টিকা কার্যক্রম বৃদ্ধি পাওয়ায় গত বছর বেশির ভাগ দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। গতি ফিরেছে অবকাঠামো ও শিল্প উৎপাদনে। এ কারণে বছরের শুরু থেকেই ইস্পাতের ব্যবহার ছিল ঊর্ধ্বমুখী। ব্যাপক চাহিদা থাকায় বিদায়ী বছর অপরিশোধিত ইস্পাতের বৈশ্বিক উৎপাদন ৩ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে। উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৯৭ কোটি টনে। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ওয়ার্ল্ড স্টিল অ্যাসোসিয়েশন।

ইস্পাত উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ দেশ চীন। বিশ্লেষকরা বলছেন, জ্বালানি সংকট ও দূষণ রোধে দেশটি গত বছর শিল্প ধাতুটির উৎপাদন কমিয়ে আনার পরিকল্পনা হাতে নেয়। এতে অনেকটাই সফলতা পেয়েছে দেশটি। তবে চীনের পিছিয়ে পড়া সত্ত্বেও বৈশ্বিক উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করেছে ভারত ও জাপানসহ অন্যান্য দেশ।

ওয়ার্ল্ড স্টিল অ্যাসোসিয়েশনের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত বছর চীনের অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন ৩ শতাংশ কমেছে। তবে দ্বিতীয় শীর্ষে থাকা দেশ ভারতের উৎপাদন ১৭ দশমিক ৮ ও জাপানের উৎপাদন ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে। মূলত কভিড-১৯ মহামারীর প্রভাব থেকে দেশ দুটির অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোয় উৎপাদনে এমন উল্লম্ফন দেখা দেয়।

এদিকে গত বছর কমলেও ডিসেম্বরের উৎপাদন পরিস্থিতি বলছে, আগামী মাসগুলোয় আবারও চীনের ইস্পাত উৎপাদন বাড়তে পারে। ২০২১ সালের নভেম্বরে দেশটির ইস্পাত উৎপাদন ২২ শতাংশ কমেছিল, অক্টোবরে কমেছিল ২৩ দশমিক ৮ শতাংশ। কিন্তু ডিসেম্বরে কমার হার ৬ দশমিক ৮ শতাংশ।

পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, চলতি বছরের শুরুর দিকে অপরিশোধিত ইস্পাতের দাম প্রায় ৩ শতাংশ বাড়ে। বর্তমানে স্টিল রিবার বিক্রি হচ্ছে টনপ্রতি ৭২৫ ডলার ২৭ সেন্টে। বাজারদরের এমন ঊর্ধ্বগতির সুযোগ কাজে লাগাতে উৎপাদন বাড়াচ্ছে বিগলন প্রতিষ্ঠানগুলো। অন্যদিকে ইস্পাত খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পণ্যের দামও বাড়ছে। বিশেষ করে আকরিক লোহা ও ধাতব কয়লার বাজারদর আকর্ষণীয় মাত্রায় বেড়েছে।

বর্তমানে ইউরোপে ভয়াবহ জ্বালানি সংকট চলছে। এ কারণে দেশটিতে বিদ্যুতের দাম অন্য যেকোন সময়ের তুলনায় বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতেও অঞ্চলটি ইস্পাত উৎপাদন বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। তবে অটোমোবাইল খাতে চাহিদা কমায় পণ্যটির উদ্বৃত্ত থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছে এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল প্লাটস।

যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপে ইস্পাত উৎপাদন ১৪ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। উৎপাদন হয়েছে ২০ কোটি ৩৭ টন। এ অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ইস্পাত উৎপাদক জার্মানি। দেশটির উৎপাদন ১২ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে ৪ কোটি ১ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে ৮ কোটি ৬০ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। রাশিয়ায় উৎপাদন হয়েছে ৭ কোটি ৬০ লাখ টন, যা ২০২০ সালের তুলনায় ৬ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। দক্ষিণ কোরিয়ার উৎপাদন ৫ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে ৭ কোটি ৬ লাখ টনে পৌঁছেছে। তুরস্কের উৎপাদন বেড়েছে ১২ দশমিক ৭ শতাংশ। দেশটি ৪ কোটি ৪ লাখ টন উৎপাদন করেছে।

সংস্থাটির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বছরজুড়ে বৈশ্বিক উৎপাদন বাড়লেও ডিসেম্বরে কমেছে। এ সময় সব মিলিয়ে ১৫ কোটি ৮৭ লাখ টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন হয়, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ শতাংশ কম। ডিসেম্বরে চীনের উৎপাদন ৬ দশমিক ৮ শতাংশ কমেছে। উৎপাদন হয়েছে ৮ কোটি ৬২ লাখ টন।