মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীদের বিটিআরসি ঘেরাও কর্মসূচি ঘিরে সড়ক আটকে রাখায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন হাজারো মানুষ। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি কার্যালয়ের অদূরে তিনটি প্রধান বিশেষায়িত হাসপাতালে (শিশু, পঙ্গু ও নিউরোসায়েন্সেস) রোগীদের ঢুকতে ও বের হতে বেগ পেতে হচ্ছে। রোববার, (০৭ ডিসেম্বর ২০২৫) সন্ধ্যায় আগারগাঁও মোড় থেকে বিটিআরসি ভবনের সামনে পর্যন্ত অন্তত চার জায়গায় আগুন জ্বালিয়েছে বিক্ষোভকারীরা।
এর আগে বিকাল ৫টায় নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালের সামনে গিয়ে দেখা যায় যানজটে থমকে আছে সড়ক। হাসপাতালের দরজায় দাঁড়িয়ে সমানে সাইরেন বাজিয়ে চললেও বের হতে পারলো না একটি অ্যাম্বুলেন্স। অ্যাম্বুলেন্সটির চালক মোহাম্মদ ইয়াহিয়া বলেন, রোগীকে অন্য হাসপাতালে নেয়ার কথা ছিল। যানজটের কারণে নেয়া গেল না।
স্কুল শিক্ষক হোসনে আরা ফিরছিলেন সিএনজি চালিত অটোরিকশায়। যানজটে অনেকক্ষণ বসেছিলেন তিনি। পরে অটোরিকশা থেকে নেমে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে শুরু করেন। হোসনে আরা বলেন, হাঁটুতে সমস্যা থাকায় তিনি ভালো করে হাঁটতে পারেন না। বাসা থেকে ছেলেকে আসতে বলেছেন। ছেলে আসছে, তিনিও যতখানি পারেন সামনে এগিয়ে যাচ্ছেন।
পাসপোর্ট অফিসের উল্টো পাশের মোড়ে ৫০-৬০ জন বিক্ষোভকারী সড়কটি অবরোধ করে রেখেছেন। আর তাদের পেছনে কয়েকশ’ গাড়ি আর মোটরসাইকেল। বাইকাররা মাঝে মধ্যে উত্তেজিত হয়ে একযোগে হর্ন বাজাচ্ছেন। কিন্তু ব্যবসায়ীরা সড়ক ছাড়ছেন না। বিটিআরসি ভবনের পাশে খাবারের দোকানগুলোতে ভিড় করে খাচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা। রাস্তার দুইপাশে আরও বেশি করে ভিড় করছেন ভাসমান খাবার বিক্রেতারা।
তেলের লরি চালক মিরাজ বলছেন, বিকেল বেলায় গাবতলী যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রায় ৩ ঘণ্টা যাবৎ এখানেই আটকে আছেন। মোটরসাইকেলগুলো ফাঁকফোকর দিয়ে বের হতে পারলেও তিনি যেতে পারছেন না। তার হেল্পার সিয়াম অনেকক্ষণ আগে গিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে এসেছে। তারা জানিয়েছিল বিকেল ৫টার সময় আন্দোলন শেষ হবে। কিন্তু সাড়ে ৫টার সময়ও তারা রাস্তা ছেড়ে দেয়নি।
বিভিন্ন যানবাহনের চালক, মোটরসাইকেল আরোহীরা এসে আন্দোলনকারীদের গালিগালাজ করছেন। জবাবে আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে বারে বারে মাইকে ঘোষণা দেয়া হচ্ছে, লোকজনের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডায় না জড়ানোর জন্য। তাদের নেতাগোছের একজন হ্যান্ড মাইক হাতে বলছিলেন, ‘আমরা কিচ্ছু দেখি না। আমরা কিচ্ছু শুনি না। যে যাই বলে বলুক, আপনারা কারও সঙ্গে হাতাহাতি করবেন না।’
অননুমোদিত মোবাইল ফোন বন্ধ করার সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ঢাকার আগারগাঁও এলাকায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ভবনের সামনের সড়ক আটকে সকাল থেকেই বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী ও তাদের কর্মচারীরা। ‘মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশের’ ব্যানারে ওইদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তারা সড়ক বন্ধ করে অবস্থান নিলে একপাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুর ১টার দিকে আগারগাঁও এলাকার সব সড়ক বন্ধ করে দেন আন্দোলনকারীরা। তাতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয় আগারগাঁও ও আশপাশের এলাকায়। আন্দোলনকারীরা বলছেন, এনইআইআর প্রক্রিয়ার কিছু সংস্কার, ন্যায্য কর নীতি প্রণয়ন, একচেটিয়া সিন্ডিকেট বিলোপ এবং মুক্ত বাণিজ্যের স্বার্থে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে তাদের কিছু দাবি ও প্রস্তাব রয়েছে। এ বিষয়ে তাদের কথা না শুনেই সরকার একতরফা এনইআইআর চালু করতে যাচ্ছে।