alt

আন্তর্জাতিক

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা

যেভাবে বদলে দিতে পারে প্রতিবেশী সুইং স্টেটগুলোর

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : রোববার, ১৮ মে ২০২৫

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সংঘাত দক্ষিণ এশিয়ার বাকি দেশগুলোর ওপর শক্ত প্রভাব ফেলছে -এএফপি

আবারও কাশ্মীর ইস্যুতে সংঘাতে জড়িয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। পাল্টাপাল্টি হুমকি শেষ পর্যন্ত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অন্যতম ভয়ংকর আকাশযুদ্ধে গড়ায়। তবে চার দিনের মাথায় যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে উত্তেজনা খানিকটা প্রশমিত হয়েছে। দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের সরাসরি লড়াইয়ের বাইরে সুপ্ত অথচ সমান গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি পরিবর্তনের দিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরি। এই পরিবর্তনের ক্ষেত্র ভারত-পাকিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলো।

এই দেশগুলো হলো বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান এবং মালদ্বীপ। এই দেশগুলোর কোনোটির কাছেই পারমাণবিক অস্ত্র নেই। দেশগুলো এই সংকটে কেবল নীরব দর্শক নয়, বরং তারা কৌশলগত দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের আঞ্চলিক ধাক্কার প্রতিক্রিয়ায় দেশগুলো এখন নিজেদের পররাষ্ট্রনীতি নতুন করে সাজাতে পারে। এই দেশগুলোরই কিতাবি নাম দেওয়া যেতে পারে ‘সুইং স্টেট।’ ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী কোনো সংঘাতময় পরিস্থিতির আগেই এসব দেশের দিকে অনেক বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত।

ভারত-পাকিস্তান সংকটকে দীর্ঘদিন ধরে কেবল দ্বিপক্ষীয় ইস্যু হিসেবেই দেখা হয়েছে। ঐতিহাসিক ক্ষোভ আর পারমাণবিক প্রতিরোধের (ডিটারেন্ট) মধ্যে এটিকে সীমাবদ্ধ বলে বিবেচনা করা হয়েছে। তবে, প্রতিটি সংকটই—হোক তা ২০১৯ সালের পুলওয়ামা বা কাশ্মীর নিয়ে বর্তমান উত্তেজনা—কিছু না কিছু ধারাবাহিক প্রভাব তৈরি করে। এসব প্রভাব অঞ্চলের ছোট, পারমাণবিক শক্তিধর নয় এমন দেশগুলোর কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত অবস্থানকে পরীক্ষার মুখে ফেলে দেয়। বিশেষ করে এবার ঝুঁকি বেশি। কারণ, এই ‘সুইং স্টেটগুলোকে’ আরও বেশি হিসাব করে এগোতে হচ্ছে। কারণে এই অঞ্চলে চীন এখন ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণের একটি কেন্দ্রীয় অংশ উঠেছে।

বাংলাদেশ: ভারত-পাকিস্তানের সংঘাতের আলোকে এই অঞ্চলে সবচেয়ে নাজুক অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। ২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ভারতপন্থী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। এরপর থেকে দেশটি অভ্যন্তরীণ ভঙ্গুরতা ও বৈদেশিক নীতি পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।

নাগরিক সমাজ, জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী এবং ইসলামপন্থী শক্তিগুলো ভারতের প্রতি সন্দিহান হয়ে উঠছে। তারা মনে করে, ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে। বিশেষ করে, শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া এবং তাঁর দল আওয়ামী লীগকে সমর্থন জুগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকা নিয়ে তাদের এই ধারণা তৈরি হয়েছে।

শ্রীলঙ্কা: শ্রীলঙ্কায় কাশ্মীর সংকট অভ্যন্তরীণ ভঙ্গুরতা ও আঞ্চলিক নীতি পরিবর্তনের দ্বৈত চাপের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে। এখনো অর্থনৈতিক সংকটের ধাক্কা সামলে ওঠার চেষ্টার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশটি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে চুক্তির আওতায় প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। ফলে কলম্বোর অন্য কোনো দেশের সঙ্গে প্রকাশ্য মৈত্রীতে যুক্ত হওয়ার সুযোগ সীমিত। তবুও সংকটের মুহূর্তে ভারতের অনমনীয়তা—যেমন নিরাপত্তা অংশীদারত্ব জোরদার করা এবং সন্ত্রাসবাদবিরোধী ন্যারেটিভ ব্যবহার করা শ্রীলঙ্কার ওপর ভারতের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের চাপ তৈরি করে।

নেপাল: নেপাল দীর্ঘদিন ধরে ভারত ও চীনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করেছে। বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের সঙ্গে মোটর ভেহিক্যালস এগ্রিমেন্টের মতো উপ-আঞ্চলিক কাঠামো এবং চীনের সঙ্গে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের রেল কূটনীতি ব্যবহার করে নেপাল তার নির্ভরতায় বৈচিত্র্য এনেছে। তবুও সংকটের সময় ভারতের ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা সংবেদনশীলতা এই ভারসাম্য বজায় রাখাকে আরও কঠিন করে তোলে।

ভুটান: ভুটান ভারতের সঙ্গেই থাকবে বলে অনুমান করা যায়। দুই দেশের ঐতিহাসিক, অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তা সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। দেশ দুটি ১৯৪৯ সালে মৈত্রী চুক্তি করে। তবুও, পশ্চিম ফ্রন্টে ভারতের সামরিক মনোযোগ কেন্দ্রীভূত হওয়ায় উত্তরে মনোযোগের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া, আগে থেকেই সেখানে চীনের আঞ্চলিক চাপ ক্রমশ বাড়ছে। বিশেষ করে, ২০১৭ সালে দোকলাম অচলাবস্থার পর এটি আরও প্রকট হয়েছে। দোকলামে ভারত ও চীনের সৈন্যরা টানা ৭৩ দিন মুখোমুখি অবস্থানে ছিল। বেইজিং ভারত, ভুটান ও চীনের সংযোগস্থলের কাছাকাছি কৌশলগত সংবেদনশীল এলাকায় একটি সড়ক নির্মাণ করেছিল। এই এলাকাটি চীন ও ভুটান উভয়ই দাবি করে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়।

মালদ্বীপ: মালদ্বীপে কাশ্মীর সংকট ইসলামপন্থী ও রক্ষণশীল রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ভারতবিরোধী প্রতিক্রিয়া আবারও উসকে দিতে পারে। বিশেষ করে, যখন নয়াদিল্লি ভারত মহাসাগরে উপস্থিতি ব্যাপক করার চেষ্টা করছে। মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু ২০২৩ সালের নির্বাচনে ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারের কল্যাণেই জয়ী হন। তিনি মালদ্বীপে ভারতীয় সামরিক উপস্থিতিকে সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন হিসেবে তুলে ধরেছিলেন। মুইজ্জু এরপর থেকে দেশটির পররাষ্ট্রনীতিকে নতুন দিকে চালিত করার পদক্ষেপ নিয়েছেন। এর মধ্যে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের অনুরোধও অন্তর্ভুক্ত ছিল।

ছবি

কিয়েভে ২৭৩ ড্রোন হামলা, সংকটের জড় সমূলে উৎপাটনের ঘোষণা পুতিনের

সন্ত্রাসীদের পরিণতি হবে ভারতের মতো: পাকিস্তান

ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর শেষ হতেই গাজা-ইয়েমেনে ইসরায়েলি হামলা জোরদার

তাইওয়ান ঘিরে চীনের সামরিক মহড়া বৃদ্ধি

কাশ্মিরে নিরাপত্তায় এবার সাবেক সেনা সদস্যদের নামাচ্ছে ভারত

ছবি

আশ্রয়শিবিরে বোমা হামলায় নারী-শিশুসহ নিহত ২৪, হামাস বলছে ‘নৃশংস অপরাধ’

ছবি

‘গাজাবাসীদের লিবিয়ায় স্থানান্তরের পরিকল্পনা সত্য নয়’ — যুক্তরাষ্ট্র

ছবি

নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিন ব্রিজে মেক্সিকোর প্রশিক্ষণ জাহাজের ধাক্কা, প্রাণহানি, তদন্তে নৌবাহিনী

ছবি

পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ভারতের জনপ্রিয় নারী ব্লগার গ্রেপ্তার

গাজার ১০ লাখ বাসিন্দাকে লিবিয়ায় স্থানান্তরের পরিকল্পনা ট্রাম্প প্রশাসনের

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে আন্তর্জাতিক সম্মেলন জুনে

ছবি

পেট্রো ডলারের বন্যায় শেষ হলো ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর

বৃহত্তম বন্দীবিনিময় সমঝোতায় পৌঁছাল রাশিয়া-ইউক্রেন

নয়াদিল্লিকে সংলাপের প্রস্তাব দিলেন শেহবাজ

ছবি

পাকিস্তানে পানিপ্রবাহ: ভারতের কী পরিকল্পনা

ছবি

উত্তর গাজায় ইসরায়েলের ব্যাপক হামলা, ঢুকছে ট্যাংক

ছবি

ইউক্রেনের দুটি গ্রাম দখলের দাবি রাশিয়ার, প্রত্যাখ্যান কিয়েভের

গাজা পরিস্থিতি নিয়ে নেতানিয়াহুকে কড়া বার্তা যুক্তরাষ্ট্রের

ছবি

ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে কার কত লাভ-ক্ষতি হলো

সম্পর্ক স্থাপনে সিরিয়ার সঙ্গে ইসরায়েলের গোপন আলোচনা

যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াল ভারত-পাকিস্তান

ছবি

ইসরায়েলি বর্বরতা, একদিনে ১৪৩ ফিলিস্তিনিকে হত্যা, নিহত ৫৩ হাজার ছাড়ালো

ছবি

রাতভর ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত শতাধিক

ছবি

ইন্দোনেশিয়ার পাপুয়া অঞ্চলে সেনা অভিযানে ১৮ ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ নিহত

ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তির দ্বারপ্রান্তে যুক্তরাষ্ট্র

ছবি

জেলেনস্কির আহ্বানে শান্তি আলোচনায় যাচ্ছেন না পুতিন

ছবি

শোপিয়ানে ‘সার্চ অ্যান্ড ডেস্ট্রয়’ অভিযানে তিন সন্ত্রাসী নিহত

ছবি

এক প্রজন্মের ওপর দুর্ভিক্ষের স্থায়ী প্রভাব পড়ার শঙ্কা

ছবি

সিরিয়ার ওপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণায় জনসাধারণের উল্লাস

বিশ্বের সবচেয়ে ‘গরিব প্রেসিডেন্ট’ হোসে মুজিকা আর নেই

ট্রাম্প ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা করেনি : ভারত

ছবি

যে কূটনৈতিক চালে পারমাণবিক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্ত থেকে সরে এলো ভারত ও পাকিস্তান

পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যেই চীনকে সতর্কবার্তা ভারতের

ছবি

যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি ‘ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা চুক্তি’ সই

ছবি

বিশ্বে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত হওয়া মানুষের সংখ্যায় নতুন রেকর্ড

লিবিয়ায় ভয়াবহ সংঘর্ষ, নাগরিকদের ঘরে থাকার নির্দেশ

tab

আন্তর্জাতিক

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা

যেভাবে বদলে দিতে পারে প্রতিবেশী সুইং স্টেটগুলোর

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সংঘাত দক্ষিণ এশিয়ার বাকি দেশগুলোর ওপর শক্ত প্রভাব ফেলছে -এএফপি

রোববার, ১৮ মে ২০২৫

আবারও কাশ্মীর ইস্যুতে সংঘাতে জড়িয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। পাল্টাপাল্টি হুমকি শেষ পর্যন্ত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অন্যতম ভয়ংকর আকাশযুদ্ধে গড়ায়। তবে চার দিনের মাথায় যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে উত্তেজনা খানিকটা প্রশমিত হয়েছে। দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের সরাসরি লড়াইয়ের বাইরে সুপ্ত অথচ সমান গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি পরিবর্তনের দিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরি। এই পরিবর্তনের ক্ষেত্র ভারত-পাকিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলো।

এই দেশগুলো হলো বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান এবং মালদ্বীপ। এই দেশগুলোর কোনোটির কাছেই পারমাণবিক অস্ত্র নেই। দেশগুলো এই সংকটে কেবল নীরব দর্শক নয়, বরং তারা কৌশলগত দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের আঞ্চলিক ধাক্কার প্রতিক্রিয়ায় দেশগুলো এখন নিজেদের পররাষ্ট্রনীতি নতুন করে সাজাতে পারে। এই দেশগুলোরই কিতাবি নাম দেওয়া যেতে পারে ‘সুইং স্টেট।’ ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী কোনো সংঘাতময় পরিস্থিতির আগেই এসব দেশের দিকে অনেক বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত।

ভারত-পাকিস্তান সংকটকে দীর্ঘদিন ধরে কেবল দ্বিপক্ষীয় ইস্যু হিসেবেই দেখা হয়েছে। ঐতিহাসিক ক্ষোভ আর পারমাণবিক প্রতিরোধের (ডিটারেন্ট) মধ্যে এটিকে সীমাবদ্ধ বলে বিবেচনা করা হয়েছে। তবে, প্রতিটি সংকটই—হোক তা ২০১৯ সালের পুলওয়ামা বা কাশ্মীর নিয়ে বর্তমান উত্তেজনা—কিছু না কিছু ধারাবাহিক প্রভাব তৈরি করে। এসব প্রভাব অঞ্চলের ছোট, পারমাণবিক শক্তিধর নয় এমন দেশগুলোর কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত অবস্থানকে পরীক্ষার মুখে ফেলে দেয়। বিশেষ করে এবার ঝুঁকি বেশি। কারণ, এই ‘সুইং স্টেটগুলোকে’ আরও বেশি হিসাব করে এগোতে হচ্ছে। কারণে এই অঞ্চলে চীন এখন ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণের একটি কেন্দ্রীয় অংশ উঠেছে।

বাংলাদেশ: ভারত-পাকিস্তানের সংঘাতের আলোকে এই অঞ্চলে সবচেয়ে নাজুক অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। ২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ভারতপন্থী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। এরপর থেকে দেশটি অভ্যন্তরীণ ভঙ্গুরতা ও বৈদেশিক নীতি পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।

নাগরিক সমাজ, জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী এবং ইসলামপন্থী শক্তিগুলো ভারতের প্রতি সন্দিহান হয়ে উঠছে। তারা মনে করে, ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে। বিশেষ করে, শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া এবং তাঁর দল আওয়ামী লীগকে সমর্থন জুগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকা নিয়ে তাদের এই ধারণা তৈরি হয়েছে।

শ্রীলঙ্কা: শ্রীলঙ্কায় কাশ্মীর সংকট অভ্যন্তরীণ ভঙ্গুরতা ও আঞ্চলিক নীতি পরিবর্তনের দ্বৈত চাপের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে। এখনো অর্থনৈতিক সংকটের ধাক্কা সামলে ওঠার চেষ্টার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশটি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে চুক্তির আওতায় প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। ফলে কলম্বোর অন্য কোনো দেশের সঙ্গে প্রকাশ্য মৈত্রীতে যুক্ত হওয়ার সুযোগ সীমিত। তবুও সংকটের মুহূর্তে ভারতের অনমনীয়তা—যেমন নিরাপত্তা অংশীদারত্ব জোরদার করা এবং সন্ত্রাসবাদবিরোধী ন্যারেটিভ ব্যবহার করা শ্রীলঙ্কার ওপর ভারতের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের চাপ তৈরি করে।

নেপাল: নেপাল দীর্ঘদিন ধরে ভারত ও চীনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করেছে। বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের সঙ্গে মোটর ভেহিক্যালস এগ্রিমেন্টের মতো উপ-আঞ্চলিক কাঠামো এবং চীনের সঙ্গে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের রেল কূটনীতি ব্যবহার করে নেপাল তার নির্ভরতায় বৈচিত্র্য এনেছে। তবুও সংকটের সময় ভারতের ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা সংবেদনশীলতা এই ভারসাম্য বজায় রাখাকে আরও কঠিন করে তোলে।

ভুটান: ভুটান ভারতের সঙ্গেই থাকবে বলে অনুমান করা যায়। দুই দেশের ঐতিহাসিক, অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তা সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। দেশ দুটি ১৯৪৯ সালে মৈত্রী চুক্তি করে। তবুও, পশ্চিম ফ্রন্টে ভারতের সামরিক মনোযোগ কেন্দ্রীভূত হওয়ায় উত্তরে মনোযোগের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া, আগে থেকেই সেখানে চীনের আঞ্চলিক চাপ ক্রমশ বাড়ছে। বিশেষ করে, ২০১৭ সালে দোকলাম অচলাবস্থার পর এটি আরও প্রকট হয়েছে। দোকলামে ভারত ও চীনের সৈন্যরা টানা ৭৩ দিন মুখোমুখি অবস্থানে ছিল। বেইজিং ভারত, ভুটান ও চীনের সংযোগস্থলের কাছাকাছি কৌশলগত সংবেদনশীল এলাকায় একটি সড়ক নির্মাণ করেছিল। এই এলাকাটি চীন ও ভুটান উভয়ই দাবি করে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়।

মালদ্বীপ: মালদ্বীপে কাশ্মীর সংকট ইসলামপন্থী ও রক্ষণশীল রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ভারতবিরোধী প্রতিক্রিয়া আবারও উসকে দিতে পারে। বিশেষ করে, যখন নয়াদিল্লি ভারত মহাসাগরে উপস্থিতি ব্যাপক করার চেষ্টা করছে। মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু ২০২৩ সালের নির্বাচনে ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারের কল্যাণেই জয়ী হন। তিনি মালদ্বীপে ভারতীয় সামরিক উপস্থিতিকে সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন হিসেবে তুলে ধরেছিলেন। মুইজ্জু এরপর থেকে দেশটির পররাষ্ট্রনীতিকে নতুন দিকে চালিত করার পদক্ষেপ নিয়েছেন। এর মধ্যে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের অনুরোধও অন্তর্ভুক্ত ছিল।

back to top