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল সম্পূর্ণ একটি পিপিপি প্রকল্প, যার পূর্ণ বিনিয়োগ করবে এপিএম। ‘সাইনিং মানি’ হিসেবে ২৫০ কোটি টাকা এবং নির্মাণকালে মোট প্রায় ৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। সরকার কোনো অর্থায়ন বা গ্যারান্টি দিচ্ছে না।
নির্মাণ শেষে চুক্তির মেয়াদ থাকবে ৩০ বছর। বাণিজ্যিক, সামাজিক ও পরিবেশগত শর্ত পূরণ করলে মেয়াদ বাড়ানো যাবে।
হ্যান্ডেল করা প্রতিটি কনটেইনারের জন্য সরকার নির্দিষ্ট ফি পাবে। ভলিউম বাড়লে সরকারের আয়ও বাড়বে। কনটেইনার হ্যান্ডলিং বন্ধ থাকলেও সরকার একটি ন্যূনতম অর্থ পাবে।
নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে থাকবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বিডা চেয়ারম্যান আরও জানান, টার্মিনাল নির্মাণ হলে প্রতি বছর অতিরিক্ত ৮ লাখ টিইইউ ধারণক্ষমতা যুক্ত হবে, যা বর্তমান সক্ষমতার তুলনায় প্রায় ৪৪ শতাংশ বেশি। এতে প্রতিটি ইউনিটে পরিবহন খরচ কমবে এবং বর্তমানে যা আসে তার দ্বিগুণ বড় কনটেইনার জাহাজ বন্দরে ভিড়তে পারবে।
এ ছাড়া নির্মাণ ও পরিচালনা পর্যায়ে স্থানীয়ভাবে ৫০০ থেকে ৭০০ সরাসরি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং পরিবহন, লজিস্টিকস ও বিস্তৃত সাপ্লাই চেইনে হাজারের বেশি পরোক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। এপিএম টার্মিনালসের নিজস্ব প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে স্থানীয় প্রকৌশলী ও ব্যবস্থাপকদের বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫
চট্টগ্রামের লালদিয়ার চরে কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সোমবার ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে এ উপলক্ষে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল সৈয়দ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান এবং ডেনমার্কের এপিএম টার্মিনালসের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টেইন ভ্যান ডোঙ্গেন চুক্তি সই করেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নৌ উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, পিপিপি কর্তৃপক্ষ ও বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, ডেনমার্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট বিষয়ক স্টেট সেক্রেটারি লিনা গেন্ডলস হেনসেন এবং ঢাকায় ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টিয়ান ব্রিক্স মুলার।
নৌপরিবহন উপদেষ্টা অনুষ্ঠানে বলেন, “এ চুক্তি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জাতির জন্য বড় অবদান। যাদের মধ্যে এ নিয়ে সন্দেহ ছিল, আশা করি, আজ তা দূর হবে।”
বিডা চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বলেন, “লালদিয়া দেখিয়ে দিয়েছে পিপিপি শুধু তত্ত্বে নয়, বাস্তবেও কার্যকর। ভবিষ্যতেও আমরা বাস্তবায়নকেন্দ্রিক অবকাঠামো উন্নয়নেই মনোযোগ দেব। আগামী কয়েক বছরে চারটি নতুন সমুদ্র বন্দর বাস্তবায়নের কাজ চলছে, যার মধ্যে আছে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর, একটি আন্তর্জাতিক টার্মিনাল ও একটি নির্ধারিত মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল।”
এপি মোলারের মূল কোম্পানি মেয়ার্স্কের চেয়ারম্যান রবার্ট মেয়ার্স্ক উগলা বলেন, “লালদিয়ায় এটি হচ্ছে ইউরোপের কোনো দেশের একক বৃহৎ বিনিয়োগ। লালদিয়া হবে অত্যাধুনিক গ্রিনফিল্ড টার্মিনাল, যেখানে নিরাপত্তা, অটোমেশন ও স্থায়িত্বের সর্বোচ্চ মান থাকবে। এতে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়বে এবং লজিস্টিকস খাতের অগ্রযাত্রায় এটি বিশেষ মুহূর্ত হয়ে থাকবে।”
চুক্তি সইয়ের পর বিকালে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ডেনিশ প্রতিনিধি দল। এসময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এটি একটি নতুন যুগের সূচনা। এই বন্দর বাংলাদেশে বৃহৎ বিনিয়োগ ও পণ্যবৈচিত্র্যের নতুন দ্বার উন্মোচন করবে।”
বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, ২০৩০ সালে লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল চালু হলে বড় জাহাজ ভিড়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। এতে ডেনিশ বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে এবং অঞ্চলে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে।
এপিএম টার্মিনালস বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় এপি মোলার-মেয়ার্স্ক গ্রুপের সম্পূর্ণ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। বিশ্বের শীর্ষ ২০টি বন্দরের ১০টি তাদের ব্যবস্থাপনায় রয়েছে। বর্তমানে ৩৩টি দেশে ৬০টির বেশি টার্মিনাল পরিচালনা করছে তারা—ইউরোপসহ ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর ও চীনে।
চুক্তির শর্ত
বিডার পক্ষ থেকে জানানো হয়, লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল সম্পূর্ণ একটি পিপিপি প্রকল্প, যার পূর্ণ বিনিয়োগ করবে এপিএম। ‘সাইনিং মানি’ হিসেবে ২৫০ কোটি টাকা এবং নির্মাণকালে মোট প্রায় ৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। সরকার কোনো অর্থায়ন বা গ্যারান্টি দিচ্ছে না।
নির্মাণ শেষে চুক্তির মেয়াদ থাকবে ৩০ বছর। বাণিজ্যিক, সামাজিক ও পরিবেশগত শর্ত পূরণ করলে মেয়াদ বাড়ানো যাবে।
হ্যান্ডেল করা প্রতিটি কনটেইনারের জন্য সরকার নির্দিষ্ট ফি পাবে। ভলিউম বাড়লে সরকারের আয়ও বাড়বে। কনটেইনার হ্যান্ডলিং বন্ধ থাকলেও সরকার একটি ন্যূনতম অর্থ পাবে।
নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে থাকবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বিডা চেয়ারম্যান আরও জানান, টার্মিনাল নির্মাণ হলে প্রতি বছর অতিরিক্ত ৮ লাখ টিইইউ ধারণক্ষমতা যুক্ত হবে, যা বর্তমান সক্ষমতার তুলনায় প্রায় ৪৪ শতাংশ বেশি। এতে প্রতিটি ইউনিটে পরিবহন খরচ কমবে এবং বর্তমানে যা আসে তার দ্বিগুণ বড় কনটেইনার জাহাজ বন্দরে ভিড়তে পারবে।
এ ছাড়া নির্মাণ ও পরিচালনা পর্যায়ে স্থানীয়ভাবে ৫০০ থেকে ৭০০ সরাসরি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং পরিবহন, লজিস্টিকস ও বিস্তৃত সাপ্লাই চেইনে হাজারের বেশি পরোক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। এপিএম টার্মিনালসের নিজস্ব প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে স্থানীয় প্রকৌশলী ও ব্যবস্থাপকদের বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।