alt

শিক্ষা

দ্বৈত শাসনের কবলে বেসরকারি কলেজে নিয়োগ প্রক্রিয়া

অনার্স-মাস্টার্স কোর্সের শিক্ষকরা এমপিও বঞ্চিত

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শনিবার, ০৯ মার্চ ২০২৪

দ্বৈত শাসনের কবলে ডিগ্রি ও অনার্স-মাস্টার্স পাঠদানকারি বেসরকারি কলেজগুলো। এসব কলেজ জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের (এনইউ) বিধিমালার আলোকে পরিচালিত হচ্ছে। তবে জনবল নিয়োগ, পরিচালনা ও এমপিওভুক্তির জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবলকাঠামো এবং এমপিও নীতিমালা’ বাধ্যতামূলক অনুসরণ করতে হয়।

এনইউ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিধিমালার মধ্যে সমন্বয় না থাকায় এমপিও (মান্থলি পে অর্ডার) পাচ্ছেন না অনেক শিক্ষক। আবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্প্রতি একটি পরিপত্র জারি করে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজে ‘অধ্যক্ষ’ নিয়োগে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) প্রতিনিধি অন্তুর্ভুক্ত করেছে। অথচ একই স্তরের মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রমে ডিসি প্রতিনিধি রাখা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।

এমপিও দিতে না পারায় জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২০১৯ সাল থেকে অনার্স-মাস্টার্স কোর্সে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ রেখেছে বলে শিক্ষক নেতারা জানিয়েছেন।

২০১৭ সালে রংপুরের শ্যামপুর ডিগ্রি কলেজে অনার্স কোর্সের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান শামীম হুদা। এই সাত বছরেও তিনি এমপিওভুক্তি হতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘আমরা এমপিওভুক্তির আশায় শিক্ষকতায় এসেছিলাম। এখন হতাশ...মানবেতর জীবন-যাপন করছি।’

শামীম হুদা জানান, দীর্ঘ ৩২ বছরেও এই স্তরের শিক্ষকদের জন্য সেভাবে জনবলকাঠামো তৈরি হয়নি। এর ফলে শুধু অনার্স ও মাস্টার্স কোর্সের শিক্ষক-কর্মচারীরা এমপিও সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

এ বিষয়ে ‘বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদের’ সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান সংবাদকে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিভিন্ন সময়ে নানা পরিপত্র, সার্কুলার ও নীতিমালা জারি করে। প্রায় দেখা যায়, এগুলির সঙ্গে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের নীতিমালার সমন্বয় থাকে না। এর ফলে শিক্ষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে জানান প্রবীণ ওই শিক্ষক নেতা।

তিনি গত ১১ জানুয়ারি অধ্যক্ষ নিয়োগের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সার্কুলারের উদাহরণ টেনে বলেন, সেখানে বলা হয়েছে-বেসরকারি কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগের কমিটিতে ডিসি প্রতিনিধি থাকবেন। পাঁচ সদস্যের এই নিয়োগ কমিটিতে শিক্ষা বোর্ড ও মাউশির একজন করে প্রতিনিধিও রাখা হয়েছে। নিয়োগ পরীক্ষায় প্রতি পদের বিপরীতে কমপক্ষে তিনজন প্রার্থী থাকতে হবে।

শিক্ষক সংগঠনগুলো জানিয়েছে, বর্তমানে দেশের অনার্স-মাস্টার্স কোর্সের ৪০১টি বেসরকারি কলেজের শিক্ষক এমপিও অর্থাৎ বেতনভাতা না পেয়ে ‘মানবেতর’ জীবন যাপন করছেন। এসব প্রতিষ্ঠানে পাঁচ হাজার একশ’র মতো শিক্ষক এমপিওভুক্তি থেকে বঞ্চিত আছেন।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) জনবলকাঠামো অনুযায়ী অনার্স-মাস্টার্স স্তরে শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ রাখা হয়নি। অথচ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবিধানে এই সুযোগ রয়েছে। এই ‘সাংঘর্ষিক’ বিধিবিধানের কারণে অনার্স-মাস্টার্স কোর্সের শিক্ষকরা এমপিও থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।

১৯৯২ সালে দেশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়। এর পর ১৯৯৩-৯৪ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলেজ পর্যায়ে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স চালু হয়। ১৯৮২ সালে প্রণীত জনবল কাঠামো অনুযায়ী ইন্টারমিডিয়েট পাঠদানকারী একজন এবং ডিগ্রি পাস কোর্সের প্রতি বিষয়ের জন্য একজন শিক্ষক (মোট ২ জন) এমপিওভুক্ত হয়।

শিক্ষকদের জনবলকাঠা মতো রাখা হয়নি। এর ফলে ৩২ বছরেও এমপিও সুবিধা পাচ্ছেন না। যদিও অনার্স-মাস্টার্স সমপর্যায়ের মাদ্রাসা পর্যায়ের ফাজিল (স্নাতক বা ডিগ্রি সমমান) এবং কামিল (স্নাতকোত্তর বা মাস্টার্স) পাঠদানকারী শিক্ষকদের এমপিও সুবিধা দেয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে প্রবীণ শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ মাজহারুল হান্নান বলেন, ‘একই প্রতিষ্ঠানের উচ্চ মাধ্যমিক এবং ডিগ্রি পাস কোর্সে পাঠদানকারী শিক্ষকরা সরকার থেকে পুরো বেতন-ভাতা (এমপিও) পাচ্ছেন। আর শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তরে পাঠদানকারী শিক্ষকরা বেতন পাবেন না এটি হতে পারে না। এটি সামাজিক অনাচার-অবিচার।’ তিনি অবিলম্বে সরকারের ‘স্টাপিং পেটার্ন’ পরিবর্তন করে অনার্স-মাস্টার্সের শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির দাবি করেছেন।

সাংঘর্ষিক বিধিমালা

শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে এনইউ’র বিধিমালা অনুযায়ী বেসরকারি কলেজে অনার্স কোর্স খুলতে প্রতিটি বিভাগে সাত জন শিক্ষক এবং মাস্টার্স কোর্সে অতিরিক্ত আরও পাঁচ জন শিক্ষক, অর্থাৎ মোট ১২ জন শিক্ষকের প্রয়োজন হয়।

অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় অনার্স কলেজে প্রতি বিষয়ে শূন্য পদে মাত্র তিন জন শিক্ষক নিয়োগের বিধান আছে। অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগের স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই।

এনইউ’র বিধিমালা অনুযায়ী, চাকরিতে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এক জন সহকারী অধ্যাপক উক্ত অধ্যক্ষ/উপাধ্যক্ষ পদে আবেদন করতে পারবেন।

অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নীতিমালা অনুযায়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষেত্রে এমপিওভুক্ত হিসেবে তিন বছরের অধ্যক্ষ/উপাধ্যক্ষ পদের অভিজ্ঞতা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং উপাধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষেত্রে এমপিওভুক্ত হিসেবে উচ্চমাধ্যমিক কলেজের অধ্যক্ষ/ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ/এমপিওতে তিন বছরের সহকারী অধ্যাপক পদে এবং মোট ১২ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকার বিধান রয়েছে। এই ধরনের সাংঘর্ষিক বিধিবিধানের কারণে নিয়োগ ‘জটিলতা’র নিরসন ঘটছে না।

এনইউ’র নীতিমালা অনুযায়ী, এই বিশ^বিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজে শিক্ষক নিয়োগে একটি নির্বাচনী বোর্ড গঠন করে গভর্নিং বডির মাধ্যমে সরাসরি শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার বিধান রয়েছে।

অথচ ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবরের পর থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে গভর্নিং বডির ক্ষমতা রহিত করা হয়েছে। একই বছর এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে এনটিআরসিএর মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের বিধান বাধ্যতামূলক করা হয়।

কিন্তু অনার্স-মাস্টার্স কলেজে অতিরিক্ত শিক্ষক কীভাবে নিয়োগ দেওয়া হবে সেই বিষয়ে কোনকিছু বলা নেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিধিমালায়।

দুইজন শিক্ষক নেতা জানিয়েছেন, ডিগ্রি পাস কোর্স চালুর অনুমতি নিতে গিয়ে তিনজন করে শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে বেসরকারি কলেজগুলো। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের বিধিমালা অনুযায়ী দুই জন শিক্ষক এমপিওভুক্ত হয়েছেন। তৃতীয় জন (তৃতীয় শিক্ষক নামে পরিচিত) দীর্ঘদিন ধরে এমপিও পাচ্ছিলেন না। এক পর্যায়ে উচ্চ আদালতের রায়ে তৃতীয় শিক্ষকরা এমপিও পান।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় আসন বেড়েছে ৫০টি, থাকবে ভ্রাম্যমাণ পানির ট্যাংক ও চিকিৎসক

পরীক্ষার আগেই হবু শিক্ষকদের হাতে পৌঁছে যায় উত্তরপত্র:ডিবি

ছবি

৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা শুরু

তীব্র গরমেও বাড়ছে না ছুটি, রবিবার খুলছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

৫০ শতাংশ লিখিত ও ৫০ শতাংশ কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়ন

নতুন শিক্ষাক্রমে সপ্তম শ্রেণীতে শরীফার গল্প থাকছে

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন ও দ্রুত সেবা প্রদানে নির্দেশ

তাপদাহের কারণে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ক্লাস , মিডটার্ম পরীক্ষা স্থগিত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্ব-শরীরেই চলবে ক্লাস-পরীক্ষা

ছবি

গরমের কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সকল কলেজের ক্লাস বন্ধ

ছবি

তৃতীয় দফায় তিনদিন শ্রেণি কার্যক্রম বর্জনে ঘোষণা কুবি শিক্ষক সমিতির

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স ১ম বর্ষ ভর্তির আবেদনের ২য় মেধা তালিকা প্রকাশ

ছবি

বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালককে অব্যাহতি

ছবি

এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু মঙ্গলবার, চলবে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত

ছবি

স্বল্প আয়ের মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী ও ঈদ উপহার বিতরন

ছবি

রাবি-চবির অধিভুক্ত হল ৯ সরকারি কলেজ

ছবি

১১ মের মধ্যেই এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ

নতুন শিক্ষাক্রম : আগের ধাচেই শিক্ষক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি এনটিআরসিএ’র

এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে টেস্ট পরীক্ষার নামে ফি আদায় করলে ব্যবস্থা

ছবি

এইচএসসি পরীক্ষা শুরু ৩০ জুন, রুটিন প্রকাশ

ছবি

বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি চলবে : হাইকোর্ট

ছবি

বুয়েটে ছাত্ররাজনীতির দাবিতে দেশব্যাপী মানববন্ধন করবে ছাত্রলীগ

ছবি

তিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে তিন ক্যাম্পাসে চলছে পাল্টাপাল্টি মহড়া

ছবি

৩০টি বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব স্থগিত:এনবিআর

ছবি

শিক্ষায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উভয় স্তরে পারিবারিক ব্যয় বেড়েছে

শিক্ষায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উভয় স্তরে পারিবারিক ব্যয় বেড়েছে

কক্সবাজারে ওয়্যারলেস অডিও ডিভাইসসহ দুইজন আটক

ছবি

মাধ্যমিকে শিক্ষার্থী কমেছে, বেড়েছে মাদ্রাসায়

ছবি

দুর্নীতির অভিযোগে বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা বরখাস্ত

ঢাবির ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২৬ দিনের ছুটি শুরু

ছবি

শনিবার স্কুল খোলা রাখার ইঙ্গিত: শিক্ষামন্ত্রী নওফেল

উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত সমাপনী পরীক্ষা পাঁচ ঘণ্টা করার প্রস্তাব এনসিটিবির

ছবি

ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক রাশেদা ইরশাদ

ছবি

এইচএসসি পরীক্ষা কার কোন কেন্দ্রে, তালিকা প্রকাশ

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের শতাধিক ‘ট্রেড কোর্সের’ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই সংস্থার দ্বন্দ্ব

tab

শিক্ষা

দ্বৈত শাসনের কবলে বেসরকারি কলেজে নিয়োগ প্রক্রিয়া

অনার্স-মাস্টার্স কোর্সের শিক্ষকরা এমপিও বঞ্চিত

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

শনিবার, ০৯ মার্চ ২০২৪

দ্বৈত শাসনের কবলে ডিগ্রি ও অনার্স-মাস্টার্স পাঠদানকারি বেসরকারি কলেজগুলো। এসব কলেজ জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের (এনইউ) বিধিমালার আলোকে পরিচালিত হচ্ছে। তবে জনবল নিয়োগ, পরিচালনা ও এমপিওভুক্তির জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবলকাঠামো এবং এমপিও নীতিমালা’ বাধ্যতামূলক অনুসরণ করতে হয়।

এনইউ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিধিমালার মধ্যে সমন্বয় না থাকায় এমপিও (মান্থলি পে অর্ডার) পাচ্ছেন না অনেক শিক্ষক। আবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্প্রতি একটি পরিপত্র জারি করে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজে ‘অধ্যক্ষ’ নিয়োগে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) প্রতিনিধি অন্তুর্ভুক্ত করেছে। অথচ একই স্তরের মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রমে ডিসি প্রতিনিধি রাখা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।

এমপিও দিতে না পারায় জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২০১৯ সাল থেকে অনার্স-মাস্টার্স কোর্সে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ রেখেছে বলে শিক্ষক নেতারা জানিয়েছেন।

২০১৭ সালে রংপুরের শ্যামপুর ডিগ্রি কলেজে অনার্স কোর্সের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান শামীম হুদা। এই সাত বছরেও তিনি এমপিওভুক্তি হতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘আমরা এমপিওভুক্তির আশায় শিক্ষকতায় এসেছিলাম। এখন হতাশ...মানবেতর জীবন-যাপন করছি।’

শামীম হুদা জানান, দীর্ঘ ৩২ বছরেও এই স্তরের শিক্ষকদের জন্য সেভাবে জনবলকাঠামো তৈরি হয়নি। এর ফলে শুধু অনার্স ও মাস্টার্স কোর্সের শিক্ষক-কর্মচারীরা এমপিও সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

এ বিষয়ে ‘বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদের’ সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান সংবাদকে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিভিন্ন সময়ে নানা পরিপত্র, সার্কুলার ও নীতিমালা জারি করে। প্রায় দেখা যায়, এগুলির সঙ্গে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের নীতিমালার সমন্বয় থাকে না। এর ফলে শিক্ষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে জানান প্রবীণ ওই শিক্ষক নেতা।

তিনি গত ১১ জানুয়ারি অধ্যক্ষ নিয়োগের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সার্কুলারের উদাহরণ টেনে বলেন, সেখানে বলা হয়েছে-বেসরকারি কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগের কমিটিতে ডিসি প্রতিনিধি থাকবেন। পাঁচ সদস্যের এই নিয়োগ কমিটিতে শিক্ষা বোর্ড ও মাউশির একজন করে প্রতিনিধিও রাখা হয়েছে। নিয়োগ পরীক্ষায় প্রতি পদের বিপরীতে কমপক্ষে তিনজন প্রার্থী থাকতে হবে।

শিক্ষক সংগঠনগুলো জানিয়েছে, বর্তমানে দেশের অনার্স-মাস্টার্স কোর্সের ৪০১টি বেসরকারি কলেজের শিক্ষক এমপিও অর্থাৎ বেতনভাতা না পেয়ে ‘মানবেতর’ জীবন যাপন করছেন। এসব প্রতিষ্ঠানে পাঁচ হাজার একশ’র মতো শিক্ষক এমপিওভুক্তি থেকে বঞ্চিত আছেন।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) জনবলকাঠামো অনুযায়ী অনার্স-মাস্টার্স স্তরে শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ রাখা হয়নি। অথচ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবিধানে এই সুযোগ রয়েছে। এই ‘সাংঘর্ষিক’ বিধিবিধানের কারণে অনার্স-মাস্টার্স কোর্সের শিক্ষকরা এমপিও থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।

১৯৯২ সালে দেশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়। এর পর ১৯৯৩-৯৪ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলেজ পর্যায়ে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স চালু হয়। ১৯৮২ সালে প্রণীত জনবল কাঠামো অনুযায়ী ইন্টারমিডিয়েট পাঠদানকারী একজন এবং ডিগ্রি পাস কোর্সের প্রতি বিষয়ের জন্য একজন শিক্ষক (মোট ২ জন) এমপিওভুক্ত হয়।

শিক্ষকদের জনবলকাঠা মতো রাখা হয়নি। এর ফলে ৩২ বছরেও এমপিও সুবিধা পাচ্ছেন না। যদিও অনার্স-মাস্টার্স সমপর্যায়ের মাদ্রাসা পর্যায়ের ফাজিল (স্নাতক বা ডিগ্রি সমমান) এবং কামিল (স্নাতকোত্তর বা মাস্টার্স) পাঠদানকারী শিক্ষকদের এমপিও সুবিধা দেয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে প্রবীণ শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ মাজহারুল হান্নান বলেন, ‘একই প্রতিষ্ঠানের উচ্চ মাধ্যমিক এবং ডিগ্রি পাস কোর্সে পাঠদানকারী শিক্ষকরা সরকার থেকে পুরো বেতন-ভাতা (এমপিও) পাচ্ছেন। আর শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তরে পাঠদানকারী শিক্ষকরা বেতন পাবেন না এটি হতে পারে না। এটি সামাজিক অনাচার-অবিচার।’ তিনি অবিলম্বে সরকারের ‘স্টাপিং পেটার্ন’ পরিবর্তন করে অনার্স-মাস্টার্সের শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির দাবি করেছেন।

সাংঘর্ষিক বিধিমালা

শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে এনইউ’র বিধিমালা অনুযায়ী বেসরকারি কলেজে অনার্স কোর্স খুলতে প্রতিটি বিভাগে সাত জন শিক্ষক এবং মাস্টার্স কোর্সে অতিরিক্ত আরও পাঁচ জন শিক্ষক, অর্থাৎ মোট ১২ জন শিক্ষকের প্রয়োজন হয়।

অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় অনার্স কলেজে প্রতি বিষয়ে শূন্য পদে মাত্র তিন জন শিক্ষক নিয়োগের বিধান আছে। অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগের স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই।

এনইউ’র বিধিমালা অনুযায়ী, চাকরিতে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এক জন সহকারী অধ্যাপক উক্ত অধ্যক্ষ/উপাধ্যক্ষ পদে আবেদন করতে পারবেন।

অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নীতিমালা অনুযায়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষেত্রে এমপিওভুক্ত হিসেবে তিন বছরের অধ্যক্ষ/উপাধ্যক্ষ পদের অভিজ্ঞতা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং উপাধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষেত্রে এমপিওভুক্ত হিসেবে উচ্চমাধ্যমিক কলেজের অধ্যক্ষ/ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ/এমপিওতে তিন বছরের সহকারী অধ্যাপক পদে এবং মোট ১২ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকার বিধান রয়েছে। এই ধরনের সাংঘর্ষিক বিধিবিধানের কারণে নিয়োগ ‘জটিলতা’র নিরসন ঘটছে না।

এনইউ’র নীতিমালা অনুযায়ী, এই বিশ^বিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজে শিক্ষক নিয়োগে একটি নির্বাচনী বোর্ড গঠন করে গভর্নিং বডির মাধ্যমে সরাসরি শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার বিধান রয়েছে।

অথচ ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবরের পর থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে গভর্নিং বডির ক্ষমতা রহিত করা হয়েছে। একই বছর এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে এনটিআরসিএর মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের বিধান বাধ্যতামূলক করা হয়।

কিন্তু অনার্স-মাস্টার্স কলেজে অতিরিক্ত শিক্ষক কীভাবে নিয়োগ দেওয়া হবে সেই বিষয়ে কোনকিছু বলা নেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিধিমালায়।

দুইজন শিক্ষক নেতা জানিয়েছেন, ডিগ্রি পাস কোর্স চালুর অনুমতি নিতে গিয়ে তিনজন করে শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে বেসরকারি কলেজগুলো। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের বিধিমালা অনুযায়ী দুই জন শিক্ষক এমপিওভুক্ত হয়েছেন। তৃতীয় জন (তৃতীয় শিক্ষক নামে পরিচিত) দীর্ঘদিন ধরে এমপিও পাচ্ছিলেন না। এক পর্যায়ে উচ্চ আদালতের রায়ে তৃতীয় শিক্ষকরা এমপিও পান।

back to top