গোটা প্রক্রিয়ায় ইসরায়েল বা হামাসের প্রতিনিধিরা একটি বারের জন্যও মুখোমুখি হননি। সর্বশেষ যখন তারা সবচেয়ে কাছাকাছি এসেছিলেন, তখনও এক ফ্লোর ব্যবধান ছিল তাদের মধ্যে।
কাতার, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্ততাকারীরা সমঝোতার চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন বেশ কয়েকমাস ধরেই। কখনো কখনো আশাই ছেড়ে দিতে হয়েছিল তাদের।
শেষ মুহূর্তে একটি ভবনে একত্র হয়ে কাজ করছিলেন তারা। দ্রুত গতিতে চুক্তিটি দাঁড় করানোর উন্মত্ত্ব প্রয়াস ছিল তাদের মধ্যে।
কিন্তু একদম শেষ মুহূর্তে এসেও মনে হয়েছিল সব প্রচেষ্টা ভেস্তে যাবে। এমনকি কাতারের প্রধানমন্ত্রী যখন চুক্তির বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে যাচ্ছিলেন তখনও সেই অনিশ্চয়তা ছিল বলে এই প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট একজন জানান বিবিসিকে।
তিনি বলেন, ‘আক্ষরিক অর্থেই, সংবাদ সম্মেলন হওয়ার দশ মিনিট আগেও এসব চলছিল। একদম শেষ মুহূর্তে চূড়ান্ত হয়েছে বিষয়টি।’
শেষের সেই পরিস্থিতিটি কেমন ছিল তা জানতে এই প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে বিবিসি।
তাদের কথা থেকে বিবিসি যা জানতে পারে তা হচ্ছে, চুক্তিটি হঠাৎ করে হয়নি। এর কাঠামোটি ১৫ জানুয়ারিতে স্বাক্ষরিত হয় বটে, কিন্তু এর রূপরেখা প্রথম পাওয়া গিয়েছিল গত বছর মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেনের হোয়াইট হাউসে দেয়া একটি বক্তৃতায়।
এতে তিনটি ধাপের কথা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রথম ধাপে যুদ্ধবিরতি। তারপরের ধাপে ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলি জিম্মিদের হস্তান্তর। এবং শেষে, ধারাবাহিকভাবে গাজা থেকে ইসরায়েলি সৈন্য প্রত্যাহার।
তবে এ বিষয়ের চুক্তির বিষয়টি গতি পায় গত ডিসেম্বরে।
দুই মাস আগে গাজায় হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার ইসরায়েলের হামলায় নিহত হওয়ার পর হামাস ক্রমেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এর মধ্যেই হিজবুলাহ দুর্বল হয়ে পড়ে লেবাননে। এদিকে সিরিয়ায় বাশার আল আসাদেরও পতন হয়। এসব পরিস্থিতিতে হামাস একটা সময় উপলব্ধি করে তারা একা হয়ে পড়েছে। এ কারণেই তারা নমনীয় হয় বলে জানান চুক্তি সম্পাদনের প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট এক মার্কিন কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেছেন, হামাসের কোনো ইচ্ছা প্রথমে দেখা যায়নি। পরে সিনওয়ারের মৃত্য এবং এই অঞ্চলে তাদের মিত্রদের ওপর ইসরায়েলের হামলার পরিপ্রেক্ষিতেই তারা চুক্তির বিষয়ে সম্মত হয়।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয় দলের নেতাদের কারণেই প্রক্রিয়াটি গতিপ্রাপ্ত হয় বলে মনে করেন তিনি।
১২ ডিসেম্বর ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে দেখা করতে যায় বাইডেনের প্রতিনিধি দল। তাদের মধ্যে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান, মধ্যপ্রাচ্যের দূত ব্রেট ম্যাকগার্ক এবং সিআইএ পরিচালক বিল বার্নস ছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের আরেক কর্মকর্তা বিবিসিকে জানান, ওই বৈঠকটি ছিল কয়েক ঘণ্টার। সেখানে এই অঞ্চলের নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ এবং লেবাননকে এই প্রক্রিয়ায় কীভাবে কাজে লাগানো যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল।
আরেকটি বড় প্রভাবক ছিলেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের জয়ের পর বিবিসির সঙ্গে হামাসের এক নেতার কথা হয়েছিল। ট্রাম্পের জয়ের কারণে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আশাবাদ প্রকাশ করেছিলেন তিনি।
২০২৩ সালের নভেম্বর থেকেই মধ্যস্থতাকারীদের কাছে দূত মারফত বারবারেই ট্রাম্প বার্তা পাঠিয়েছেন তিনি শপথ গ্রহণের আগেই চুক্তি চান।
ট্রাম্প নানান হুমকি-ধামকিও দিচ্ছিলেন। কিন্তু তা যুদ্ধবিরতির বিষয়ে তাদের আরও আশাবাদী করেছেন।
হামাসের ওই কর্মকর্তা গোটা প্রক্রিয়ায় শুরু থেকেই ছিলেন, তিনি বলেন, বাইডেন প্রশাসনের সময় চাপ ছিল শুধু হামাসের ওপর। ট্রাম্পের সময় নেতানিয়াহুর ওপরও চাপ থাকবে। কেননা নেতানিয়াহু এই চুক্তিকে ব্যহত করতে চাইবে। ট্রাম্প সেটা ভালো করেই জানে।
রোববার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫
গোটা প্রক্রিয়ায় ইসরায়েল বা হামাসের প্রতিনিধিরা একটি বারের জন্যও মুখোমুখি হননি। সর্বশেষ যখন তারা সবচেয়ে কাছাকাছি এসেছিলেন, তখনও এক ফ্লোর ব্যবধান ছিল তাদের মধ্যে।
কাতার, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্ততাকারীরা সমঝোতার চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন বেশ কয়েকমাস ধরেই। কখনো কখনো আশাই ছেড়ে দিতে হয়েছিল তাদের।
শেষ মুহূর্তে একটি ভবনে একত্র হয়ে কাজ করছিলেন তারা। দ্রুত গতিতে চুক্তিটি দাঁড় করানোর উন্মত্ত্ব প্রয়াস ছিল তাদের মধ্যে।
কিন্তু একদম শেষ মুহূর্তে এসেও মনে হয়েছিল সব প্রচেষ্টা ভেস্তে যাবে। এমনকি কাতারের প্রধানমন্ত্রী যখন চুক্তির বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে যাচ্ছিলেন তখনও সেই অনিশ্চয়তা ছিল বলে এই প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট একজন জানান বিবিসিকে।
তিনি বলেন, ‘আক্ষরিক অর্থেই, সংবাদ সম্মেলন হওয়ার দশ মিনিট আগেও এসব চলছিল। একদম শেষ মুহূর্তে চূড়ান্ত হয়েছে বিষয়টি।’
শেষের সেই পরিস্থিতিটি কেমন ছিল তা জানতে এই প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে বিবিসি।
তাদের কথা থেকে বিবিসি যা জানতে পারে তা হচ্ছে, চুক্তিটি হঠাৎ করে হয়নি। এর কাঠামোটি ১৫ জানুয়ারিতে স্বাক্ষরিত হয় বটে, কিন্তু এর রূপরেখা প্রথম পাওয়া গিয়েছিল গত বছর মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেনের হোয়াইট হাউসে দেয়া একটি বক্তৃতায়।
এতে তিনটি ধাপের কথা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রথম ধাপে যুদ্ধবিরতি। তারপরের ধাপে ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলি জিম্মিদের হস্তান্তর। এবং শেষে, ধারাবাহিকভাবে গাজা থেকে ইসরায়েলি সৈন্য প্রত্যাহার।
তবে এ বিষয়ের চুক্তির বিষয়টি গতি পায় গত ডিসেম্বরে।
দুই মাস আগে গাজায় হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার ইসরায়েলের হামলায় নিহত হওয়ার পর হামাস ক্রমেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এর মধ্যেই হিজবুলাহ দুর্বল হয়ে পড়ে লেবাননে। এদিকে সিরিয়ায় বাশার আল আসাদেরও পতন হয়। এসব পরিস্থিতিতে হামাস একটা সময় উপলব্ধি করে তারা একা হয়ে পড়েছে। এ কারণেই তারা নমনীয় হয় বলে জানান চুক্তি সম্পাদনের প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট এক মার্কিন কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেছেন, হামাসের কোনো ইচ্ছা প্রথমে দেখা যায়নি। পরে সিনওয়ারের মৃত্য এবং এই অঞ্চলে তাদের মিত্রদের ওপর ইসরায়েলের হামলার পরিপ্রেক্ষিতেই তারা চুক্তির বিষয়ে সম্মত হয়।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয় দলের নেতাদের কারণেই প্রক্রিয়াটি গতিপ্রাপ্ত হয় বলে মনে করেন তিনি।
১২ ডিসেম্বর ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে দেখা করতে যায় বাইডেনের প্রতিনিধি দল। তাদের মধ্যে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান, মধ্যপ্রাচ্যের দূত ব্রেট ম্যাকগার্ক এবং সিআইএ পরিচালক বিল বার্নস ছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের আরেক কর্মকর্তা বিবিসিকে জানান, ওই বৈঠকটি ছিল কয়েক ঘণ্টার। সেখানে এই অঞ্চলের নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ এবং লেবাননকে এই প্রক্রিয়ায় কীভাবে কাজে লাগানো যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল।
আরেকটি বড় প্রভাবক ছিলেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের জয়ের পর বিবিসির সঙ্গে হামাসের এক নেতার কথা হয়েছিল। ট্রাম্পের জয়ের কারণে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আশাবাদ প্রকাশ করেছিলেন তিনি।
২০২৩ সালের নভেম্বর থেকেই মধ্যস্থতাকারীদের কাছে দূত মারফত বারবারেই ট্রাম্প বার্তা পাঠিয়েছেন তিনি শপথ গ্রহণের আগেই চুক্তি চান।
ট্রাম্প নানান হুমকি-ধামকিও দিচ্ছিলেন। কিন্তু তা যুদ্ধবিরতির বিষয়ে তাদের আরও আশাবাদী করেছেন।
হামাসের ওই কর্মকর্তা গোটা প্রক্রিয়ায় শুরু থেকেই ছিলেন, তিনি বলেন, বাইডেন প্রশাসনের সময় চাপ ছিল শুধু হামাসের ওপর। ট্রাম্পের সময় নেতানিয়াহুর ওপরও চাপ থাকবে। কেননা নেতানিয়াহু এই চুক্তিকে ব্যহত করতে চাইবে। ট্রাম্প সেটা ভালো করেই জানে।