alt

অর্থ-বাণিজ্য

নির্মাণখাত রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এফবিসিসিআই’র চিঠি

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : রোববার, ১৬ জানুয়ারী ২০২২

গত কয়েক মাসে অবকাঠামো খাতের মূল কাঁচা মালের দাম ২০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার গৃহীত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যথাসময়ে সম্পন্ন করতে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চেয়েছে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। সম্প্রতি এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিন প্রধানমন্ত্রী বরাবার একটি চিঠি দেন।

চিঠিতে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ইতোমধ্যেই স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হয়েছে বাংলাদেশ এবং উন্নয়নের মহাসড়কে সফলভাবে এগিয়ে চলেছি। সরকারের ব্যবসা-বান্ধব নীতি বিদ্যমান থাকায় এবং ব্যবসার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকায় ব্যবসায়িরা সফলভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করতে পারছে। কিন্তু গত পাঁচ থেকে ছয় মাস ধরে, বিশেষ করে গত এক মাসে অবকাঠামো খাতের মূল কাঁচামাল যেমন রড, সিমেন্ট, পাথর, বিটুমিন, কপার, অ্যালুমিনিয়াম ইত্যাদির মূল্য ২০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে যা নির্মাণশিল্পের ওপর অকল্পনীয় বিরুপ প্রভাব ফেলছে। বর্তমানে বাংলাদেশে নির্মাণ ব্যয় এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে যে ঠিকাদারদের পক্ষে তাদের চলমান এবং আসন্ন প্রকল্পগুলোর কাজ যথাযথ মান বজায় রেখে চুক্তিতে নির্ধারিত মূল্যে সম্পন্ন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে দেশের নির্মাণ খাত অপুরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হবে। বিদেশি ঠিকাদারদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে বেশিরভাগ স্থানীয় নির্মাণ প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শুধু তাই নয়, দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দেউলিয়া হয়ে গেলে তাদের অর্থায়ন করা দেশের ৯০ শতাংশ থেকে ৯৫ শতাংশ ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানও খেলাপি ঋণের কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।’

চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘গত তিন মাস ধরে দেশের ইস্পাত ও সিমেন্ট উৎপাদনকারী কোম্পানিসমূহ সিন্ডিকেট করে অযৌক্তিকভাবে রড ও সিমেন্টের মূল্য বাড়িয়ে চলেছে। এই লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি শুধু নির্মাণ ও আবাসন শিল্পের ওপরই বিরূপ প্রভাব ফেলছে তা নয়। বরং সামগ্রিকভাবে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডকেও ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত করছে।’

চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘এফবিসিসিআই বাংলাদেশের বেসরকারি খাতে প্রতিনিধিত্বকারী শীর্ষ সংগঠন হিসেবে সবসময় দেশের বেসরকারি খাতের উন্নয়নে কাজ করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটি কখনোই কোন ব্যবসা বা ব্যবসায়িক সংগঠনের বিরুদ্ধে নয়। তবে তারা মনে করে, কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে তাদের উৎপাদিত পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি করার আগে সেই পণ্যগুলোর সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যবসাগুলোর লাভ-ক্ষতির কথাও বিবেচনায় রাখা উচিত। আমাদের দেশীয় রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যেই সরকারের কাছ থেকে বিভিন্নরকম সুবিধা পাচ্ছে। তা সত্ত্বেও তারা তাদের অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধির পরবর্তী পরিণতির প্রতি বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ না করে দিনের পর দিন রডের দাম বাড়িয়েই চলেছে।’

নির্মাণখাতে চলমান অস্থিরতা নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ একান্তভাবে কামনা করে এফবিসিসিআই। এর সঙ্গে দেশের নির্মাণখাত এবং স্থানীয় নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বার্থ রক্ষার্থে এফবিসিসিআই কিছু স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশ জানিয়েছেন।

স্বল্প মেয়াদি সুপারিশগুলো হলো, বিদ্যমান এবং আসন্ন সরকারি প্রকল্পগুলো যথাসময়ে সম্পন্ন করার নিমিত্তে অনতিবিলম্বে বাইরের যেকোন দেশ থেকে রড আমদানি করার অনুমতি দেয়া প্রয়োজন। কতটুকু পরিমাণ রড আমদানি করতে হবে তা সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক এবং ক্রয় কমিটির প্রধান প্রকল্পের নকশা এবং বিল অব কোয়ান্টিটি যাচাই পূর্বক প্রত্যয়ন করে দেবেন। অতঃপর এফবিসিসিআই এটি অনুমোদন করবে। এরপরই কেবল ব্যাংকগুলো সরকারি নির্মাণ প্রকল্পগুলোর জন্য এলসি খোলার সুবিধা দেবে। এছাড়াও আমদানি সংক্রান্ত ট্যারিফ এবং ডিউটি কাঠামো এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে যাতে প্রকল্প সাইটে পৌঁছনো অব্দি রডের টনপ্রতি মূল্য ৬০ হাজার টাকার নিচে থাকে।

দরপত্র জমা দেয়ার পর আইনগত কোন পরিবর্তনের কারণে যদি প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি পায়, তাহলে ঠিকাদারকে অবশ্যই সেই বর্ধিত ব্যয়ের সমমূল্য প্রদান করতে হবে। সরকারি কিংবা বিদেশি অর্থায়ন নির্বিশেষে সব চলমান, আসন্ন (চূড়ান্তের অপেক্ষায় থাকা প্রকল্প) এবং ভবিষ্যৎ প্রকল্পগুলোর দরপত্রের নথিতে সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো অবিলম্বে সংযোজন বা সংশোধন করতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ, এ বছর হঠাৎ করেই ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭ শতাংশ-এ উন্নীত হয়েছে যার ব্যাপারে কোন ঠিকাদারই দরপত্র জমা দেয়ার পূর্বে অবহিত ছিলেন না। সুতরাং এ ধরনের ব্যয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তাকে অবশ্যই ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে।

সরকারি কিংবা বিদেশি অর্থায়নকৃত সব চলমান, আসন্ন (চূড়ান্তের অপেক্ষায় থাকা প্রকল্প) এবং ভবিষ্যৎ প্রকল্পগুলোতে মূল্যের তারতম্য বিষয়ক ধারা সংযুক্ত করতে হবে।

ব্যালাস্ট এর মূল্য মূলত পরিবহন খরচের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ব্যালাস্ট বাংলাদেশে আনার পরিবহন খরচ ব্যালাস্টের মূল দামের ২ গুণ থেকে ৩ গুণ বেশি। তাই ব্যালাস্টের ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক কেবলমাত্র এফওবি এর উপর প্রযোজ্য হওয়া উচিত এবং এজন্য একটি নির্দিষ্ট ট্যারিফও ধার্য করা যেতে পারে যাতে ব্যালাস্ট এর ল্যান্ডেড কস্ট আসে।

দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশসমূহ হলো, সরকার কর্তৃক অর্থ্যায়িত প্রকল্পসমূহে বিদেশি দরদাতাদের অংশগ্রহণ জোরালোভাবে নিরুৎসাহিত করতে হবে। কিন্তু অপেক্ষাকৃত বড় এবং জটিল প্রকল্প- যেখানে দেশের স্থানীয় ঠিকাদারদের প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতার ঘাটতি রয়েছে, কেবলমাত্র এ ধরনের প্রকল্পে বিদেশি দরপত্রদাতারা অংশগ্রহণ করতে পারবে, তবে সেক্ষেত্রেও তাদের বাধ্যতামূলকভাবে কোন স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জয়েন্ট-ভেঞ্চার গঠন করতে হবে।

সরকার কর্তৃক অর্থায়িত প্রকল্পসমূহে স্থানীয় নির্মাণ প্রতিষ্ঠানসমূহকে ৭.৫ শতাংশ অগ্রাধিকার দিতে হবে। সরকারি কিংবা বিদেশি অর্থায়নকৃত সব দরপত্র যতটা সম্ভব ফিডিক নির্ভর হওয়া প্রয়োজন। এছাড়াও, ঠিকাদারদের অর্থ পরিশোধ করার ক্ষেত্রে ফিডিক এর নিয়মনীতি অনুসরণ করার ব্যাপারে আমরা জোর সুপারিশ করতে চাই।

নিয়োগকর্তার অদক্ষতা বা অদূরদর্শিতার কারণে ঘটা বিলম্বের জন্য ঠিকাদারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিধান সরকারি কিংবা বিদেশি অর্থায়নকৃত- নির্বিশেষে সব দরপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। একইভাবে, কোন ঠিকাদার যদি চুক্তিতে উল্লেখিত সময় এবং মান অনুযায়ী প্রকল্পের কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হয়, তবে সে ঠিকাদারের উপরও ক্ষতিপূরণ আরোপের বিধান থাকা উচিত।

সরকারি কিংবা বিদেশি অর্থায়নকৃত সব দরপত্রে ১০ শতাংশ অগ্রিম অর্থ প্রদানের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। দেশের নির্মাণশিল্পের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কনসালটেন্সি খাতে সরকারকে বিশেষ মনোযোগ প্রদান করতে হবে। এজন্য সব কনসালটেন্সি দরপত্রের শর্ত এমনভাবে আরোপ করতে হবে যাতে বিদেশি কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠানগুলো দরপত্রে অংশগ্রহণ করার সময় কমপক্ষে একটি স্থানীয় কনসালটেন্সি কোম্পানিকে তাদের অংশীদার (সাব-কনসালট্যান্ট হিসেবে নয়) হিসেবে নিতে বাধ্য থাকে।

ছবি

অর্থনীতির দুই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তিন পদক্ষেপ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

ছবি

টাকার অবমূল্যায়ন, ডলারের দাম বাড়ল ৭ টাকা

ছবি

সিঙ্গাপুর-কাতার থেকে ১৩৫০ কোটি টাকায় এলএনজি কিনবে সরকার

ছবি

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংবাদ সম্মেলন বয়কট করলেন সাংবাদিকরা

ছবি

ন্যায্যমূল্যে পণ্য মানুষের কাছে পৌঁছাতে কাজ করছে টিসিবি

ছবি

আধাঘণ্টায় আড়াইশ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে লেনদেন

ছবি

প্রায় ৬ মাস পর পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিল ভারত

ছবি

চামড়াখাতে ন্যূনতম মজুরি ২২ হাজার ৭৭৬ টাকার প্রস্তাব সিপিডি’র

ছবি

বাজার মূলধন বাড়লো ৬ হাজার কোটি টাকা

ছবি

পেঁয়াজ- সবজিতে অস্বস্তি, কমেছে ব্রয়লার-ডিমের দাম

ছবি

তড়িঘড়ি করে একীভূত করা ঠিক হবে না: ফরাসউদ্দিন

ছবি

ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি পেছাল

ছবি

আইএসডিবি থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা পাচ্ছে হাউজ বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশন

ছবি

বিটিএমএ’র সেক্রেটারী জেনারেল হলেন জাকির হোসেন

ছবি

ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রকাশের পরামর্শ আইএমএফের

নিয়ম মেনে সময় নিয়েই হবে ব্যাংক একীভূতকরণ : এবিবি চেয়ারম্যান

ছবি

দু’টি বিদেশি এয়ারলাইন্সের কার্যক্রম শুরু হচ্ছে মে মাসে

ছবি

আবারও বিএসইসি চেয়ারম্যান হলেন শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম

ছবি

টানা পতনে বাজার মূলধন কমলো সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা

ছবি

সবজির বাজার অপরিবর্তিত, তবে কমেছে ব্রয়লার মুরগির দাম

ছবি

বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের নির্বিঘ্ন প্রবেশাধিকার দাবি ডিআরইউর

ছবি

বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা স্বেচ্ছাচারিতামূলক আচরণ: টিআইবি

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রন আনতে বাংলাদেশের পদক্ষেপগুলো সঠিক : আইএমএফ

ছবি

বাংলাদেশে বিনিয়োগে এগিয়ে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন পাঁচ ও ভারত নয়ে

ছবি

বিআইসিএমের উদ্যোগে হবে পুঁজিবাজার সম্মেলন

ছবি

যমুনা ব্যাংক ও ডেল্টা লাইফের মধ্যে চুক্তি

ছবি

সোনার দাম আরও কমলো

ছবি

ডিএমডি হিসেবে পদোন্নতি পেলেন মোঃ নুরুল ইসলাম মজুমদার

ছবি

রিজার্ভ কমায় উদ্বেগ ও আতঙ্ক বাড়ছে

ছবি

তড়িঘড়ি ব্যাংক একীভূতকরণ খেলাপিদের দায়মুক্তির নতুন মুখোশ: টিআইবি

ছবি

হঠাৎ ঝলকের পর আবার পতন, বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ

ছবি

শেয়ারবাজারে টানা দরপতনের প্রতিবাদে বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ

ছবি

পদত্যাগ করেছেন পদ্মা ব্যাংকের এমডি তারেক রিয়াজ

ঈদের পর শেয়ারবাজার কিছুটা ভালো হতে শুরু করেছে

ছবি

দিনাজপুরে বাঁশ ফুলের চাল তৈরি

ছবি

অভিনেতা ওয়ালিউল হক রুমি মারা গেছেন

tab

অর্থ-বাণিজ্য

নির্মাণখাত রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এফবিসিসিআই’র চিঠি

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

রোববার, ১৬ জানুয়ারী ২০২২

গত কয়েক মাসে অবকাঠামো খাতের মূল কাঁচা মালের দাম ২০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার গৃহীত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যথাসময়ে সম্পন্ন করতে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চেয়েছে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। সম্প্রতি এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিন প্রধানমন্ত্রী বরাবার একটি চিঠি দেন।

চিঠিতে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ইতোমধ্যেই স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হয়েছে বাংলাদেশ এবং উন্নয়নের মহাসড়কে সফলভাবে এগিয়ে চলেছি। সরকারের ব্যবসা-বান্ধব নীতি বিদ্যমান থাকায় এবং ব্যবসার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকায় ব্যবসায়িরা সফলভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করতে পারছে। কিন্তু গত পাঁচ থেকে ছয় মাস ধরে, বিশেষ করে গত এক মাসে অবকাঠামো খাতের মূল কাঁচামাল যেমন রড, সিমেন্ট, পাথর, বিটুমিন, কপার, অ্যালুমিনিয়াম ইত্যাদির মূল্য ২০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে যা নির্মাণশিল্পের ওপর অকল্পনীয় বিরুপ প্রভাব ফেলছে। বর্তমানে বাংলাদেশে নির্মাণ ব্যয় এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে যে ঠিকাদারদের পক্ষে তাদের চলমান এবং আসন্ন প্রকল্পগুলোর কাজ যথাযথ মান বজায় রেখে চুক্তিতে নির্ধারিত মূল্যে সম্পন্ন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে দেশের নির্মাণ খাত অপুরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হবে। বিদেশি ঠিকাদারদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে বেশিরভাগ স্থানীয় নির্মাণ প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শুধু তাই নয়, দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দেউলিয়া হয়ে গেলে তাদের অর্থায়ন করা দেশের ৯০ শতাংশ থেকে ৯৫ শতাংশ ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানও খেলাপি ঋণের কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।’

চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘গত তিন মাস ধরে দেশের ইস্পাত ও সিমেন্ট উৎপাদনকারী কোম্পানিসমূহ সিন্ডিকেট করে অযৌক্তিকভাবে রড ও সিমেন্টের মূল্য বাড়িয়ে চলেছে। এই লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি শুধু নির্মাণ ও আবাসন শিল্পের ওপরই বিরূপ প্রভাব ফেলছে তা নয়। বরং সামগ্রিকভাবে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডকেও ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত করছে।’

চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘এফবিসিসিআই বাংলাদেশের বেসরকারি খাতে প্রতিনিধিত্বকারী শীর্ষ সংগঠন হিসেবে সবসময় দেশের বেসরকারি খাতের উন্নয়নে কাজ করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটি কখনোই কোন ব্যবসা বা ব্যবসায়িক সংগঠনের বিরুদ্ধে নয়। তবে তারা মনে করে, কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে তাদের উৎপাদিত পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি করার আগে সেই পণ্যগুলোর সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যবসাগুলোর লাভ-ক্ষতির কথাও বিবেচনায় রাখা উচিত। আমাদের দেশীয় রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যেই সরকারের কাছ থেকে বিভিন্নরকম সুবিধা পাচ্ছে। তা সত্ত্বেও তারা তাদের অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধির পরবর্তী পরিণতির প্রতি বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ না করে দিনের পর দিন রডের দাম বাড়িয়েই চলেছে।’

নির্মাণখাতে চলমান অস্থিরতা নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ একান্তভাবে কামনা করে এফবিসিসিআই। এর সঙ্গে দেশের নির্মাণখাত এবং স্থানীয় নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বার্থ রক্ষার্থে এফবিসিসিআই কিছু স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশ জানিয়েছেন।

স্বল্প মেয়াদি সুপারিশগুলো হলো, বিদ্যমান এবং আসন্ন সরকারি প্রকল্পগুলো যথাসময়ে সম্পন্ন করার নিমিত্তে অনতিবিলম্বে বাইরের যেকোন দেশ থেকে রড আমদানি করার অনুমতি দেয়া প্রয়োজন। কতটুকু পরিমাণ রড আমদানি করতে হবে তা সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক এবং ক্রয় কমিটির প্রধান প্রকল্পের নকশা এবং বিল অব কোয়ান্টিটি যাচাই পূর্বক প্রত্যয়ন করে দেবেন। অতঃপর এফবিসিসিআই এটি অনুমোদন করবে। এরপরই কেবল ব্যাংকগুলো সরকারি নির্মাণ প্রকল্পগুলোর জন্য এলসি খোলার সুবিধা দেবে। এছাড়াও আমদানি সংক্রান্ত ট্যারিফ এবং ডিউটি কাঠামো এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে যাতে প্রকল্প সাইটে পৌঁছনো অব্দি রডের টনপ্রতি মূল্য ৬০ হাজার টাকার নিচে থাকে।

দরপত্র জমা দেয়ার পর আইনগত কোন পরিবর্তনের কারণে যদি প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি পায়, তাহলে ঠিকাদারকে অবশ্যই সেই বর্ধিত ব্যয়ের সমমূল্য প্রদান করতে হবে। সরকারি কিংবা বিদেশি অর্থায়ন নির্বিশেষে সব চলমান, আসন্ন (চূড়ান্তের অপেক্ষায় থাকা প্রকল্প) এবং ভবিষ্যৎ প্রকল্পগুলোর দরপত্রের নথিতে সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো অবিলম্বে সংযোজন বা সংশোধন করতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ, এ বছর হঠাৎ করেই ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭ শতাংশ-এ উন্নীত হয়েছে যার ব্যাপারে কোন ঠিকাদারই দরপত্র জমা দেয়ার পূর্বে অবহিত ছিলেন না। সুতরাং এ ধরনের ব্যয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তাকে অবশ্যই ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে।

সরকারি কিংবা বিদেশি অর্থায়নকৃত সব চলমান, আসন্ন (চূড়ান্তের অপেক্ষায় থাকা প্রকল্প) এবং ভবিষ্যৎ প্রকল্পগুলোতে মূল্যের তারতম্য বিষয়ক ধারা সংযুক্ত করতে হবে।

ব্যালাস্ট এর মূল্য মূলত পরিবহন খরচের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ব্যালাস্ট বাংলাদেশে আনার পরিবহন খরচ ব্যালাস্টের মূল দামের ২ গুণ থেকে ৩ গুণ বেশি। তাই ব্যালাস্টের ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক কেবলমাত্র এফওবি এর উপর প্রযোজ্য হওয়া উচিত এবং এজন্য একটি নির্দিষ্ট ট্যারিফও ধার্য করা যেতে পারে যাতে ব্যালাস্ট এর ল্যান্ডেড কস্ট আসে।

দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশসমূহ হলো, সরকার কর্তৃক অর্থ্যায়িত প্রকল্পসমূহে বিদেশি দরদাতাদের অংশগ্রহণ জোরালোভাবে নিরুৎসাহিত করতে হবে। কিন্তু অপেক্ষাকৃত বড় এবং জটিল প্রকল্প- যেখানে দেশের স্থানীয় ঠিকাদারদের প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতার ঘাটতি রয়েছে, কেবলমাত্র এ ধরনের প্রকল্পে বিদেশি দরপত্রদাতারা অংশগ্রহণ করতে পারবে, তবে সেক্ষেত্রেও তাদের বাধ্যতামূলকভাবে কোন স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জয়েন্ট-ভেঞ্চার গঠন করতে হবে।

সরকার কর্তৃক অর্থায়িত প্রকল্পসমূহে স্থানীয় নির্মাণ প্রতিষ্ঠানসমূহকে ৭.৫ শতাংশ অগ্রাধিকার দিতে হবে। সরকারি কিংবা বিদেশি অর্থায়নকৃত সব দরপত্র যতটা সম্ভব ফিডিক নির্ভর হওয়া প্রয়োজন। এছাড়াও, ঠিকাদারদের অর্থ পরিশোধ করার ক্ষেত্রে ফিডিক এর নিয়মনীতি অনুসরণ করার ব্যাপারে আমরা জোর সুপারিশ করতে চাই।

নিয়োগকর্তার অদক্ষতা বা অদূরদর্শিতার কারণে ঘটা বিলম্বের জন্য ঠিকাদারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিধান সরকারি কিংবা বিদেশি অর্থায়নকৃত- নির্বিশেষে সব দরপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। একইভাবে, কোন ঠিকাদার যদি চুক্তিতে উল্লেখিত সময় এবং মান অনুযায়ী প্রকল্পের কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হয়, তবে সে ঠিকাদারের উপরও ক্ষতিপূরণ আরোপের বিধান থাকা উচিত।

সরকারি কিংবা বিদেশি অর্থায়নকৃত সব দরপত্রে ১০ শতাংশ অগ্রিম অর্থ প্রদানের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। দেশের নির্মাণশিল্পের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কনসালটেন্সি খাতে সরকারকে বিশেষ মনোযোগ প্রদান করতে হবে। এজন্য সব কনসালটেন্সি দরপত্রের শর্ত এমনভাবে আরোপ করতে হবে যাতে বিদেশি কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠানগুলো দরপত্রে অংশগ্রহণ করার সময় কমপক্ষে একটি স্থানীয় কনসালটেন্সি কোম্পানিকে তাদের অংশীদার (সাব-কনসালট্যান্ট হিসেবে নয়) হিসেবে নিতে বাধ্য থাকে।

back to top