সাবেক বিএফআইইউ প্রধান মাসুদ বিশ্বাস গ্রেপ্তার, রিমান্ড আবেদন প্রক্রিয়াধীন
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) জানিয়েছে, দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগে যাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করা হবে। দুদকের মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলী বলেছেন, “যাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি, তারা হয় জেলে থাকবে, না হয় বেইলে থাকবে। আমরা তাদের সবাইকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। কেউ বাইরে থাকবে না।”
তিনি শনিবার সাবেক বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান মাসুদ বিশ্বাসের গ্রেপ্তারের বিষয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
গত ২ জানুয়ারি, এক কোটি ৪৭ লাখ ৭২ হাজার ৬২২ টাকার ‘জ্ঞাত আয় বহির্ভূত’ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। অভিযোগ রয়েছে, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের মাধ্যমে অসংখ্য সম্পদ অর্জন করেছেন। ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় তার নামে জমি ও ফ্ল্যাট রয়েছে বলে তদন্তে জানা গেছে।
দুদকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মাসুদ বিশ্বাস স্কাই ক্যাপিটাল এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ কেনায় সন্দেহজনক অনিয়মের বিষয়ে ব্যবস্থা না নিয়ে ঘুষের বিনিময়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেন। এছাড়া, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার লুটপাটের বিষয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদন পাঠানোর বদলে সাধারণ পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন জমা দেন।
তিনি হিমিদ্রী লিমিটেডের শেয়ারবাজারের লেনদেন স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়ার জন্য আর্থিক সুবিধা নিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
দুদকের মহাপরিচালক জানান, মাসুদ বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ৫-১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হবে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইতোমধ্যে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যিনি পুরো বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করবেন।
তিনি আরও বলেন, “আমরা তাকে রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করব। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
অনিয়মের মাধ্যমে সম্পদ অর্জন এবং অর্থপাচারের একাধিক অভিযোগ রয়েছে মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে। এস আলম গ্রুপ, তানাকা গ্রুপ, এসএ গ্রুপ ও আনোয়ার গ্রুপের মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত নিশ্চিত তথ্য থাকা সত্ত্বেও তিনি ব্যক্তিগত সুবিধা নেওয়ার মাধ্যমে অভিযোগগুলো ধামাচাপা দেন।
ইসলামী ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচারের অভিযোগে তিনি সরাসরি এস আলম গ্রুপের সঙ্গে জড়িত। তাছাড়া, থার্মেক্স গ্রুপ ও জিনাত এন্টারপ্রাইজের অর্থপাচারের মামলা ‘ঘুষের বিনিময়ে’ বন্ধ করে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দুর্নীতি দমন কমিশন আগের সরকারের মন্ত্রী, এমপি এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে জোর দিয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
২০২৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অনুসন্ধানের ঘোষণা দেয় সংস্থাটি। এরপর ৩ অক্টোবর মাসুদ বিশ্বাসের বিদেশযাত্রা ঠেকাতে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চে চিঠি পাঠায়।
দুদকের ভাষ্য অনুযায়ী, “দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি যে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন, তা দেশের অর্থনীতির ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। তার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে এবং সেগুলোও যথাযথভাবে খতিয়ে দেখা হবে।”
দুদক দুর্নীতির অভিযোগে যাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে, তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মাসুদ বিশ্বাসের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিদেরও আইনের আওতায় আনার মাধ্যমে সংস্থাটি দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমকে আরও জোরদার করছে।
সাবেক বিএফআইইউ প্রধান মাসুদ বিশ্বাস গ্রেপ্তার, রিমান্ড আবেদন প্রক্রিয়াধীন
শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) জানিয়েছে, দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগে যাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করা হবে। দুদকের মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলী বলেছেন, “যাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি, তারা হয় জেলে থাকবে, না হয় বেইলে থাকবে। আমরা তাদের সবাইকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। কেউ বাইরে থাকবে না।”
তিনি শনিবার সাবেক বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান মাসুদ বিশ্বাসের গ্রেপ্তারের বিষয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
গত ২ জানুয়ারি, এক কোটি ৪৭ লাখ ৭২ হাজার ৬২২ টাকার ‘জ্ঞাত আয় বহির্ভূত’ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। অভিযোগ রয়েছে, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের মাধ্যমে অসংখ্য সম্পদ অর্জন করেছেন। ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় তার নামে জমি ও ফ্ল্যাট রয়েছে বলে তদন্তে জানা গেছে।
দুদকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মাসুদ বিশ্বাস স্কাই ক্যাপিটাল এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ কেনায় সন্দেহজনক অনিয়মের বিষয়ে ব্যবস্থা না নিয়ে ঘুষের বিনিময়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেন। এছাড়া, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার লুটপাটের বিষয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদন পাঠানোর বদলে সাধারণ পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন জমা দেন।
তিনি হিমিদ্রী লিমিটেডের শেয়ারবাজারের লেনদেন স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়ার জন্য আর্থিক সুবিধা নিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
দুদকের মহাপরিচালক জানান, মাসুদ বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ৫-১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হবে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইতোমধ্যে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যিনি পুরো বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করবেন।
তিনি আরও বলেন, “আমরা তাকে রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করব। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
অনিয়মের মাধ্যমে সম্পদ অর্জন এবং অর্থপাচারের একাধিক অভিযোগ রয়েছে মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে। এস আলম গ্রুপ, তানাকা গ্রুপ, এসএ গ্রুপ ও আনোয়ার গ্রুপের মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত নিশ্চিত তথ্য থাকা সত্ত্বেও তিনি ব্যক্তিগত সুবিধা নেওয়ার মাধ্যমে অভিযোগগুলো ধামাচাপা দেন।
ইসলামী ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচারের অভিযোগে তিনি সরাসরি এস আলম গ্রুপের সঙ্গে জড়িত। তাছাড়া, থার্মেক্স গ্রুপ ও জিনাত এন্টারপ্রাইজের অর্থপাচারের মামলা ‘ঘুষের বিনিময়ে’ বন্ধ করে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দুর্নীতি দমন কমিশন আগের সরকারের মন্ত্রী, এমপি এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে জোর দিয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
২০২৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অনুসন্ধানের ঘোষণা দেয় সংস্থাটি। এরপর ৩ অক্টোবর মাসুদ বিশ্বাসের বিদেশযাত্রা ঠেকাতে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চে চিঠি পাঠায়।
দুদকের ভাষ্য অনুযায়ী, “দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি যে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন, তা দেশের অর্থনীতির ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। তার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে এবং সেগুলোও যথাযথভাবে খতিয়ে দেখা হবে।”
দুদক দুর্নীতির অভিযোগে যাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে, তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মাসুদ বিশ্বাসের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিদেরও আইনের আওতায় আনার মাধ্যমে সংস্থাটি দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমকে আরও জোরদার করছে।