ঢাকার হাই কোর্টের সামনে প্লাস্টিকের ড্রামের ভেতর থেকে রংপুরের ব্যবসায়ী আশরাফুল হকের খণ্ডিত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেপ্তার প্রধান সন্দেহভাজন জরেজ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে প্রেমঘটিত সংকট থেকে। এর আগে তার প্রেমিকা শামীমা আক্তারকে গ্রেপ্তারের পর র্যাব জানিয়েছিল—শামীমাকে দিয়ে ‘ফাঁদে ফেলে’ আশরাফুলের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করেছিল জরেজ। পরিকল্পনা অনুযায়ী আশরাফুলকে ঢাকায় আনলেও কেন তাকে খুন করা হলো—তা নিয়ে র্যাব নিশ্চিত ধারণা না পাওয়ার কথা জানিয়েছিল। তখন তারা জরেজের বক্তব্যের জন্য অপেক্ষার কথা বলেছিল। শুক্রবার রাতে কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে ডিবি তাকে গ্রেপ্তার করে।
শনিবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম জানান, এটি আসলে একটি ‘ত্রিভুজ প্রেমের কাহিনী’। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হাই কোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠের গেইটের কাছে দুটি নীল ড্রাম থেকে পুলিশ খণ্ড–বিখণ্ড লাশ উদ্ধার করে। লাশটি ২৬ টুকরো অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রথমে পরিচয় না মিললেও আঙুলের ছাপ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র ডেটাবেইজ ব্যবহার করে জানা যায়—লাশটি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের আশরাফুল হকের।
ঘটনার পর আশরাফুলের বোন শুক্রবার শাহবাগ থানায় মামলা করেন। তার বন্ধুরূপে পরিচিত জরেজকে ‘প্রধান সন্দেহভাজন’ হিসেবে খুঁজছিল পুলিশ। একই রাতে ডিবি জরেজকে এবং র্যাব তার প্রেমিকা শামীমাকে গ্রেপ্তার করে।
ডিবি প্রধান জানান, মালয়েশিয়া প্রবাসী জরেজ দেড় মাস আগে দেশে ফেরেন। মালয়েশিয়ায় থাকা অবস্থায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুমিল্লার শামীমার সঙ্গে তার পরিচয় ও সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দেশে ফেরার দিন শামীমা বিমানবন্দরে গিয়ে তাকে রিসিভ করেন। পরে তারা নিজেদের বাড়িতে ফিরে যান। দেশে ফেরার পরও জরেজ ও শামীমার যোগাযোগ চলতে থাকায় বিষয়টি তার স্ত্রী জানতে পারেন। এ নিয়ে সহায়তার জন্য তিনি ঘনিষ্ঠ বন্ধু আশরাফুলের কাছে যান এবং শামীমার নম্বর দিয়ে তাকে স্বামীর জীবন থেকে সরে যেতে বলার অনুরোধ করেন।
অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, শামীমাকে ফোন দিতে দিতে আশরাফুলও তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। তারা নিয়মিত কথা বলতেন এবং ভিডিও চ্যাটিং করতেন। এ সময় আশরাফুল ও শামীমা পরিকল্পনা করেন জরেজকে জাপানে পাঠানোর। দু’জন মিলেই ৭ লাখ করে মোট ১৪ লাখ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব ছিল। জাপানে যাওয়ার প্রক্রিয়া ও টাকা নেওয়ার জন্য শামীমা তাদের ঢাকায় আসতে বলেন। সে অনুযায়ী দুই বন্ধু মঙ্গলবার ঢাকায় রওনা দেন। পরদিন সকালে সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে শামীমা তাদের রিসিভ করেন এবং শনির আখড়ায় একটি ভাড়া বাসায় ওঠান।
ডিবি জানায়, নিজেদের একান্তে সময় কাটাতে আশরাফুলকে জুসের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাওয়ান জরেজ ও শামীমা। কিন্তু তিনি ঘুমান না। এরপর আশরাফুল বারবার শামীমার কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলে জরেজ বাধা দেন, এ নিয়ে তর্ক বাধে। একপর্যায়ে জরেজ ভুলে আশরাফুলের মোবাইল নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যান। পরে মোবাইল আনতে ফের বাসায় ফিরে আসেন। শামীমা তাকে জানান, আশরাফুল ঘুমিয়ে পড়েছেন। শামীমা যাচাই করতে আশরাফুলকে স্পর্শ করলে তিনি জেগে ওঠেন এবং জরেজ আড়ালে লুকিয়ে থাকেন।
ডিবি প্রধান বলেন, আশরাফুল বিকৃত যৌনাচারে শামীমাকে জোর করলে শামীমা প্রলোভন দেখিয়ে দড়ি দিয়ে তার হাত বেঁধে দেন। তখন শামীমা চিৎকার করলে জরেজ বেরিয়ে এসে হাতুড়ি দিয়ে আশরাফুলের হাঁটুতে আঘাত করেন। আশরাফুল চিৎকার করলে শামীমা তার মুখে ওড়না পুরে স্কচটেপ পেঁচিয়ে দেন। কিছু সময় পর দেখা যায় তিনি মারা গেছেন।
এরপর তারা রাতভর লাশ নিয়ে বাসায় অবস্থান করেন। পরদিন সকালে বাইরে থেকে ড্রামসহ প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে এনে লাশ ২৬ টুকরো করে দুটি ড্রামে ভরে উপরে চাল ঢেলে দেন। সিএনজিতে করে ড্রাম দুটি হাই কোর্টের সামনে ফেলে রেখে সায়েদাবাদে চলে যান। সেখান থেকে শামীমা লাকসামে নিজ বাড়িতে চলে যান। আর জরেজ দাউদকান্দিতে পরিচিত এক ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে লুকিয়ে থাকেন, যেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫
ঢাকার হাই কোর্টের সামনে প্লাস্টিকের ড্রামের ভেতর থেকে রংপুরের ব্যবসায়ী আশরাফুল হকের খণ্ডিত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেপ্তার প্রধান সন্দেহভাজন জরেজ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে প্রেমঘটিত সংকট থেকে। এর আগে তার প্রেমিকা শামীমা আক্তারকে গ্রেপ্তারের পর র্যাব জানিয়েছিল—শামীমাকে দিয়ে ‘ফাঁদে ফেলে’ আশরাফুলের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করেছিল জরেজ। পরিকল্পনা অনুযায়ী আশরাফুলকে ঢাকায় আনলেও কেন তাকে খুন করা হলো—তা নিয়ে র্যাব নিশ্চিত ধারণা না পাওয়ার কথা জানিয়েছিল। তখন তারা জরেজের বক্তব্যের জন্য অপেক্ষার কথা বলেছিল। শুক্রবার রাতে কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে ডিবি তাকে গ্রেপ্তার করে।
শনিবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম জানান, এটি আসলে একটি ‘ত্রিভুজ প্রেমের কাহিনী’। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হাই কোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠের গেইটের কাছে দুটি নীল ড্রাম থেকে পুলিশ খণ্ড–বিখণ্ড লাশ উদ্ধার করে। লাশটি ২৬ টুকরো অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রথমে পরিচয় না মিললেও আঙুলের ছাপ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র ডেটাবেইজ ব্যবহার করে জানা যায়—লাশটি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের আশরাফুল হকের।
ঘটনার পর আশরাফুলের বোন শুক্রবার শাহবাগ থানায় মামলা করেন। তার বন্ধুরূপে পরিচিত জরেজকে ‘প্রধান সন্দেহভাজন’ হিসেবে খুঁজছিল পুলিশ। একই রাতে ডিবি জরেজকে এবং র্যাব তার প্রেমিকা শামীমাকে গ্রেপ্তার করে।
ডিবি প্রধান জানান, মালয়েশিয়া প্রবাসী জরেজ দেড় মাস আগে দেশে ফেরেন। মালয়েশিয়ায় থাকা অবস্থায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুমিল্লার শামীমার সঙ্গে তার পরিচয় ও সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দেশে ফেরার দিন শামীমা বিমানবন্দরে গিয়ে তাকে রিসিভ করেন। পরে তারা নিজেদের বাড়িতে ফিরে যান। দেশে ফেরার পরও জরেজ ও শামীমার যোগাযোগ চলতে থাকায় বিষয়টি তার স্ত্রী জানতে পারেন। এ নিয়ে সহায়তার জন্য তিনি ঘনিষ্ঠ বন্ধু আশরাফুলের কাছে যান এবং শামীমার নম্বর দিয়ে তাকে স্বামীর জীবন থেকে সরে যেতে বলার অনুরোধ করেন।
অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, শামীমাকে ফোন দিতে দিতে আশরাফুলও তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। তারা নিয়মিত কথা বলতেন এবং ভিডিও চ্যাটিং করতেন। এ সময় আশরাফুল ও শামীমা পরিকল্পনা করেন জরেজকে জাপানে পাঠানোর। দু’জন মিলেই ৭ লাখ করে মোট ১৪ লাখ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব ছিল। জাপানে যাওয়ার প্রক্রিয়া ও টাকা নেওয়ার জন্য শামীমা তাদের ঢাকায় আসতে বলেন। সে অনুযায়ী দুই বন্ধু মঙ্গলবার ঢাকায় রওনা দেন। পরদিন সকালে সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে শামীমা তাদের রিসিভ করেন এবং শনির আখড়ায় একটি ভাড়া বাসায় ওঠান।
ডিবি জানায়, নিজেদের একান্তে সময় কাটাতে আশরাফুলকে জুসের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাওয়ান জরেজ ও শামীমা। কিন্তু তিনি ঘুমান না। এরপর আশরাফুল বারবার শামীমার কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলে জরেজ বাধা দেন, এ নিয়ে তর্ক বাধে। একপর্যায়ে জরেজ ভুলে আশরাফুলের মোবাইল নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যান। পরে মোবাইল আনতে ফের বাসায় ফিরে আসেন। শামীমা তাকে জানান, আশরাফুল ঘুমিয়ে পড়েছেন। শামীমা যাচাই করতে আশরাফুলকে স্পর্শ করলে তিনি জেগে ওঠেন এবং জরেজ আড়ালে লুকিয়ে থাকেন।
ডিবি প্রধান বলেন, আশরাফুল বিকৃত যৌনাচারে শামীমাকে জোর করলে শামীমা প্রলোভন দেখিয়ে দড়ি দিয়ে তার হাত বেঁধে দেন। তখন শামীমা চিৎকার করলে জরেজ বেরিয়ে এসে হাতুড়ি দিয়ে আশরাফুলের হাঁটুতে আঘাত করেন। আশরাফুল চিৎকার করলে শামীমা তার মুখে ওড়না পুরে স্কচটেপ পেঁচিয়ে দেন। কিছু সময় পর দেখা যায় তিনি মারা গেছেন।
এরপর তারা রাতভর লাশ নিয়ে বাসায় অবস্থান করেন। পরদিন সকালে বাইরে থেকে ড্রামসহ প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে এনে লাশ ২৬ টুকরো করে দুটি ড্রামে ভরে উপরে চাল ঢেলে দেন। সিএনজিতে করে ড্রাম দুটি হাই কোর্টের সামনে ফেলে রেখে সায়েদাবাদে চলে যান। সেখান থেকে শামীমা লাকসামে নিজ বাড়িতে চলে যান। আর জরেজ দাউদকান্দিতে পরিচিত এক ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে লুকিয়ে থাকেন, যেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি।