alt

আন্তর্জাতিক

কংগ্রেস ছাড়াই ইরানে হামলা: প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা কি যথাযথভাবে প্রয়োগ হয়েছে?

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহান্তে ইরানের কয়েকটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার নির্দেশ দেওয়ার পর, ডেমোক্র্যাটদের পাশাপাশি তার নিজের দলের অনেক আইনপ্রণেতাও এই সিদ্ধান্তের আইনি বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান থমাস ম্যাসি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন, এই হামলা সংবিধান অনুযায়ী বৈধ নয়।

আরেক রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান ওয়ারেন ডেভিডসন লিখেছেন, এটা সাংবিধানিকভাবে বৈধ—এমন কোনো যুক্তিই কল্পনা করাই কঠিন।

তবে, প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান স্পিকার মাইক জনসন ট্রাম্পের পক্ষ নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তিনি (ট্রাম্প) মনে করেছিলেন যে তৎক্ষণাত ঝুঁকি এতটাই বড় ছিল যে, কংগ্রেসের অনুমতির জন্য অপেক্ষা করার সময় ছিল না।

তিনি আরও বলেন, (যুক্তরাষ্ট্রের) পূর্ববর্তী অনেক প্রেসিডেন্ট একইভাবে কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়াই সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।

মার্কিন সংবিধানে সামরিক অভিযান সম্পর্কে যা বলা হয়েছে

মার্কিন সংবিধানের দুইটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ রয়েছে, যেখানে সামরিক অভিযান নিয়ে বলা হয়েছে - আর্টিকেল-১ এবং আর্টিকেল-২।

আর্টিকেল-১ অনুযায়ী, যুদ্ধ ঘোষণার ক্ষমতা কেবলমাত্র কংগ্রেসের হাতে।

তবে, আর্টিকেল-২ এ বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট হলেন সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক, ফলে তিনি বিশেষ পরিস্থতিতে প্রয়োজন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

হোয়াইট হাউসের সূত্র বলছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই দ্বিতীয় ধারার ভিত্তিতেই ইরানে হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।

দেশটির সংবিধান বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রেসিডেন্ট কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়াই সামরিক শক্তি ব্যবহার করতে পারেন।

যদিও সংবিধানে সেসব পরিস্থিতি স্পষ্টভাবে বলা হয়নি, তবে বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যায় বলা হয়, যদি বাস্তব বা সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কা থাকে, কিংবা জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করতে হয়, তবে প্রেসিডেন্ট এমন পদক্ষেপ নিতে পারেন।

ট্রাম্প প্রশাসন বলেছে, পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার ঠেকানোই ছিল ইরানে হামলার মূল কারণ, যা তারা জাতীয় স্বার্থ হিসেবে দেখেছে।

চারজন সংবিধান বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন যে, এ ধরনের পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের কিছুটা আইনি অধিকার ছিল হামলার নির্দেশ দেওয়ার।

ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভেনিয়ার অধ্যাপক ক্লেয়ার ফিনকেলস্টাইন বলেছেন, সংক্ষেপে বললে, হ্যাঁ — এ ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের হাতে সে ক্ষমতা ছিল।

তিনি আরও বলেন, অতীতে বহু প্রেসিডেন্ট কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়াই সীমিত সামরিক অভিযান চালিয়েছেন।

আরেকজন সংবিধান বিশেষজ্ঞ, জেসিকা লেভিনসন মনে করেন, প্রেসিডেন্টের সীমিত পরিসরে বিমান হামলার অনুমতি দেওয়ার ক্ষমতা আছে, যতক্ষণ না তা পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের রূপ নেয়।

তবে, বোডুইন কলেজের অধ্যাপক অ্যান্ড্রু রুডালেভিজ ভিন্ন মত পোষণ করেন। তার মতে, যেহেতু এখানে হঠাৎ কোনো আক্রমণ প্রতিহত করার বিষয় ছিল না, তাই কোনো দেশে হামলা চালানোর সেই আইনি অধিকার ট্রাম্পের ছিল না।

যদিও সংবিধানে কংগ্রেসকে যুদ্ধ ঘোষণার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, বাস্তবে এটি খুব কমই ব্যবহার হয়েছে।

শেষবার কংগ্রেস আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল ১৯৪২ সালে, যখন জাপান পার্ল হারবারে হামলা করেছিল।

এর আগে ১৮১২ সাল থেকে ১৯৪২ সালের মধ্যে কেবলমাত্র ১০ বার এই ক্ষমতা প্রয়োগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে প্রেসিডেন্টদের কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়াই সামরিক অভিযান চালানো অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।

প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সময়কালে হোয়াইট হাউসের আইন উপদেষ্টা জন বেলিঞ্জার বলেন, গত কয়েক দশকে কংগ্রেস বিভিন্ন উদ্দেশ্যে প্রেসিডেন্টদের সামরিক পদক্ষেপ কার্যত মেনে নিয়েছে।

রক্ষণশীল সংবিধান বিশেষজ্ঞ জনাথন টারলি বলেন, কংগ্রেস ও আদালত কার্যত যুদ্ধ ঘোষণার শর্তকে অকার্যকর করে ফেলেছে।

পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্টরা কী করেছিলেন?

প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা কংগ্রেসের অনুমতি না নিয়েই লিবিয়ায় বিমান হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

তার প্রশাসন এই পদক্ষেপকে সংবিধানের আর্টিকেল-২ এর আওতায় বৈধতা দেয়।

একই ধারা অনুসরণ করে তিনি ২০১১ সালে পাকিস্তানে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করার মিশন চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন।

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদকালেও তিনি কংগ্রেসকে না জানিয়ে ইরানের সামরিক কর্মকর্তা কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার নির্দেশ দেন।

এর আগে, ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ১৯৯০-এর দশকে বলকান অঞ্চলে কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া হামলা চালিয়েছিলেন।

একইভাবে, সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও ইয়েমেন ও সিরিয়ায় হুথি বিদ্রোহীদের উপর হামলা চালিয়েছেন কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়াই।

রক্ষণশীল সংবিধান বিশেষজ্ঞ জনাথন টারলি বলেন, আমাদের ইতিহাসে প্রেসিডেন্টরা বারবার এ ক্ষমতা ব্যবহার করেছেন। ইতিহাস ও পূর্বসুরিদের নেওয়া পদক্ষেপের উদাহরণ ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে।

হাউস স্পিকার মাইক জনসন আবার ট্রাম্পের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, উভয় দলীয় সাবেক প্রেসিডেন্টরা আর্টিকেল-২ অনুযায়ী সেনাপ্রধান হিসেবে একইভাবে পদক্ষেপ নিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, প্রেসিডেন্ট ওবামা লিবিয়ায় সরকার পতনের উদ্দেশ্যে আট মাস ধরে বিমান হামলা চালান। তখন কোনো ডেমোক্র্যাটকে আপত্তি করতে দেখিনি। অথচ এখন সবাই চেঁচামেচি করছে।

অন্য কী কী আইন রয়েছে?

ট্রাম্পের ইরানে হামলার সমালোচকরা আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনের কথা তুলে ধরেছেন, যার নাম ওয়ার পাওয়ার্স রেজোলিউশন।

এটি ১৯৭৩ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিপর্যয়ের পর পাশ হয়।

এ আইনের উদ্দেশ্য ছিল, কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া প্রেসিডেন্ট যেন সহজে যুদ্ধ চালাতে না পারেন, সেটি নিয়ন্ত্রণ করা।

এ আইন অনুযায়ী, জরুরি পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট সামরিক শক্তি ব্যবহার করতে পারেন ঠিকই, তবে তাতে বলা আছে, যতটা সম্ভব, যুদ্ধ বা সংঘর্ষে যুক্ত হওয়ার আগে প্রেসিডেন্টকে কংগ্রেসের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে।

জন বেলিঞ্জার বলেন, ট্রাম্প সম্ভবত এই শর্ত মানেননি।

এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ট্রাম্প প্রকৃত অর্থে কংগ্রেসের সঙ্গে কোনো অর্থবহ আলোচনা না করে কেবল কিছু রিপাবলিকান নেতাকে ঘটনাটি জানিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম জানায়, ডেমোক্র্যাট সিনেট সংখ্যালঘু নেতা চাক শুমারকে হামলার এক ঘণ্টা আগে ফোন করা হয়েছিল, তবে তাকে খুব বেশি তথ্য দেওয়া হয়নি।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট এক্স-এ লিখেছেন, প্রেসিডেন্ট প্রশাসন দলীয় সীমা অতিক্রম করে সৌজন্যমূলকভাবে কংগ্রেস নেতাদের ফোন করেছিল এবং হামলার আগে সিনেটর শুমারের সঙ্গেও কথা বলা হয়েছিল।

এই রেজোলিউশনে আরও বলা আছে, সামরিক অভিযান চালানোর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কংগ্রেসকে জানাতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বলেন, ইরানে হামলার পর বিমানগুলো নিরাপদে ফিরে আসার পর কংগ্রেসকে জানানো হয়েছে এবং ওয়ার পাওয়ার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী সব নিয়ম মেনে চলা হয়েছে।

ছবি

আমরা প্রতিদ্বন্দ্বী নই বরং অংশীদার, ভারত প্রসঙ্গে চীন

রুশ হামলায় কিয়েভ অঞ্চলে নিহত ১০

ছবি

ক্ষয়ক্ষতির মূল্যায়ন চলছে, পরমাণু কর্মসূচি শিগগিরই চালু করবে ইরান

ত্রাণ নিতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে প্রাণ গেল ২১ ফিলিস্তিনির

ইসরায়েলের ক্রমবর্ধমান আগ্রাসনই আঞ্চলিক সঙ্কটের জন্য দায়ী: কাতার

ছবি

নজিরবিহীন লগ্নে বিশ্ব, সেটাও ছাপিয়ে যেতে পারে

ছবি

মধ্যপ্রাচ্যে যেসব দেশে আছে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি

কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের হামলার পর যুদ্ধ থামানোর বার্তা ট্রাম্পের

ছবি

কাতার-ইরাকের মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার পর ভ্রমণ বিঘ্নিত, মাস্কাটে অবতরণ বিমানের

ছবি

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ঘোষণা ট্রাম্পের: কত ঘণ্টায় কীভাবে কার্যকর

ছবি

যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে: নিশ্চিত করছে ইসরায়েল ও ইরানের গণমাধ্যম

ছবি

যুদ্ধবিরতি এখন কার্যকর, কেউ লঙ্ঘন করবেন না: ট্রাম্প

ছবি

যুদ্ধবিরতির পথে ইরান-ইসরায়েল, নিশ্চিত নয় তেলআবিব

কাতার ও ইরাকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ইরানের, বিস্ফোরণের শব্দ

ছবি

১১ দিনের ইসরায়েলি হামলায় ইরানে প্রায় ৫০০ জন নিহত

ছবি

কাতারে নিরাপত্তা সতর্কতা জারি, আল উদেইদ ঘাঁটিতে নজরদারি বৃদ্ধি

সিরিয়ায় মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলা

ছবি

ইরানে হামলার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ

ইরানের ‘গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে’ ব্যাপক হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল

ছবি

ইরানের জনগণকে সাহায্য করতে প্রস্তুত রাশিয়া

ইসরায়েল যখন আমাদের ধরতে আসবে তখন আর কেউ অবশিষ্ট থাকবে না

ছবি

পূর্বসূরিরা যে যুদ্ধ এড়িয়ে গেছেন, তাতে জড়িয়ে কোন খেলা খেললেন ট্রাম্প

ছবি

পারমাণবিক স্থাপনায় হামলায় ক্ষয়ক্ষতি, পাল্টা হামলার পরিধি বাড়ানোর ঘোষণা তেহরানের

ছবি

ইরান মিশন শেষে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরল বি-২ বোমারু বিমান

ছবি

সিরিয়ার গির্জায় আত্মঘাতী বোমা হামলা, নিহত ২০

ছবি

ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা

ছবি

ট্রাম্পের নির্দেশে ইরানে হামলা, জাতিসংঘসহ বিশ্বনেতাদের উদ্বেগ

মার্কিন হামলায় ইরানের পারমাণবিক তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা বাড়েনি : আইএইএ

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জবাব যেভাবে দিতে পারে ইরান

যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় সংঘাতের তীব্রতা বাড়ার শঙ্কা জাতিসংঘের

ছবি

পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে, আলোচনায় অগ্রগতি নেই

ইসরায়েলজুড়ে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

ছবি

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলার বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর ইসরায়েলের ১০ এলাকায় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, আহত ১৬

ছবি

আগেই খালি হয়েছিল ফোরদো, স্যাটেলাইট ছবিতে প্রমাণ

ছবি

টানা ৩৭ ঘণ্টা উড়ে মার্কিন বি-২ বোমারু বিমানের ইরানে হামলা

tab

আন্তর্জাতিক

কংগ্রেস ছাড়াই ইরানে হামলা: প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা কি যথাযথভাবে প্রয়োগ হয়েছে?

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহান্তে ইরানের কয়েকটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার নির্দেশ দেওয়ার পর, ডেমোক্র্যাটদের পাশাপাশি তার নিজের দলের অনেক আইনপ্রণেতাও এই সিদ্ধান্তের আইনি বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান থমাস ম্যাসি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন, এই হামলা সংবিধান অনুযায়ী বৈধ নয়।

আরেক রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান ওয়ারেন ডেভিডসন লিখেছেন, এটা সাংবিধানিকভাবে বৈধ—এমন কোনো যুক্তিই কল্পনা করাই কঠিন।

তবে, প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান স্পিকার মাইক জনসন ট্রাম্পের পক্ষ নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তিনি (ট্রাম্প) মনে করেছিলেন যে তৎক্ষণাত ঝুঁকি এতটাই বড় ছিল যে, কংগ্রেসের অনুমতির জন্য অপেক্ষা করার সময় ছিল না।

তিনি আরও বলেন, (যুক্তরাষ্ট্রের) পূর্ববর্তী অনেক প্রেসিডেন্ট একইভাবে কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়াই সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।

মার্কিন সংবিধানে সামরিক অভিযান সম্পর্কে যা বলা হয়েছে

মার্কিন সংবিধানের দুইটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ রয়েছে, যেখানে সামরিক অভিযান নিয়ে বলা হয়েছে - আর্টিকেল-১ এবং আর্টিকেল-২।

আর্টিকেল-১ অনুযায়ী, যুদ্ধ ঘোষণার ক্ষমতা কেবলমাত্র কংগ্রেসের হাতে।

তবে, আর্টিকেল-২ এ বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট হলেন সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক, ফলে তিনি বিশেষ পরিস্থতিতে প্রয়োজন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

হোয়াইট হাউসের সূত্র বলছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই দ্বিতীয় ধারার ভিত্তিতেই ইরানে হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।

দেশটির সংবিধান বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রেসিডেন্ট কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়াই সামরিক শক্তি ব্যবহার করতে পারেন।

যদিও সংবিধানে সেসব পরিস্থিতি স্পষ্টভাবে বলা হয়নি, তবে বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যায় বলা হয়, যদি বাস্তব বা সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কা থাকে, কিংবা জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করতে হয়, তবে প্রেসিডেন্ট এমন পদক্ষেপ নিতে পারেন।

ট্রাম্প প্রশাসন বলেছে, পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার ঠেকানোই ছিল ইরানে হামলার মূল কারণ, যা তারা জাতীয় স্বার্থ হিসেবে দেখেছে।

চারজন সংবিধান বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন যে, এ ধরনের পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের কিছুটা আইনি অধিকার ছিল হামলার নির্দেশ দেওয়ার।

ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভেনিয়ার অধ্যাপক ক্লেয়ার ফিনকেলস্টাইন বলেছেন, সংক্ষেপে বললে, হ্যাঁ — এ ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের হাতে সে ক্ষমতা ছিল।

তিনি আরও বলেন, অতীতে বহু প্রেসিডেন্ট কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়াই সীমিত সামরিক অভিযান চালিয়েছেন।

আরেকজন সংবিধান বিশেষজ্ঞ, জেসিকা লেভিনসন মনে করেন, প্রেসিডেন্টের সীমিত পরিসরে বিমান হামলার অনুমতি দেওয়ার ক্ষমতা আছে, যতক্ষণ না তা পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের রূপ নেয়।

তবে, বোডুইন কলেজের অধ্যাপক অ্যান্ড্রু রুডালেভিজ ভিন্ন মত পোষণ করেন। তার মতে, যেহেতু এখানে হঠাৎ কোনো আক্রমণ প্রতিহত করার বিষয় ছিল না, তাই কোনো দেশে হামলা চালানোর সেই আইনি অধিকার ট্রাম্পের ছিল না।

যদিও সংবিধানে কংগ্রেসকে যুদ্ধ ঘোষণার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, বাস্তবে এটি খুব কমই ব্যবহার হয়েছে।

শেষবার কংগ্রেস আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল ১৯৪২ সালে, যখন জাপান পার্ল হারবারে হামলা করেছিল।

এর আগে ১৮১২ সাল থেকে ১৯৪২ সালের মধ্যে কেবলমাত্র ১০ বার এই ক্ষমতা প্রয়োগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে প্রেসিডেন্টদের কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়াই সামরিক অভিযান চালানো অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।

প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সময়কালে হোয়াইট হাউসের আইন উপদেষ্টা জন বেলিঞ্জার বলেন, গত কয়েক দশকে কংগ্রেস বিভিন্ন উদ্দেশ্যে প্রেসিডেন্টদের সামরিক পদক্ষেপ কার্যত মেনে নিয়েছে।

রক্ষণশীল সংবিধান বিশেষজ্ঞ জনাথন টারলি বলেন, কংগ্রেস ও আদালত কার্যত যুদ্ধ ঘোষণার শর্তকে অকার্যকর করে ফেলেছে।

পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্টরা কী করেছিলেন?

প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা কংগ্রেসের অনুমতি না নিয়েই লিবিয়ায় বিমান হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

তার প্রশাসন এই পদক্ষেপকে সংবিধানের আর্টিকেল-২ এর আওতায় বৈধতা দেয়।

একই ধারা অনুসরণ করে তিনি ২০১১ সালে পাকিস্তানে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করার মিশন চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন।

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদকালেও তিনি কংগ্রেসকে না জানিয়ে ইরানের সামরিক কর্মকর্তা কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার নির্দেশ দেন।

এর আগে, ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ১৯৯০-এর দশকে বলকান অঞ্চলে কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া হামলা চালিয়েছিলেন।

একইভাবে, সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও ইয়েমেন ও সিরিয়ায় হুথি বিদ্রোহীদের উপর হামলা চালিয়েছেন কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়াই।

রক্ষণশীল সংবিধান বিশেষজ্ঞ জনাথন টারলি বলেন, আমাদের ইতিহাসে প্রেসিডেন্টরা বারবার এ ক্ষমতা ব্যবহার করেছেন। ইতিহাস ও পূর্বসুরিদের নেওয়া পদক্ষেপের উদাহরণ ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে।

হাউস স্পিকার মাইক জনসন আবার ট্রাম্পের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, উভয় দলীয় সাবেক প্রেসিডেন্টরা আর্টিকেল-২ অনুযায়ী সেনাপ্রধান হিসেবে একইভাবে পদক্ষেপ নিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, প্রেসিডেন্ট ওবামা লিবিয়ায় সরকার পতনের উদ্দেশ্যে আট মাস ধরে বিমান হামলা চালান। তখন কোনো ডেমোক্র্যাটকে আপত্তি করতে দেখিনি। অথচ এখন সবাই চেঁচামেচি করছে।

অন্য কী কী আইন রয়েছে?

ট্রাম্পের ইরানে হামলার সমালোচকরা আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনের কথা তুলে ধরেছেন, যার নাম ওয়ার পাওয়ার্স রেজোলিউশন।

এটি ১৯৭৩ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিপর্যয়ের পর পাশ হয়।

এ আইনের উদ্দেশ্য ছিল, কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া প্রেসিডেন্ট যেন সহজে যুদ্ধ চালাতে না পারেন, সেটি নিয়ন্ত্রণ করা।

এ আইন অনুযায়ী, জরুরি পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট সামরিক শক্তি ব্যবহার করতে পারেন ঠিকই, তবে তাতে বলা আছে, যতটা সম্ভব, যুদ্ধ বা সংঘর্ষে যুক্ত হওয়ার আগে প্রেসিডেন্টকে কংগ্রেসের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে।

জন বেলিঞ্জার বলেন, ট্রাম্প সম্ভবত এই শর্ত মানেননি।

এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ট্রাম্প প্রকৃত অর্থে কংগ্রেসের সঙ্গে কোনো অর্থবহ আলোচনা না করে কেবল কিছু রিপাবলিকান নেতাকে ঘটনাটি জানিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম জানায়, ডেমোক্র্যাট সিনেট সংখ্যালঘু নেতা চাক শুমারকে হামলার এক ঘণ্টা আগে ফোন করা হয়েছিল, তবে তাকে খুব বেশি তথ্য দেওয়া হয়নি।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট এক্স-এ লিখেছেন, প্রেসিডেন্ট প্রশাসন দলীয় সীমা অতিক্রম করে সৌজন্যমূলকভাবে কংগ্রেস নেতাদের ফোন করেছিল এবং হামলার আগে সিনেটর শুমারের সঙ্গেও কথা বলা হয়েছিল।

এই রেজোলিউশনে আরও বলা আছে, সামরিক অভিযান চালানোর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কংগ্রেসকে জানাতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বলেন, ইরানে হামলার পর বিমানগুলো নিরাপদে ফিরে আসার পর কংগ্রেসকে জানানো হয়েছে এবং ওয়ার পাওয়ার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী সব নিয়ম মেনে চলা হয়েছে।

back to top