গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে দক্ষিণে চলে যাওয়া ফিলিস্তিনিরা যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর দলে দলে নিজ বাড়িঘরে ফিরছেন -এএফপি
গাজায় গতকাল শুক্রবার থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেছেন ফিলিস্তিনিরা। দুই বছর আগে শুরু হওয়া এই যুদ্ধে প্রাণ বাঁচাতে ফিলিস্তিনিদের নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে একাধিকবার পালাতে হয়েছে, গাজার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে বেড়াতে হয়েছে।
নিজেদের বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করা ফিলিস্তিনিদের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে অবশ্য মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ আল্লাহকে ধন্যবাদ দিয়েছেন, কেউ যুদ্ধ সত্যিই থেমেছে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। গাজা উপত্যকায় নিজেদের বাড়ির পথে যাত্রা করা কয়েকজন ফিলিস্তিনির সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছে সংবাদ সংস্থা এএফপি।
গাজার দক্ষিণের শহর খান ইউনিসের বাসিন্দা আমির আবু ইয়াদে বলেন, ‘এ অবস্থার জন্য আমরা আল্লাহকে ধন্যবাদ জানাই, যদিও আমরা ক্ষতবিক্ষত ও বেদনাক্রান্ত হয়ে নিজ নিজ এলাকায় ফিরছি।’ ৩৯ বছর বয়সী মুহাম্মদ মুর্তজার বাড়ি গাজা নগরীতে। তিনি বলেন, ‘আমি সব সময় এই প্রার্থনা করতাম, আমি গাজা নগরীতে আমার বাড়িতে ফিরে যেন দেখি, আমার বাড়িঘর ঠিক আছে, গুঁড়িয়ে যায়নি।’
এখন মুর্তজার একমাত্র প্রত্যাশা এ যুদ্ধ যেন চূড়ান্তভাবে শেষ হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু চাই, যুদ্ধটা চিরতরে শেষ হোক। আমাদের যেন আর কোনো দিন পালাতে না হয়।’ গাজা যুদ্ধের শুরুর দিকেই বাড়িঘর ছেড়েছিলেন আরিজ আবু সাদায়েহ। ৫৩ বছর বয়সী এই নারী শেষ পর্যন্ত বাড়ির পথে রওনা হয়েছেন।
আবু সাদায়েহ বলেন, ‘এই যুদ্ধবিরতি এবং শান্তি ফেরায় আমি খুশি। যদিও আমি এমন এক মা, যে যুদ্ধে নিজের এক ছেলে এবং এক মেয়েকে হারিয়েছেন। তাঁদের জন্য আমার খুব কষ্ট হয়। তারপরও এই যুদ্ধবিরতি আনন্দ ফিরিয়েছে আমরা আমাদের বাড়িতে ফিরছি।’ মিসরের পর্যটন শহর শারম আল শেখে গত বুধবার হামাস ও ইসরায়েল এই যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়। দীর্ঘ বৈঠক শেষে গতকাল শুক্রবার ভোরে চুক্তিটির অনুমোদন দেয় ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা। পরে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানায়, গতকাল শুক্রবার থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়েছে।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি কার্যকরের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাজার নির্দিষ্ট এলাকা পর্যন্ত সামরিক বাহিনীর অবস্থান সরিয়ে নেবে ইসরায়েল। আর ৭২ ঘণ্টা অর্থাৎ আগামী সোমবার দুপুর নাগাদ গাজায় এখনো বন্দী জীবিত সব জিম্মিকে ইসরায়েলের কাছে ফিরিয়ে দেবে হামাস। এরপর ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে বন্দী প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনিকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
গাজায় সংঘাত বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি যে ২০ দফা ‘শান্তি পরিকল্পনা’ ঘোষণা করেন, এই যুদ্ধবিরতিকে তার প্রথম ধাপ বলা হচ্ছে। এই পরিকল্পনা নিয়ে গত সোমবার থেকে মিসরে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে আলোচনা চলছিল। ফিলিস্তিনি সংগঠন ইসলামিক জিহাদ ও পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইনও (পিএলএফপি) আলোচনায় যোগ দিয়েছিল।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, শুক্রবার স্থানীয় সময় সকালে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজার কিছু অঞ্চল থেকে আংশিকভাবে সেনা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। অনলাইনে বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, হাজার হাজার ফিলিস্তিনি গাজার উত্তর দিকে যাচ্ছে। গত কয়েক মাসে ইসরায়েলি বাহিনী গাজার উত্তরাঞ্চলে ব্যাপকভাবে বোমাবর্ষণ করেছে।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ত্রাণবাহী ট্রাকগুলো কোনো বাধা ছাড়াই গাজায় প্রবেশ করতে পারবে। শুক্রবার থেকে প্রতিদিন প্রায় ৬০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করার কথা। তবে বাস্তবে তা হচ্ছে কি না, তা স্পষ্ট নয়।
এদিকে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও অনেক বিষয় অস্পষ্ট রয়ে গেছে। ইসরায়েলি জিম্মিদের বিনিময়ে মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি বন্দিদের তালিকা এখনও প্রকাশ করা হয়নি। হামাস ইসরায়েলের কারাগারে থাকা বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তি চেয়েছে। এ ছাড়া ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনার কিছু শর্ত নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। এর মধ্যে আছে– যুদ্ধ শেষ হলে ধ্বংসপ্রাপ্ত গাজা উপত্যকা কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে, হামাসের চূড়ান্ত পরিণতি কী হবে। হামাস এখনও পর্যন্ত ইসরায়েলের নিরস্ত্রীকরণের দাবি প্রত্যাখ্যান করছে।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি আজ রোববার মিসরে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে আনুষ্ঠানিক চুক্তি সই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
সেখান থেকে তিনি তেল আবিবে যাবেন এবং ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটে ভাষণ দেবেন। নেসেটের স্পিকার আমির ওহানা তাঁকে ভাষণের এ আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
এদিকে, গাজার দক্ষিণাঞ্চালের কেন্দ্রস্থল থেকেও সেনা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস ও সীমান্তবর্তী কিছু এলাকা থেকে ইসরায়েলের সেনা পিছু হটেছে। তবে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, তারা ট্যাঙ্কের গোলার শব্দ শুনেছেন। উপত্যকার কেন্দ্রস্থলে নুসেইরাত ক্যাম্প। সেখানে অবস্থান করছিল ইসরায়েলের সেনারা। তারা পূর্ব দিকে ইসরায়েলি সীমান্তের দিকে রওনা দেয়। সেই সঙ্গে ভূমধ্যসাগরের উপকূল বরাবর গাজার যে সড়কটি রয়েছে, সেটি থেকেও সরে গেছে সেনারা।
গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে দক্ষিণে চলে যাওয়া ফিলিস্তিনিরা যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর দলে দলে নিজ বাড়িঘরে ফিরছেন -এএফপি
শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫
গাজায় গতকাল শুক্রবার থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেছেন ফিলিস্তিনিরা। দুই বছর আগে শুরু হওয়া এই যুদ্ধে প্রাণ বাঁচাতে ফিলিস্তিনিদের নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে একাধিকবার পালাতে হয়েছে, গাজার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে বেড়াতে হয়েছে।
নিজেদের বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করা ফিলিস্তিনিদের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে অবশ্য মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ আল্লাহকে ধন্যবাদ দিয়েছেন, কেউ যুদ্ধ সত্যিই থেমেছে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। গাজা উপত্যকায় নিজেদের বাড়ির পথে যাত্রা করা কয়েকজন ফিলিস্তিনির সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছে সংবাদ সংস্থা এএফপি।
গাজার দক্ষিণের শহর খান ইউনিসের বাসিন্দা আমির আবু ইয়াদে বলেন, ‘এ অবস্থার জন্য আমরা আল্লাহকে ধন্যবাদ জানাই, যদিও আমরা ক্ষতবিক্ষত ও বেদনাক্রান্ত হয়ে নিজ নিজ এলাকায় ফিরছি।’ ৩৯ বছর বয়সী মুহাম্মদ মুর্তজার বাড়ি গাজা নগরীতে। তিনি বলেন, ‘আমি সব সময় এই প্রার্থনা করতাম, আমি গাজা নগরীতে আমার বাড়িতে ফিরে যেন দেখি, আমার বাড়িঘর ঠিক আছে, গুঁড়িয়ে যায়নি।’
এখন মুর্তজার একমাত্র প্রত্যাশা এ যুদ্ধ যেন চূড়ান্তভাবে শেষ হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু চাই, যুদ্ধটা চিরতরে শেষ হোক। আমাদের যেন আর কোনো দিন পালাতে না হয়।’ গাজা যুদ্ধের শুরুর দিকেই বাড়িঘর ছেড়েছিলেন আরিজ আবু সাদায়েহ। ৫৩ বছর বয়সী এই নারী শেষ পর্যন্ত বাড়ির পথে রওনা হয়েছেন।
আবু সাদায়েহ বলেন, ‘এই যুদ্ধবিরতি এবং শান্তি ফেরায় আমি খুশি। যদিও আমি এমন এক মা, যে যুদ্ধে নিজের এক ছেলে এবং এক মেয়েকে হারিয়েছেন। তাঁদের জন্য আমার খুব কষ্ট হয়। তারপরও এই যুদ্ধবিরতি আনন্দ ফিরিয়েছে আমরা আমাদের বাড়িতে ফিরছি।’ মিসরের পর্যটন শহর শারম আল শেখে গত বুধবার হামাস ও ইসরায়েল এই যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়। দীর্ঘ বৈঠক শেষে গতকাল শুক্রবার ভোরে চুক্তিটির অনুমোদন দেয় ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা। পরে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানায়, গতকাল শুক্রবার থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়েছে।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি কার্যকরের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাজার নির্দিষ্ট এলাকা পর্যন্ত সামরিক বাহিনীর অবস্থান সরিয়ে নেবে ইসরায়েল। আর ৭২ ঘণ্টা অর্থাৎ আগামী সোমবার দুপুর নাগাদ গাজায় এখনো বন্দী জীবিত সব জিম্মিকে ইসরায়েলের কাছে ফিরিয়ে দেবে হামাস। এরপর ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে বন্দী প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনিকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
গাজায় সংঘাত বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি যে ২০ দফা ‘শান্তি পরিকল্পনা’ ঘোষণা করেন, এই যুদ্ধবিরতিকে তার প্রথম ধাপ বলা হচ্ছে। এই পরিকল্পনা নিয়ে গত সোমবার থেকে মিসরে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে আলোচনা চলছিল। ফিলিস্তিনি সংগঠন ইসলামিক জিহাদ ও পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইনও (পিএলএফপি) আলোচনায় যোগ দিয়েছিল।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, শুক্রবার স্থানীয় সময় সকালে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজার কিছু অঞ্চল থেকে আংশিকভাবে সেনা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। অনলাইনে বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, হাজার হাজার ফিলিস্তিনি গাজার উত্তর দিকে যাচ্ছে। গত কয়েক মাসে ইসরায়েলি বাহিনী গাজার উত্তরাঞ্চলে ব্যাপকভাবে বোমাবর্ষণ করেছে।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ত্রাণবাহী ট্রাকগুলো কোনো বাধা ছাড়াই গাজায় প্রবেশ করতে পারবে। শুক্রবার থেকে প্রতিদিন প্রায় ৬০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করার কথা। তবে বাস্তবে তা হচ্ছে কি না, তা স্পষ্ট নয়।
এদিকে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও অনেক বিষয় অস্পষ্ট রয়ে গেছে। ইসরায়েলি জিম্মিদের বিনিময়ে মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি বন্দিদের তালিকা এখনও প্রকাশ করা হয়নি। হামাস ইসরায়েলের কারাগারে থাকা বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তি চেয়েছে। এ ছাড়া ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনার কিছু শর্ত নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। এর মধ্যে আছে– যুদ্ধ শেষ হলে ধ্বংসপ্রাপ্ত গাজা উপত্যকা কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে, হামাসের চূড়ান্ত পরিণতি কী হবে। হামাস এখনও পর্যন্ত ইসরায়েলের নিরস্ত্রীকরণের দাবি প্রত্যাখ্যান করছে।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি আজ রোববার মিসরে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে আনুষ্ঠানিক চুক্তি সই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
সেখান থেকে তিনি তেল আবিবে যাবেন এবং ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটে ভাষণ দেবেন। নেসেটের স্পিকার আমির ওহানা তাঁকে ভাষণের এ আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
এদিকে, গাজার দক্ষিণাঞ্চালের কেন্দ্রস্থল থেকেও সেনা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস ও সীমান্তবর্তী কিছু এলাকা থেকে ইসরায়েলের সেনা পিছু হটেছে। তবে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, তারা ট্যাঙ্কের গোলার শব্দ শুনেছেন। উপত্যকার কেন্দ্রস্থলে নুসেইরাত ক্যাম্প। সেখানে অবস্থান করছিল ইসরায়েলের সেনারা। তারা পূর্ব দিকে ইসরায়েলি সীমান্তের দিকে রওনা দেয়। সেই সঙ্গে ভূমধ্যসাগরের উপকূল বরাবর গাজার যে সড়কটি রয়েছে, সেটি থেকেও সরে গেছে সেনারা।