সাত কলেজ নিয়ে প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাদেশ জারির পক্ষে-বিপক্ষে রাজধানীতে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। অধ্যাদেশ জারির পক্ষে আব্দুল গণি রোডে শিক্ষা ভবন ঘেরাও করেন একদল শিক্ষার্থী।
এ অধ্যাদেশের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন আরেক দল শিক্ষার্থী। তারা সেখানে এক ঘণ্টার মতো সময় অবস্থান করেন। এ পক্ষের কর্মসূচির কারণে শাহবাগ ও এর আশপাশের সড়ক এবং পল্টন, গুলিস্তান ও জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকার সড়কে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।
শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির পক্ষে-বিপক্ষে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে এ সংক্রান্ত জটিলতা আরও ঘনীভূত হয়েছে। এ কলেজগুলো নিয়ে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোর পক্ষে-বিপক্ষে এখন অন্তত পাঁচটি দল হয়ে গেছে। শিক্ষকরাও এ বিশ্ববিদ্যালয় কাঠামোর বিপক্ষে।
৫ ঘণ্টা শিক্ষা ভবন ঘেরাও:
ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাদেশ জারির দাবিতে গতকাল দুপুরে রাজধানীর শিক্ষা ভবনের সামনের সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এর পাঁচ ঘণ্টা পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সচিবালয়ে গিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেয় পুলিশ।
আলোচনার এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে শিক্ষার্থীরা বলছে, দাবি বাস্তবায়নের কোনো সুস্পষ্ট অগ্রগতি না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। সন্ধ্যা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা শিক্ষা ভবনের সামনে অবস্থান করছিলেন।
এর আগে সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষা ভবনের ঘেরাও কর্মসূচির অংশ হিসেবে সড়কে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা।
তারা ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি আইনের ওপর রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে অধ্যাদেশ জারির এক দাবিতে এ কর্মসূচি পালন করেন। এসময় তারা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। এতে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ভোগান্তিতে পড়েন যাতায়াতকারীরা।
এসময় শিক্ষার্থীরা ‘সেন্ট্রাল না সিন্ডিকেট, সেন্ট্রাল সেন্ট্রাল’, সিন্ডিকেটের দালালেরা হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘টালবাহানা বন্ধ করো, অধ্যাদেশ জারি করো’সহ নানা স্লোগান দেয়।
এসময় শিক্ষা ভবনের সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা গেছে। সেখানে ব্যারিকেট দিতে দেখা গেছে।ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম জানান, শিক্ষার্থীরা চাইলে সরাসরি সচিবালয়ে গিয়ে সংশ্লিষ্ট সচিবদের সঙ্গে কথা বলে নিজেদের দাবি-দাওয়ার সর্বশেষ আপডেট নিতে পারে।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সার্বিক বিষয়ে তোমরা সচিবালয়ে নিজেরাই গিয়ে জানতে পারো কী অগ্রগতি হয়েছে। তোমাদের যদি কোনো বক্তব্য থাকে, সেটাও দিয়ে আসতে পারো। এতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমবে। এখানে মোড়ে পাঁচ ঘণ্টার মতো অবস্থান চলছে, এতে জনভোগান্তি বাড়ছে।’
এবিষয়ে আন্দোলনকারীদের নেতা ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা পুলিশের দেয়া আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। আমরা কোনো আলোচনায় যাচ্ছি না। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’
প্রস্তাবিত অধ্যাদেশের কাঠামোর বিপক্ষে বিক্ষোভ
সাত কলেজের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার দাবিতে গতকালও বিক্ষোভ করেছেন ঢাকা কলেজসহ একাধিক কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা। তারা কলেজ ক্যাম্পাসসহ আশপাশের এলাকার সড়কে বিক্ষোভ করেছেন। পরে রাজধানীর শাহবাগে অবরোধ করে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। তারাও পরবর্তীতে শিক্ষা ভবন ঘেরাওয়ের ঘোষণা দেন।
শিক্ষার্থীরা ‘স্কুলিংয়ের ঠাঁই নাই, ঢাকা কলেজের আঙ্গিনায়, স্কুলিংয়ের ঠিকানা, এ ক্যাম্পাসে হবে না, অ্যাকশন টু অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন, স্কুলিংয়ের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ ইত্যাদি সংবলিত স্লোগান দিতে থাকেন।
শিক্ষার্থীরা জানায়, ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশের খসড়া সংশোধন করতে হবে। খসড়ার স্কুলিং মডেলের মাধ্যমে সাত কলেজকে বিলুপ্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। এতে হুমকিতে পড়তে যাচ্ছে ঢাকা কলেজের অনার্স-মাস্টার্স। অস্তিত্ব সংকটে পড়বে ইন্টারমিডিয়েটও।
স্কুলিং মডেল ঢাকার সাত সরকারি কলেজের ‘অনুপযোগী-অযৌক্তিক’ দাবি করে শিক্ষার্থীরা বলেন, মডেল প্রণয়নে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর মতামত উপেক্ষা করা হয়েছে। স্কুলিং মডেল কোনোভাবেই ঢাকা কলেজে বাস্তবায়ন করতে দেয়া হবে না।
স্কুলিং মডেল বাতিল করে সাত কলেজ স্বতন্ত্র রক্ষার দাবিতে দুপুরে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করতে সচিবালয় গিয়েছিলেন সাত কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ের ১৬ সদস্যের প্রতিনিধিদল। পরে কথা বলতে চাইলেও শিক্ষা উপদেষ্টা সম্মতি না দেয়ায় সেখানে বসে পড়েন শিক্ষার্থীরা।
প্রতিনিধিদলে ছিলেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান ও সানজিদা খাতুন, ঢাকা কলেজের ওয়ালিদ হাসান রাহিম, নুরুস ছাফা, ফাহিম, পিয়াস, তানভীর ও আরিফ, ইডেন মহিলা কলেজের তাসফিয়া ও শৈলী, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের আফরিন ও নীতি; সরকারি বাঙলা কলেজের শহীদ আফ্রিদি; কবি নজরুল সরকারি কলেজের আহিয়ান মামুন ও হিশাম এবং সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিমুল।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ জারি হলে কলেজগুলোর উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে। এতে কলেজগুলোর ঐতিহ্য বিনষ্ট হবে।
গত ১২ নভেম্বর শিক্ষামন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগ জানায়, সাত কলেজকে একীভূত করে ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে নতুন একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার নীতিগত সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে হয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের গুজব এড়িয়ে দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জানানো হয়।
২০১৭ সালে যথেষ্ট প্রস্তুতি ছাড়াই ঢাকার সাত সরকারি কলেজকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। এই কলেজগুলো হলো- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও তিতুমীর কলেজ।
এর মধ্যে ইডেন ও তিতুমীরে শুধু স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পড়ানো হয়; বাকি পাঁচটি কলেজে উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর-তিন স্তরেই পাঠদান হয়। এগুলোতে শিক্ষার্থী দেড় লাখের মতো। চলতি শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রথমবর্ষে ভর্তিযোগ্য আসন ১১ হাজারের মতো। সাত কলেজে মোট শিক্ষক হাজারের বেশি।