ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
চুয়াডাঙ্গা জেলায় হঠাৎ ছড়িয়ে পড়েছে এক ধরনের আর্থিক অস্থিরতা। বিদেশি বিনিয়োগের লোভ দেখিয়ে স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠেছে এক ‘ভুয়া’ আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যেখানে কোটি কোটি টাকা আটকা পড়ছে সাধারণ মানুষের। নাম-পরিচয়হীন এই অফিসটি কখনো অনলাইন ট্রেডিং, কখনো সমবায় ব্যবসা, আবার কখনো বিদেশি এমএলএম স্কিমের মুখোশ পরে বিনিয়োগকারীদের প্রলোভনে ফেলছে।
নানা নামে মানুষকে প্রলোভনে ফেলছে
অন্তত তিন হাজার গ্রাহক ইতোমধ্যেই টাকা বিনিয়োগ করেছেন, কেউ লাখ, কেউ বা কোটি
প্রতি এক লাখ টাকায় মাসে পাঁচ থেকে নয় হাজার টাকা লাভের প্রতিশ্রুতি
প্রতিষ্ঠানটির বৈধতা যাচাই করা হচ্ছে: প্রশাসন
স্থানীয় সূত্র জানায়, দুবাইভিত্তিক আসল ব্রোকারেজ কোম্পানি ‘সেন্ট এফএক্স’-এর নাম ব্যবহার করেই চলছে পুরো প্রতারণার কারবার। অথচ প্রতিষ্ঠানটির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটেই স্পষ্ট লেখা রয়েছে “ইবধিৎব ড়ভ ঋধশব ঊহঃরঃরবং” (নকল প্রতিষ্ঠান হতে সাবধান)। তবু সতর্কবার্তা উপেক্ষা করে প্রতারক চক্রটি নিজস্ব নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে।
চুয়াডাঙ্গা শহরের টিঅ্যান্ডটি মোড়ের একটি ভবনের দুই ফ্ল্যাটে চলছে এই কথিত অফিসের কার্যক্রম। বাইরে কোনো সাইনবোর্ড নেই, দিনভর দরজা তালাবদ্ধ থাকে, মাঝে মাঝে গভীর রাতে অফিস খোলে। ভবনটির মালিক আবুল বাসার বলেন, তারা ভাড়া নিয়েছিল হজ এজেন্সি খোলার কথা বলে। এখন বুঝছি, পুরো বিষয়টাই প্রতারণা।
নানা নামে একই ফাঁদ
প্রতারণার ধরনও এক নয়। কখনো ফরেক্স ট্রেডিং, কখনো ওজিএস অনলাইন শপিং, আবার কখনো সাকসেস অ্যাসোসিয়েশন নামে সমবায় প্রতিষ্ঠানের আড়ালে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তারা। বিনিয়োগকারীদের প্রতি এক লাখ টাকায় মাসে পাঁচ থেকে নয় হাজার টাকা লাভের প্রতিশ্রুতি দেয়া হচ্ছে। মূলত এটি পঞ্জি পদ্ধতির ফাঁদ, যেখানে নতুন বিনিয়োগকারীদের টাকা দিয়েই আগের লগ্নিদের মুনাফা দেয়া হয়।
কমপক্ষে তিন হাজার গ্রাহক ইতোমধ্যেই এতে টাকা বিনিয়োগ করেছেন কেউ লাখ টাকা, কেউ বা কোটি টাকাও। ভুক্তভোগীদের মধ্যে রয়েছেন সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষক, ব্যবসায়ী ও প্রবাসী। ফলে নতুন বিনিয়োগকারী বন্ধ হলেই পুরো কাঠামো ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
চক্রটির নেতৃত্বে রয়েছেন বিভিন্ন পেশার মানুষ। সূত্র বলছে, কয়েকজন বীমা কোম্পানির সাবেক কর্মকর্তা, কিছু সরকারি কর্মকর্তা ও স্কুল শিক্ষক মিলে গড়ে তুলেছেন পুরো নেটওয়ার্ক। সংগঠনটি কর্পোরেট ধাঁচে সাজানো এজিএম, সিআইবি, এমআইবি, আইবি, এসআইবি নামে বিভক্ত পদবিভাগে শত শত কর্মী মাঠ পর্যায়ে গ্রাহক সংগ্রহ করছে।
তথ্য অনুযায়ী, চুয়াডাঙ্গা অফিসের আওতায় রয়েছেন ২ জন এজিএম, ৫ জন সিআইবি, ২৫ জন এমআইবি, ৯০ জন আইবি এবং প্রায় ২৬০ জন এসআইবি পদধারী মাঠকর্মী।
এজিএম পদে থেকে চক্রের নিয়ন্ত্রণ করেন জাফরপুরের ব্যবসায়ী রোকনুজ্জামান ও বাগানপাড়ার সাবেক বীমা কর্মকর্তা মকবুল হোসেন। সিআইবি হিসেবে রয়েছেন এম এ বারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিয়ান নাজমুল কবীর এবং বিএডিসি কর্মকর্তা জামাল উদ্দিন।
সেন্টএফএক্স নামে পরিচিত এক কর্মী জানান, কানন নামের এক ব্যক্তি আমাকে চাকরি দেন। গ্রাহক যদি ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেন, মাসে তাকে ৫ হাজার টাকা দেয়া হয়। এর মধ্যে মাঠকর্মী হিসেবে আমি পাই এক হাজার টাকা কমিশন।
চুয়াডাঙ্গা পৌর কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শাহজাহান আলী বলেন, আমার কাছেও বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছিল। কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখি, গ্লোবাল শপ কিংবা সেন্টএফএক্স নামে তারা যে অফার দিচ্ছে, তা পুরোপুরি মিথ্যা। এটা মূলত হুন্ডি ও মানিলন্ডারিং চক্র।
চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) আবু জামাল নাসের বলেন, বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। এখনও পুরো চক্রের বিস্তারিত হাতে আসেনি, তবে তদন্ত চলছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম জানান, প্রতিষ্ঠানটির বৈধতা যাচাই করা হচ্ছে। বৈধ কাগজপত্র না পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
রোববার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫
চুয়াডাঙ্গা জেলায় হঠাৎ ছড়িয়ে পড়েছে এক ধরনের আর্থিক অস্থিরতা। বিদেশি বিনিয়োগের লোভ দেখিয়ে স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠেছে এক ‘ভুয়া’ আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যেখানে কোটি কোটি টাকা আটকা পড়ছে সাধারণ মানুষের। নাম-পরিচয়হীন এই অফিসটি কখনো অনলাইন ট্রেডিং, কখনো সমবায় ব্যবসা, আবার কখনো বিদেশি এমএলএম স্কিমের মুখোশ পরে বিনিয়োগকারীদের প্রলোভনে ফেলছে।
নানা নামে মানুষকে প্রলোভনে ফেলছে
অন্তত তিন হাজার গ্রাহক ইতোমধ্যেই টাকা বিনিয়োগ করেছেন, কেউ লাখ, কেউ বা কোটি
প্রতি এক লাখ টাকায় মাসে পাঁচ থেকে নয় হাজার টাকা লাভের প্রতিশ্রুতি
প্রতিষ্ঠানটির বৈধতা যাচাই করা হচ্ছে: প্রশাসন
স্থানীয় সূত্র জানায়, দুবাইভিত্তিক আসল ব্রোকারেজ কোম্পানি ‘সেন্ট এফএক্স’-এর নাম ব্যবহার করেই চলছে পুরো প্রতারণার কারবার। অথচ প্রতিষ্ঠানটির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটেই স্পষ্ট লেখা রয়েছে “ইবধিৎব ড়ভ ঋধশব ঊহঃরঃরবং” (নকল প্রতিষ্ঠান হতে সাবধান)। তবু সতর্কবার্তা উপেক্ষা করে প্রতারক চক্রটি নিজস্ব নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে।
চুয়াডাঙ্গা শহরের টিঅ্যান্ডটি মোড়ের একটি ভবনের দুই ফ্ল্যাটে চলছে এই কথিত অফিসের কার্যক্রম। বাইরে কোনো সাইনবোর্ড নেই, দিনভর দরজা তালাবদ্ধ থাকে, মাঝে মাঝে গভীর রাতে অফিস খোলে। ভবনটির মালিক আবুল বাসার বলেন, তারা ভাড়া নিয়েছিল হজ এজেন্সি খোলার কথা বলে। এখন বুঝছি, পুরো বিষয়টাই প্রতারণা।
নানা নামে একই ফাঁদ
প্রতারণার ধরনও এক নয়। কখনো ফরেক্স ট্রেডিং, কখনো ওজিএস অনলাইন শপিং, আবার কখনো সাকসেস অ্যাসোসিয়েশন নামে সমবায় প্রতিষ্ঠানের আড়ালে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তারা। বিনিয়োগকারীদের প্রতি এক লাখ টাকায় মাসে পাঁচ থেকে নয় হাজার টাকা লাভের প্রতিশ্রুতি দেয়া হচ্ছে। মূলত এটি পঞ্জি পদ্ধতির ফাঁদ, যেখানে নতুন বিনিয়োগকারীদের টাকা দিয়েই আগের লগ্নিদের মুনাফা দেয়া হয়।
কমপক্ষে তিন হাজার গ্রাহক ইতোমধ্যেই এতে টাকা বিনিয়োগ করেছেন কেউ লাখ টাকা, কেউ বা কোটি টাকাও। ভুক্তভোগীদের মধ্যে রয়েছেন সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষক, ব্যবসায়ী ও প্রবাসী। ফলে নতুন বিনিয়োগকারী বন্ধ হলেই পুরো কাঠামো ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
চক্রটির নেতৃত্বে রয়েছেন বিভিন্ন পেশার মানুষ। সূত্র বলছে, কয়েকজন বীমা কোম্পানির সাবেক কর্মকর্তা, কিছু সরকারি কর্মকর্তা ও স্কুল শিক্ষক মিলে গড়ে তুলেছেন পুরো নেটওয়ার্ক। সংগঠনটি কর্পোরেট ধাঁচে সাজানো এজিএম, সিআইবি, এমআইবি, আইবি, এসআইবি নামে বিভক্ত পদবিভাগে শত শত কর্মী মাঠ পর্যায়ে গ্রাহক সংগ্রহ করছে।
তথ্য অনুযায়ী, চুয়াডাঙ্গা অফিসের আওতায় রয়েছেন ২ জন এজিএম, ৫ জন সিআইবি, ২৫ জন এমআইবি, ৯০ জন আইবি এবং প্রায় ২৬০ জন এসআইবি পদধারী মাঠকর্মী।
এজিএম পদে থেকে চক্রের নিয়ন্ত্রণ করেন জাফরপুরের ব্যবসায়ী রোকনুজ্জামান ও বাগানপাড়ার সাবেক বীমা কর্মকর্তা মকবুল হোসেন। সিআইবি হিসেবে রয়েছেন এম এ বারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিয়ান নাজমুল কবীর এবং বিএডিসি কর্মকর্তা জামাল উদ্দিন।
সেন্টএফএক্স নামে পরিচিত এক কর্মী জানান, কানন নামের এক ব্যক্তি আমাকে চাকরি দেন। গ্রাহক যদি ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেন, মাসে তাকে ৫ হাজার টাকা দেয়া হয়। এর মধ্যে মাঠকর্মী হিসেবে আমি পাই এক হাজার টাকা কমিশন।
চুয়াডাঙ্গা পৌর কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শাহজাহান আলী বলেন, আমার কাছেও বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছিল। কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখি, গ্লোবাল শপ কিংবা সেন্টএফএক্স নামে তারা যে অফার দিচ্ছে, তা পুরোপুরি মিথ্যা। এটা মূলত হুন্ডি ও মানিলন্ডারিং চক্র।
চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) আবু জামাল নাসের বলেন, বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। এখনও পুরো চক্রের বিস্তারিত হাতে আসেনি, তবে তদন্ত চলছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম জানান, প্রতিষ্ঠানটির বৈধতা যাচাই করা হচ্ছে। বৈধ কাগজপত্র না পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।