মিথেন এমন এক শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাস, যা পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। মিথেন গ্যাস পৃথিবীর স্থিতিশীল জলবায়ুর জন্য হুমকি মনে করা হয় এ জন্য যে, এটি বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের চেয়ে প্রতি অণুতে বেশি তাপ আটকে রাখে। ধারণা করা হচ্ছে, একবিংশ শতাব্দীতে এই মিথেনই হয়ে উঠবে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের অন্যতম প্রধান কারণ।
ধারণা করা হতো, সাধারণত এটি প্রাকৃতিক গ্যাস। জলাভূমি, পচনশীল জৈব পদার্থ এবং গবাদি পশুর হজম প্রক্রিয়া থেকে মিথেন নির্গত হয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিজ্ঞানীরা অ্যান্টার্কটিকার চারপাশের সমুদ্রের নিচ থেকে উদ্বেগজনক এমন কিছু নিঃসৃত হতে দেখেছেন, যা বিশেষজ্ঞদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। তারা দেখেছেন, অ্যান্টার্কটিকা অঞ্চলের উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে এই অঞ্চলের সমুদ্রের তলদেশের ফাটল থেকে গ্রহকে উত্তপ্তকারী মিথেন নির্গত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে নতুন নতুন মিথেন নির্গমনস্থলগুলো বিস্ময়কর হারে আবিষ্কৃত হচ্ছে, তাতে ভবিষ্যতের উষ্ণায়ন-সংক্রান্ত অনুমানগুলো নিয়ে আবার ভাবতে হবে।
বিশ্বজুড়ে সমুদ্রের তলদেশের নিচে সহস্রাব্দ ধরে গঠিত হওয়া আধারগুলোতে বিশাল পরিমাণ মিথেন জমা আছে। জলবায়ুকে দূষিত করা এই অদৃশ্য গ্যাসটি সমুদ্রের তলদেশের ফাটল দিয়ে পানির মধ্যে বেরিয়ে আসতে পারে, যা প্রায়ই সমুদ্রের পৃষ্ঠ পর্যন্ত বুদ্বুদের স্রোত তৈরি করে।
পানির নিচের নির্গমনস্থল, কীভাবে এগুলো কাজ করে, কতগুলো আছে এবং কতটুকু মিথেন বায়ুমণ্ডলে পৌঁছায়; সমুদ্রের নিচে বসবাসকারী মিথেন ভক্ষণকারী অণুজীব দ্বারা কতটুকু শোষিত হয়, সে সম্পর্কে গতকাল শুক্রবার সিএনএনে এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, সাগরতলে আবিষ্কৃত মিথেন নির্গমন স্থানগুলো সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা আরও ভালোভাবে বুঝতে আগ্রহী। কারণ অতি দূষণকারী এই গ্যাস বায়ুমণ্ডলে তার প্রথম ২০ বছরে কার্বন ডাইঅক্সাইডের চেয়ে প্রায় ৮০ গুণ তাপ ধরে রাখে।
জানা গেছে, অ্যান্টার্কটিকার মিথেন নির্গমনস্থলগুলো নিয়ে সবচেয়ে কম নিরীক্ষা হয়েছে।
সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা সেগুলো খুঁজে বের করতে অ্যান্টার্কটিকার দক্ষিণ মহাসাগরের একটি উপসাগর রস সাগরের ১৬ থেকে ৭৯০ ফুট গভীরতার মধ্যে বিভিন্ন স্থানে নমুনা সংগ্রহ করেন। চলতি মাসে নেচার কমিউনিকেশনসে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, রস সাগরের অগভীর পানিতে ৪০টিরও বেশি মিথেন নির্গমনস্থল শনাক্ত হয়েছে।
আর্থ সায়েন্সেস নিউজিল্যান্ডের সামুদ্রিক জলবায়ু বিশেষজ্ঞ সারাহ সিব্রুক বলেন, আগে অ্যান্টার্কটিকায় শুধু একটি সক্রিয় মিথেন নির্গমনস্থল শনাক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু এখন বিশ্বব্যাপী মিথেন নির্গমনস্থলগুলো তুলনামূলকভাবে বেড়েছে। মিথেনের এই প্রবাহকে আগে বিরল বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু এখন এটি ব্যাপক।
সিব্রুক আরও বলেন, ভয় হলো এই নির্গমনস্থলগুলো থেকে মিথেন দ্রুত বায়ুমণ্ডলে স্থানান্তর হতে পারে। সে ক্ষেত্রে এগুলো হয়ে উঠবে গ্রহকে উত্তপ্ত করার মতো দূষণের এমন একটি উৎস, যা ভবিষ্যতের জলবায়ু পরিবর্তন পূর্বাভাসে আমরা গণনার মধ্যেই ধরিনি।
সিব্রুক বলেন, আর্কটিকে, মাটির নিচে মিথেন নির্গমন বৃদ্ধির সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলোর যোগসূত্র পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছে উষ্ণ তাপমাত্রা, সমুদ্রপৃষ্ঠের স্তরের পরিবর্তন এবং শেষ বরফযুগে হিমবাহ গলে যাওয়ার পর ভূমির অব্যাহত ধীর উত্থান। এটি একটি ‘প্রতিক্রিয়া চক্র’ তৈরি করতে পারে, যেখানে জলবায়ু পরিবর্তন মিথেন নির্গমন বাড়িয়ে দেয়, এবং সেই নির্গমনগুলো নিজেরাই আবার জলবায়ু পরিবর্তনের হারকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫
মিথেন এমন এক শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাস, যা পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। মিথেন গ্যাস পৃথিবীর স্থিতিশীল জলবায়ুর জন্য হুমকি মনে করা হয় এ জন্য যে, এটি বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের চেয়ে প্রতি অণুতে বেশি তাপ আটকে রাখে। ধারণা করা হচ্ছে, একবিংশ শতাব্দীতে এই মিথেনই হয়ে উঠবে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের অন্যতম প্রধান কারণ।
ধারণা করা হতো, সাধারণত এটি প্রাকৃতিক গ্যাস। জলাভূমি, পচনশীল জৈব পদার্থ এবং গবাদি পশুর হজম প্রক্রিয়া থেকে মিথেন নির্গত হয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিজ্ঞানীরা অ্যান্টার্কটিকার চারপাশের সমুদ্রের নিচ থেকে উদ্বেগজনক এমন কিছু নিঃসৃত হতে দেখেছেন, যা বিশেষজ্ঞদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। তারা দেখেছেন, অ্যান্টার্কটিকা অঞ্চলের উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে এই অঞ্চলের সমুদ্রের তলদেশের ফাটল থেকে গ্রহকে উত্তপ্তকারী মিথেন নির্গত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে নতুন নতুন মিথেন নির্গমনস্থলগুলো বিস্ময়কর হারে আবিষ্কৃত হচ্ছে, তাতে ভবিষ্যতের উষ্ণায়ন-সংক্রান্ত অনুমানগুলো নিয়ে আবার ভাবতে হবে।
বিশ্বজুড়ে সমুদ্রের তলদেশের নিচে সহস্রাব্দ ধরে গঠিত হওয়া আধারগুলোতে বিশাল পরিমাণ মিথেন জমা আছে। জলবায়ুকে দূষিত করা এই অদৃশ্য গ্যাসটি সমুদ্রের তলদেশের ফাটল দিয়ে পানির মধ্যে বেরিয়ে আসতে পারে, যা প্রায়ই সমুদ্রের পৃষ্ঠ পর্যন্ত বুদ্বুদের স্রোত তৈরি করে।
পানির নিচের নির্গমনস্থল, কীভাবে এগুলো কাজ করে, কতগুলো আছে এবং কতটুকু মিথেন বায়ুমণ্ডলে পৌঁছায়; সমুদ্রের নিচে বসবাসকারী মিথেন ভক্ষণকারী অণুজীব দ্বারা কতটুকু শোষিত হয়, সে সম্পর্কে গতকাল শুক্রবার সিএনএনে এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, সাগরতলে আবিষ্কৃত মিথেন নির্গমন স্থানগুলো সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা আরও ভালোভাবে বুঝতে আগ্রহী। কারণ অতি দূষণকারী এই গ্যাস বায়ুমণ্ডলে তার প্রথম ২০ বছরে কার্বন ডাইঅক্সাইডের চেয়ে প্রায় ৮০ গুণ তাপ ধরে রাখে।
জানা গেছে, অ্যান্টার্কটিকার মিথেন নির্গমনস্থলগুলো নিয়ে সবচেয়ে কম নিরীক্ষা হয়েছে।
সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা সেগুলো খুঁজে বের করতে অ্যান্টার্কটিকার দক্ষিণ মহাসাগরের একটি উপসাগর রস সাগরের ১৬ থেকে ৭৯০ ফুট গভীরতার মধ্যে বিভিন্ন স্থানে নমুনা সংগ্রহ করেন। চলতি মাসে নেচার কমিউনিকেশনসে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, রস সাগরের অগভীর পানিতে ৪০টিরও বেশি মিথেন নির্গমনস্থল শনাক্ত হয়েছে।
আর্থ সায়েন্সেস নিউজিল্যান্ডের সামুদ্রিক জলবায়ু বিশেষজ্ঞ সারাহ সিব্রুক বলেন, আগে অ্যান্টার্কটিকায় শুধু একটি সক্রিয় মিথেন নির্গমনস্থল শনাক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু এখন বিশ্বব্যাপী মিথেন নির্গমনস্থলগুলো তুলনামূলকভাবে বেড়েছে। মিথেনের এই প্রবাহকে আগে বিরল বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু এখন এটি ব্যাপক।
সিব্রুক আরও বলেন, ভয় হলো এই নির্গমনস্থলগুলো থেকে মিথেন দ্রুত বায়ুমণ্ডলে স্থানান্তর হতে পারে। সে ক্ষেত্রে এগুলো হয়ে উঠবে গ্রহকে উত্তপ্ত করার মতো দূষণের এমন একটি উৎস, যা ভবিষ্যতের জলবায়ু পরিবর্তন পূর্বাভাসে আমরা গণনার মধ্যেই ধরিনি।
সিব্রুক বলেন, আর্কটিকে, মাটির নিচে মিথেন নির্গমন বৃদ্ধির সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলোর যোগসূত্র পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছে উষ্ণ তাপমাত্রা, সমুদ্রপৃষ্ঠের স্তরের পরিবর্তন এবং শেষ বরফযুগে হিমবাহ গলে যাওয়ার পর ভূমির অব্যাহত ধীর উত্থান। এটি একটি ‘প্রতিক্রিয়া চক্র’ তৈরি করতে পারে, যেখানে জলবায়ু পরিবর্তন মিথেন নির্গমন বাড়িয়ে দেয়, এবং সেই নির্গমনগুলো নিজেরাই আবার জলবায়ু পরিবর্তনের হারকে আরও বাড়িয়ে তোলে।